ঘড়ির কাঁটার মধ্যবর্তী কোণ নির্ণয় করার শর্টকাট পদ্ধতি ১৫-২০ সেকেন্ডে!
ঘড়ির কাঁটার মধ্যবর্তী কোণ নির্ণয় করার শর্টকাট পদ্ধতি
নমস্কার, স্টুডেন্টস কেয়ারে আপনাকে স্বাগতম। বিভিন্ন চাকুরির পরিক্ষায় এধরনের একটি প্রশ্ন থাকে যে, `ঘড়িতে যদি এতটা বাজে তাহলে ঘড়ির কাঁটা এবং মিনিটের কাঁটার মধ্যবর্তী কোণ কত ডিগ্রি?’ আবার, একটা ”সময়” বলা থাকে, ঐ অবস্থায় ঘণ্টার কাঁটা আর মিনিটের কাঁটার মধ্যে কোণ কত – সেটা জানতে চাওয়া হয়। সমস্যাটা সমাধান করতে লাগবে ছোটবেলার ঐকিক নিয়ম আর এই বড়বেলার চিন্তাশক্তি। ভয় পাবার কোনো প্রয়োজন নেই, আপনাকে বোঝানোর দায়িত্ব আমার। চলুন শুরু করি আজকের মূল বিষয় ঘড়ির কাঁটার মধ্যবর্তী কোণ নির্ণয় করার শর্টকাট পদ্ধতি ।
আরও পড়ো-
- সহস্র শর্টকাট পদ্ধতি গাণিতিক সূত্র সহ বাংলায় লেখা বই PDF Free
- ক্যালেন্ডার অঙ্ক শর্টকাট সূত্র
- ঘড়ির কাঁটার মধ্যবর্তী কোণ নির্ণয় করার শর্টকাট পদ্ধতি
- অনুপাত ও সমানুপাত
- কাজ ও সময় সম্পর্কিত অংকের শর্টকাট সূত্র
- ত্রিকোণমিতির অনুপাতগুলো মনে রাখার টেকনিক
- নৌকা ও স্রোত সংক্রান্ত অংক করার শর্টকাট টেকনিক
- লাভ ক্ষতির অংক করার শর্টকাট টেকনিক
এধরনের প্রশ্নের সমাধান করার আগে একবার ঘড়ির কথা ভাবুন। এবং ঘড়ির সম্পর্কে নিম্নোলিখিত তথ্যগুলি একবার ঝালিয়ে নিন-
১। ঘড়ির কাঁটা বৃত্তাকার পথে ঘোরে।
২। এক ঘড়িতে সর্বমোট ১২টি ঘণ্টার দাগ কাঁটা থাকে।
৩। তাহলে একটা বৃত্ত হলো ৪ টি সমকোণের সমান অর্থাৎ ৪ সমকোণ বা ৩৬০°। তাহলে, ঘণ্টার কাঁটার ক্ষেত্রে ১২ ঘণ্টা = ৩৬০ ডিগ্রী। অতএব, ১ ঘণ্টা = (৩৬০/১২) ডিগ্রী = ৩০ ডিগ্রী
৪। অর্থাৎ, ৬০ মিনিট = ৩০ ডিগ্রী। অতএব, ঘণ্টার কাঁটার ক্ষেত্রে ১ মিনিট = (৩০/৬০) ডিগ্রী = ০.৫ ডিগ্রী
৫। একই সাথে ঘণ্টার কাঁটা আর মিনিটের কাঁটা ঘড়ির ১২ সংখ্যাটিকে নির্দেশ করলে, কোণ হবে শূন্য। যেমনঃ দুপুর ১২ টা। [খুবই গুরুত্বপূর্ণ]
৭। ঘণ্টার কাঁটা সরলেও কোণের পরিবর্তন হবে, মিনিটের কাঁটা সরলেও পরিবর্তন হবে। কারো সরণ নেই, তো কোণের পরিবর্তনও নেই।
