পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েতীকরণের উদ্দেশ্য কি ছিল? বিভিন্ন দেশে এর কি প্রভাব পড়েছিল?

পোস্টটি শেয়ার করুন
5/5 - (1 vote)

আজকে ২০১৮ সালের উচ্চমাধ্যমিকে ইতিহাস বিষয়ে আসা বড়ো প্রশ্নের উত্তর গুলি নিয়ে আলোচনা করা হল। আজকের প্রশ্ন হল পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েতীকরণের উদ্দেশ্য কি ছিল? বিভিন্ন দেশে এর কি প্রভাব পড়েছিল? উত্তরটি নিচে দেওয়া হল-

পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েতীকরণের উদ্দেশ্য কি ছিল? বিভিন্ন দেশে এর কি প্রভাব পড়েছিল?

উঃ

পূর্ব ইউরোপে রুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা :

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানে সোভিয়েত রাশিয়ার লালফৌজ পূর্ব ইউরোপীয় অঞ্চল জার্মানির হাত থেকে মুক্ত করে সেখানে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়া এসব অঞ্চলে কমিউনিস্ট ভাবাদর্শের প্রসার ও রাশিয়ার অনুগত কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। রাশিয়া তার ভূখণ্ড সংলগ্ন লাটভিয়া, এস্তোনিয়া, লিথুয়ানিয়া প্রভৃতি ছোটো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলিকে সরাসরি রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করে।

Join us on Telegram

এ ছাড়া পূর্ব ইউরোপের যুগোশ্লাভিয়া, চেকোশ্লোভাকিয়া, বুলগেরিয়া, আলবেনিয়া, হাঙ্গেরি, রুমানিয়া, পোল্যান্ড ও পূর্ব জার্মানি—এই আটটি দেশে রুশ-অনুগত কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

রুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে/সোভিয়েতীকরণের উদ্দেশ্য

পূর্ব ইউরোপে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা বা সোভিয়েতীকরণের উদ্দেশ্যর পিছনে রাশিয়ার যেসব উদ্দেশ্যগুলি ছিল তা হল-

১। সাম্যবাদী আদর্শের প্রসার-

স্ট্যালিন মনে করতেন যে, সকল বিজেতাই বিজিত অঞ্চলের ওপর নিজেদের মতাদর্শ ও সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাই পূর্ব ইউরোপের বিজিত অঞ্চলে রাশিয়ার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা যুক্তিসংগত। এজন্য সাম্যবাদী ভাবধারার ধারাবাহিক প্রসারের জন্য এই অঞ্চলে রাশিয়ার আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন ছিল।

২। শক্তিশূন্যতা-

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইংল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশের আর্থিক ও সামরিক শক্তি নিঃশেষ হওয়ার ফলে ইউরোপে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয় রাশিয়া তা কাজে লাগাতে পূর্ব ইউরোপে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে।

৩। নিরাপত্তা বলয় :

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পূর্ব ইউরোপের ওপর দিয়ে জার্মানির হিটলার কর্তৃক রাশিয়া আক্রমণের ঘটনা রুশ নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করেছিল। পূর্ব ইউরোপে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে রাশিয়া নিজের জন্য একটি নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল।

৪। অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন :

যুদ্ধবিধ্বস্ত রাশিয়ার অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের জন্য পূর্ব ইউরোপের সম্পদের ব্যবহার; এবং এখানকার বাজার দখল রাশিয়ার কাছে খুবই প্রয়োজন ছিল।

৫। কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতার অবসান :

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে রাশিয়া কুটনৈতিক দিক থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলিতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিজস্ব প্রভাব-বলয় তৈরি করে রাশিয়া সেই বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটাতে চেয়েছিল।

সোভিয়েতীকরণের প্রভাবঃ

স্ট্যালিন ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে রাজা মাইকেলকে কমিউনিস্টদের নিয়ে একটি জাতীয় গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের নির্দেশ দেন।

১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে রুমানিয়ার সাধারণ নির্বাচনে কমিউনিস্ট সমর্থিত জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। ক্ষমতা লাভ করে নতুন সরকার কমিউনিস্ট বিরোধীদের ওপর সীমাহীন অত্যাচার শুরু করে।

(১) রাজা মাইকেলের পদত্যাগ-

নতুন সরকারের তীব্র অত্যাচারে রাজা মাইকেল ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে পদত্যাগ করেন। কিছুদিনের মধ্যে সকল বিরোধীদের নিধন করে, একমাত্র অনুগতদের নিয়ে রুমানিয়ান ওয়ার্কার্স পার্টি (Rumanian Workers’ Party) গঠিত হয়।

(২) স্বদেশভূমি ফ্রন্ট :

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে বুলগেরিয়ায় কমিউনিস্ট, অকমিউনিস্ট সকলকে নিয়ে সোভিয়েত-অনুগত একটি ‘স্বদেশভূমি ফ্রন্ট’ (Fatherland Front) গঠন করা হয়। ২) কমিউনিস্ট নিধন : এরপর ক্রমে অকমিউনিস্টদের নিধন শুরু হয়। জাতীয়তাবাদী নেতা নিকোলা পেটকভ এর নেতৃত্বে ‘পেজেন্টস্ ইউনিয়ন’ দল কমিউনিস্টদের প্রবল বিরোধিতা করে।

(৩) চেকোশ্লোভাকিয়া :

প্রেসিডেন্ট নেনেস দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর চেকোশ্লোভাকিয়ার ভূতপূর্ব অকমিউনিস্ট প্রেসিডেন্ট এডওয়ার্ড বেনেস রাশিয়া থেকে ফিরে এসে চেকোশ্লোভাকিয়ার প্রেসিডেন্ট পদ লাভ করেন।

বেনেসের সরকার ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে আমেরিকার ঘোষিত মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলে রাশিয়া শঙ্কিত হয় যে, চেকোশ্লোভাকিয়ায় সাম্যবাদ-বিরোধী। সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সেখানে রুশ আধিপত্য বিনষ্ট হবে। ফলে স্ট্যালিনের নির্দেশে চেকোশ্লোভাকিয়ায় অকমিউনিস্ট নিধন শুরু হয়।

(৪) কমিউনিস্ট অফিসার নিয়োগ:

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নোসেক ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজধানী প্রাগের আটজন পুলিশ অফিসারকে পদচ্যুত করে কমিউনিস্ট মনোভাবাপন্ন নতুন আটজন অফিসার নিয়োগ করেন। সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রী এই ঘটনার প্রতিবাদ করে পদচ্যুত অফিসারদের পুনর্নিয়োগের দাবি জানান।

(৫) অকমিউনিস্ট মন্ত্রীদের পদত্যাগ :

কমিউনিস্ট প্রধানমন্ত্রী গোটওয়াল্ড এবিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সমর্থন করলে বেশ কয়েকজন অকমিউনিস্ট মন্ত্রী পদত্যাগপত্র পেশ করেন। দেশে কমিউনিস্ট ও অকমিউনিস্টদের মধ্যে প্রবল বিরোধ শুরু হয়। কমিউনিস্ট পরিচালিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলিতে ধর্মঘট চলতে থাকে।

শেষপর্যন্ত প্রেসিডেন্ট বেনেস মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র গ্রহণে বাধ্য হন এবং দেশে কমিউনিস্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ মন্ত্রীসভা গঠিত হয়।

উচ্চমাধ্যমিক ২০১৮ ইতিহাসের অন্যান্য প্রশ্ন ও উত্তর গুলি দেখার জন্য এখানে ক্লিক করো

উচ্চমাধ্যমিকের বিগত বছরের প্রশ্ন ও উত্তর PDF ডাউনলোড করার জন্য এখানে ক্লিক করো।

Source: wbchse.nic.in

Students Care

স্টুডেন্টস কেয়ারে সকলকে স্বাগতম! বাংলা ভাষায় জ্ঞান চর্চার সমস্ত খবরা-খবরের একটি অনলাইন পোর্টাল "স্টুডেন্ট কেয়ার"। পশ্চিমবঙ্গের সকল বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের এবং সমস্ত চাকুরী প্রার্থীদের জন্য, এছাড়াও সকল জ্ঞান পিপাসু জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিবর্গদের সুবিধার্থে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: স্টুডেন্টস কেয়ার কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত !!