ধ্বনি কাকে বলে ? ধ্বনির প্রকারভেদ, স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি PDF
নমস্কার বন্ধুরা, সকলকে স্বাগত। আজকে বাংলা ব্যাকরণের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আজকে ধ্বনি কাকে বলে ,ধ্বনির প্রকারভেদ, স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি শ্রেণীবিভাগ গুলি বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনাদের সুবিধার জন্য এই পোস্টের শেষে বিনামূল্যে PDF ডাউনলোড করে নিতেও পারেন।
ধ্বনি কি?
ধ্বনি কি? এর উত্তরে বলা যেতে পারে, বাংলা ভাষার ক্ষুদ্রতম একক বলতে বোঝায় ধ্বনি। ধ্বনি হল ভাষার মূল উপাদান। কোনো একটি ভাষার (বাংলা ভাষার উদাহরণ নেওয়া হল) উচ্চারিত শব্দকে সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করার পর তার যে অবিভাজ্য ক্ষুদ্রতম অংশ থেকে যায়, তাই হল ধ্বনি।
উদাহরণ- একটি উদাহরণের সাহায্যে বোঝানো হল। ‘কলা’ শব্দটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাঙলে ক, অ, ল, আ এই ধ্বনিগুলো পাওয়া যায়। এরপর আর এগুলোকে ভাঙা যায় না। এগুলো হলো ধ্বনি।
ধ্বনি কাকে বলে?
মানুষের মুখনিঃসৃত নিয়ন্ত্রিত ক্ষুদ্রতম আওয়াজকে বা মুখোচ্চারিত শব্দের ক্ষুদ্রতম অংশকে ধ্বনি বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, এক মানুষের সঙ্গে আর এক মানুষের ভাব বিনিময়ের উদ্দেশ্যে যেসব অর্থ যুক্ত শব্দ বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারণ করা হয় সেইসব শব্দের ক্ষুদ্রতম অংশকে বলা হয় ধ্বনি।
উদাহরণ– ভারত > ভ+আ+র+ত < এটি 4টি ধ্বনি দিয়ে গঠিত । কুল > ক+উ+ল এখানে 3টি ধ্বনি রয়েছে ।
ধ্বনি কীভাবে তৈরী হয়?
মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য ‘কথা’ বলে। মানুষের ‘কথা’ হলো অর্থযুক্ত কিছু ‘ধ্বনি’।মানুষ ফুসফুসের সাহায্যে শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করে। ফুসফুস থেকে বাতাস বাইরে আসার সময় মুখের বিভিন্ন জায়গায় বাধা পায়। ফলে মুখে নানা ধরনের ধ্বনির সৃষ্টি হয়। ধ্বনি তৈরি হয় বাগ্যন্ত্রের সাহায্যে। ধ্বনি তৈরিতে যেসব বাগ্-প্রত্যঙ্গ সাহায্য করে সেগুলো হলো ফুসফুস, গলনালি, জিহ্বা, তালু, মাড়ি, দাঁত, ঠোঁট, নাক ইত্যাদি।
ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে ধ্বনি হল, “কোন ভাষার উচ্চারিত শব্দকে বিশ্লেষণ করলে আমরা কতগুলো ধ্বনি পাই”।
ধ্বনির বৈশিষ্ট্য গুলি কী কী?
ধ্বনির কিছু বৈশিষ্ট্য হল-
- ধ্বনি ভাষার মূল উপাদান।
- ধ্বনির নিজস্ব কোন অর্থ নেই।
- সাধারণত কয়েকটি ধ্বনি মিলিত হয়ে অর্থের সৃষ্টি করে।
- বাক প্রত্যঙ্গজাত এসব ধ্বনির একটি সূক্ষ্মতম মৌলিক অংশ থাকে যাকে ধ্বনিমূল বলে।
- ধ্বনি গঠনে বিভিন্ন বাক্ প্রত্যঙ্গের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- ধ্বনি উৎপাদনে ফুসফুস একটি মুখ্য উৎপাদক যন্ত্র হলেও ফুসফুস থেকে ধ্বনি উৎপন্ন হয় না— ফুসফুস থেকে কেবল নির্গত হয় বাতাস।
বাংলা ব্যাকরণের আরও কিছু পোস্ট-
- সমাস কাকে বলে ও কয় প্রকার PDF
- ৬৫০+ বাংলা বাগধারা তালিকা pdf
- বাংলা সমাস PDF
- কারক ও বিভক্তি নির্ণয় ও সহজে মনে রাখার কৌশল PDF
- সন্ধি কাকে বলে ? সন্ধি কত প্রকার ও কি কি?
- বাংলা ব্যাকরণ বই PDF Free
- বাংলা ভাষার সকল যুক্ত বর্ণের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা pdf
- ২৫০+ এক কথায় প্রকাশ PDF
- বাংলা ভাষার বর্ণ ও ধ্বনি প্রকরণ
- উচ্চতর বাংলা ব্যাকরণ বই PDF – শ্রী বামনদেব চক্রবর্তী
- সন্ধি বিচ্ছেদ MCQ PDF
- সমার্থক শব্দ তালিকা PDF
ধ্বনি কত প্রকার ও কি কি?
বাংলাভাষার ধ্বনিগুলোকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
- স্বরধ্বনি ও
- ব্যঞ্জনধ্বনি
স্বরধ্বনি ও তার প্রকারভেদ
1. স্বরধ্বনি কাকে বলে?
যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় বাকযন্ত্র (ফুসফুস) থেকে বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিবরের কোথাও কোনো রকম বাধা না পেয়ে স্বাধীনভাবে উচ্চারণ করা যায়, অন্য ধ্বনির সাহায্যে ব্যতিরেকে স্বয়ং পূর্ণ ও পরিস্ফুট ভাবে উচ্চারিত হয় এবং যাকে আশ্রয় করে অন্য ধ্বনি প্রকাশিত হয়, সেই সব ধ্বনিকে বলা হয় স্বরধ্বনি (Vowel)। যেমন: অ, আ, ই, ঈ ,উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ।
কিছু কিছু স্বরধ্বনি একই সাথে নাক ও মুখ দিয়ে প্রকাশ হয়। যেমন- অঁ, আঁ, উঁ, এঁ প্রভৃতি। এগুলিকে বলা হয় আনুনাসিক স্বরধ্বনি (Nasalized Vowel). বাংলা ভাষার সকল স্বরধ্বনি হল ‘ঘোষ’।
স্বরধ্বনি কয় প্রকার ও কী কী?
স্বরধ্বনিকে বিভিন্ন ভাবে বিভিক্ত করা যায়। নিচে পর পর সকল বিভাগগুলি উদাহরণ সহকারে ব্যাখ্যা করা হল।
A) উচ্চারণের তারতম্য অনুসারেঃ
উচ্চারণের তারতম্যের অনুসারে স্বর ধ্বনিগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা –
i) হ্রস্ব স্বরধ্বনি- যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণের কম সময় লাগে তাদেরকে হ্রস্বস্বর বলা হয়। হ্রস্বস্বর 4 টি। যথা- অ, ই, উ,ঋ। বিঃদ্রঃ বাংলা ভাষায় ‘ঋ’-স্বর উচ্চারিত হয় না, তাই হ্রস্বস্বর তিনটি ধরাই ভালো!
ii) দীর্ঘ স্বরধ্বনি- যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় অপেক্ষাকৃত বেশি সময় লাগে তাদেরকে দীর্ঘস্বর বলা হয়। দীর্ঘস্বর 5 টি। যথাঃ আ, ঈ, ঊ, এ, ও।
- এই হ্রস্ব ও দীর্ঘস্বর ছাড়া আর এক ধরণের স্বর আছে-তা হল প্লুতস্বর।
iii) প্লুতস্বর- যে স্বরধ্বনিকে টেনে টেনে দীর্ঘ বা প্রলম্বিত করে উচ্চারণ করা হয়, তাকে প্লুতস্বর বলে। গানে, কান্নায় কিংবা দূর থেকে কাউকে ডাকলে প্লুতস্বরের সৃষ্টি হয়। যেমন: অরুণ (অ-রু-উ-উ-ন্) ! একটু দাঁড়াও। জয় হে-এ-এ-এ, খোকা রে-এ-এ-এ
B) গঠনগত দিক অনুসারেঃ
গঠনগত দিক অনুসারে স্বরধ্বনিতে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন-
i) মৌলিক স্বরধ্বনি- যে স্বরধ্বনি গুলোকে বিশ্লেষণ বা বিভক্ত করা যায় না তাকে মৌলিক স্বরধ্বনি বা প্রাথমিক স্বর বলে। অন্যভাবে বলা যায়, যে স্বরধ্বনি এককভাবে উচ্চারিত হয় তাকে মৌলিক স্বর বলে। মৌলিক স্বরধ্বনি সাতটি। যথা: অ, আ, ই, উ, এ, ও ,অ্যা।বাংলা বর্ণমালায় ‘অ্যা’ ধ্বনিজ্ঞাপন কোন বর্ণ নেই।
ii) যৌগিক স্বরধ্বনি- যে স্বরধ্বনি গুলিকে বিভাজন করা যায় বা বিশ্লেষণ করা যায়, সেগুলি যৌগিক স্বরধ্বনি। যেমন– ঐ= (ও+ই), ঔ= (ও+উ)।
অনুরূপভাবে, পাশাপাশি দুটি স্বরধ্বনি থাকলে দ্রুত উচ্চারণের সময় তা একটি সংযুক্ত স্বরধ্বনিরূপে উচ্চারিত হয়। এরূপ একসাথে উচ্চারিত দুটি মিলিত স্বরধ্বনিকে যৌগিক স্বর বা দ্বিস্বর বা দ্বৈতস্বর বা মিশ্র স্বর বা যুক্ত স্বর বা সন্ধিস্বর বা সন্ধ্যক্ষর বা যুগ্মস্বর বলে। দ্বিস্বরে দুটি স্বর থাকে, একটি পূর্ণ আর একই অপূর্ণ। বাংলা ভাষায় এরূপ 25 টি যৌগিক স্বরধ্বনি আছে। যার মধ্যে বাংলা বর্ণমালায় যৌগিক ধ্বনিজ্ঞাপক বর্ণ মাত্র 2 টি। যথা – ঐ, ঔ। উদাহরণ- কৈ বা বৌ। আর বাকি 23 টি যৌগিক স্বরধ্বনি আছে, যাদের লিখিত রূপ নেই। তাই এরা বর্ণ নয়। উদাহরণ– আ+ই = আই (যাই, ভাই), আ+এ= আয় (যায়, খায়) ইত্যাদি।
যৌগিক স্বরধ্বনির কিছু উদাহরণঃ
দ্বিস্বর | উচ্চারণ | দ্বিস্বর | উচ্চারণ |
অ + এ | অয় | উ + ই | উই |
আ + ই | আই | উ + ও | উও |
আ + এ | আয় | এ + আ | এয়া |
আ + উ | আউ | এ + ই | এই |
আ + ও | আও | এ + উ | এউ |
ই + ই | ইই | এ + ও | এও |
ই + উ | ইউ | ও + ই | ওই |
ই + এ | ইয়ে | ও + ও | ওও |
ই + ও | ইও | এ্যা + এ | এ্যায় |
উ + আ | উয়া | এ্যা + ও | এ্যা |
বিঃ দ্রঃ বাংলায় এই দ্বিস্বর ধ্বনিগুলি ছাড়াও ত্রিস্বর, চতুঃস্বর এবং পঞ্চস্বর যৌগিক স্বর উচ্চারিত হয়। যেমন: আইআ(আইয়া- যাইয়া), আইআই (খাইয়াই), আওআইআ (খাওয়াইয়া) ইত্যাদি।
- মৌলিক ও যৌগিক স্বরধ্বনি ছাড়া আর এক ধরণের স্বর আছে-তা হল অর্ধস্বরধ্বনি।
iii) অর্ধস্বরধ্বনি- যেসব স্বরধ্বনি পুরোপুরি উচ্চারিত হয় না সেগুলোকে অর্ধস্বরধ্বনি বলে।
বাংলা ভাষায় অর্ধস্বরধ্বনি রয়েছে চারটি: [ই], [উ], [এ] এবং [ও]। স্বরধ্বনি উচ্চারণ করার সময়ে টেনে দীর্ঘ করা যায়, কিন্তু অর্ধস্বরধ্বনিকে কোনভাবেই দীর্ঘ করা যায় না।
যেমন– ‘চাই’ শব্দে দুটি স্বরধ্বনি আছে: [আ] এবং [ই]। এখানে [আ] হলো পূর্ণ স্বরধ্বনি, [ই] হলো অর্ধস্বরধ্বনি। একইভাবে লাউ শব্দে দুটি স্বরধ্বনি আছে: [আ] এবং [উ]। এখানে [আ] হলো পূর্ণ স্বরধ্বনি, [উ] হলো অর্ধস্বরধ্বনি।
স্বরধ্বনির উচ্চারণবিধি
সাধারণত চারটি মানদন্ডের দ্বারা উচ্চারণের বৈচিত্র বিচার করা হয়। যথা –(i) জিহ্বার অবস্থান, (ii) জিহ্বার উচ্চতা (iii) ঠোট বা ওষ্ঠের আকৃতি (iv) মুখবিবরের শূন্যতার পরিমাপ। এই চারটি উচ্চারণবিধির সাপেক্ষে স্বরধ্বনিকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। যথা-
জিভের উচ্চতা | জিভ-সম্মুখ | জিভ-মধ্য | জিভ-পশ্চাৎ | ঠোঁটের উন্মুক্তি |
উচ্চ | ই | উ | সংবৃত | |
উচ্চ-মধ্য | এ | ও | অর্ধ-সংবৃত | |
নিম্ন-মধ্য | অ্যা | অ | অর্ধ-বিবৃত | |
নিম্ন | আ | বিবৃত | ||
প্রসারিত স্বরধ্বনি | মধ্যস্থ স্বরধ্বনি | কুঞ্চিত স্বরধ্বনি |
(C) জিহবার অবস্থান অনুযায়ী:
জিহ্বার অবস্থান অনুসারে স্বরধ্বনিকে নিম্নলিখিতভাবে ভাগ করা যায়-
i) সম্মুখ স্বরধ্বনি: যে স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বার সামনের দিকে এগিয়ে আসে সেই স্বরধ্বনিকে সম্মুখ স্বরধ্বনি বলে। যেমন-ই, এ, অ্যা।
ii) পশ্চাৎ স্বরধ্বনি: যে স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা পিছন দিকে অর্থাৎ গলার দিকে গুটিয়ে যায় তাকে পশ্চাৎ স্বরধ্বনি বলে । যেমনঃ অ, ও, উ।
iii) কেন্দ্রীয় স্বরধ্বনি: সম্মুখ স্বর ও পশ্চাৎ স্বরের মাঝামাঝি অবস্থানে জিহ্বা রেখে যে স্বরধ্বনির উচ্চারণ করা হয়, তাকে কেন্দ্রীয় স্বরধ্বনি বলে। যেমন-আ।
(D) জিহবার উচ্চতা অনুযায়ী:
বিশেষ বিশেষ স্বরধ্বনির উচ্চারণকালে জিভ কতটা উপরে উঠে বা নামে সে অনুসারে স্বরধ্বনিকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
i) উচ্চ স্বরধ্বনি: যে স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা মুখবিবরের সর্বোচ্চ স্থানে থাকে তাকে উচ্চ-স্বরধ্বনি বলে। যেমনঃ ই, উ।
ii) উচ্চমধ্য স্বরধ্বনি: যে স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা উচ্চ-মধ্য অবস্থানে থাকে সেগুলি উচ্চ-মধ্য স্বরধ্বনি বলে। যেমন-এ, ও।
iii) নিম্ন- মধ্য স্বরধ্বনি: যে স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা নিম্ন মধ্য অবস্থানে থাকে সেগুলি নিম্নমধ্য স্বরধ্বনি। যেমন-অ্যা, অ।
iv) নিম্ন স্বরধ্বনি: যে স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা মুখবিবরের সর্বনিম্ন স্থানে থাকে তাকে নিম্ন স্বরধ্বনি বলে যেমনঃ আ।
(E) ঠোট বা ওষ্ঠের আকৃতি অনুযায়ী:
ঠোট বা ওষ্ঠের আকৃতি অনুযায়ী স্বরধ্বনি কে তিনটি ভাবে উচ্চারণ করা যায়। যথ-
i) প্রসারিত স্বরধ্বনি: আমরা যখন ঠোট বা ওষ্ঠকে দুদিকে প্রসারিত বা সম্প্রসারিত করে যে স্বরধ্বনির উচ্চারণ করি তাকে প্রসারিত স্বরধ্বনি বলে। যেমন– ই, এ, অ্যা।
ii) মধ্যস্থ স্বরধ্বনি: কোন কোন স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় ঠোট বা ওষ্ঠ প্রসারিত হয় না বা কুঞ্চিতও হয় না স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে, সেই স্বরধ্বনিকে স্বাভাবিক বা মধ্যস্থ স্বরধ্বনি বলে। যেমন-আ।
iii) কুঞ্চিত স্বরধ্বনি: ঠোট বা ওষ্ঠকে প্রসারিত না করে কুঞ্চিত আকারে যে স্বরধ্বনির উচ্চারণ করি তাকে কুঞ্চিত স্বরধ্বনি বলে। যেমন– উ, ও, অ।
(F) মুখবিবরের শূন্যতার পরিমাপ অনুসারেঃ
মুখবিবরের ভিতরের শূন্যস্থানের পরিমাপ অনুসারে স্বরধ্বনিকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যেমন :
i) সংবৃত স্বরধ্বনি: যে স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিভ স্বরধ্বনির এলাকার মধ্যে সর্বোচ্চ স্থানে থাকে এবং জিভ ও নিচের চোয়াল যতদূর সম্ভব মুখের ছাদের দিকে এগিয়ে থাকায় মুখের ভিতরের শূন্যস্থান প্রায় ভরে থাকে, তাকে সংবৃত স্বরধ্বনি। যেমন– ই, উ।
ii) অর্ধ সংবৃত স্বরধ্বনি: যে স্বরধ্বনি উচ্চারণ করার সময় মুখবিবর খুব বেশি কিংবা কম উন্মুক্ত না হয়ে মধ্যবর্তী অবস্থান করে তাকে অর্ধসংবৃত স্বরধ্বনি বলে। যেমনঃ এ, ও।
iii) অর্ধ বিবৃত স্বরধ্বনি: যে স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখবিবর সম্পূর্ণ উন্মুক্ত হয় না তাকে অর্ধবিবৃত স্বরধ্বনি বলে। যেমনঃ অ, অ্যা।
iv) বিবৃত স্বরধ্বনি: যে স্বরধ্বনি উচ্চারণ করার সময় মুখবিবর সম্পূর্ণ উন্মুক্ত বা খোলা থাকে তাকে বিবৃত স্বরধ্বনি বলে। যেমনঃ আ।
অতিরিক্ত আরও বিভিন্ন প্রকার স্বরধ্বনি:
উপরিউক্ত স্বরধ্বনিগুলি ছাড়াও আরও কিছু প্রকার স্বরধ্বনি রয়েছে, সেগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল-
i) পূর্ণস্বরধ্বনি: উচ্চারণের সময় পূর্ণভাবে উচ্চারিত স্বরধ্বনিগুলোই পূর্ণস্বরধ্বনি।
ii) কণ্ঠ্যধ্বনি: যে সমস্ত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান কণ্ঠনালির উপরিভাগ বা জিহ্বামূল, তাদের কণ্ঠ্যধ্বনি বলে। যেমন– অ, আ।
iii) তালব্যধ্বনি: যে সমস্ত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান তালু, তাদের তালব্য ধ্বনি বলে। যেমন– ই, ঈ, তালব্যধ্বনি।
iv) ওষ্ঠ্যধ্বনি: যে সমস্ত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান ওষ্ঠ, তাদের ওষ্ঠ্যধ্বনি বলে। যেমন: উ, ঊ,।
v) সানুনাসিক স্বর: যে স্বরধ্বনি উচ্চারনের সময় নাসিকার সাহায্য প্রয়োজন হয়, সেই স্বরধ্বনিকে সানুনাসিক বা অনুনাসিক স্বর বলে। যথা– আঁকা, আঁচল প্রভৃতি।
vi) কণ্ঠ্যতালব্যধ্বনি: যে সমস্ত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান কণ্ঠ এবং তালু উভয়ই, তাদের কণ্ঠ্যতালব্য ধ্বনি বলে। যেমন– এ, ঐ কণ্ঠ্যতালব্য ধ্বনি।
vii) কণ্ঠৌষ্ঠ্যধ্বনি: যে সমস্ত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান কণ্ঠ ও ওষ্ঠ, তাদের কণ্ঠৌষ্ঠ্য ধ্বনি বলে। যেমন– ও, ঔ কণ্ঠৌষ্ঠ্য ধ্বনি।
viii) মূর্ধন্য ধ্বনি: যে সমস্ত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান মূর্ধা বা তালুর অর্থভাগ, তাদের মূর্ধন্য ধ্বনি বলে। যেমন – ঋ।
ব্যঞ্জনধ্বনি ও তার প্রকারভেদ
2. ব্যঞ্জনধ্বনি (Consonant) কাকে বলে:
যেসব ধ্বনি উচ্চারণকালে ফুসফুস থেকে নিঃসারিত শ্বাসবায়ু মুখ দিয়ে বের হবার সময় পূর্ণ বা আংশিকভাবে বাধা পায়, কিংবা ঘর্ষণ পায়, অথবা সংকুচিত হয়, সেগুলিকে ব্যঞ্জনধ্বনি (Consonant) বলা হয়। উদাহরণ– ক,খ,গ,ঘ ইত্যাদি। অন্যভাবে বলা যায়, যে ধ্বনি স্বরধ্বনির সাহায্য ব্যতীত স্পষ্টরূপে উচ্চারিত হতে পারে না, অর্থাৎ, যেসব ধ্বনি স্বরধ্বনির সাহায্য নিয়ে উচ্চারণ করা হয় সেই সব ধ্বনিকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে।
ব্যঞ্জনধ্বনির বৈশিষ্ট্যঃ
- ব্যঞ্জনধ্বনি স্বরধ্বনির সাহায্য নিয়ে উচ্চারণ করা হয়।
- ব্যঞ্জনধ্বনি হল বাধাজাত ধ্বনি।
ব্যঞ্জনধ্বনির শ্রেণীবিভাগ বা প্রকারভেদ:
ব্যঞ্জনধ্বনির শ্রেণিবিভাগ করার সময় আমরা দেখতে পাবো, কোথায় এবং কী পরিমাণ বাধা দেওয়ার ফলে ব্যঞ্জন-ধ্বনিটি সৃষ্টি হয়েছে, তার উপর ব্যঞ্জনের শ্রেণিকরণ অনেকটাই নির্ভর করে। ধ্বনির উচ্চারণের স্থান, প্রকৃতি এবং ধ্বনির কম্পন ও বায়ুপ্রবাহর বিবেচনায় ব্যঞ্জনধ্বনিকে অন্তত চার ভাগ করা যায়:
- উচ্চারণস্থান অনুযায়ী শ্রেণীবিভাগ,
- উচ্চারণের প্রকৃতি অনুযায়ী শ্রেণীবিভাগ,
- স্বরতন্ত্রীর অবস্থা অনুসারে ব্যঞ্জনধ্বনির শ্রেণীবিভাগ এবং
- ব্যাঞ্জনধ্বনি শ্বাসবায়ুর প্রাবল্য অনুসারে শ্রেণীবিভাগ
1. উচ্চারণস্থান অনুযায়ী ব্যঞ্জধ্বনির শ্রেণীবিভাগ:
বাকপ্রত্যঙ্গের ঠিক যে জায়গায় বায়ু বাধা পেয়ে ব্যঞ্জনধ্বনি সৃষ্টি করে সেই জায়গাটি হলো ঐ ব্যঞ্জনের উচ্চারণস্থান। উচ্চারণস্থান অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন-
i) ওষ্ঠ্য ব্যঞ্জনধ্বনি: নিচের ওষ্ঠ (অধর) ও উপরে ওষ্ঠ স্পর্শ করে শ্বাসবায়ুর গতিপথে বাধা সৃষ্টি করে যে ধ্বনি উচ্চারিত হয় তাকে বলা হয় ওষ্ঠ ধ্বনি। এগুলো দ্বি-ওষ্ঠ্য ধ্বনি নামেও পরিচিত। পাকা, ফল, বাবা, ভাই, মা প্রভৃতি শব্দের প, ফ, ব, ভ, ম ওষ্ঠ্য ব্যঞ্জনধ্বনির উদাহরণ।
ii) কন্ঠনালীয় ব্যঞ্জনধ্বনি: স্বরতন্ত্রী দুটি পরস্পরের দিকে এগিয়ে এসে তাদের মধ্যবর্তী শ্বাসবায়ুর পথ সংকুচিত করে বা একেবারে বন্ধ করে দিয়ে যে ধনী সৃষ্টি হয়, তাকেই স্বরতন্ত্রীয় ব্যঞ্জনধ্বনি বা কণ্ঠনালীয় ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। উদাহরণ– হাতি শব্দের হ কণ্ঠনালীয় ব্যঞ্জনধ্বনির উদাহরণ।
iii) কণ্ঠ্য ব্যঞ্জনধ্বনি: যেসব ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে জিভের পিছনের অংশ উঁচু হয়ে আলজিভের কাছাকাছি নরম তালুর কাছে বায়ুপথে বাধা সৃষ্টি করে, সেগুলােকে কণ্ঠ্য ব্যঞ্জন বলে। উদাহরণ– কাকা, খালু, গাধা, ঘাস, কাঙাল প্রভৃতি শব্দের ক, খ, গ, ঘ, ঙ কষ্ঠ্য ব্যঞ্জনধ্বনির উদাহরণ।
iv) তালব্য ব্যঞ্জনধ্বনি: যে ব্যঞ্জনধ্বনি গুলি উচ্চারণের সময় জিহ্বা কঠিন বা শক্ত তালুকে স্পর্শ করে শ্বাস বায়ুকে আংশিকভাবে বাধা দেয় সেই ধ্বনিগুলি তালব্য ধ্বনি। উদাহরণ– ছাগল, জাল, চাচা, শসা ঝড়, প্রভৃতি শব্দের [চ, ছ, জ, ঝ, শ] তালব্য ব্যঞ্জনধ্বনির উদাহরণ।
v) মূর্ধন্য ব্যঞ্জনধ্বনি: দন্তমূল এবং তালুর মাঝখানে যে উঁচু অংশ থাকে তার নাম মূর্ধা। যেসব ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে জিভের ডগা মূর্ধার সঙ্গে লেগে বায়ুপথে বাধা সৃষ্টি করে, সেগুলোকে মূর্ধন্য ব্যঞ্জন বলে। উদাহরণ– টাকা, ঠেলাগাড়ি, ডাকাত, ঢোল, গাড়ি, মূঢ় প্রভৃতি শব্দের ট, ঠ, ড, ঢ, ড়, ঢ় মূর্ধন্য ব্যঞ্জনধ্বনির উদাহরণ।
vi) দন্ত ব্যঞ্জনধ্বনি: জিহ্বাশিখর বা জিহ্বাপ্রান্ত উপরের দাঁত স্পর্শ করে শ্বাসবায়ুকে বাধা দিয়ে যে ধ্বনি উচ্চারিত হয়, তাকে বলা হয় দন্তন্য ব্যঞ্জনধ্বনি। উদাহরণ– তাল, থালা, দাদা, ধান প্রভৃতি শব্দের ত, থ, দ, ধ দন্ত্য ব্যঞ্জনধ্বনির উদাহরণ।
vii) দন্তমূলীয় ব্যঞ্জনধ্বনি: জিহ্বাশিখর দন্তমূল স্পর্শ করে শ্বাসবায়ু কে বাধা দিলে যে ধ্বনি উচ্চারিত হয়, তাকে বলে দন্তমূলীয়ব্যঞ্জন ধ্বনির।উদাহরণ– নানা, রাত, লাল, সালাম প্রভৃতি শব্দের ন, র, ল, স দন্ত্যমূলীয় ব্যঞ্জনধ্বনির উদাহরণ।
- ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে কোন বাকপ্রত্যঙ্গের অংশগ্রহণ মুখ্য এবং কোন বাকপ্রত্যঙ্গের অংশগ্রহণ গৌণ, নিচের সারণিতে তা দেখানো হলো:
ধ্বনি | মুখ্য বাকপ্রত্যঙ্গ | গৌণ বাকপ্রত্যঙ্গ |
কন্ঠ ব্যঞ্জনধ্বনি | জিভের পেছনের অংশ | নরম তালু |
কন্ঠনালীয় ব্যঞ্জনধ্বনি | ধ্বনিদ্বারের দুটি পাল্লা | ধ্বনিদ্বার |
তালব্য ব্যঞ্জনধ্বনি | জিভের সামনের অংশ | শক্ত তালু |
মূর্ধন্য ব্যঞ্জনধ্বনি | জিভের ডগা | দন্তমূল |
দন্ত ব্যঞ্জনধ্বনি | জিভের ডগা | উপরের পাটির দাঁত |
দন্তমূলীয় ব্যঞ্জনধ্বনি | জিভের ডগা | দন্তমূল |
ওষ্ঠ ব্যঞ্জনধ্বনি | নিএর ঠোঁট | উপরের ঠোঁট |
2. উচ্চারণের প্রকৃতি অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনির শ্রেণীবিভাগ
ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ঠোট, জিভ, জিভমূল ইত্যাদি বাকপ্রত্যঙ্গের আকৃতিগত পরিবর্তন হয়। এতে বায়ুপথে সৃষ্ট বাধার ধরন আলাদা হয়ে উচ্চারণের প্রকৃতি বদলে যায়। উচ্চারণের এই প্রকৃতি অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
i) প্রতিহত বা স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনি: যে ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখবিবরের শ্বাসবায়ু কিছুক্ষণের জন্য সম্পূর্ণ রুদ্ধ হয়ে যায়, তাকে বলা হয় প্রতিহত ব্যঞ্জনধ্বনি। আবার এই ধরনের সময় বাধা সৃষ্টিকারী বাগযন্ত্রের (জিভ,কন্ঠ,তালু,মূর্ধা,দন্ত,ওষ্ঠ) দুটি উপাদান কিছু সময়ের জন্য হলেও পরস্পরকে সম্পূর্ণ স্পর্শ করে বলে এদের স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন- বাংলা ধ্বনিমালায় ক থেকে ম পর্যন্ত মোট পঁচিশটি ব্যঞ্জনধ্বনি আছে। এদেরকে বলা হয় স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনি। উদাহরণ– পথ, তল, টক, চর, কল শব্দের প, ত, ট, চ, ক স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনি। এই ধ্বনিগুলিকে বর্গীয় ধ্বনিও বলা হয়। প্রথম ধ্বনির নাম অনুসারে পাঁচটি বর্গের নাম নির্দেশ করা হয়। আবার উচ্চারণস্থান অনুযায়ী এগুলোকে ওষ্ঠ স্পৃষ্ট, দন্ত স্পষ্ট, মূর্ধা স্পষ্ট, তালু স্পৃষ্ট এবং কণ্ঠ পৃষ্ট – এই পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। নীচের ছকের মাধ্যমে বিষয়টি দেখানো হল-
বর্গ | ধ্বনি | উচ্চারণস্থান |
ক বর্গ | ক,খ,গ,ঘ,ঙ | জিহ্বামূলীয় বা কন্ঠ্য স্পর্শ ধ্বনি |
চ বর্গ | চ,ছ,জ,ঝ,ঞ | তালব্য স্পর্শধ্বনি |
ট বর্গ | ট, ঠ, ড,ঢ,ণ | মূর্ধন্য সৃষ্ট ধ্বনি |
ত বর্গ | ত,থ,দ,ধ,ন | দন্ত স্পষ্ট ধ্বনি |
প বর্গ | প,ফ,ব,ভ,ম | ওষ্ঠ স্পৃষ্ট ধ্বনি |
স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনির শ্রেনিবিভাগ:
- উচ্চারণস্থান এবং বর্গ অনুসারে স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনি পাঁচ প্রকার। যথা-
A. ক – বর্গীয় ধ্বনি বা জিহ্বামূলীয় বা কন্ঠ্য স্পর্শ ধ্বনি- ক, খ, গ, ঘ, ঙ এই 5 টি ধ্বনিকে ক বর্গীয় ধ্বনি বলে। এগুলো উচ্চারণের সময় জিহ্বার নরম তালু স্পর্শ করে উচ্চারিত হয় বলে এগুলোকে জিহ্বামূলীয় বা কন্ঠ্য স্পর্শ ধ্বনি বলা হয়।
B. চ – বর্গীয় ধ্বনি বা তালব্য স্পর্শধ্বনি- চ, ছ, জ, ঝ, ঞ এই 5 টি ধ্বনিকে চ বর্গীয় ধ্বনি বলে। এগুলো উচ্চারণের সময় জিহ্বার অগ্রভাগ চ্যাপ্টাভাবে তালুর সম্মুখভাগের সাথে ঘর্ষণ করে উচ্চারিত হয় বলে এগুলোকে তালব্য স্পর্শধ্বনি বলা হয়।
C. ট – বর্গীয় ধ্বনি বা মূর্ধন্য সৃষ্ট ধ্বনি– ট, ঠ, ড, ঢ, ণ এই 5 টি ধ্বনিকে ট বর্গীয় ধ্বনি বলে।এ ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় জিব্বায় অগ্রভাগ কিঞ্চিৎ উল্টিয়ে উপরের মাড়ির গোড়ার শক্ত অংশকে স্পর্শ করে উচ্চারিত হয়। উচ্চারণের সময় জিব্বা উল্টা হয় বলে এদেরকে দন্তমূলীয় পরিবেষ্টিত ধ্বনি বলা হয়। আবার এগুলো উপরের মাড়ির গোড়ার শক্ত অংশ অর্থাৎ, মূর্ধায় স্পর্শ করে উচ্চারিত হয় বলে এদেরকে মূর্ধন্য ধ্বনিও বলা হয়।
D. ত – বর্গীয় ধ্বনি বা দন্ত স্পষ্ট ধ্বনি- ত, থ, দ, ধ, ন এই 5 টি ধ্বনিকে ত বর্গীয় ধ্বনি বলে।এ ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় জিব্বা সম্মুখে প্রসারিত হয় এবং অগ্রভাগ উপরের দাঁতের পাটির গোড়ার দিকে স্পর্শ করে। এদেরকে দন্তধ্বনিও বলা হয়।
E. প – বর্গীয় ধ্বনি বা ওষ্ঠ স্পৃষ্ট ধ্বনি- প, ফ, ব, ভ, ম এই 5 টি ধ্বনিকে প বর্গীয় ধ্বনি বলে। এ ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় ওষ্ঠের সঙ্গে অধরের স্পর্শ ঘটে। এদেও ওষ্ঠধ্বনিও বলা হয়।
ii) নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনি- যেসব ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ফুসফুস থেকে আসা বাতাস মুখের মধ্যে প্রথমে বাধা পায় এবং নাক ও মুখ। দিয়ে বেরিয়ে যায়, সেসব ধ্বনিকে নাসিক্য ব্যঞ্জন বলে। উদাহরণ- মা, নতুন, হাঙর প্রভৃতি শব্দের ম, ন, ও নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনি।
iii) উষ্ম ব্যঞ্জনধ্বনি: উষ্ম মানে নিঃশ্বাস। যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় শ্বাসবায়ু মুখবিবরের কোথাও সরাসরি বাধা না পেয়ে আংশিক ঘর্ষণপ্রাপ্ত হয়ে শিশ জাতীয় ধ্বনি সৃষ্টি হয়, তাকে উষ্ম ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন, শেষ , বিষ , শিশু , শিশি , আশিস। যতক্ষণ শ্বাস থাকে, এ ধ্বনি ততক্ষণ প্রলম্বিত করে উচ্চারণ করা যায় । উচ্চারণস্থান অনুসারে বাংলায় উষ্ম ব্যঞ্জন ধ্বনিগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
- দন্তমূলীয় (স),
- তালব্য (শ),
- কণ্ঠনালীয় (হ)
iv) পার্শ্বিক ব্যঞ্জনধ্বনি- যদি জিভের সম্মুখপ্রান্ত দন্তমূলকে দৃঢ়ভাবে স্পর্শ করে এবং শ্বাসবায়ুকে জিভের দুপাশ দিয়ে বেরিয়ে আসে। সেই পার্শ্বগামী বায়ুতে সৃষ্ট ধ্বনিকে পার্শ্বিক ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। উদাহরণ- লাল শব্দে ল পার্শ্বিক ব্যঞ্জনধ্বনির উদাহরণ।
v) কম্পিত ব্যঞ্জনধ্বনি- যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় জিভ একাধিকবার খবই দ্রুত দন্তমূলকে আঘাত বা স্পর্শ করার মাধ্যমে বায়ুপথে বাধা সৃষ্টি করে, সেগুলোকে কম্পিত ব্যঞ্জন বলে। উদাহরণ- কর, ভার, হার প্রভৃতি শব্দের র কম্পিত ব্যঞ্জনধ্বনির উদাহরণ.
vi) তাড়িত ব্যঞ্জনধ্বনি- যে ধ্বনি উচ্চারণের সময়ে জিভের সামনের অংশ দন্তমূলের একটু উপরে অর্থাৎ মূর্ধায় টোকা দেওয়ার মতো করে একবার ছুঁয়ে যায়, তাকে তাড়িত ব্যঞ্জন বলে। উদাহরণ-বাড়ি, মূঢ় প্রভৃতি শব্দের ড়, ঢ় তাড়িত ব্যঞ্জনধ্বনির উদাহরণ।
3. স্বরতন্ত্রীর অবস্থা অনুসারে ব্যঞ্জনধ্বনির শ্রেণীবিভাগ:
ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রীতে কাঁপন লাগে কি না সে বিচারে বাংলা ব্যঞ্জনধ্বনি দু’প্রকার । যেমন :
i) ঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি: যে ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় আমরা সেই ধ্বনিটি সঙ্গে স্বরতন্ত্রীর কম্পনজাত সুর বা ঘোষ মিশিয়ে উচ্চারণ করি সেই ধ্বনিকে ঘোষ ধ্বনি বা ঘোষবৎ ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। বর্গের তৃতীয় , চতুর্থ ও পঞম ধ্বনি এবং র , ল , হ ও ড় ঘোষ। যেমন : গ , ঘ , ঙ , জ , ঝ , ড , ঢ , দ , ধ , ন , ব , ভ , ম , র , ল , হ , ড়।
ii) অঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি- ফুসফুস তাড়িত বাতাস স্বরযন্ত্রের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় স্বরতন্ত্রীকে না কাপিয়ে যে ধ্বনি উচ্চারিত হয় , তাকে অঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। বর্গের প্রথম ও দ্বিতীয় ধ্বনি এবং শ অঘোষ। যেমন : ক , খ , চ , ছ , ট , ঠ , ত , থ , প , ফ , শ।
4. শ্বাসবায়ুর প্রাবল্য অনুসারে ব্যঞ্জনধ্বনির প্রকারভেদ:
শ্বাসবায়ুর চাপ স্বাভাবিক না প্রবল সে বিচারে বাংলা ব্যঞ্জনধ্বনি দু’প্রকার । যেমন :
i) অল্পপ্রাণ ধ্বনি: যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় শ্বাসবায়ুর চাপ কম বা স্বাভাবিক থাকে, তাকে অল্পপ্রাণ ধ্বনি বলে। বর্গের প্রথম, তৃতীয় ও পঞম ধ্বনি এবং র, ল, শ, ও ড় অল্পপ্রাণ। যেমন: ক, গ, ঙ, চ, জ, ট, ড, ত, দ, ন, প, ব, ম, র, ল, শ, ড়।
ii) মহাপ্রাণ ধ্বনি: যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় শ্বাসবায়ুর চাপ প্রবল থাকে, তাকে মহাপ্রাণ ধ্বনি বলে। বর্গের দ্বিতীয় ও চতুর্থ ধ্বনি এবং ঢ় , হ মহাপ্রাণ। যেমন : খ, ঘ, ছ, ঝ, ঠ, ড, থ, ধ, ফ, ভ, হ।
- বিভিন্ন প্রকার ধ্বনি
অঘোষ (অল্পপ্রাণ) | অঘোষ (মহাপ্রাণ) | ঘোষ (অল্পপ্রাণ) | ঘোষ (মহাপ্রাণ) | ঘোষ (অল্পপ্রাণ) | উচ্চারণ স্থান | |
ক | খ | গ | ঘ | ঙ | কণ্ঠ্য (জিহ্বামূল) | |
চ | ছ | জ | ঝ | ঞ | শ, য, য় | তালব্য (অগ্রতালু) |
ট | ঠ | ড | ঢ | ণ | ষ, র, ড়, ঢ় | মূর্ধণ্য (পশ্চাৎ দন্তমূল) |
ত | থ | দ | ধ | ন | ল, স | দন্ত্য (অগ্র দন্তমূল) |
প | ফ | ব | ভ | ম | ওষ্ঠ্য (ঠোট) |
বিঃদ্রঃ উপরোক্ত টেবিলে ক-ম পর্যন্ত ধ্বনিকে বর্গাকারে সাজানো হয়েছে। বর্গের প্রথম ও দ্বিতীয় ধ্বনিকে (১ম ও ২য় কলাম) অঘোষ ধ্বনি এবং তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ধ্বনিকে ঘোষ ধ্বনি বলে। এছাড়া বর্গের ১ম, ৩য় ও ৫ম ধ্বনিকে অল্পপ্রাণ ধ্বনি এবং ২য় ও ৪র্থ ধ্বনিকে মহাপ্রাণ ধ্বনি বলে। আবার বর্গের ধ্বনিগুলোকে সারির প্রথম বর্ণের নাম অনুসারেও নামকরণ করা হয়। যেমন: প্রথম সারির ধ্বনিগুলোকে (ক, খ, গ, ঘ, ঙ) ক-বর্গীয় ধ্বনি বলা হয়। অনুরূপভাবে দ্বিতীয় সারির ধ্বনিগুলোকে (চ, ছ, জ, ঝ, ঞ) চ-বর্গীয় ধ্বনি, তৃতীয় সারিকে ট-বর্গীয়, চতুর্থ সারিকে ত-বর্গীয় এবং পঞ্চম সারিকে প-বর্গীয় ধ্বনি বলা হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য উপরোক্ত ধ্বনিগুলো ছাড়াও (বর্গের বাইরে) অঘোষ অল্পপ্রাণ দ্যোতিত ধ্বনি ৩টি: শ, ষ, স এবং ঘোষ মহাপ্রাণ ধ্বনি ‘হ’।
বাংলা ব্যাকরণের আরও কিছু পোস্ট-
- সমাস কাকে বলে ও কয় প্রকার PDF
- ৬৫০+ বাংলা বাগধারা তালিকা pdf
- বাংলা সমাস PDF
- কারক ও বিভক্তি নির্ণয় ও সহজে মনে রাখার কৌশল PDF
- সন্ধি কাকে বলে ? সন্ধি কত প্রকার ও কি কি?
- বাংলা ব্যাকরণ বই PDF Free
- বাংলা ভাষার সকল যুক্ত বর্ণের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা pdf
- ২৫০+ এক কথায় প্রকাশ PDF
- বাংলা ভাষার বর্ণ ও ধ্বনি প্রকরণ
- উচ্চতর বাংলা ব্যাকরণ বই PDF – শ্রী বামনদেব চক্রবর্তী
- সন্ধি বিচ্ছেদ MCQ PDF
- সমার্থক শব্দ তালিকা PDF
TAG: ধ্বনি কি বা কাকে বলে, বাগ্ধ্বনি, ধ্বনি কাকে বলে, ধ্বনি ও বর্ণ কাকে বলে, ওষ্ঠ ধ্বনি কাকে বলে, ধ্বনি পরিবর্তন, ধ্বনি কাকে বলে class 1, ধ্বনি কাকে বলে class 3, ধ্বনি কাকে বলে কত প্রকার, ধ্বনি মূলত ২ প্রকার- স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি, ধ্বনি পরিবর্তনের কারণ, ধ্বনি পরিবর্তনের কারণ ও সূত্রগুলি আলোচনা কর, ধ্বনি পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্য, কুঞ্চিত স্বরধ্বনি কাকে বলে, পশ্চাৎ স্বরধ্বনি কাকে বলে, উচ্চ স্বরধ্বনি কাকে বলে, মৌলিক স্বরধ্বনির শ্রেণীবিভাগ, কেন্দ্রীয় স্বরধ্বনি কাকে বলে, সংবৃত ও বিবৃত কাকে বলে, ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে, ধ্বনি কত প্রকার, প্রসারিত স্বরধ্বনি কাকে বলে
Pingback: Ucchotoro bangla bakaron by Bamandev Chakrabarty free pdf