সমাস কাকে বলে ? কত প্রকার ও কি কি? Bangla Samas PDF Download

পোস্টটি শেয়ার করুন
4.5/5 - (14 votes)

Bangla Samas PDF Download

⇒ সমাস কাকে বলে?

বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অর্থসম্বন্ধযুক্ত একাধিক পদের একটি পদে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াকে সমাস বলে। বাংলা ভাষায় যে সকল প্রক্রিয়ায় নতুন পদ বা শব্দ তৈরি হয় সমাস তার একটি। সমাসের রীতি সংস্কৃত থেকে বাংলায় এসেছে। যেমন: দোয়াত ও কলম = দোয়াতকলম, পীত অম্বর যার = পীতাম্বর।

পরিচ্ছেদসমূহ

⇒ সমাস শব্দের অর্থ কী?

সমাস শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল – “এক হওয়া” বা সংক্ষেপ। সমাসের ব্যাকরণসম্মত অর্থ হল সংক্ষিপ্তকরণ বা একপদীকরণ। মূলত, সমাসে একটি বাক্যাংশ একটি শব্দে পরিণত হয়। বাক্যে শব্দের ব্যবহার কমানোর উদ্দেশ্যে সমাস ব্যবহার করা হয়।

⇒ সমাস শব্দের বিভিন্ন বিশ্লেষণ গুলি কী কী?

সমাস শব্দের বিভিন্ন বিশ্লেষণ গুলি আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন। যেগুলি হল-

ক) প্রত্যয় : সম্-অস+অ(ঘঞ)

Join us on Telegram

খ) সন্ধি : সম+আস

গ) সমাস : সম্(এক) আস(হওয়া)= এক হওয়া।

⇒ সমাস কেন পড়ব?

ব্যাকরণ যেমন ভাষার বিভিন্ন কৌশলকে বিশ্লেষণ করে থাকে, তেমনি ব্যাকরণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল, ভাষাকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করে তোলা। সেই লক্ষ্যে বাক্যের অন্তর্গত বিভিন্ন পদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে বাক্যকে সুন্দর করে তুলতে, আমরা ব্যাকরণের একটি অন্যতম প্রক্রিয়া, সমাস সমন্ধে পড়ব, জানব ও নির্ণয় শিখব। এবার আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, সমাসের ফলে ভাষা সমৃদ্ধি হয় কেন?

কারণ, যে কোনো ভাষারই সম্পদ হল তার শব্দ ভাণ্ডার অর্থাৎ শব্দ সংখ্যা। সমাসে অর্থ সমন্ধযুক্ত দুটি শব্দ বা পদ মিলে অথবা একটি উপসর্গ ও একটি পদ নিয়ে নতুন নতুন শব্দ তৈরি হয়। এইভাবে সমাস ভাষাকে সমৃদ্ধ করে তার শব্দ সংখ্যা বৃদ্ধি করে।

⇒ সন্ধি ও সমাসের মধ্যে তফাৎ কী?

সকলেই সাধারণত জানি যে, সমাস অর্থ সম্বন্ধপূর্ণ একাধিক শব্দের মিলন। আর সন্ধি পাশাপাশি অবস্থিত দুইটি ধ্বনির মিলন। বিষয় দুটির সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য দেখানো হল-

সাদৃশ্য : বাক্ সীমিত ও সৌন্দর্য সৃষ্টি।

বৈসাদৃশ্য : ক ) সন্ধি বর্ণের সঙ্গে বর্ণের মিলনে হয় । সমাস পদের সঙ্গে পদের মিলনে হয়।

খ) সন্ধিতে মিলন উচ্চারণভিত্তিক। সমাসে মিলন অর্থভিত্তিক।

গ) সন্ধিতে বিভক্তি লোপ পায় না। সমাসে অলোপ সমাস ছাড়া বিভক্তি লোপ পায়।

⇒ সমাসের সম্পর্কিত কয়েকটি সংজ্ঞা বা টার্মস-

সমাসের জন্য কয়েকটি সংজ্ঞা/ টার্মস জানা খুবই জরুরি। এগুলো হলো-

১. ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য বা সমাসবাক্য

যে বাক্যাংশ থেকে সমাসের মাধ্যমে নতুন শব্দ তৈরি হয়, তাকে বলা হয় ব্যাসবাক্য। ব্যাসবাক্য শব্দের অর্থ হল বিস্তৃত বাক্য বা বিশ্লেষণকারী বাক্য। যেহেতু এই শ্রেণির বাক্যের দ্বারা সমস্তপদকে বিশ্লেষণ করা যায় বা সমস্তপদের মূল অর্থ বিশ্লেষন করে পাওয়া যায়, তাই এই বাক্যের নাম ব্যাস বাক্য। আবার, ‘বিগ্রহ’ শব্দের অর্থ বিশেষ রূপ বা মূর্তি ধারণ করা, যেহেতু ব্যাসবাক্য সমস্তপদের মূল অর্থকে বিশ্লেষণ করার জন্য বা নির্ণয় করার জন্য বিশেষ রূপ বা মূর্তি ধারণ করে বাক্য গঠন করে, তাই ব্যাসবাক্যের নাম বিগ্রহ বাক্য।

যেমন— বিলাত হতে ফেরত = বিলাতফেরত। এখানে ‘বিলাত হতে ফেরত’ হলো ব্যাসবাক্য।

২. সমস্ত পদ

ব্যাসবাক্য থেকে সমাসের মাধ্যমে যে নতুন শব্দ তৈরি হয়, তাকে বলা হয় সমস্ত পদ। সমাসে একাধিক পদ মিলিত হয়ে যে একটি নতুন পদ গঠন করে, তাকে সমস্তপদ বা সমাসবদ্ধ পদ বলেযেমন— বিলাত হতে ফেরত = বিলাতফেরত। এখানে ‘বিলাতফেরত’ পদটি সমস্ত পদ।

৩. সমস্যমান পদ

যে সকল পদ একত্রিত হয়ে সমাস সংগঠিত হয়, তাদের প্রত্যেকটি পদকে সমস্যমান পদ বলেযেমন – বীণা পাণিতে যার = বীণাপাণি। এখনে ‘বীণা’ ‘পাণিতে’ হল সমস্যমান পদ ও ‘যার’ হল সমস্যমান সহায়ক অন্য পদ। আরও একটি উদাহরণ দেওয়া হল, বিলাত হতে ফেরত= বিলাতফেরত। এখানে ‘বিলাত’ ও ‘ফেরত’ পদ দুটো সমস্যমান পদ ও ‘হতে’ হল সমস্যমান সহায়ক অন্য পদ।

৪. পূর্বপদ

পূর্বপদ অর্থাৎ পূর্ববর্তী পদ বা প্রথমে অবস্থিত পদ। (ব্যাসবাক্যে) সমস্যমান পদগুলির মধ্যে যে পদটি প্রথমে বা আগে থাকে, তাকে পূর্বপদ বলেযেমন- “বীণা পাণিতে যার” ব্যাসবাক্যে “বীণা” হল পূর্বপদ।

৫. পরপদ বা উত্তরপদ

সমস্ত পদের শেষ অংশ/ শব্দকে পরপদ/ উত্তরপদ বলে। অর্থাৎ, সমস্ত পদের শেষ সমস্যমান পদই পরপদ। অথবা (ব্যাসবাক্যে) সমস্যমান পদগুলির মধ্যে যে পদ পরে থাকে, তাকে উত্তরপদ বা পরপদ বলে। যেমন – “বীণা পাণিতে যার” ব্যাসবাক্যে পরে অবস্থিত “পাণিতে” হল উত্তরপদ, সেক্ষেত্রে “যার” হল সমস্যমান সহায়ক অন্যপদ।

উলেলখ্য, একই সমস্ত পদ কয়েকভাবে ভেঙে কয়েকটি ব্যাসবাক্য তৈরি করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সঠিক ব্যাসবাক্যও কয়েকটি হতে পারে। সেক্ষেত্রে ব্যাসবাক্য অনুযায়ী সেটি কোন সমাস তা নির্ণয় করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, ব্যাসবাক্যের সঙ্গে সমস্ত পদের অর্থসঙ্গতি যেন ঠিক থাকে। যেমন, ‘বিপদে আপন্ন = বিপদাপন্ন’, এই সমাসটি এভাবে ভাঙলে তা ভুল হবে। এটা করতে হবে ‘বিপদকে আপন্ন = বিপদাপন্ন’।

⇒ কে কেন সমাসকে সুনিপুণ গৃহিণীর সাথে তুলনা করেছেন?

