হ্যাশট্যাগ মি টু আন্দোলনের ইতিহাস || কিভাবে “Me Too” শব্দ দুটি উৎপত্তি হল
হ্যাশট্যাগ মি টু আন্দোলনের ইতিহাস || কিভাবে মি টু (Me Too) শব্দ দুটি উৎপত্তি হল
#Me Too শব্দ দুটি প্রথম কে ব্যাবহার করেছিলেন জানুন
কখনও কখনও উচ্চারিত কিছু শব্দবন্ধ দেশ-কাল-সময়-এর গণ্ডী পেরিয়ে পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। যে শব্দের অভিঘাত খুব সুদূরপ্রসারী হয়। যে শব্দের ব্যঞ্জনা অনেক সময় জীবনের অনেক গোপন সত্য উদ্ঘাটনেও আমাদের সাহসী করে তোলে। সেই রকমি জগৎখ্যাত একটি শব্দবন্ধ হল হ্যাশট্যাগ মি টু । বিগত কয়েক দিন ধরেই সোশাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়াতে বেশ রসালো খবর হিসাবে এই হ্যাশট্যাগ মি টু-র বিভিন্ন তথ্য পরিবেশন হয়ে আসছে সেগুলি আপনারা সকলেই হয়ত লক্ষ করেছেন। বিশেষ করে বলিউডের বিভিন্ন তারকাদের দ্বারাএই হ্যাশট্যাগ মি টু ব্যাবহারের প্রবনতা বেশি দেখা গিয়েছে। কিন্তু এই হ্যাশট্যাগ মি টু আন্দোলনের ইতিহাস কি? হ্যাশট্যাগ মি টু কি শুধুই ভারতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নাকি গোটা বিশ্বের কাছে পরিচিত? মি টু (Me Too) শব্দটি কেন প্রথম ব্যবহার হয়? হয়তো বা অনেকেই সে সম্পর্কে জানেন না। আজ হ্যাশট্যাগ মি টু এর বিভিন্ন তথ্য গুলি আমরা জেনে নেবো।
[আরও পড়ুন- ভুল করেও এই দশটি শব্দ গুগলে সার্চ করবেন না]
♦ হ্যাশট্যাগ মি টু কি?
শুধু ভারত নয় সারা পৃথিবী জুড়েই হ্যাশট্যাগ মি টু আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। সারা পৃথিবীতে মহিলারা সেক্সুয়াল হারাসমেন্ট বা যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে হ্যাশট্যাগ মি টু লিখে নিজের সাথে ঘটে যাওয়া যৌন উৎপীড়নের খবর পোস্ট করছেন। হলিউড, বলিউড, ভারতের রাজনৈতিক ময়দান, এমনকি মিডিয়ার রিপোর্টারও হ্যাশট্যাগ মি টু ব্যবহার করেছেন নিজের সাথে ঘটে যাওয়া যৌন হেনস্থার খবর সকলকে জানাতে। এই মি টু যেন মহিলাদের না বলা দুটি কষ্টের শব্দ। এই #মি টু বেআব্রু করেছে সমাজের বিভিন্ন গণ্য-মান্য ব্যক্তিদের। রিপোর্ট বলছে, ৭৫% মহিলারা তাঁদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া যৌন হেনস্থার খবর নতিভুক্ত করে না।
[কলকাতার সম্পর্কে এই তথ্য গুলি জানলে আপনি অবাক হবেন]
♦ হ্যাশট্যাগ মি টুর উৎপত্তি কবে কিভাবে হয়েছে?
তারানা বার্ক (Tarana Burke) নামে এক মহিলা ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো হ্যাশট্যাগ মি টু লিখে মহিলাদের ওপর ঘটে যাওয়া শারীরিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে নিজের প্রতিবাদের ভাষাকে আরো শান দিয়েছিলেন। আসলে সেই ১৯৯৭ সালে সমাজকর্মী টারানা বার্ক যখন ১৩ বছরের এক কিশোরীর মুখে তার ওপর যৌন নির্যাতনের অভিজ্ঞতার কথা শুনেছিলেন, তখনই তাঁর বুকের ভিতর জন্ম নিয়েছিল ওই ‘মি টু’। ‘মি টু’ আন্দোলনের স্রষ্টা হিসাবে টারানা বার্ক কেই ধরা হয়ে থাকে।

♦ কে এই তারানা বার্ক?
৪৫+ বছরের তারানা বার্ক একজন আমেরিকাবাসী কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা। তারানা একজন সামাজিক কর্মকর্তা। তাছাড়াও তিনি একজন উকিল।

তারানা বার্ক প্রথমবারের মতন মি টু হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেছিলেন। বিশেষ করে পৃথিবীর কৃষ্ণাঙ্গ মহিলাদের ওপর ঘটে যাওয়া অত্যাচার তাকে ভাবিয়ে তুলেছিল এবং তিনি সে কারণে খুব মর্মাহত ছিলেন। মনে মনে পরিকল্পনা করে ফেলেছিলেন ঠিক কি করবেন। যাতে মহিলারা তাদের মনের কথা খুলে বলতে পারে।
[আরও পড়ুন- মুকেশ আম্বানির অট্টালিকার অন্দরমহলের ছবি দেখুন]
২০১৭ সালে তিনি ‘Time person of the year’ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।
সেই সময় গোটা পৃথিবীর মহিলাদেরকে তারানা আবেদন করেন যে, তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া যেকোনো ধরণের অত্যাচারের কথা মি টু হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে পরিষ্কার ভাবে বলার জন্য।
♦ হ্যাশট্যাগ মি টু কেনো?
হ্যাশট্যাগ মি টু আন্দোলন চালানোর পিছনে একটাই কারণ ছিল। কারণ তারানা নিজেই ৬ বছর বয়সে শারীরিক ভাবে শোষিত হয়েছিলেন। তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা তার প্রতিবেশী ঘটিয়েছিল। এখানেই থেমে থাকেনি। পরবর্তীতে সে যখন যুবতী তখন ধর্ষণের মতো ভয়বহতা সামনে আসে। তিনি জানতেন এই কষ্ট কাউকে বলার নয়। ঠিক করেন মি টু ক্যাম্পেইন চালাবেন যাতে মহিলাদেরকে মুখ বুজে এই অত্যাচার সহ্য না করতে হয়।
[জেনে নিন ভারতের জাতীয় পতাকার বিবর্তনের ইতিহাস]
♦ কিভাবে মি টু হ্যাশট্যাগ জনপ্রিয় হল?
সে সময় মাই স্পেস নামের একটি সোশ্যাল মিডিয়া পেজ সক্রিয় ছিল। অত্যাচারিত মহিলাদের কণ্ঠস্বর হিসেবে তিনিই প্রথমবার এই পেজে হ্যাশট্যাগ মি টু ব্যবহার করেছিলেন। তবে নিরবধি কাল ধরে মেয়েরা পৃথিবীর সর্বত্র যৌন হিংসার শিকার হলেও কৃষ্ণাঙ্গ বার্ক-এর ২০০৬ সালে গড়ে তোলা ওই আন্দোলনকে বিশিষ্ট শ্বেতাঙ্গ নারীবাদীরা অবশ্য পাত্তা দেননি দীর্ঘদিন। কোনও সমর্থনই পায়নি তাঁদের।

শেষ পর্যন্ত গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড হলিউড-এর বিখ্যাত সিনেমা প্রযোজক হারভে উইনস্টেইন-এর বিরুদ্ধে সম্প্রতি যৌন পীড়নের একাধিক অভিযোগ প্রকাশ্যে উঠে এলে ওই ‘মি টু’ শব্দ দুটি ছড়িয়ে পড়ে আলিসা মিলানোর হাত ধরে।
♦ আলিসা মিলানোর সেই টুইট-
If you’ve been sexually harassed or assaulted write ‘me too’ as a reply to this tweet. pic.twitter.com/k2oeCiUf9n
— Alyssa Milano (@Alyssa_Milano) October 15, 2017
বিখ্যাত অভিনেত্রী আলিসা মিলানো যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে ১৬ অক্টোবরে ২০১৭ সালে #’মি টু’ শব্দ দুটি সোশাল মিডিয়া টুইটারে প্রথম হ্যাশট্যাগ হিসেবে ব্যবহার করলে সঙ্গে সঙ্গে দাবানলের মতো তা অন্যান্য সোশাল মিডিয়াতেও ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সেই থেকে পৃথিবীর আনাচ কানাচ থেকে কেবলেই বিরামহীন উঠে আসছে ‘মি টু’।
শুধু ভারতে নয় এই সময়ে ৮৫ টি দেশে মি টু হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে পুরুষদের দ্বারা নারীদের বিভিন্ন যৌন নির্যাতনের কথা তুলে ধরছেন।
Tag- #Me_Too, #Me Too, তারানা বার্ক, হ্যাশট্যাগ মি টু, আলিসা মিলানো, হ্যাশট্যাগ মি টু আন্দোলনের ইতিহাস