ভারতের হাইপারলুপ ট্রেন প্রকল্প || Hyperloop Train Project in India
মুম্বাই থেকে পুণে যেতে মাত্র ২৫ মিনিট সময় লাগবে!
ভারতের হাইপারলুপ ট্রেন প্রকল্প
দ্রুত এক স্থান থেকে আরেক স্থানে পৌঁছতে নিশ্চয় আপনি উড়ো জাহাজ বা বিমানের কথা ভাববেন। উড়ো জাহাজের চেয়ে গতিসম্পন্ন কোনো মানববাহী যান হতে পারে- এই ভাবনাটাই অনেকটা অমূলক মনে হয়। তবে বুলেট ট্রেনকেও আলোচনা থেকে বাদ দেওয়া যায় না। কিন্তু সবকিছুকে ছাড়াতে এবার আসছে হাইপারলুপ ট্রেন। এর সর্বোচ্চ গতি কত জানেন? হাইপারলুপ ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১২২৪ কিলোমিটার পর্যন্ত। ৬শ’ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে এই ট্রেনে লাগবে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট! ভারতের হাইপারলুপ ট্রেন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পুণে থেকে মুম্বাই যেতে সময় লাগবে মাত্র ২৫ মিনিট।
![হাইপারলুপ ট্রেন](https://www.studentscaring.com/wp-content/uploads/2018/05/HARDT-Hero-Shot-Red.jpg)
চীন-জাপান কে পেছোনে ফেলে দ্রত গতিতে ছুটবে এবার ভারত! হ্যাঁ আপনি ঠিকই পড়েছেন, সম্প্রতি ভারত সরকার ও মহারাষ্ট্র সরকার আমেরিকার ‘ভার্জিন’ কোম্পানির সাথে একটি মৌ সাক্ষর করেছে, এমনি এক ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা গ্রহন করেছে। এই পরিকল্পনায় পুণে থেকে নবি মুম্বাইয়ের হাই টেক পরিকল্পিত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে মুম্বাই পর্যন্ত ‘হাইপারলুপ ট্রেন’ চালানো হবে।
এর আগে জাপানের সাথে ভারতের চুক্তি হয়েছে বুলেট ট্রেন চালানোর জন্য। এই বিষয়ে আমরা সকলেই জানি। ভারতের বুলেট ট্রেন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
♦ বর্তমানের সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেন-
বর্তমানে বিশ্বের দ্রুততম চালু ট্রেনের অন্যতম একটি হল- ট্রান্সর্যাপিড সাংহাই। চলে ম্যাগনেটিক লেভিটেশনে ঘণ্টায় ৪৩০ কিলোমিটার গতিতে। সাংহাই থেকে এয়ারপোর্টে পৌঁছানোর দ্রুততম বাহন হিসেবে এ ট্রেনটিকে বেছে নেন বেশির ভাগ যাত্রী। সাংহাই থেকে এয়ারপোর্টের দূরত্ব ত্রিশ কিলোমিটার। ট্রান্সর্যাপিড সাংহাই এ পথ অতিক্রম করে মাত্র আট মিনিটে। জাপানের ম্যাগলেভ ট্রেন আপাতত চালানো হচ্ছে পরীক্ষামূলকভাবে, কিছু কিছু বাছাই যাত্রী সেই আশ্চর্য অভিজ্ঞতা করার সুযোগও পাচ্ছেন৷ ২০২৭ সালে থেকে এই ট্রেন চলবে টোকিও আর নাগোইয়ার মধ্যে ঘণ্টায় ৫০০ কিলোমিটার গতিতে৷
♦ হাইপারলুপ কি?
হাইপার লুপ হল একটি পাইপ লাইনের যোগাযোগ ব্যবস্থা। ওই পাইপ লাইনের ভেতর দিয়ে ট্রেনের মত একটি যান চলে। এই যান অতি দ্রুত পথ অতিক্রম করতে পারে। অর্থাৎ কোনো উৎস অঞ্চল থেকে গন্তব্য স্থলে যেতে হলে ওই পাইপ লাইনের মধ্য দিয়ে ছুটে যাবে এই ট্রেন ব্যবস্থা।
![হাইপারলুপের টানেল](https://www.studentscaring.com/wp-content/uploads/2018/05/হাইপারলুপের-টানেল.jpg)
♦ হাইপারলুপের ইতিহাস-
হাইপারলুপ ধারণাটি প্রথন দেন ‘এলান মাস্ক’ ২০১২ সালে। যিনি ‘স্পেস এক্স’ এর সিও এবং টেস্লা নামক একটি কোম্পানির সাথেও যুক্ত। এর পর এই ধারণাটি প্রথম জনসমক্ষে আসে ২০১৩ সালের আগস্টে। এবং এটিকে একটি Open Source System-এ রূপান্তরিত করেন। যার ফলে হাইপারলুপ ব্যবস্থাকে নিয়ে বিশ্বের যে কোন সংস্থা গবেষণা করতে পারবে এবং এর গুন মান উন্নত করতে পারবে।
আমেরিকার নেভাডায় চলছে অতি দ্রুত গতিসম্পন্ন এক রেলগাড়ি তৈরির প্রচেষ্টা। প্রকল্পটির দায়িত্বে রয়েছেন স্পেস-এক্সের প্রধান ইলন মাস্ক। তার এই প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে ‘হাইপারলুপ ওয়ান’।
মাস্ক হাইপারলুপকে বর্ণনা দেন একটি কনক্রোড ( এটি উড়োজাহাজ যা শব্দের চেয়ে দিগুন বেগে উড়তে পারে), একটি রেইল গান এবং একটি এয়ার হকি এর টেবিল এর মেলবন্ধন হিসেবে। হাইপারলুপ হবে একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা যার মাধ্যমে একটি টিউব কয়েকটি দেশ অথবা শহর জুড়ে থাকবে। টিউবের ভিতর থাকবে ক্যাপসুল যার মধ্যে যাত্রী এবং তাদের মালামাল কে বহন করতে পারবে ম্যাগলেভ প্রযুক্তি অনুসারে। বর্তমানে এই ম্যাগলেভ প্রযুক্তি বুলেট ট্রেনে ব্যবহার করা হয়।
♦ হাইপারলুপ ট্রেন কোন্ পদ্ধতিতে চলে?
‘হাইপারলুপ’ ট্রেন চালানোর সব থেকে আধুনিক প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয় কাচের আংশিক বায়ুশূন্য একটি দীর্ঘ টানেল। সেই টানেলের মধ্যে দিয়ে ছোটে একটি ক্যাপ্সুল। অনেকটা শপিংমলগুলোর ক্যাপসুল লিফটের মতো। তবে পার্থক্য হলো এসব ক্যাপসুল আপনাকে নিয়ে যায় ওপরে বা নিচে আর হাইপারলুপ আপনাকে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে নিয়ে যাবে গন্তব্যে।
![হাইপারলুপ ট্রেনের ক্যাপস্যুল](https://www.studentscaring.com/wp-content/uploads/2018/05/হাইপারলুপ-ট্রেনের-ক্যাপস্যুল.jpg)
ক্যাপ্সুলের মধ্যে বিমানের মতো কৃত্রিম ভাবে বায়ুচাপ তৈরি করা হয়। ফলে যাত্রীদের শ্বাস প্রশ্বাস নিতে কোনও সমস্যা হয় না। ওদিকে টানেল বায়ুশূন্য হওয়ায় কার্যত কোনও বাধা ছাড়াই খুব সামান্য শক্তি খরচ করে প্রচণ্ড বেগে ছুটতে পারে ক্যাপ্সুলটি।
নিচের ভিডিওটি দেখে আগে কিছুটা বোঝার চেষ্টা করুন-
আংশিক বায়ুশূন্যতা জন্য প্রায় কোনো ঘর্ষণ থাকবে না। আরোহীরা শুধুমাত্র একটি গাড়িতে চলাফেরা করার সমান অভিকর্ষজ ত্বরণ অভিজ্ঞতা করবে। দেখলে মনে হবে বাতাসের ওপর ভেসে চলেছে। হাইপারলুপ ট্রেনগুলো নিজেদের দুর্ধর্ষ গতি থেকে সৃষ্টি করা এয়ার কুশনের ওপর ভেসে থাকবে। নিচের চিত্রটি দেখুন-
হাইপারলুপ ট্রেনে ম্যাগনেটিক ভেরিয়েশন প্রযুক্তি ব্যবহার করার দরুন এই ট্রেনের (ক্যাপসুলের পড়ুন) নীচে কোনো চাকা বা পায়া জাতীয় কিছু নেই। অর্থাৎ এটি রেল ট্রেকের থেকে কিছুটা ওপরে ভাসমান অবস্থায় ছুটে চলে। এর ফলে ঘর্ষণ জনিত বাধার সম্মুখীন হতে হয়না, ফলে স্বাভাবিক ভাবেই এর গতিবেগ বেশি হবে।
![হাইপারলুপ-এর ক্যাপসুলে যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা](https://www.studentscaring.com/wp-content/uploads/2018/05/হাইপারলুপ-এর-ক্যাপসুলে-যাত্রীদের-বসার-ব্যবস্থা.jpg)
আরও লক্ষনিয় বিষয় একটু ভাবুন, কোনো ট্রেন যখন সামনের দিকে এগিয়ে চলে, যার ফলে সামনে থেকে প্রবাহিত বায়ু ট্রেনের গতিপথে বাধার সৃষ্টি করে এবং যার ফলে ট্রেনের গতি কম হতে পারে। এর সমাধান হিসাবে এই হাইপারলুপ ট্রেনের সামনে ‘এয়ার কম্প্রেশন ফ্যান’ ব্যবহার করা হয়েছে, এই ফ্যান সামনের বাতাসকে টেনে নিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে নেয় (ভেকুম এর মত) এবং পরে ওই বাতাসকে ট্রেনের নিচের অংশ দিয়ে বাইয়ে বের করে দেয় (ওপরের চিত্রটি দেখলেই বুঝতে পারবেন)। যার ফলে বাতাসজনিত বাধার সম্মুখীন হতে হয়না এবং গতিবেগ বজায় রাখতে সক্ষম হয়।
আবার একি পদ্ধতিতে এয়ার কম্প্রেশন এবং ম্যাগনেটিক মোটোর এর মাধ্যমে ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া যাবে।
নিচের ভিডিওটি দেখে নিন বোঝার সুবিধা হবে-
♦ ভারতের হাইপারলুপ ট্রেন-
![পুনে থেকে মুম্বাই পর্যন্ত হাইপারলুপ ট্রেনের যাত্রাপথ](https://www.studentscaring.com/wp-content/uploads/2018/05/পুনে-থেকে-মুম্বাই-পর্যন্ত-হাইপারলুপ-ট্রেনের-যাত্রাপথ.jpg)
২০১৭ সালের ভারতে হাইপারলুপ ট্রেন চালানোর জন্য আমেরিকার Hyperloop Transportation Technologies (HTT) নামক সংস্থার সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার। অন্ধ্রপ্রদেশের অমরাবতী থেকে বিজয়ওয়াদা পর্যন্ত এই ট্রেন চালানোর জন্য মৌ সাক্ষরিত হয়। এর পর ২০১৮ সালে ‘ভার্জিন’ সংস্থার মাধ্যমে ‘হাইপারলুপ ওয়ান’ ভারতের পুণে থেকে মুম্বাই পর্যন্ত হাইপারলুপ ট্রেন চালানোর জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এর ফলে পুনে থেকে মুম্বাই পৌঁছাতে সময় লাগবে মাত্র ২৫ মিনিট! ভারতের বাজার ধরতে এ দেশে হাইপারলুপ নেটওয়ার্ক চালু করতে বরাবরই আগ্রহী ‘ভার্জিন’ সংস্থার চেয়ারম্যান তথা ব্রিটিশ ধনকুবের স্যর রিচার্জ ব্র্যানসন। তিনি কি বললেন এই প্রসঙ্গে দেখে নিন-
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার আগে প্রায় ৩ বছর ধরে আগে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হবে, তার পর ৬-৭ বছরের মধ্যে এই ট্রেন চালানো হবে বলে দাবী করা হচ্ছে।
♦ এই পথটি কোন কোন অঞ্চলকে সংযুক্ত করবে?
