সন্ধি কাকে বলে ? সন্ধি কত প্রকার ও কি কি? সন্ধি বিচ্ছেদের নিয়ম PDF

পোস্টটি শেয়ার করুন
4.7/5 - (6 votes)

সন্ধি কাকে বলে? সন্ধি কত প্রকার ও কি কি? সন্ধি বিচ্ছেদের নিয়ম

আজ আমরা পড়ব বাংলা ব্যাকরণ এর সন্ধি এর বিষয়ে। আমরা জানব বাংলা ভাষায় সন্ধি কাকে বলে , সন্ধি কত রকমের হয় ও কি কি, অর্থাৎ সন্ধির শ্রেণীবিভাগ, সন্ধি বিচ্ছেদের বিভিন্ন নিয়ম ও সূত্র ইত্যাদি বিষয়ে।


আরও পড়ুন- 500+ সন্ধি বিচ্ছেদ PDF পড়ুন এবং ডাউনলোড করুণ


আমরা আপনাদের সাহায্যার্থে সন্ধি এর পুরো বিষয়টিকে খুব সহজ ভাবে আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছি যাতে খুব সহজেয় এই বিষয় টি আপনাদের বোধগম্য হয়। এবং আজকের এই প্রয়াশ শ্রেনি ৫ থেকে দশম শ্রেনি পর্যন্ত ছাত্র ছাত্রিদের কাজে লাগবে বলে আমরা আশা করি। সন্ধি বিচ্ছেদের নিয়ম ও সূত্রগুলি সম্পূর্ণ PDF টি এই পোষ্টের শেষে ডাউনলোড লিঙ্ক থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।


বাংলা ব্যাকরণের আরও কিছু পোস্ট-

Join us on Telegram

* সন্ধি কাকে বলে?


সন্ধি বাংলা ব্যাকরণে শব্দগঠনের একটি মাধ্যম। এর অর্থ মিলন। অর্থাত্‍ দুটি শব্দ মিলিয়ে একটি শব্দে পরিণত হওয়াকে বা পরস্পর সন্নিহিত দু’ বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে। আরও ভালভাবে বললে, কথা বলার সময় দুটি ধ্বনি মিলে এক হলে বা একটি লোপ পেলে কিংবা একটির প্রভাবে অপরটি পরিবর্তিত হলে তাকে সন্ধি বলে। এক কথায়, সন্নিহিত দুটি ধ্বনির মিলনের নাম সন্ধি।

পৃথিবীর বহু ভাষায় পাশাপাশি শব্দের একাধিক ধ্বনি নিয়মিতভাবে সন্ধিবদ্ধ হলেও বাংলা ভাষায় তা বিরল। যেমন আমি এখন চা আনতে যাই বাংলা ভাষার এই বাক্যটিকে সন্ধির সূত্র মনুযায়ী ‘আম্যেখন চানতে যাই বলা যায় না। তবে বাংলা ভাষায় উপসর্গ, প্রত্যয় ও সমাস প্রক্রিয়ায় শব্দগঠনের ক্ষেত্রে সন্ধির সূত্র কাজে লাগে।

একাধিক ধ্বনি এক বা একাধিক পদে পাশাপাশি অবস্থিত হলে, দ্রুত উচ্চারণকালে ধ্বনিগুলোর মধ্যে ত্রিবিধ পরিবর্তন ঘটতে দেখা যায়। ফলে, (১) ধ্বনিগুলোর মধ্যে আংশিক বা পূর্ণ মিলন সাধিত হয়। নতুবা, (২) তাদের একটির লোপ হয় ; কিংবা (৩) তাদের একটি অপরটির প্রভাবে পরিবর্তিত হয়। একাধিক ধ্বনির এরূপ মিলন, লোপ বা পরিবর্তনের নাম সন্ধি।


সন্ধি শব্দের অর্থ কী?

‘সন্ধি’ শব্দের অর্থ ‘মিলন’। পাশাপাশি দু’টি ধ্বনির মিলনকে সন্ধি বলে । যেমন– বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়। এখানে ‘বিদ্যা’ শব্দের সাথে “আলয়’ শব্দের মিলন ঘটেছে । সুতরাং এ ধরনের ধ্বনির মিলনের নামই সন্ধি। সন্ধি শব্দের বিশেষণাত্মক রূপ হল সম+ধৃ; অর্থাৎ সমভাবে যা ধারণ করে। যেহেতু ধ্বনির মিলনই সন্ধি তাই সন্ধি ব্যাকরণের ধ্বনিতত্ত্বে আলোচিত হয়।


সন্ধি পাঠের উদ্দেশ্য কী?

সন্ধির উদ্দেশ্য হল উচ্চারণ সহজতর করা। যেমন- বিদ্যা ও আলয় ‘ উচ্চারণে যে আয়াস বা শ্রমের প্রয়োজনে , বিদ্যালয় ‘ শব্দটি তার চেয়ে অনেক অল্প আয়াসে উচ্চারিত হয় । সন্ধি ভাষাকে সহজতর করে ও উচ্চারণে ধ্বনিমাধুর্য সৃষ্টি করে । সুতরাং উচ্চারণে আয়াস ও ধ্বনিমাধুর্য সৃষ্টিই সন্ধির মূল উদ্দেশ্য। সন্ধি পাঠের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য নিম্নে দেখানো হল

১. উচ্চারণে সহজপ্রবণতা। ২. নতুন শব্দ তৈরী করা। ৩. শব্দকে সংক্ষেপ করা। ৪. বাক্যকে সংক্ষিপ্ত করা। ৫. উচ্চারণে স্বাচ্ছন্দ্য আসে। ৬. ধ্বনিগত মাধুর্য রক্ষা করা। ৭. ভাষাকে শ্রুতিমধুর ও সংক্ষিপ্ত করে। ৮. ভাষার শব্দ সম্পদ বৃদ্ধি করে। ৯. দ্রুত উচ্চারণ করা যায়। প্রভৃতি।


সন্ধির প্রকারভেদ / শ্রেণীবিভাগ

সন্ধিকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: 1) বাংলা সন্ধি এবং 2) তৎসম সন্ধি


1) বাংলা সন্ধি কাকে বলে?

সংস্কৃত শব্দ ছাড়া শুধুমাত্র বাংলায় গৃহীত ও প্রচলিত অন্যান্য শব্দকে বলা হয় খাঁটি বাংলা শব্দ। এসকল বাংলা শব্দের সন্ধিকেই বলা হয় বাংলা সন্ধি। বাংলা সন্ধি দুই প্রকার। যথাঃ-

A. বাংলা স্বরসন্ধি

B. বাংলা ব্যঞ্জনসন্ধি


A. বাংলা স্বরসন্ধি কী?

স্বরধ্বনির সাথে স্বরধ্বনির মিলনে যে সন্ধি হয়, তাকে বাংলা স্বরসন্ধি বলে। যদিও বাংলায় মৌলিক স্বরধ্বনি সংখ্যা মাত্র সাতটি (অ, আ, ই, ঈ, উ, এ, ও, এ্যা) কিন্তু প্রচলিত সন্ধির নিয়মাবলীর ভিতরে ১১টি স্বরবর্ণেরই ব্যবহার পাওয়া যায়। উল্লেখ্য ‘এ্যা’ নামক কোন বর্ণ বাংলা বর্ণমালায় না থাকলেও সন্ধিজাত শব্দে পাওয়া যায়। যেমন: অতি + আচার = অত্যাচার।

  • বাংলা স্বরসন্ধি আবার দুই প্রকার। যথাঃ অন্তঃসন্ধি (নে + অন = নয়ন) এবং বহিঃসন্ধি (মহা + আশয় = মহাশয়)

বাংলা স্বরসন্ধি নির্ণয়ের সূত্রঃ

সূত্র-1 স্বরসন্ধিতে দুটি সন্নিহিত স্বরের একটি লোপ পায়। যেমন: অ + এ = এ; শত + এক = শতেক, এখানে ‘শত’ শব্দের শেষে ‘অ’ এবং ‘এক’ শব্দের প্রথমে ‘এ’ স্বর মিলিত হয়ে ‘শতেক’ শব্দে ‘ত’ এর সাথে ‘এ (কার)’ হিসেবে মিলিত হয়েছে। অর্থ্যাৎ ‘অ’ লোপ পেয়ে অ + এ = এ (কার) হয়েছে। এরূপ আরও উদাহরণ হল – কতেক, শাঁখারি, রূপালি, মিথ্যুক, হিংসুক, নিন্দুক, কুড়িক, ধনিক, গুটিক, আশির, নদীর ইত্যাদি।

  • শাখা + আরি = শাঁখারি (আ + আ = আ); ‘শাখা’ শব্দের শেষের ‘আ’ এবং ‘আরি’ শব্দের প্রথমের ‘আ’ স্বর মিলিত হয়ে ‘শাখ’ এর ‘খ’ বর্ণের সাথে ‘আ’ হিসেবে যুক্ত হয়ে ‘শাঁখারি’ শব্দ গঠন করেছে।
  • নিন্দা + উক = নিন্দুক (আ + উ = উ); ‘নিন্দা’ শব্দের শেষের ‘আ’ এবং ‘উক’ শব্দের প্রথমের ‘উ’ স্বর মিলিত হয়ে ‘নিন্দ’ এর ‘ন্দ’ এর সাথে ‘উ’ হিসেবে যুক্ত হয়ে ‘নিন্দুক’ শব্দ গঠন করেছে।
  • অনুরুপভাবে, গুটি + এক = গুটিক (ই + এ = ই)।

সূত্র-2 কোন কোন স্থানে পাশাপাশি দুটি স্বরের শেষেরটি লোপ পায়। যেমন: যা + ইচ্ছা + তাই = যাচ্ছেতাই; এখানে ‘যা’ এ ‘আ’ এবং ‘ইচ্ছা’ এর ‘ই’ যুক্ত হয়ে ‘আ’ হিসেবে মিলিত হয়েছে। অর্থ্যাৎ আ + ই = আ যেখানে ‘ই’ লোপ পেয়েছে।

বাংলা স্বরসন্ধির আরও কিছু উদাহরণ-

অর্ধ + এক = অর্ধেক (ও + এ = এ) এত + এক = এতেক (ও + এ = এ)
গোঁড়া + আমি = গোঁড়ামি মিতা + আলি = মিতালি
গোলা + আন্দাজ = গোলন্দাজ ঘড়ি + ইয়াল = ঘড়িয়াল
খাসি + ইয়া = খাসিয়া আলো + এ = আলোয়
ছায়া + এ = ছায়ায় চা + এ = চায়ে
ভাল + এ = ভালয় বাবু + আনা = বাবুয়ানা
মন + উপযোগী = মনোপযোগী মন + অন্তর = মনান্তর
মন + অধীন = মনাধীন যশ + আকাঙ্ক্ষা = যশাকাঙ্ক্ষা


B. বাংলা ব্যঞ্জনসন্ধি কাকে বলে?

স্বরে আর ব্যঞ্জনে, ব্যঞ্জনে আর ব্যঞ্জনে এবং ব্যঞ্জনে আর স্বরে মিলিত হয়ে যে সন্ধি হয় তাকে ব্যঞ্জন সন্ধি বলে। প্রকৃত বাংলা ব্যঞ্জনসন্ধি সমীভবনের নিয়মে হয়ে থাকে এবং সেটি মূলত কথ্যরীতিতে সীমাবদ্ধ। যেমন – কাঁচা + কলা = কাঁচকলা, তিল + এক = তিলেক।

  • ব্যঞ্জনসন্ধি আবার দুই প্রকার। যথাঃ অন্তঃসন্ধি ( ভজ্ + ত = ভক্ত) এবং বহিঃসন্ধি (জগৎ + ঈশ = জগদীশ)

