বাঙালির সপ্ত মহাদেশের সপ্ত শৃঙ্গ জয় || Satyarup Siddhanta
একজন বাঙালির সপ্ত মহাদেশের সপ্ত শৃঙ্গ জয় || Successfully climbed Seven Summit by Satyarup Siddhanta
আমরা সকলেই জানি সৌরমন্ডলের মধ্যে একমাত্র সজীব গ্রহ পৃথিবীতে রয়েছে সাতটি বৃহৎ মহাদেশ। এবং এই সাত মহাদেশের প্রত্যেকটিতে রয়েছে সু-উচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। যাকে সপ্ত শৃঙ্গ বা একত্রে ‘সেভেন সামিট’ নামে ডাকা হয়। ‘সেভেন সামিট’ এর অর্থ সাত মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। এই সাত পর্বত জয় করা যেকোনো পর্বতারোহীরই স্বপ্ন।পর্বতারোহীরাতো শুধু স্বপ্ন দেখেই সন্তুষ্ট থাকে না, তারা স্বপ্নকে জয় করার জন্যও এগিয়ে যান এবং জয় ও করেন। তেমনি ভাবে পৃথিবীতে এমন অনেক পর্বতারোহী রয়েছেন যেনারা ‘সেভেন সামিট’ জয় করেছেন। এদের মধ্যে একজন বাঙালি ও রয়েছেন যাঁর নাম Satyarup Siddhanta । এছাড়াও এর আগে অনেকে এই সেভেন সামিট জয় করেছেন, তাঁদের নাম বলার আগে আমরা ‘সেভেন সামিট’ সম্পর্কে জেনে নেই।নিচে দেখুন সত্যব্রতর সেভেন সামিট জয় করার মুহূর্তের সেই টুইট
The 7 Summits . . . What a journey it was!Successfully summited mt vinson massif and safely back at high camp. Th… https://t.co/TLZS1nrccR
— Satyarup Siddhanta (@SatyarupS) December 16, 2017

এই সপ্ত শৃঙ্গ হচ্ছে: এশিয়া মহাদেশের মাউন্ট এভারেস্ট (৮,৮৪৮ মি), দক্ষিন আমেরিকার অ্যাকোনকাগুয়া (৬,৯৬১ মি), উত্তর আমেরিকার মাউন্ট ম্যাককিনলে বা ডেনালি (৬,১৯৪ মি), আফ্রিকার মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো (৫,৮৯৫ মি), অ্যান্টার্কটিকার ভিনসন মাসিফ (৫,৬৪২ মি), ওশেনিয়া প্লেটের পুঞ্চাক জায়া (৪,৮৮৪ মি) অথবা কোসকিউসজো (২,২২৮ মি) এবং ইউরোপের মাউন্ট এলব্রাস (৫,৬৪২ মি)। নিম্নে আর একটি তালিকা দেওয়া হল দেখুন।

এবার এখানে একটি বিতর্ক রয়েছে। বিতর্কটি ওশিয়ানিয়া মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গকে নিয়ে। কারো কারো তথ্য মনে ওশিয়ানিয়ার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল পুঞ্চাক জায়া, যেটি ওশিয়ানিয়া প্লেটে অবস্থিত কিন্তু ইন্দোনেশিয়া দেশের মধ্যে। যেটি আবার এশিয়া মহাদেশের অধীনে রয়েছে। সেই দিন থেকে প্রকৃত ওশিয়ানিয়ার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ধরা হলে দেখা যাবে মাউন্ট কোসকিউসজোর নাম সামনে আসছে। তাই এই বিতর্ক সমাধানের জন্য দুটি মাপ কাঠি নির্ণয় করা হয়েছে- ১. Bass list এবং ২. Messener list। ওপরের তালিকার দ্রব্যষ্ট।
প্রথম ‘সেভেন সামিট’ জয় করেন কে?
১৯৮৫ সালের ৩০ এপ্রিল সর্বপ্রথম ‘সেভেন সামিট’ জয় করার গৌরব অর্জন করেন রিচার্ড বাস নামের এক পর্বতারোহী। ইনি Messener list-এ থাকা পর্বত গুলি জয় করেছিলেন। এবং ১৯৮৬ সালে কানাডার পর্বতারোহী পেট্রিক ম্যারো Bass list-এ থাকা পর্বত শৃঙ্গ গুলিকে প্রথম জয় করেন। এর পর ১৯৯০ সালে রব হ্যাল এবং গ্রে বেল প্রথম মহিলা পর্বতারোহী যিনি সেভেন সামিট জয় করেছিলেন। সম্প্রতি ভারতীয় বাঙালি সত্যরূপ যার বাড়ি বেহালার ঠাকুরপুকুরে। এবার এই সাতটি মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক-
৭. মাউন্ট এলব্রাস

সমগ্র ইউরোপ মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল মাউন্ট এলব্রাস। এটির পশ্চিমের অংশটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫,৬৪২ মিটার উঁচুতে অবস্থিত এবং পূর্বের শৃঙ্গটি ৫,৬২১ মি। পর্বত হলেও আসলে এটি একটি আগ্নেয়গিরি। পশ্চিমের শৃঙ্গটি জয় করা হয়েছিল ১৮৭৪ সালে এবং পূর্বের শৃঙ্গে প্রথম মানুষের পা পড়েছিল ১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দে। এলব্রাস পর্বত রাশিয়ার ইউরোপীয় অংশের দক্ষিণাংশে ও জর্জিয়ার সাথে রাশিয়ার সীমান্তের ঠিক উত্তরে অবস্থিত একটি পর্বত। ২০১৪ সালে এখানে আরোহন করেন সত্যব্রত।
৬.১ কোসকিউসজো

অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চশৃঙ্গ হল কোসকিউসজো। যার উচ্চতা ২,২২৮ মি। এই শৃঙ্গে প্রথম মানুষের পা পরে ১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দে।
৬.২ পুঞ্চাক জায়া

এটি আসলে ওশেনিয়া প্লেটে অবস্থিত ইন্দোনেশিয়ার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। বিতর্কিত ভাবে এটিকে ওশিয়ানিয়ার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ধরা হয়ে থাকে। পুঞ্চাক জায়া পর্বতটি ৪,৮৮৪ মিটার উঁচু। “পুঞ্চাক জায়া” এর অর্থ বিরাট পর্বতশৃঙ্গ। এই পর্বতকে Carstensz Pyramid নামেও ডাকা হয়।
৫. ভিনসন ম্যাসিফ

এটি অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। এটি একটি স্তূপপর্বত যেটি দৈর্ঘ্যে ২১ কিমি এবং প্রস্থে ১৩ কিমি। পর্বতশৃঙ্গটি ৪,৮৯২ মিটার। দক্ষিন মেরু থেকে প্রায় ৭৫০ মাইল দূরে অবস্থিত এই পর্বতের বৈরি আবহাওয়ার জন্য এর শীর্ষে আরোহণ করা অনেকটাই কষ্টকর। ১৯৬৬ সালে এই পর্বতে প্রথম কোনো মানুষ আরোহন করে।
৪. কিলিমাঞ্জারো

আফ্রিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ চূড়া কিলিমাঞ্জারো। সোয়াহিলি ভাষায় “কিলিমা” যার অর্থ পাহাড় এবং “জারো” যার অর্থ হল চকচকে বা সাদা। আফ্রিকার তাঞ্জিনিয়াতে অবস্থিত এই পর্বতটি আগ্নেয়গিরি থেকে উৎপন্ন তিনটি শৃঙ্গ রয়েছে। উচ্চতম শৃঙ্গটির নাম কিবো, যেটি সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় ৫,৮৯৫ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। মাওয়েসি শৃঙ্গটি ৫,১৪৯ মিটার উঁচুতে ও ‘শিরা’ নামের অপর শৃঙ্গটি ৪,০০৫ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। কিবো হল একটি সুপ্ত আগ্নেয়গিরি এবং অপরদিকে মাওয়েসি ও শিরা হল মৃত আগ্নেয়গিরি। এটি নিরক্ষীয় অঞ্চলে অবস্থান করছে কিন্তু মজার বিষয় হল এই পর্বতের চূড়াতে বরফ জমে থাকে, শুধু মাত্র এর অতিরিক্ত উচ্চতার জন্য! কিন্তু অতীতে এই পর্বতের শীর্ষে প্রচুর বরফ থাকলেও ১৯১২ সাল থেকে ২০১১ সালের মধ্যে এই পর্বতের শীর্ষের বরফের পরিমান প্রায় ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন যে, ২০৪০ সালের মাঝে এই পর্বতের বরফ সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে যেতে পারে। ২০১২ সালে এই পর্বত জয়ের মধ্য দিয়ে Satyarup Siddhanta ‘সেভেন সামিট’ বিজয় যাত্রা শুরু হয়েছিল।
৩. ডেনালি পর্বত

এই পর্বতকে মাউন্ট ম্যাককিনলে নামেও ডাকা হয়। ডেনালিই উত্তর আমেরিকার সর্বোচ্চ পর্বত। সমুদ্রতল থেকে এটির উচ্চতা ৬,১৯০ মিটার। এটি উত্তর আমেরিকার আলাস্কাতে অবস্থিত। এই পর্বতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা -৭৫.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট(-৫৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস)পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে। Satyarup Siddhanta ২০১৪ সালে এই পর্বত জয় করেছিলেন।
২. অ্যাকোনকাগুয়া

সমগ্র দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হল অ্যাকোনকাগুয়া। এর উচ্চতা ৬,৯৬১ মিটার। হিমালয় তথা এশিয়া মহাদেশের বাইরে এটি ই সর্বোচ্চ উচ্চতা যুক্ত পর্বতশৃঙ্গ। অ্যাকোনকাগুয়া পর্বত চিলির সীমান্ত থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ২০১৪ সালেই এই পর্বত জয় করেছিলেন বাঙালী পর্বতারোহী Satyarup Siddhanta ।
১. মাউন্ট এভারেস্ট

বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ৮,৮৪৮ মিটার। এই পর্বতশৃঙ্গে মানুষের প্রথম পদচিহ্ন পড়েছিল আজ থেকে প্রায় ৬৪ বছর আগে। ১৯৫৩ সালের ২৯ মে নিউজিল্যান্ডের স্যার এডমন্ড হিলারি এবং নেপালের শেরপা তেনজিং নোরগে সর্বপ্রথম এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করেন। ১৯৭৫ সালের ১৬ মে জাপানের জুনকো তাবেই প্রথম নারী হিসেবে এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করেন। Satyarup Siddhanta এভারেস্ট জয় করেন ২০১৬ সালে।