পুনে থেকে নবি মুম্বাই পর্যন্ত যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে এই পথের মধ্যে পুনে, নবি মুম্বাইয়ের বিমান বন্দর হয়ে শেষে মুম্বাইকে যুক্ত করবে।
![জলেও চলতে পারে হাইপারলুপ ট্রেন](https://www.studentscaring.com/wp-content/uploads/2018/05/জলেও-চলতে-পারে-হাইপারলুপ-ট্রেন.jpg)
♦ এই ট্রেন চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি কোথা থেকে আসবে?
জানা যাচ্ছে যে, ভারতের হাইপারলুপ ট্রেন প্রকল্প টির মধ্যে ট্রেন চালানোর জন্য যে শক্তির প্রয়োজন তা পুরন করা হবে সম্পুর্ন অচিরাচরিত শক্তির মাধ্যমে। অর্থাৎ এখানে সৌরশক্তিকেই বিশেষ ভাবে ব্যবহার করা হবে। যেটি পরিবেশ দুষণের হাত থেকেও রক্ষা করবে। এর ফলে প্রায় ৮৬,০০০ টন গ্রীন হাউস গ্যাস উৎপাদন কম হবে আগত ৩০ বছরে। এবং এটাও শোনা যাচ্ছে যে, এই সৌর শক্তি আসবে হাইপারলুপ টেনের টিউব বা নলপথের ছাদে বসানো সোলার প্যানেল থেকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিজ্ঞানীদের অনুমান, এখান থেকে যে শক্তি উৎপাদন করা হবে সেটা এই প্রকল্পে ব্যবহার করার পরেও কিছু পরিমাণ অতিরিক্ত থেকে যাবে। যেগুলিকে অন্যান্য কাজেও ব্যবহার করা যেতেই পারে।
![হাইপারলুপ ট্রেনের টানেলের ওপর সোলার প্যানেল](https://www.studentscaring.com/wp-content/uploads/2018/05/হাইপারলুপ-ট্রেনের-টানেলের-ওপর-সোলার-প্যানেল.jpg)
♦ ভারতের অন্যান্য শহরের যাত্রাপথ-
হাইপারলুপ ট্রেন ব্যবস্থা শুরু হলে ভারতের বিভিন্ন শহরের যাত্রা পথের সময় কেনন হবে সেটা সকলের জানার একটা আগ্রহ থেকেই যায়। নিচের তালিকার মাধ্যমে সেটি জেনে নেওয়া যাক-
![ভারতের বিভিন্ন শহরকে হাইপারলুপ ট্রেন](https://www.studentscaring.com/wp-content/uploads/2018/05/image.jpg)
১. ওই ট্রেনে বেঙ্গালুরু থেকে চেন্নাই ৩৩৪ কিলোমিটার পথ পেরতে সময় লাগবে ২০ মিনিট।
২. বেঙ্গালুরু থেকে তিরঅনন্তপুরম ৭৩৬ কিলোমিটার পথ পেরতে সময় লাগবে ৪১ মিনিট।
৩. জয়পুর, ইনদওর হয়ে দিল্লি থেকে মুম্বই ১ হাজার ৩১৭ কিলোমিটার পথ পেরতে সময় লাগবে ৫৫ মিনিট।
৪. বেঙ্গালুরু হয়ে মুম্বই থেকে চেন্নাই ১ হাজার ১০২ কিলোমিটার পথ পেরতে সময় লাগবে ৫০ মিনিট।
৫. বেঙ্গালুরু থেকে চেন্নাই ৩৩৪ কিলোমিটার পথ পেরতে সময় লাগবে ২০ মিনিট।
♦ পুণে থেকে মুম্বাইয়ের হাইপারলুপ প্রকল্পের খরচ-
মহারাষ্ট্রের পুণে থেকে মুম্বাই পর্যন্ত হাইপারলুপ ট্রেন চালানোর জন্য আনুমানিক খরচ ধার্য করা হয়েছে ৫৫ বিলিয়ন আমেরিকা ডলারে এবং ভারতীয় টাকায় যেটা হয় ৩,৫০,০০০ কোটি টাকা। টাকার অঙ্কটা দেখতে একটু বেশি লাগলেও এর আর্থ-সামাজিক কিছু সুবিধা রয়েছে, যার ফলে এর প্রাথমিক খরচ বেশি হলেও পরবর্তী খরচ অন্যান্য পরিবহন ব্যবস্থার থেকে অনেক কম হবে জানিয়েছে ‘ভার্জিন হাইপারলুপ ওয়ান’ সংস্থা। সংস্থাটির মতে স্থানিয় আর্থসামাজিক উন্নয়ন, কাজের সুযোগ, সময়ে বজায় যাতায়াত, রক্ষনাবেক্ষনের ব্যয় কম, দুর্ঘটনার সম্ভাবনা একেবারে সামান্য, পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা প্রভৃতি দিক গুলিতে সুযোগ সুবিধা রয়েছে।
ব্র্যানসনের দাবি- আগামী ৩০ বছরে এ দেশের আর্থ-সামাজিক চেহারাটাই পাল্টে দিতে পারে এই ট্রেনব্যবস্থা। সংস্থার সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, ওই সময়ের মধ্যে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সাড়ে ৩ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক সুবিধা পেতে পারে ভারত। ব্র্যানসনের কথায়,
“বিংশ শতকে ট্রেন যেমন প্রভাব ফেলেছিল, একবিংশ শতকে তেমনটাই ছাপ ফেলতে পারে হাইপারলুপ।”
♣ হাইপারলুপ সম্পর্কে কিছু তথ্য-
১. বিশ্বের প্রথম হাইপারলুপ ট্রেন হল কানাডার টরেন্টো থেকে মন্ট্রিল পর্যন্ত। যেটি কিনা পৃথিবীর দ্রুততম যাত্রী বাহী উড়োজাহাজের থেকেও দ্রুততম। টরেন্টো থেকে মন্ট্রিল পর্যন্ত ৬৪০ কিমি যাত্রা পথ অতিক্রম করবে মাত্র ৩৯ মিনিটে। কিন্তু মনে রাখবেন এটি কোনো বানিজ্যিক হাইপারলুপ ট্রেন নয়।
২. বিশ্বের প্রথম বানিজ্যিক হাইপারলুপ ট্রেনটি চালু হবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলস থেকে সান ফ্রান্সিস্কো পর্যন্ত।( বর্তমানে এটি একটি দুর্নীতির জন্য কাজ বন্ধ রয়েছে)। এই দূরত্ব অতিক্রম করবে মাত্র ৫০ মিনিটে।
৩. তৃতীয় প্রকল্পটি পরিকল্পিত পর্যায়ে আছে দুবাইতে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘হাইপারলুপ ট্রান্সপোর্টেশন টেকনোলজিস’ প্রকল্পটির দায়িত্ব পেয়েছে। আপনারা জানেন দুবাই আরব আমিরশাহের একটি শহর। এখানে দুটি শহর অর্থৎ দুবাই থেকে আবু ধাবি পর্যন্ত এই হাইপারলুপ ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে ২০২২ এর মধ্যে এই প্রকল্প চালু হয়ে যাবে। দুটি শহরের মধ্যে ১৫০ কিমি যাত্রাপথ অতিক্রম করার জন্য সময় লাগবে মাত্র ১২ মিনিট। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, যাত্রী পরিবহণ ছাড়াও বিভিন্ন বন্দর ও বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোতে কার্গো বহন করবে দুর্বারগতির হাইপারলুপ।
৪. হাইপারলুপ ব্যবস্থাকে একটি মুক্ত ব্যবস্থা বা Open Source system-এ রূপান্তরিত করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এই ব্যবস্থাকে নিয়ে বিশ্বের যে কোনো কোম্পানি নিজেদের মত করে গবেষণা করতে পারে এবং প্রকল্পটির উন্নয়ন করতে পারবে।
![অন্ধ্রপ্রদেশে হাইপারলুপ ট্রেন](https://www.studentscaring.com/wp-content/uploads/2018/05/অন্ধ্রপ্রদেশে-হাইপারলুপ-ট্রেন.jpg)
৫. এবার আপনাদের জানিয়ে রাখি ভারতে শুধু মাত্র পুনে থেকে মুম্বাই পর্যন্ত হাইপারলুপ ট্রেন চালানো হবে, তা নয় কিন্তু। মনে রাখবে পুনে থেকে মুম্বাই পর্যন্ত হাইপারলুপ ট্রেন চালানোর জন্য মৌ সাক্ষর করেছে ‘ভার্জিন হাইপারলুপ ওয়ান’ গ্রুপ। কিন্তু শোনা যাচ্ছে যে ভারতের প্রথম হাইপারলুপ প্রকল্পের মৌ সাক্ষর হয় অন্ধ্রপ্রদেশের সরকারের সাথে। অমরাবতী থেকে বিজয়ওয়াড়া পর্যন্ত এই হাইপারলুপ ট্রেনটি চালানো হবে। এই প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে Hyperloop Transportation Technologies (HTT)। যেটি আবার পরোক্ষ ভাবে এলোন মাস্কের সাথে চুক্তির ভিত্তিতে।
লেখাটি পড়ে সবাই ভাবছেন এরকম ট্রেন কি বাস্ততে সত্যি সাফল্য পেতে পারবে, সবার মনে একটি প্রশ্ন জাগতে পারে- যাত্রীরা ওই বিষম গতি সামলাতে পারবেন কিনা, বিশেষ করে ট্রেন যখন হঠাৎ দ্রুতগতি পেয়ে ছুটতে থাকবে। আরেকটি বিষয়ও যুক্ত হচ্ছে ভাবনায়- পথে বিপদ ঘটলে যাত্রীদের কাছে উদ্ধারকারীদের পৌঁছানোরও একটা ব্যবস্থা অবশ্যই থাকতে হবে। অবশ্য এইসব হাতে কলমে শুনতে ভাল লাগলেও বাস্তব প্রয়োগ দেখা এখনও বাকি আছে। তবে এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, হাইপারলুপ প্রযুক্তিকে হাই স্পীড রেইল লাইন এর সাথে তুলনা করলে সে ক্ষেত্রে ১/২০ ভাগ লাগবে হচ্ছে কাঁচামাল, ১/১০ ভাগ খরচ এবং হাইওয়ে এর হিসেবে খরচ দাঁড়াবে ১/৪ ভাগ।
বিঃ দ্রঃ পরবর্তীতে যদি কোনো তথ্য পাওয়া যায়, তাহলে সময়ের সাথে সাথে পোস্টটি আপডেট হতে থাকবে। আপনারাও আমাদের তথ্য দিয়ে মেল করতে পারেন ([email protected])। আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন এখানে ক্লিক করে।
#Indian hyperloop train project facts, #ভারতের প্রথম হাইপারলুপ ট্রেন, #হাইপারলুপ ট্রেন, #বিমানের থেকেও দ্রুতগতির ট্রেন, #মেক ইন ইন্ডিয়া