৮। সাধারণত কোণ মাপা হয় ঘড়ির কাঁটা ঘুরার বিপরীত দিকে। তবে কেউ যদি ঘড়ির কাঁটার দিকে মাপতে চায় , তাকে কেউ আটকাবে না। কোণ দুইটার মান আলাদা হবে, কিন্তু দুইটাই ঠিক। বেশির ভাগ “সময়” এর ক্ষেত্রে একটা কোণ বড় আর অন্যটি ছোট হয় । মাত্র একবার সমান হয়। যখন ৬:০০ টা বাজে, তখন ঘণ্টার কাঁটা আর মিনিটের কাঁটা একটি সরলরেখা তৈরী করে; যেদিক দিয়েই কোণ মাপি, সেটা ১৮০ ডিগ্রীই হবে। আরেকটা কথা- কোণ দুইটা যোগ করলে ৩৬০ ডিগ্রী হবে, সবসময়।
৯। কোণের মান বের করার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, কখনোই কোনের মান ১৮০° এর বেশি হবে না অথবা ব্যবধান ৬ এর বেশি হবে না।
১০। ১ দিন বা ২৪ ঘন্টায়,
নোট-১ঃ ঘন্টা ও মিনিটের কাটা একে অপরের সাথে সমকোণ উৎপন্ন করে = ৪৪ বার [প্রতি ঘন্টায় ২বার করে ২৪ ঘন্টায় ৪৮ বার করার কথা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দুপুর ও রাত ২:০০টা থেকে ২:৫৯ এবং ৮:০০টা থেকে ৮:৫৯ এই ৪ ঘন্টায় ১বার করে সমকোণ উৎপন্ন হয়।]
নোট-২ঃ ঘন্টা ও মিনিটের কাটা একটি অপরটির ওপরে অবস্থান করে = ২২ বার [প্রতি ঘন্টায় ১বার করে ২৪ ঘন্টায় ২৪ বার করার কথা, কিন্তু সকাল ও রাত ১১:০০ থেকে ১১:৫৯ এই সময়ে কাটা দুটি একটি অপরটির ওপরে অবস্থান করে না।]
নোট-৩ঃ ঘন্টা ও মিনিটের কাটা একটি অপরটির ঠিক বিপরীতে অবস্থান করে = ২২ বার। [প্রতি ঘন্টায় ১ বার করে ২৪ ঘন্টায় ২৪ বার করার কথা, কিন্তু ভোর ও সন্ধ্যে ৫:০০টা থেকে ৫:৫৯ এই দুই ঘন্টায় কাটা দুটি একটি অপরটির বিপরীতে অবস্থান করে না।]
১১। প্রবৃদ্ধ কোণ – কোনো কোণের পরিমাপ ১৮০ ডিগ্রী অপেক্ষা বড় এবং ৩৬০ ডিগ্রী অপেক্ষা ছোট হলে, তাকে প্রবৃদ্ধ কোণ বলা হয়। একটি কোণের পরিমাপ যদি ৩০ ডিগ্রী হয়, তবে ঐ কোণটির প্রবৃদ্ধ কোণটি হবে = ৩৬০ – ৩০ = ৩৩০ ডিগ্রী।
চলুন তাহলে একটি সহজ অঙ্ক দিয়ে শুরু করা যাক-
সময়ঃ সকাল ৯:০০ টা , কোণ কত?
(বিঃ দ্রঃ সকাল নাকি রাত্রি- এটা কোন প্রভাব ফেলেনা; সকাল নয়টাতে যে কোণ, রাত নয়টায় তো একই কোণ।)
ধাপ-১ঃ ১ ঘণ্টা = ৩০ ডিগ্রী। অতএব, ৯ ঘণ্টা = (৩০ * ৯) ডিগ্রী অথবা ২৭০ ডিগ্রী।
মিনিট তো শূন্য, মিনিটের কাঁটা সরেনি। তাহলেতো মিনিটের জন্য কোণের মানে পরিবর্তন আসবেনা। শুধু ২৭০ ডিগ্রীই উত্তর হবার কথা। কিন্তু আমরাতো ছোট কোণটা নিব নাহলে তো ওপরে দেওয়া (৯) নম্বর পয়েন্টের সাথে মিলবেনা। তাহলে উপায় কী? হুম… দেখুন তাহলে!