বাংলা ব্যঞ্জনসন্ধি নির্ণয়ের সূত্রঃ

সূত্র-1 প্রথম ধ্বনি অঘোষ এবং পরবর্তী ধ্বনি ঘোষ হলে, দুটি মিলে ঘোষ ধ্বনি দ্বিত্ব হয়। অর্থ্যাৎ সন্ধিতে ঘোষ ধ্বনির পূর্ববর্তী অঘোষ ধ্বনিও ঘোষ হয়। যেমন: ছোট + দা = ছোড়দা; এখানে ট-অঘোষ ধ্বনি ও দ-ঘোষ ধ্বনি এর মিলনের ফলে সৃষ্ট নতুন শব্দে অঘোষ ধ্বনি (ট) এর জায়গায় ঘোষ ধ্বনি (ড়) বসেছে অর্থ্যাৎ ট + দ = ড়।

সূত্র-2 হলন্ত র্ ধ্বনির পরে অন্য ব্যঞ্জন ধ্বনি থাকলে র্ লুপ্ত হয়ে পরবর্তী ধ্বনি দ্বিত্ব বা দুইবার হয়। যেমন: আর্ + না = আন্না, চার + টি = চাট্টি, ধর্ + না = ধন্না, দুর্ + ছাই = দুচ্ছাই ইত্যাদি।

সূত্র-3 চ-বর্গীয় ধ্বনির আগে যদি ত-বর্গীয় ধ্বনি আসে তাহলে, ত-বর্গীয় ধ্বনি লোপ হয় এবং চ-বর্গীয় ধ্বনির দ্বিত্ব হয়। যেমন: নাত + জামাই = নাজ্জামাই (ত + জ = জ্জ), বদ্ + জাত = বজ্জাত, হাত + ছানি = হাচ্ছানি ইত্যাদি।

সূত্র-4 ‘প’ এর পরে ‘চ’ এবং ‘স’ এর পরে ‘ত’ এলে চ ও ত এর স্থলে শ হয়। যেমন: পাঁচ + শ = পাঁশ্শ, সাত + শ = সাশ্শ, পাঁচ + সিকা = পাঁশ্শিকা।

সূত্র-5 হলন্ত ধ্বনির সাথে স্বরধ্বনি যুক্ত হলে স্বরের লোপ হয় না। যেমন: চুন + আরি = চুনারি, তিল + এক = তিলেক, বার + এক = বারেক, তিন + এক = তিনেক।

সূত্র-6 স্বরধ্বনির পরে ব্যঞ্জনধ্বনি এলে স্বরধ্বনিটি লুপ্ত হয়। যেমন: কাঁচা + কলা = কাঁচকলা (আ + ক = ক), ঘোড়া + দৌড় = ঘোড়দৌড় (আ + দ = দ), ঘোড়া + গাড়ি = ঘোড়গাড়ি ইত্যাদি।


2) তৎসম সন্ধি কাকে বলে?

‘তৎসম’ শব্দটির সন্ধি বিচ্ছেদ হচ্ছে তৎ (তার) + সম যার অর্থ তার ‘সমান’; অর্থ্যাৎ সংস্কৃতের সমান। বাংলা ভাষায় বহু সংস্কৃত শব্দ অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। এই সকল তৎসম শব্দগুলোর সন্ধি বিচ্ছেদ সংস্কৃত ভাষার নিয়মেই সম্পাদিত হয়। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত তৎসম সন্ধি তিন প্রকার। যথাঃ

A) তৎসম স্বরসন্ধি; B) তৎসম ব্যঞ্জনসন্ধি; C) তৎসম বিসর্গ সন্ধি

A) তৎসম স্বরসন্ধি

বাংলা শব্দের মত এখানেও স্বরধ্বনির সাথে স্বরধ্বনি মিলে যে সন্ধি হয় তাকে স্বরসন্ধি বলে।


  • তৎসম স্বরসন্ধি গঠনের নিয়ম বা সূত্র ও উদাহরণঃ


সূত্র-1 অ-কার কিংবা আ-কারের পর অ-কার কিংবা আ-কার থাকলে উভয়ে মিলে আ-কার হয়। আ-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়। যেমন: হিম + অচল = হিমাচল (অ + অ = আ)

প্রাণ + অধিক = প্রাণাধিক (অ + অ = আ) হস্ত + অন্তর = হস্তান্তর (অ + অ = আ)
হিত + অহিত = হিতাহিত (অ + অ = আ) নব + অন্ন = নবান্ন (অ + অ = আ)
দেশ + অন্তর = দেশান্তর (অ + অ = আ) স্ব + অধীন = স্বাধীন (অ + অ = আ)
পর + অধীন = পরাধীন (অ + অ = আ) সিংহ + আসন = সিংহাসন (অ + আ = আ)
স্ব + আয়ত্ব = স্বায়ত্ত (অ + আ = আ) হিম + আলয় = হিমালয় (অ + আ = আ)
দেব + আলয় = দেবালয় (অ + আ = আ) রত্ন + আকর = রত্নাকর (অ + আ = আ)
জল + আধার = জলাধার (অ + আ = আ) দণ্ড + আদেশ = দণ্ডাদেশ (অ + আ = আ)
যথা + অর্থ = যথার্থ (আ + অ = আ) আশা + অতীত = আশাতীত (আ + অ = আ)
কথা + অমৃত = কথামৃত (আ + অ = আ) মহা + অর্ঘ = মহার্ঘ (আ + অ = আ)
যথা + অযথ = যথাযথ (আ + অ= আ) ত্বরা + অন্বিত = ত্বরান্বিত (আ + অ = আ)
বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয় (আ + আ = আ) কারা + আগার = কারাগার (আ + আ = আ)
মহা + আশয় = মহাশয় (আ + আ = আ) সদা + আনন্দ = সদানন্দ (আ + আ = আ)
ব্যথা + আতুর = ব্যথাতুর (আ + অ = আ) ভাষা + আচার্য = ভাষাচার্য (আ + অ = আ)

অতিরিক্ত কিছু উদাহরণঃ

১। অ + অ = আ

নব + অন্ন = নবান্ন; শশ + অঙ্ক = শশাঙ্ক; পরম + অন্ন = পরমান্ন; হিত + অহিত = হিতাহিত

২। অ + আ = আ

আশা + অতীত = আশাতীত; বিদ্যা + অনুরাগী = বিদ্যানুরাগী; যথা + অর্থ = যথার্থ; বৃদ্ধ + আশ্রম = বৃদ্ধাশ্রম; তথা + অস্তু = তথাস্তু

৩। আ + আ = আ

বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়; পরীক্ষা + আগার = পরীক্ষাগার; মহা + আশয় = মহাশয়; সদা + আনন্দ = সদানন্দ; মহা + আলয়া = মহালয়া; ম + আকাশ = মহাকাশ; ক্ষুধা + আতুর = ক্ষুধাতুর


সূত্র-2 অ-কার কিংবা আ-কারের পর ই-কার বা ঈ-কার থাকলে উভয়ে মিলে এ-কার হয়। এ-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সাথে যুক্ত হয়। যেমন: শুভ + ইচ্ছা = শুভেচ্ছা।

উদাহরণঃ

স্ব + ইচ্ছা = স্বেচ্ছা (অ + ই = এ) নর + ইন্দ্র = নরেন্দ্র (অ + ই = এ)
পূর্ণ + ইন্দু = পূর্ণেন্দু কৃষ্ণ + ইন্দু = কৃষ্ণেন্দু
শ্রবণ + ইন্দ্রিয় = শ্রবণেন্দ্রিয় জিত + ইন্দ্রিয় = জিতেন্দ্রিয়
যথা + ইষ্ট = যথেষ্ট যথা + ইচ্ছা = যথেচ্ছা (আ + ই = এ)
রসনা + ইন্দ্রিয় = রসনেইন্দ্রিয় (আ + ই = এ) মহা + ইন্দ্র = মহেন্দ্র
পরম + ঈশ = পরমেশ (অ + ঈ = এ) গণ + ঈশ = গণেশ (অ +ঈ = এ)
ভব + ঈশ = ভবেশ রাজ্য + ঈশ্বর = রাজ্যেশ্বর
মহা + ঈশ = মহেশ (আ + ঈ = এ) মহা + ঈশ্বর = মহেশ্বর (আ + ঈ = এ)

অতিরিক্ত কিছু উদাহরণঃ

১. অ + ই = এ

দেব + ইন্দ্র = দেবেন্দ্র; শুভ + ইচ্ছা = শুভেচ্ছা; স্ব + ইচ্ছা = স্বেচ্ছা; যথা + ইষ্ট = যথেষ্ট; পূর্ণ + ইন্দু = পূর্ণেন্দু (পূর্ণিমার পূর্ণ চাঁদ)

২. অ + ঈ = এ

গণ + ঈশ = গণেশ; পরম + ঈশ্বর = পরমেশ্বর; দেব + ঈশ = দেবেশ; অব + ঈক্ষণ = অবেক্ষণ

৩. আ + ঈ = এ.

রমা + ঈশ = রমেশ; লঙ্কা + ঈশ্বর = লঙ্কেশ্বর; মহা + ঈশ্বর = মহেশ্বর; ঢাকা + ঈশ্বরী = ঢাকেশ্বরী


সূত্র-3 অ-কার কিংবা আ-কারের পর উ-কার কিংবা ঊ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ও-কার হয়। ও-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সাথে যুক্ত হয়। যেমন: সূর্য + উদয় = সূর্যোদয়।

উদাহরণঃ

সর্ব + উচ্চ = সর্বোচ্চ (অ + উ = ও) দীর্ঘ + উচ্চারণ = দীর্ঘোচ্চারণ (অ + উ = ও)
প্রশ্ন + উত্তর = প্রশ্নোত্তর (অ + উ = ও) উত্তর + উত্তর = উত্তরোত্তর (অ + উ = ও)
যথা + উচিত = যথোচিত (আ + উ = ও) যথা + উপযুক্ত = যথোপযুক্ত (আ + উ = ও)
কথা + উপকথন = কথোপকথন (আ + উ = ও) মহা + উৎসব = মহোৎসব (আ + উ = ও)
গৃহ + ঊর্ধ্ব = গৃহোর্ধ্ব (অ + ঊ = ও) সর্ব + ঊর্ধ্ব = সর্বোর্ধ্ব (অ + ঊ = ও)
নব + ঊঢ়া = নবোঢ়া (অ + ঊ = ও) গঙ্গা + ঊর্মি = গঙ্গোর্মি (আ + ঊ = ও)
মহা + ঊর্ধ্ব = মহোর্ধ্ব (আ + ঊ = ও)  

অতিরিক্ত কিছু উদাহরণঃ

১. অ + উ = ও

পদ + উন্নতি = পদোন্নতি; সহ + উদর = সহদোয়; সূর্য + উদয় = সূর্যোদয়; নীল + উৎপল = নীলোৎপল; পর + উপকার = পরোপকার; হিত + উপদেশ = হিতোপদেশ; পুষ্প + উদ্যান = পুষ্পেদ্যান

২. অ + উ = ও

এক + ঊণ = একোণ; নব + উঢ়া = নবোঢ়া (নতুন বিয়ে হয়েছে যে নারীর); পাশ + ঊর্ধ্বে = পাশোধেস; পর্বত + উ = পর্বতোর্ধ্ব (পর্বতের উপরে); চল + উর্মি = চলোর্মি; সমুদ্র + উর্মি = সমুদ্রোর্মি (সমুদ্রের প্রবল ঢেউ)

৩. আ + উ = ও

মহা + উদয় = মহোদয়; যথা + উচিত = যথোচিতত; মহা + উজ্জ্বল = মহোজ্জ্বল; দুর্গা + উৎসব = দুর্গোৎসব; কথা + উপকথন = কথোপকথনত; যথা + উপযুক্ত = যথোপযুক্ত

৪. আ + উ = ও

গঙ্গা + উর্মি = গঙ্গের্মি; মহা + উর্মি = মহোর্মি; যমুনা+উর্মি  = যমুনোর্মি (যমুনার ঢেউ)


সূত্র-4 অ-কার কিংবা আ-কারের পর ঋ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ‘অর’ হয়। এটি রেফ রূপে পরবর্তী বর্ণের সাথে যুক্ত হয়। যেমন: মহা+ঋষি =মহর্ষি। উদাহরণ

সপ্ত + ঋষি = সপ্তর্ষি (অ + ঋ = অর্)

উত্তম + ঋণ = উত্তমর্ণ (অ + ঋ = অর্)

মহা + ঋষি = মহোর্ষি (আ + ঝ = অর্)

দেব + ঋষি = দেবর্ষি

উত্তম + ঋণ = উত্তমর্ণ

রাজা/রাজন্ + ঋষি = রাজর্ষি (আ + ঝ = অর্)


সূত্র-5 অ-কার কিংবা আ-কারের পর ‘ঋত’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘আর’ হয়। এক্ষেত্রে বানানের পূর্ববর্তী বর্ণের সাথে আ-কার এবং রেফ রূপে পরবর্তী বর্ণের সাথে যুক্ত হয়। যেমন: শীত + ঋত = শীতার্ত। উদাহরণ-

দুঃখ + ঋত = দুঃখার্ত (অ+ঋত = আর)

শোক + ঋত = শোকার্ত (অ+ঋত = আর)

তৃষ্ণা + ঋত = তৃষ্ণার্ত (আ+ঋত = আর)

ক্ষুধা + ঋত = ক্ষুধার্ত (আ+ঋত = আর)


সূত্র-6 অ-কার কিংবা আ-কারের পর এ-কার কিংবা ঐ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ঐ-কার হয়। ঐ-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সাথে যুক্ত হয়। যেমন: জন + এক = জনৈক। উদাহরণ

১. অ + এ = ঐ

জন + এক = জনৈক; হিত + এষণা = হিতৈষণা; এক + এক = একৈক; সর্ব + এ = সর্বৈব

২. অ + ঐ = ঐ

মত + ঐক্য = মতৈক্য; বিপুল + ঐশ্বর্য = বিপুলৈশ্বর্য

৩. আ + এ = ঐ

সদ + এ = সদৈব; তথা + এ = তথৈব; তথা + এবচ = তথৈবচ

৪. আ + ঐ = ঐ

মহা + ঐশ্বর্য = মহৈশ্বর্য; মহা + ঐক্য = মহৈক্য; রাজা + ঐশ্বর্য = রাজৈশ্বর্য


সূত্র-7 অ-কার কিংবা আ-কারের পর ও-কার কিংবা ঔ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ঔ-কার হয়। ঔ-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সাথে যুক্ত হয়। যেমন: বন + ঔষধি = বনৌষধি।উদাহরণ-

১. অ + ও = ঔ

বন + ওষধি = বনৌষধি; দিব্য + ওষধি = দিবৌষধি; বিম্ব + ওষ্ঠ = বিম্বেীষ্ঠ (যার ওষ্ঠ বিম্ব অর্থাৎ তেলাকুচো ফলের মতো লাল, সুন্দর); জল + ওকা = জলেীকা ।

২. অ + ঔ = ঔ

পরম + ঔষধি = পরমৌষধি; মহ + ঔসুক্য = মহৌৎসুক্য; চিত্ত + ঔদার্য = চিত্তেীদার্য (অতিশয় উদারতা); চিত্ত + ঔদাস্য = চিত্রৌদাস্য (মনের উদাসীনতা)

৩. আ + ও = ঔ

মহা + ঔষধি = মহৌষধি; গঙ্গা + ওঘ (ঢেউ) = গঙ্গৌঘ (গঙ্গার ঢেউ)

৪. আ + ঔ = ঔ

মহা + ঔদার্য = মহৌদার্য; মহা + ঔষধ = মহৌষধ; মহা + ঔদাস্য = মহৌদাস্য; সদা + ঔৎসুক্য = সদৌৎসুক্য।


সূত্র-8 ই-কার কিংবা ঈ-কারের পর ই-কার কিংবা ঈ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ঈ-কার হয়। ঈ-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সাথে যুক্ত হয়। যেমন: অতি + ইত = অতীত। উদাহরণ-

১. ই + ই = ঈ

অতি + ই = অতীব; রবি + ই = রবীন্দ্র; অতি + ইতি = অতীত; অভি + ইষ্ট = অভীষ্ট

২. ই + ঈ = ঈ

গিরি + ঈশ = গিরীশ; প্রতি + ঈক্ষা = প্রতীক্ষা; পরি + ঈক্ষা = পরীক্ষা; অধি + ঈশ্বর = অধীশ্বর।

. ঈ + ই = ঈ

রথী + ই = রথীন্দ্র; মহী + ইন্দ্র = মহীন্দ্র; শচী + ইন্দ্র = শচীন্দ্র; সুধী + ই = সুধীন্দ্র

. ঈ + ঈ = ঈ

শ্রী + ঈশ = শ্রীশ; পৃথ্বী + ঈশ = পৃথ্বীশ; গৌরী + ঈশ = গৌরীশ; ফণী + ঈশ্বর =; নারী + ঈশ্বর = নারীশ্বর


সূত্র-9 ই-কার কিংবা ঈ-কারের পর ই-কার কিংবা ঈ-কার ভিন্ন অন্য স্বর থাকলে উভয়ে মিলে ‘য’ বা য-ফলা হয়। য-ফলা পূর্ববর্তী বর্ণের সাথে যুক্ত হয়। যেমন: অতি + অন্ত = অত্যন্ত (উ + উ = ঊ)। উদাহরণ

১. ই + আ = য্ + অ

বি + অবস্থা = ব্যবস্থা; অধি + অক্ষ = অধ্যক্ষ; আদি + অন্ত = আদ্যন্ত; অতি + অধিক = অত্যধিক; ইতি + আদি = ইত্যাদি; যদি + অপি = যদ্যপি; পরি + অন্ত = পর্যন্ত

২. ই + আ = য্ + আ

অতি + আচার = অত্যাচার; প্রতি + আশা = প্রত্যাশা; প্রতি + আবর্তন = প্রত্যাবর্তন

৩. ই + উ = য্ + উ

প্রতি + উত্তর = প্রত্যুত্তর; উপরি + উপরি = উপর্যুপরি; অভি + উত্থান = অভ্যুত্থান; প্রতি + উপকার = প্রত্যুপকার


সূত্র-10 উ-কার কিংবা ঊ-কারের পর উ-কার কিংবা ঊ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ঊ-কার হয়। ঊ-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়। যেমন: মরূ + ঊদ্যান = মরূদ্যান। উদাহরণ

১. উ + উ = ঊ

কটু + উক্তি = কটুক্তি; মরু + উদ্যান = মরূদ্যান; সু +উক্ত = সূক্ত

২. উ + ঊ = ঊ

লঘু + উর্মি = লঘূর্মি; তনু + উর্ধ্ব = তনূর্ধ্ব; অনু + উর্ধ্ব = অনূর্ধ্ব

৩. ঊ + উ = ঊ

বধূ+ উৎসব = বধূৎসব; ভূ + উথিত = ভূথিত; বধূ + উক্তি = বধূক্তি; বধূ + উচিত = বধূচিত

৪. ঊ + ঊ = ঊ

ভূ + উর্ধ্ব = ভূৰ্ব্ব; সরযূ + উর্মি = সরযূর্মি


সূত্র-11 উ-কার কিংবা ঊ-কারের পর উ-কার কিংবা ঊ-কার ভিন্ন অন্য স্বর থাকলে উভয়ে মিলে ব-ফলা হয়। ব-ফলা পূর্ববর্তী বর্ণের সঙ্গে যুক্ত হয়। যেমন: সু + অল্প = স্বল্প (উ + অ = ব + অ)। উদাহরণ

অনু + অয় = অন্বয় (উ + অ = ব + অ)

সু + আগত = স্বাগত (উ + আ = ব + আ)

অনু + ইত = অন্বিত (উ + ই = ব + ই)

তনু + ঈ = তন্বী (উ + ঈ = ব + ঈ)

অনু + এষণ = অন্বেষণ (উ + এ = ব + এ)


সূত্র-12 ঋ-কারের পর ঋ ভিন্ন অন্য স্বর থাকলে ঋ-এর স্থলে র-হয় এবং র-ফলা পূর্ববর্তী বর্ণের সঙ্গে যুক্ত হয়। যেমন: পিতৃ + আদেশ = পিত্রাদেশ।


সূত্র-13 স্বরবর্ণ পরে থাকলে এ স্থানে ‘ অয় ‘, ঐ স্থানে ‘ আয় ‘, ও স্থানে অব” এবং ঐ – স্থানে ‘আব’ হয়, পরবর্তী স্বরবর্ণ অ ব্য আ – এর সাথে পূর্ববর্তী য় বা ব যুক্ত হয় । যেমন—

এ + অ = অয় + অ                নে + অন = নয়ন 

ঐ + অ = আয় + অ               গৈ + অক = গায়ক 

ও + অ = অব + অ                পো + অন = পবন 

ঔ + অ = আব + অ              পৌ + অক = পাবক 

এরূপ – লবণ (লো + অন) , গবাদি (গো + আদি) , পবিত্র (পেইত্র) , গবেষণা (গো + এষণা) ,ভাবুক (ভৌ + উক) , শয়ন (শে + অন) , নায়ক (নৈ + অক) ইত্যাদি।


সূত্র-14 ঋ ভিন্ন অন্য স্বরবর্ণ পরে থাকিলে ঋ এর স্থানে ‘র’ হয় এবং র – ফলা পূর্ববর্তী বর্ণে যুক্ত হয়। যেমন-

ঋ + অ = র                     পিতৃ + অরি = পিত্ররি

ঋ + আ = রা                    পিতৃ + আলয় = পিত্রালয়


সূত্র-15 কতকগুলো সন্ধি কোন নিয়ম অনুসারে হয় না। এগুলোকে নিপাতনে সিন্ধ বলে । যেমন-

কুল + অটা = কুলটা            অন্য + অন্য = অন্যান্য

গো + অক্ষ = গবাক্ষ             গো + ইন্দ্র = গবেন্দ্র

প্র + ঊঢ় = প্রৌঢ়                মার্ত + অণ্ড =মার্তণ্ড


B) তৎসম ব্যঞ্জনসন্ধি


স্বরে আর ব্যঞ্জনে, ব্যঞ্জনে আর ব্যঞ্জনে এবং ব্যঞ্জনে আর স্বরে মিলিত হয়ে যে সন্ধি হয় তাকে ব্যঞ্জন সন্ধি বলে। স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের মিলনের প্রকৃতি অনুসারে এই সন্ধির নিয়ম নিম্নরূপ।


ব্যঞ্জনসন্ধি তিনরকমভাবে হয়ে থাকে। যথা-

১. ব্যাঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনি

সূত্র- ক্, চ্, ট্, ত্, প্ এর পরে স্বরসন্ধি থাকলে সেগুলো যথাক্রমে গ্, জ্, ড্, দ্, ব্ হয়। পরবর্তী স্বরধ্বনিটি পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির সাথে যুক্ত হয়। যেমন: দিক্ + অন্ত = দিগন্ত (ক্ + অ = গ্), ণিচ্ + অন্ত = ণিজন্ত (চ্ + অ = জ) ইত্যাদি।


২. স্বরধ্বনি + ব্যাঞ্জনধ্বনি

সূত্র- স্বরধ্বনির পর ছ থাকলে উক্ত ব্যাঞ্জনধ্বনিটি দ্বিত্ব হয়। যেসন: এক + ছত্র = একচ্ছত্র (অ+ছ = চ্ছ)।


৩. ব্যাঞ্জনধ্বনি + ব্যাঞ্জনধ্বনি

সূত্র-1 ত্ ও দ্ – এর পর চ্ ও ছ্ থাকলে ত্ ও দ্ এর স্থানে চ্ হয়। যেমন: সৎ + চিন্তা = সচ্চিন্তা (ত্ + চ = চ্চ), উৎ + ছেদ = উচ্ছেদ (ত+ছ=চ্ছ)।

সূত্র-2 ত্ ও দ্ – এর পর জ্ ও ঝ থাকলে ত্ ও দ্ এর স্থানে জ্ হয়। যেমন: সৎ + জন = সজ্জন (ত্ + জ্ = জ্জ), কুৎ + ঝটিকা = কুজ্ঝটিকা (ত+ঝ=জ্ঝ)।

সূত্র-3 ত্ ও দ্ – এর পর শ্ থাকলে ত্ ও দ্ এর স্থানে চ্ এবং শ্ এর স্থানে ছ উচ্চারিত হয়। যেমন: উৎ + শ্বান = উচ্ছাস (ত্ + শ = চ্ + ছ = চ্ছ)।

সূত্র-4 ত্ ও দ্ – এর পর ড্ থাকলে ত্ ও দ্ এর স্থানে ড্ হয়। যেমন: উৎ + ডীন = উড্ডীন (ত্ + ড = ড্ড)

সূত্র-5 ত্ ও দ্ – এর পর হ্ থাকলে ত্ ও দ্ এর স্থানে দ এবং হ এর স্থানে ধ্ উচ্চারিত হয়। যেমন: উৎ + হার = উদ্ধার (ত্ + হ = দ্ + ধ = দ্ধ)।

সূত্র-6 ত্ ও দ্ – এর পর ল্ থাকলে ত্ ও দ্ এর স্থানে ল্ উচ্চারিত হয়। যেমন: উৎ + লাস = উল্লাস (ত্ + ল = ল্ল)

ব্যঞ্জন ধ্বনিসমূহের যে কোনো বর্গের অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনির পর যে কোনো বর্গের ঘোষ অল্পপ্রাণ ও ঘোষ মহাপ্রাণ ধ্বনি কিংবা ঘোষ অল্পপ্রাণ তালব্য ধ্বনি, (য > জ), ঘোষ অল্পপ্রাণ ওষ্ঠ ধ্বনি (ব), ঘোষ কম্পনজাত দন্তমূলীয় ধ্বনি (র) কিংবা ঘোষ অল্পপ্রাণ ওষ্ঠ্য ব্যঞ্জনধ্বনি (ব) থাকলে প্রথম অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি ঘোষ অল্পপ্রাণরূপে উচ্চারিত হয়। যেমন: উৎ + যোগ = উদ্যোগ।

সূত্র-7 ঙ, ঞ, ণ, ন, ম পরে থাকলে পূর্ববর্তী অঘোষ অল্পপ্রাণ স্পর্শধ্বনি সেই বর্গীয় ঘোষ স্পর্শধ্বনি কিংবা নাসিক্য ধ্বনি হয়। যেমন: তৎ + মধ্যে = তন্মধ্যে।

সূত্র-8 ম্ এর পর যে কোনো বর্গীয় ধ্বনি থাকলে ম্ ধ্বনিটি সেই বর্গের নাসিক্য ধ্বনি হয়। যেমন: সম্ + চয় = সঞ্চয়।

সূত্র-9 ম্- এর পর অন্তঃস্থ ধ্বনি য, র, ল, ব, কিংবা শ. ষ, স, ঞ থাকলে, ম্ স্থলে অনুস্বার(ং) হয়। যেমন: সম্ + যম = সংযম।

সূত্র-10 চ্ ও জ্ – এর পরে নাসিক্য ধ্বনি তালক্য হয়। যেমন: রাজ + নী = রাজ্ঞী (চ্ + ন = চ্ + জ)।

সূত্র-11 দ্ ও ধ্ এর পরে স্ থাকলে, দ্ ও ধ্ এর স্থলে অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি হয়। যেমন: বিপদ্ + সংকুল = বিপৎসংকুল।

সূত্র-12 ষ্ – এর পরে ত্ বা থ্ থাকলে, যথাক্রমে ত্ ও থ্ স্থানে ট ও ঠ হয়। যেমন: ষ্ষ + থ = ষষ্ঠ।

বিশেষ নিয়মে সাধিত কতগুলো সন্ধি-

সূত্র- উৎ + স্থান = উত্থান, সম্ + কার = সংস্কার, উৎ + স্থাপন = উত্থাপন, সম্ + কৃত = সংস্কৃত, পরি + কার = পরিষ্কার।


C) তৎসম বিসর্গ সন্ধি


সংস্কৃত সন্ধির নিয়মে পদের অন্তস্থিত র্ ও স্ অনেক ক্ষেত্রে অঘোষ উষ্মধ্বনি অর্ধ্যৎ হ ধ্বনিরূপে উচ্চারিত হয় এবং তা বিসর্গ (ঃ) রূপে লেখা হয়। র্ ও স্ বিসর্গ ব্যঞ্জনধ্বনিমালার অন্তর্গত। সে কারণে বিসর্গ সন্ধি ব্যঞ্জনসন্ধির অন্তর্গত। বস্তুত বিসর্গ র্ ও স্ এর সংক্ষিপ্ত রূপ। বিসর্গকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা:

1. র-জাত বিসর্গ: র-এর স্থানে যে বিসর্গ হয় তাকে র-জাত বিসর্গ বলে। যেমন: অন্তর – অন্তঃ।

2. স-জাত বিসর্গ: স-এর স্থানে যে বিসর্গ হয় তাকে স-জাত বিসর্গ বলে। যেমন: শিরস্ – শিরঃ।

বিসর্গের সাথে অর্থ্যাৎ র্ ও স্ -এর সাথে স্বরধ্বনি কিংবা ব্যঞ্জনধ্বনির যে সন্ধি হয় তাকে বিসর্গ সন্ধি বলে। বিসর্গ সন্ধি দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ

  • বিসর্গ + স্বর
  • বিসর্গ + ব্যঞ্জন


তৎসম বিসর্গ সন্ধি নির্ণয়ের কিছু সূত্রঃ


১। চ কিংবা ছ পরে থাকলে বিসর্গ স্থানে শ হয় । যেমন-

নিঃ + চয় = নিশ্চয়        শিশ্নঃ + ছেদ = শিরচ্ছেদ

দুঃ + চিন্তা = দুশ্চিন্তা     দুঃ + ছেদ্য = দুচ্ছেদ্য


২। ট কিংবা ঠ পরে থাকলে বিসর্গ স্থানে ষ হয় । যেমন –

ধনুঃ + টঙ্কার = ধনুষ্টঙ্কার      নিঃ + ঠুর = নিষ্ঠুর


৩। ত কিংবা থ পরে থাকলে বিসর্গ স্থানে স হয় । যেমন-

নিঃ + তার = নিস্তার     মনঃ + তাপ = মনস্তাপ

দুঃ + তর = দুস্তর         ইতঃ + তত = ইতস্তত

বিঃ + তার =বিস্তার      দুঃ + থ = দুস্থ


৪। ক , খ , প , ফ পরে থাকলে অ – কার কিংবা আ-কারের পরস্থিত বিসর্গ স্থানে স হয় এবং অন্য স্বরের পরস্থিত বিসর্গ স্থানে ষ হয় । যেমন-

পুরঃ + কার = পুরস্কার      আবিঃ + কার = আবিষ্কার নমঃ + করি = নমস্কার       নিঃ + ফল — নিষ্ফল

ভাঃ + কর = ভাস্কর           নিঃ + পাপ — নিষ্পাপ


৫। বর্গের তৃতীয় , চতুর্থ , পঞ্চম বর্ণ কিংবা য , র , ল , ব , হ পরে থাকলে পূর্ববর্তী অ – কার ও তৎপরবর্তী বিসর্গ উভয়ে মিলে ও – কার হয় , এবং ও – কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয় । যেমন-

তিরঃ + ধান = তিরোধান    পুরঃ + হিত = প্রোহিত

মনঃ + রম = মনোরম         সরঃ + বর = সরোবর

মনঃ + যোগ = মনোযোগে    মনঃ + হর = মনোহর


৬। স্বরবর্ণ , বর্গের তৃতীয় , চতুর্থ , পঞ্চম বর্ণ কিংবা য , র , ল , ব , হ পরে থাকলে অ , আ ভিন্ন অন্য স্বরবর্ণের পরস্থিত বিসর্গ স্থানে র হয় । যেমন-

নিঃ + ভয় = নির্ভক্স       অন্তঃ + গত = অন্তর্গত

দুঃ + নাম = দুর্নাম         দুঃ + গতি = দুর্গতি


৭। র – পরে থাকলে অ , আ ভিন্ন অন্য স্বরবর্ণের পরবর্তী বিসর্গ স্থানে যে বর্ণ হয় , তা লােপ পায় এবং পূর্বের হ্রস্বস্বর দীর্ঘস্বর হয় । যেমন—

নিঃ + রোগ = নীরোগ       নিঃ + রস = নীরস

নিঃ + রব — নীরব           চক্ষুঃ + রোগ = চক্ষুরোগ


৮। অ – কার ভিন্ন অন্য স্বর পরে থাকলে কেবল বিসর্গের লোপ হয় এবং পূর্ববর্তী ও পরবর্তী স্বরধ্বনি অবিকৃত বা অবিকল থাকে । যেমন-

অতঃ + এব = অতএব       যশঃ + ইচ্ছা = যশইচ্ছা

শিরঃ + উপরি = শিরউপরি


৯। কোন কোন ক্ষেত্রে সন্ধির বিধান নেই । যেমন-

প্রতঃ + কাল = প্রাতঃকাল   বাচঃ + পতি = বাচস্পতি ভাঃ + কর = ভাস্কর             অহঃ + অহ = অহরহ

অহঃ + নিশ = অহর্নিশ        মনঃ + কষ্ট = মনঃকষ্ট

শিরঃ + পীড়া = শিরঃপীড়া


১০। যুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনি স্ত , স্থ , স্প ইত্যাদি থাকলে বিসর্গ অবিকৃত থাকে বা লোপ হয় । যেমন —

নিঃ + স্তব্ধ = নিঃস্তব্ধ বা নিস্তব্ধ , নিঃ + স্পন্দ = নিঃস্পন্দ বা নিস্পন্দ ।


নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি


যে সন্ধিগুলো সন্ধির প্রচলিত নিয়মগুলো মেনে চলে না, তাদের নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি বলে। তবে শুধুমাত্র তৎসম শব্দেই নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি হয়। যেমন –

কুল + অটা = কুলাটা

প্র + ঊঢ় = প্রৌঢ়

অন্য + অন্য = অন্যান্য

গো + অক্ষ = গবাক্ষ

গো + ইন্দ্র = গবেন্দ্র

মার্ত + অণ্ড = মার্তণ্ড

শার + অঙ্গ = শারজ্ঞ

শুদ্ধ + ওদন = শুদ্ধোদন

স্ব + ঈর = স্বৈর

২. ব্যঞ্জন সন্ধি

আ + চর্য = আশ্চর্য

গো + পদ = গোষ্পদ

বন্ + পতি = বনস্পতি

বৃহৎ + পতি = বৃহস্পতি

দিব্ + লোক = দ্যুলোক

তৎ + কর = তস্কর

পর্ + পর = পরস্পর

মনস্ + ঈষা = মনীষা

ষট্ + দশ = ষোড়শ এক্ + দশ = একাদশ।


সন্ধি কাকে বলে ? সন্ধি কত প্রকার ও কি কি? সন্ধি বিচ্ছেদের নিয়ম PDF


অনুশীলনী

Students Care

স্টুডেন্টস কেয়ারে সকলকে স্বাগতম! বাংলা ভাষায় জ্ঞান চর্চার সমস্ত খবরা-খবরের একটি অনলাইন পোর্টাল "স্টুডেন্ট কেয়ার"। পশ্চিমবঙ্গের সকল বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের এবং সমস্ত চাকুরী প্রার্থীদের জন্য, এছাড়াও সকল জ্ঞান পিপাসু জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিবর্গদের সুবিধার্থে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।  

5 thoughts on “সন্ধি কাকে বলে ? সন্ধি কত প্রকার ও কি কি? সন্ধি বিচ্ছেদের নিয়ম PDF

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: স্টুডেন্টস কেয়ার কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত !!