সমাস কাকে বলে ? কত প্রকার ও কি কি? Bangla Samas PDF Download

পোস্টটি শেয়ার করুন
4.5/5 - (14 votes)

সমাসের প্রথম পর্ব পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুণ

পরিচ্ছেদসমূহ

১) দ্বন্দ্ব সমাস

সংজ্ঞা- দ্বন্দ্ব শব্দের বুৎপত্তি হল – দ্বি+দ্বি। দ্বন্দ্ব শব্দের দুই প্রকার অর্থ রয়েছে। এর আভিধানিক অর্থ হল মিলন এবং প্রচলিত অর্থ হল কলহ বা বিবাদ। আর ব্যাকরণসম্মত অর্থ হল – যুগ্ম বা জোড়া। অর্থাৎ, যে সমাসে পূর্বপদ ও পরপদ- উভয়েরই অর্থের প্রাধান্য থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। এই সমাসে ব্যাসবাক্যে পূর্বপদ ও পরপদের সম্বন্ধ স্থাপনে ও, এবং, আর- এই তিনটি অব্যয় ব্যবহৃত হয়।

যেমন- মা ও বাপ = মা-বাপ। এখানে পূর্বপদ ‘মা’ ও পরপদ ‘বাপ’। ব্যাসবাক্যে ‘মা’ ও ‘বাপ’ দুইজনকেই সমান প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, এবং দুজনকেই বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, পূর্বপদ ও পরপদ, উভয়েরই অর্থের প্রাধান্য রক্ষিত হয়েছে। তাই এটি দ্বন্দ্ব সমাস।

দ্বন্দ্ব সমাসের ভাগ-

ক) সমার্থক দ্বন্দ্ব

Join us on Telegram

খ) বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব

গ) একশেষ দ্বন্দ্ব

ঘ) বহুপদনিষ্পন্ন দ্বন্দ্ব

ঙ) ইত্যাদি অর্থবোধক দ্বন্দ্ব

চ) বিকল্প দ্বন্দ্ব

ক) সমার্থক  দ্বন্দ্ব– সমস্যমান পদগুলি পরস্পর সমার্থক হয় |

উদাহরণ–

ছাই ও ভস্ম = ছাইভস্ম

দয়া আর মায়া = দয়ামায়া

পাহাড় এবং পর্বত = পাহাড়-পর্বত

খ) বিপরীতার্থক  দ্বন্দ্ব — সমস্যমান পদগুলি পরস্পর বিপরীত অর্থ বহন করে |

উদাহরণ–

আদি ও অন্ত = আদ্যন্ত

বাঁচা আর মরা = বাঁচামরা

অগ্র ও পশ্চাৎ = অগ্রপশ্চাৎ

পাপ এবং পুণ্য = পাপপুণ্য

গ) একশেষ দ্বন্দ্ব– সমস্যমান পদগুলি সমাসবদ্ধ হয়ে বহুবচনান্ত একটি পদে পরিণত হয় |

উদাহরণ–

আমি, তুমি ও সে = আমরা (বহুবচন )

তুমি ও সে = তোমরা ( বহুবচন ) |

ঘ) বহুপদনিষ্পন্ন দ্বন্দ্ব– যে দ্বন্দ্ব সমাস বহুপদের মিলনে নিষ্পন্ন হয়।

উদাহরণ :

স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল= স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল।

একইরকম ভাবে–

তেল-নুন-লকড়ি,  চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-তারা

রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ

ঙ) ইত্যাদি অর্থবোধক দ্বন্দ্ব —অনুরূপ বা সমজাতীয় ভাবপ্রকাশের জন্য অনুচর, সহচর, প্রতিচর, বিকার, অনুকার প্রভৃতি অর্থপ্রকাশক শব্দের মিলনে এই সমাস হয়।

সহচর : জনমানব, ঘরবাড়ি,  গোঁফদাড়ি

অনুচর: চেয়ার-টেবিল , ছলচাতুরি

প্রতিচর: রাজারাণি, পাপপুণ্য, কেনাবেচা

বিকার: ঠাকুর-ঠুকুর, কাঁদাকাটা

অনুকার: তেলটেল, জলটল, বইটই।

চ) বিকল্প দ্বন্দ্ব– যে দ্বন্দ্ব সমাসে পূর্বপদ ও পরপদের অর্থ বিকল্প হিসাবে গৃহীত হয়।