ধাপ-২ঃ ছোট কোণ + বড় কোণ = ৩৬০ ডিগ্রী অতএব, নির্ণেয় ছোট কোণ = ( ৩৬০ – বড় কোণ ) ডিগ্রী = (৩৬০ – ২৭০ ) ডিগ্রী = ৯০ ডিগ্রী
উত্তরঃ ৯০ ডিগ্রী
আরও একটি উদাহরণ দেখুন
সময়ঃ বিকাল ৫:০০ টা, কোণ কত?
ধাপ-১ঃ ১ ঘণ্টা = ৩০ ডিগ্রী। অতএব, ৫ ঘণ্টা = (৩০ * ৫) ডিগ্রী অথবা ১৫০ ডিগ্রী।
যেহেতু এটা ১৮০ এর চেয়ে কম, তার মানে এটাই ছোট কোণ। [ অপর কোণটি বা প্রবৃদ্ধ কোণ হবে (৩৬০ – ১৫০) ডিগ্রী = ২১০ ডিগ্রী ]
উত্তরঃ ১৫০ ডিগ্রী।
এবার আশা যাক ঘড়ির কাঁটার মধ্যবর্তী কোণ নির্ণয় করার শর্টকাট পদ্ধতি
প্রশ্নঃ- ঘড়িতে যদি এতটা বাজে তাহলে ঘড়ির কাঁটা এবং মিনিটের কাঁটার মধ্যবর্তী কোণ কত ডিগ্রি?
[শুধু মাত্র ১টি সুত্র মনে রাখলেই, মাত্র ১৫-২০ সেকেন্ডের মধ্যেই ঘড়ির, ঘন্টা ও মিনিট এর কাটার মধ্যেবর্তী কোণের দূরত্বের নির্নয়ের নিচের অংক গুলোর উত্তর করতে পারবেন]
♦ টেকনিকঃ (11×M – 6O×H)÷2
এখানে, M=মিনিট এবং H=ঘন্টা
উদাহরনঃ যদি ঘড়িতে ২ টা ৪০ মিনিট হয়, তবে ঘণ্টার কাটা ও মিনিটের কাটা কত ডিগ্রি কোন উৎপন্ন করে?
সূত্র প্রয়োগ: (11 × M – 6O × H)÷2, (এখানে M এর স্থানে মিনিট ও H এর স্থানে ঘন্টা বসাতে হবে)
সমাধানঃ
(11 × 4O–6O×2)÷2
= 160(উঃ)
[বিঃদ্রঃযদি কোনের মান 180° অতিক্রম করে(অর্থাৎ 180 ° চেয়ে বেশি হয়)তবে প্রাপ্ত মানকে ৩৬০ থেকে বিয়োগ করে কোন এর মান নির্নয় করতে হবে]
অতিরিক্ত কিছু উদারণ আপনাদের জন্য-
প্রশ্ন ১: ঘড়িতে যখন চারটা বাজে, ঘন্টার কাঁটা এবং মিনিটের কাঁটার মধ্যেকার কোণটি কত ডিগ্রি..?
উত্তর: ১২০°।
.
ব্যাখ্যা : যখন চারটা বাজে তখন ঘন্টার কাঁটাটি ৪ টায় এবং মিনিটের কাঁটাটি ১২ টায় থাকবে। ফলে দুটো কাটার ব্যবধান হবে ৪। আগেই বের করেছি যে প্রতি ঘন্টার জন্য কোণের মান হবে ৩০°, তাই ৪ এর জন্য কোণের মান হবে (৩০°×৪)=১২০°।
.
প্রশ্ন ২: ঘড়িতে যখন আটটা বাজে, ঘন্টার কাঁটা এবং মিনিটের কাঁটার মধ্যেকার কোণটি কত ডিগ্রি?
উত্তর: ১২০°।
.
ব্যাখ্যা : যখন ঘড়িতে আটটা বাজে তখন ঘন্টার কাঁটাটি ৮ টায় এবং মিনিটের কাঁটাটি ১২ টায় থাকবে। ফলে দুটো কাটার ব্যবধান হবে ৪। কেউ হয়ত ১২ থেকে ৮ টটা পর্যন্ত গুনে বলতে পারেন ব্যবধান ৮, কিন্তু এটা করা যাবে না কেননা তখন কোণটি ১৮০° এর চেয়ে বড় হয়ে যাবে, আগেই বলেছি কোণের মান ১৮০° চেয়ে বেশি হতে পারবে না, এজন্য ব্যবধান কখনোই ৬ এর বেশি হবে না। তাই ৮ থেকে ১২ পর্যন্ত ব্যবধান ৪ হবে। আগেই বের করেছি যে প্রতি ঘন্টার জন্য কোণের মান হবে ৩০°, তাই ৪ এর জন্য কোণের মান হবে (৩০°×৪)=১২০°।
.
প্রশ্ন ৩: যখন ঘড়িতে সারে এগারোটা বাজে, ঘন্টার কাঁটা এবং মিনিটের কাঁটার মধ্যেকার কোণটি কত ডিগ্রি?
উত্তর: ১৬৫°।
.
ব্যাখ্যা : যখন সারে এগারোটা বাজে তখন ঘন্টার কাঁটাটি ১১ এবং ১২ এর মাঝামাঝি অর্থাৎ ১১.৫ টায় এবং মিনিটের কাঁটাটি ৬ টায় থাকবে। ফলে দুটো কাটার ব্যবধান হবে ৫.৫। অনেকের মনে হতে পারে যে ব্যবধান তো ৬.৫ ও হতে পারে। হ্যাঁ হতে পারে, কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যবধান কখনোই ৬ এর বেশি হবে না, তাই যেদিক থেকে গুনলে ব্যবধান ৬ এর মধ্যে থাকে সেদিক থেকেই গুনতে হবে। আগেই বের করেছি যে প্রতি ঘন্টার জন্য কোণের মান হবে ৩০°, তাই ৫.৫ এর জন্য কোণের মান হবে (৩০°×৫.৫)=১৬৫°।
আরও পড়ো-
- সহস্র শর্টকাট পদ্ধতি গাণিতিক সূত্র সহ বাংলায় লেখা বই PDF Free
- ক্যালেন্ডার অঙ্ক শর্টকাট সূত্র
- ঘড়ির কাঁটার মধ্যবর্তী কোণ নির্ণয় করার শর্টকাট পদ্ধতি
- অনুপাত ও সমানুপাত
- কাজ ও সময় সম্পর্কিত অংকের শর্টকাট সূত্র
- ত্রিকোণমিতির অনুপাতগুলো মনে রাখার টেকনিক
- নৌকা ও স্রোত সংক্রান্ত অংক করার শর্টকাট টেকনিক
- লাভ ক্ষতির অংক করার শর্টকাট টেকনিক
Pingback: কারক ও বিভক্তি নির্ণয় ও সহজে মনে রাখার কৌশল PDF
Pingback: কারক ও বিভক্তি PDF Download || karok o bivokti PDF
Pingback: অনুপাত ও সমানুপাত কাকে বলে ? শ্রেণিবিভাগ, শর্টকাট সূত্র প্রয়োগ
Pingback: WB Primary TET Syllabus 2022 PDF | প্রাথমিক TET সিলেবাস 2022