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমাসকে সুনিপুণ গৃহিণীর সাথে তুলনা করেছেন। কারণ, কোনো গৃহিণী যেমন তার সুনিপুণ গৃহিণীপনার সাহায্যে বিভিন্ন উপাদানের দ্বারা খাদ্যবস্তু তৈরি করে এবং বিভিন্ন স্বভাবের ব্যক্তিবর্গকে একসূত্রে আবদ্ধ রাখে সমাস প্রক্রিয়াও তেমনি বিভিন্ন অর্থযুক্ত (যদি অর্থগত সম্বন্ধ থাকে) শব্দ বা পদ নিয়ে নতুন শব্দ বা পদ গঠন করে। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমাসকে সুনিপুণ গৃহিণীপনার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

⇒ সমাসের শ্রেণিবিভাগ

বাংলা ব্যকরণে সমাসকে সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন ভাবে ভাগ করা হয়েছে। যেমন-

১. সংস্কৃতে সমাস চারটি প্রকার দেখা যায়-

ক) দ্বন্দ্ব

খ) তৎপুরুষ

গ) বহুব্রীহি

ঘ) অব্যয়ীভাব

২. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় সমাসের তিনটি ভাগ দেখিয়েছেন-

ক) সংযোগমূলক সমাস – দ্বন্দ্বসমাস।

খ) ব্যাখ্যামূলক সমাস – কর্মধারয়,  তৎপুরুষ, দ্বিগু সমাস।

গ) বর্ণনামূলক সমাস – বহুব্রীহিসমাস।

৩. আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পদের অর্থগত দিক থেকে সমাসকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে

ক) উভয় পদের অর্থপ্রধান – দ্বন্দ্বসমাস।

খ) পরপদের অর্থপ্রধান – তৎপুরুষ, কর্মধারয়, দ্বিগু।

গ) পূর্বপদের অর্থপ্রধান – অব্যয়ীভাব সমাস।

ঘ) অন্যপদের অর্থপ্রধান – বহুব্রীহি সমাস।

সব মিলিয়ে আলোচনার সুবিধার্থে আমরা সমাসকে নিম্নলিখিত প্রধান ৬টি ও ব্যতিক্রমী আরও ৩টি ভাগে ভাগ করে বিশ্লেষণের চেষ্টা করব

1) দ্বন্দ্ব সমাস

2) দ্বিগু সমাস

3) কর্মধারয় সমাস

4) তৎপুরুষ সমাস

5) বহুব্রীহি সমাস

6) অব্যয়ীভাব সমাস

ব্যতিক্রমী সমাস :

7) অলোপ/অলুক সমাস

8) নিত্য সমাস

9) বাক্যাশ্রয়ী সমাস |

তথ্য জেনে রাখুন- [বিভিন্ন সমাসে বিভিন্ন পদের অর্থপ্রাধান্য :

ক) পূর্বপদের অর্থপ্রাধান্য = অব্যয়ীভাব সমাস

খ) পরপদের অর্থপ্রাধান্য = তৎপুরুষ সমাস, কর্মধারয় সমাস, দ্বিগু সমাস ।

গ) উভয় পদের অর্থপ্রাধান্য = দ্বন্দ্ব সমাস

ঘ) অন্যপদের অর্থপ্রাধান্য = বহুব্রীহি সমাস]

আপনাদের সুবিধারজন্য সমাস পর্বটিকে দুটি ভাগে ভাগ করা আলোচনা করা হল। সমাসের ভাগগুলি পড়ার জন্য পরবর্তী পৃষ্ঠাতে যান।

সমাসের শ্রেণিবিভাগ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুণ

Students Care

স্টুডেন্টস কেয়ারে সকলকে স্বাগতম! বাংলা ভাষায় জ্ঞান চর্চার সমস্ত খবরা-খবরের একটি অনলাইন পোর্টাল "স্টুডেন্ট কেয়ার"। পশ্চিমবঙ্গের সকল বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের এবং সমস্ত চাকুরী প্রার্থীদের জন্য, এছাড়াও সকল জ্ঞান পিপাসু জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিবর্গদের সুবিধার্থে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।  

10 thoughts on “সমাস কাকে বলে ? কত প্রকার ও কি কি? Bangla Samas PDF Download

Comments are closed.

error: স্টুডেন্টস কেয়ার কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত !!