নানকিং সন্ধি এবং টিয়েনসিন সন্ধি এর মূল শর্তগুলি আলোচনা করো।
আজকে ২০১৮ সালের উচ্চমাধ্যমিকে ইতিহাস বিষয়ে আসা বড়ো প্রশ্নের উত্তর গুলি নিয়ে আলোচনা করা হল। আজকের প্রশ্ন হল নানকিং সন্ধি (Treaty of Nanking 1842) এবং টিয়েনসিন সন্ধির মূল শর্তগুলি আলোচনা করো। উত্তরটি নিচে দেওয়া হল-
নানকিং সন্ধি এবং টিয়েনসিন সন্ধি এর মূল শর্তগুলি আলোচনা করো।
উঃ চিনের বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ ইউরোপীয় বণিক জাতিগুলিকে প্রলুব্ধ করে, যে কারণে ষোড়শ শতকে পোর্তুগিজ এবং সপ্তদশ শতকে ওলন্দাজ, ইংরেজ, স্পেনীয়রা চিনে বাণিজ্য কুঠি নির্মাণ করে।
তবে চিনারা এইসব বিদেশিদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনে মোটেই আগ্রহী ছিল না। তবুও বিভিন্ন বাধানিষেধ ও অপমানজনক শর্তাদি মেনে ইউরোপীয়রা একমাত্র চিনের ক্যান্টন বন্দরে বাণিজ্য করার অধিকার পায়। ইতিমধ্যে আফিম বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে ইংরেজদের সঙ্গে চিনের বিরোধ বাধে, যা ইতিহাসে অহিফেনের যুদ্ধ বা ইঙ্গ-চিন যুদ্ধ নামে পরিচিত।
অহিফেনের যুদ্ধ বা ইঙ্গ-চিন যুদ্ধর পর্যায়
দুটি পর্বে এই যুদ্ধ হয়েছিল –
(ক) প্রথম অহিফেন যুদ্ধ (১৮৩৯-৪২ খ্রিস্টাব্দ),
(খ) দ্বিতীয় অহিফেন যুদ্ধ (১৮৫৬-৫৮ খ্রিস্টাব্দ)
১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথম অহিফেনের যুদ্ধে চিনকে পরাস্ত করে ব্রিটেন চিনের দুর্বল মাঞ্চু শাসককে অপমানজনক নানকিং সন্ধি (১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে) স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে
নানকিং সন্ধির শর্তঃ
এই সন্ধির শর্তানুসারে-
- (১) চিনের মাঞ্জু সরকার হংকং, কৌলুন দ্বীপ ব্রিটেনকে ছেড়ে দেয়।
- (২) দক্ষিণ চিনের ক্যান্টন সহ পাঁচটি বন্দর ব্রিটেনকে বাণিজ্যের জন্য ছেড়ে দিতে হয় ।
- (৩) এই পাঁচটি বন্দরে ব্রিটিশ বণিকরা অতি-রাষ্ট্রিক অধিকার লাভ করে।
- (৪) ব্রিটেনের পথ ধরে আমেরিকা, ফ্রান্স, নরওয়ে, সুইডেন প্রভৃতি দেশ চিনের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরে উৎসাহিত হয়র
১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে চিনের মাঞ্চু সরকার নানকিং সন্ধি অমান্য করলে দ্বিতীয় অহিফেন যুদ্ধ শুরু হয়।
চিনা ভূখণ্ডে লুটপাট :
রাশিয়া দূরপ্রাচ্যে তার সাম্রাজ্য বিস্তার করলে রুশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জাপান সামরিক বাধার সৃষ্টি করে। চিনের উপর রুশ ও জাপান সাম্রাজ্যবাদের থাবার আঘাত পড়লে ব্রিটেনসহ অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী দেশ আশঙ্কা প্রকাশ করে যে গোটা চিনদেশকে রাশিয়া ও জাপান মিলে গ্রাস করবে।
এমতাবস্থায় চিনের ভূখণ্ডে সহিংস লুঠপাঠ শুরু হয়ে। ঐতিহাসিক ভিনাক-এর মতে, “তরমুজকে যেমন লোকে খণ্ড খণ্ড করে আহার করে, ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি চিনা তরমুজকে তেমনি করে বাঁটোয়ারা করতে উদ্যত হয়।
নানকিংয়ের সন্ধির পর দ্বিতীয় অহিফেন যুদ্ধে চিন পরাজিত হলে ইংলণ্ড ও ফ্রান্স টিয়েনথিনের অসম সন্ধির শর্ত চিনের উপর চাপিয়ে দেয়।
টিয়েনসিন সন্ধির শর্ত
টিয়েনসিন সন্ধির (১৮৫৮) শর্তগুলি হল-
- (১) চিন ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সকে প্রচুর ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়।
- (২) আরোও ১২টি কন্দর চিন বিদেশি বণিকদের জন্য খুলে দেয়।
- (৩) রাজধানী পিকিংয়ে বিদেশি দূতাবাস স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেয় চিন।
- (৪) ছাড়পত্রের মাধ্যমে বিদেশিরা চিনের অভ্যন্তরে অবাধ ভ্রমণের এবং খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারকরা চিনে বসবাস ও ধর্মপ্রচারের অনুমতি পায়।
- (৫) বিদেশি বণিকেরা বাণিজ্য শুল্ক হ্রাস পায় ।
- (৬) চিনে নির্দিষ্ট শুল্কের বিনিময়ে আফিমের ব্যবসা চিনে বৈধ বলে স্বীকৃত হয়। (৭) চিনের অভ্যন্তরে বিদেশি বণিকদের অতি রাষ্ট্রিক অধিকার স্বীকৃত হয়।
অধ্যাপক সব্যসাচী ভট্টাচার্যের মতে যদি দেশের মানুষ শিল্পকর্ম ছেড়ে চাষ-আবাদে জীবিকা অর্জন শুরু করে অথবা জাতীয় আয়ে কৃষিজ অংশ বাড়তে থাকে ও শিল্পজ অংশ কমতে থাকে তবে তাকে অব-শিল্পায়ন বলে।
অবশ্য জাতীয়তাবাদী নেতা, বিশেষ করে দাদাভাই নওরোজি, রমেশচন্দ্র দত্ত, মহাদেব গোবিন্দ রানাডে প্রমুখ ও পরবর্তীকালে রজনী পাম দত্ত, গ্যাডগিল, নরেন্দ্রকৃয় সিংহ, বিপান চন্দ্র, অমিয় বাগচি প্রমুখ ঐতিহাসিক সাধারণভাবে ভারতীয় হস্তশিল্পের বিপর্যয়কে অব-শিল্পায়ন বলেছেন।
উচ্চমাধ্যমিক ২০১৮ ইতিহাসের অন্যান্য প্রশ্ন ও উত্তর গুলি দেখার জন্য এখানে ক্লিক করো
উচ্চমাধ্যমিকের বিগত বছরের প্রশ্ন ও উত্তর PDF ডাউনলোড করার জন্য এখানে ক্লিক করো।
Source: wbchse.nic.in