উদাহরণ :

হার বা জিত =হারজিত,  কম বা বেশি,      সাত কিংবা পাঁচ,  উনিশ কিংবা কুড়ি।

২. কর্মধারয় সমাস

সংজ্ঞা- ‘কর্মধারয়’ শব্দের অর্থ হল ‘কর্ম’ বা ‘বৃত্তি’ ধারণকারী।  কর্মধারয় সমাসে পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়। মূলত, এই সমাসে বিশেষণ বা বিশেষণ ভাবাপন্ন পদ পূর্বপদ ও বিশেষ্য বা বিশেষ্য ভাবাপন্ন পদ পরপদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর ব্যাসবাক্যটিতে ঐ বিশেষ্য বা বিশেষ্য ভাবাপন্ন পদটি সম্পর্কে কিছু বলা হয়। অর্থাৎ পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়।

যেমন- নীল যে পদ্ম = নীলপদ্ম। এখানে, পূর্বপদ ‘নীল’ বিশেষণ ও পরপদ ‘পদ্ম’ বিশেষ্য। ব্যাসবাক্যে ‘পদ্ম’ সম্পর্কে বলা হয়েছে পদ্মটি ‘নীল’ রঙের। অর্থাৎ, ‘পদ্ম’ বা পরপদের অর্থই এখানে প্রধান, পরপদ ছাড়া পূর্বপদের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। তাই এটি কর্মধারয় সমাস

কর্মধারয় সমাসের জন্য কয়েকটি বিশেষ নিয়ম খেয়াল রাখুন-

  • দুইটি বিশেষণ একই বিশেষ্য বোঝালে সেটি কর্মধারয়সমাস হয়। যেমন, যে চালাক সেই চতুর = চালাক-চতুর। এখানে পরবর্তী বিশেষ্যটি অপেক্ষাকৃত বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে বলে এটি দ্বন্দ্ব সমাস হবে না।
  • দুইটি বিশেষ্য একই ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝালে সেটিও কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন, যিনি জজ তিনি সাহেব = জজসাহেব। একই কারণে এটি দ্বন্দ্ব না কর্মধারয় হবে।
  • কার্যে পরপম্পরা বোঝাতে দুটি কৃদন্ত বিশেষণ বা ক্রিয়াবাচক বিশেষণ পদেও কর্মধারয়সমাস হয়। যেমন, আগে ধোয়া পরে মোছা = ধোয়ামোছা। এখানে ‘মোছা’ কাজটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
  • পূর্বপদে স্ত্রীবাচক বিশেষণ থাকলে তা পুরুষবাচক হয়ে যাবে। যেমন, সুন্দরী যে লতা = সুন্দরলতা
  • বিশেষণবাচক মহান বা মহৎ শব্দ পূর্বপদ হলে মহা হয়। মহৎ যে জ্ঞান = মহাজ্ঞান
  • পূর্বপদে ‘কু’ বিশেষণ থাকলে এবং পরপদের প্রথমে স্বরধ্বনি থাকলে ‘কু’, ‘কৎ’ হয়। যেমন, কু যে অর্থ = কদর্থ।
  • পরপদে ‘রাজা’ থাকলে ‘রাজ’ হয়। যেমন, মহান যে রাজা = মহারাজ।
  • বিশেষণ ও বিশেষ্য পদে কর্মধারয় সমাস হলে কখনো কখনো বিশেষ্য আগে এসে বিশেষণ পরে চলে যায়। যেমন, সিদ্ধ যে আলু = আলুসিদ্ধ।

কর্মধারয় সমাসের প্রকারভেদ —

ক) সাধারণ কর্মধারয় সমাস

খ) মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস

গ) উপমান কর্মধারয় সমাস

ঘ) উপমিত কর্মধারয় সমাস

ঙ) রূপক কর্মধারয় সমাস

ক) সাধারণ কর্মধারয় সমাস :

অ) বিশেষ্য+ বিশেষ্য :–

এখানে দুটি বিশেষ্য পদ যোগে একটি বিশেষ্যপদ ই তৈরী হবে সমাসবদ্ধ পদ হিসেবে |

যেমন:–

জ্ঞাতি যিনি শত্রুও তিনি = জ্ঞাতিশত্রু

যিনি রাম তিনিই কৃষ্ণ = রামকৃষ্ণ

যিনি রাজা তিনিই ঋষি = রাজর্ষি

আ) বিশেষণ + বিশেষণ :–

এই সমাসে দুটি বিশেষণ ই একসঙ্গে একই ব্যক্তি/ বস্তু তে উপস্থিত বোঝাবে |

যেমন–

কাঁচা অথচ মিঠে = কাঁচামিঠে ( একটি ফল)

আগে ধোয়া পরে মোছা = ধোয়ামোছা ( একটি স্থান )

ই) বিশেষণ + বিশেষ্য ::-

এখানে বিশেষ্য ও বিশেষণ পদ পূর্বপদ – পরপদ রূপে বসে একই ব্যক্তি / বস্তু কে প্রকাশ করে |

যেমন:-

সাধারণ যে জন = জনসাধারণ

পাণ্ডু ( খসড়া ) যে লিপি = পাণ্ডুলিপি

প্রিয় যে সখা = প্রিয়সখ

খ) মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস :

এই কর্মধারয় সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যে অবস্থিত পদ লোপ পায় |

যেমন:–

জীবনহানির আশঙ্কায় বীমা =জীবনবীমা

আক্ষেপ-দ্যোতক অনুরাগ=আক্ষেপানুরাগ

ছাত্র থাকাকালীন জীবন = ছাত্রজীবন

সিঁদুর রাখিবার কৌটা = সিঁদুরকৌটা

♡ মনে রাখার বিষয় :–

তৎপুরুষ সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যস্থিত বিভক্তি-স্থানীয় অনুসর্গ লোপ পায় | আর মধ্যপদলোপী কর্মধারয়সমাসে অনুসর্গ নয়, কোনো পদের লোপ ঘটবে |

গ) উপমান কর্মধারয় সমাস,

উপমান ও উপমিত কর্মধারয় সমাস আলাদা করে চেনার আগে কতোগুলো সংজ্ঞা/ টার্মস জানা জরুরি। সেগুলো হলো- উপমান, উপমেয় ও সাধারণ ধর্ম।

কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্তুর সঙ্গে তুলনা করা হলে যাকে তুলনা করা হলো, তাকে বলা হয় উপমেয়।

আর যার সঙ্গে তুলনা করা হয় তাকে বলে উপমান।

আর উপমেয় আর উপমানের যে গুণটি নিয়ে তাদের তুলনা করা হয়, সেই গুণটিকে বলা হয় সাধারণ ধর্ম ।

যেমন, ‘অরুণের ন্যায় রাঙা প্রভাত’।

এখানে ‘প্রভাত’কে ‘অরুণ’র মতো ‘রাঙা’ বলে তুলনা করা হয়েছে। সুতরাং, এখানে ‘প্রভাত’ উপমেয়। উপমান হলো ‘অরুণ’। আর প্রভাত আর অরুণের সাধারণ ধর্ম হলো ‘রাঙা’।

উপমানের ( যার সাথে তুলনা করা হয় ) সঙ্গে সাধারণ ধর্মবাচক পদের সমাসকে উপমান কর্মধারয়সমাস বলে |

♡মনে রাখার বিষয়:-

এখানে উপমান পদটি প্রথমে বসে, তারপর সাদৃশ্যবাচক শব্দ , শেষে সাধারণ ধর্মবাচক পদ বসে উপমান + সাদৃশ্য বাচক শব্দ + সাধারণ ধর্মবাচক পদ = উপমান কর্মধারয়সমাস

যেমন:–

শঙ্খের ন্যায় শুভ্র = শঙ্খশুভ্র

বজ্রের মতো কঠিন = বজ্রকঠিন

আলতার মতো রাঙা = আলতারাঙা

ঘ) উপমিত কর্মধারয় সমাস :

উপমেয় ( যাকে তুলনা করা হয় ) -র সাথে উপমান এর যে সমাস হয় , তাকে উপমিত কর্মধারয়সমাস বলে |

♡ মনে রাখার বিষয়:–

এই সমাসে কোনো সাধারণ ধর্মবাচক পদের উল্লেখ থাকে না |

উপমেয় + উপমান + সাদৃশ্য বাচক শব্দ = উপমিত কর্মধারয়সমাস |

যেমন:–

নয়ন কমলের ন্যায় = নয়নকমল

অধর বিম্বের ন্যায় = বিম্বাধর

কথা অমৃতের তুল্য = কথামৃত

ঙ) রূপক কর্মধারয় সমাস:

যে সমাসে উপমেয় ও উপমান এর মধ্যে অভেদ কল্পনা করা হয় , তাকে রূপক কর্মধারয়সমাস বলে |

♡ মনে রাখার বিষয়:–

এখানে উপমেয় আর উপমান এর মধ্যে ‘রূপ’ শব্দটি বসে |

উপমেয় + রূপ + উপমান = রূপক কর্মধারয়সমাস

যেমন:–

যৌবন রূপ কুসুম = যৌবনকুসুম

প্রাণ রূপ প্রবাহিণী = প্রাণপ্রবাহিণী

জীবন রূপ যুদ্ধ = জীবনযুদ্ধ

সুখ রূপ দীপ = সুখদীপ |

৩. বহুব্রীহি সমাস

সংজ্ঞা:– যে সমাসে সমস্যমান পদগূলির কোনোটির অর্থই প্রধান ভাবে না বুঝিয়ে অন্য কোনো অর্থ প্রধানভাবে বোঝায় , তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে |

যেমন– বীণা পাণিতে যার = বীণাপাণি ( সরস্বতী )

** ‘বহুব্রীহি’ = বহু ব্রীহি ( ধান ) যার

(উল্লেখ্য, বহুব্রীহি সমাস, বিশেষ করে কিছু ব্যধিকরণ বহুব্রীহিসমাস ও উপপদ তৎপুরুষ সমাসের সমস্ত পদ প্রায় একই ধরনের হয়। ফলে এদের সমস্ত পদ দেখে আলাদা করে চেনার তেমন কোন উপায় নেই। এগুলোর সমাস নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তাই একই ব্যাসবাক্য ও সমাসনির্ণয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর পরীক্ষায় মূলত এগুলো উপপদ তৎপুরুষ সমাসের উদাহরণ হিসেবেই আসে।)

বহুব্রীহি সমাসের প্রকারভেদ

ক) সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস :

এই সমাসে পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হয় |

এখানে উভয় পদেই শূন্য বিভক্তি থাকায় এর নাম সমানাধিকরণ |

যেমন:–

দৃঢ় প্রতিজ্ঞা যাহার= দৃঢ়প্রতিজ্ঞ

ছিন্ন হয়েছে শাখা যার = ছিন্নশাখা (বৃক্ষ)

সমান পতি যাদের= সপত্নী

খ) ব্যধিকরণ বহুব্রীহি সমাস :

এই বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদটি বিশেষণ নয় |

এখানে সমস্যমান পদ দুটি পৃথক বিভক্তিযুক্ত হওয়ায় এর নাম ব্যধিকরণ বহুব্রীহি |

যেমন:–

মিলন অন্তে যার= মিলনান্তক

অন্য বিষয়ে মন যার = অন্যমনস্ক

আশীতে (দন্তে) বিষ যার= আশীবিষ (সর্প)

রত্ন গর্ভে যাহার= রত্নগর্ভা

অন্তঃ (অন্তরে) অপ্ যার= অন্তরীপ

গ) নঞর্থক বহুব্রীহি সমাস :

নঞর্থক বা নাবাচক পদের সঙ্গে বিশেষ্যপদের যে বহুব্রীহি সমাস তাকেই নঞর্থক বহুব্রীহিসমাস বলে |

যেমন:—

নেই অর্থ যার = নিরর্থক

নিঃ (নাই) রদ (দন্ত) যার= নীরদ

বে (নাই) তার যাতে= বেতার

নিঃ (নাই) সহায় যার = নিঃসহায়

ঘ) মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস :

ব্যাসবাক্যের মধ্যস্থিত পদের লোপ হয় এই বহুব্রীহি সমাসে |

**এই সমাসে বেশিরভাগভাগ স্থানে উপমানের সঙ্গে সমাস হয়, তাই একে উপমানাত্মক বহুব্রীহি ও বলা হয় |

** আবার ব্যাসবাক্যটি ব্যাখ্যামূলক হওয়ায় এর অপর একটি নাম ব্যাখ্যাত্মক বহুব্রীহিসমাস |

যেমন:–

ধর্মের(আদর্শের) উদ্দেশে ঘট স্থাপন পূর্বক যে আন্দোলন= ধর্মঘট

বিম্বের ন্যায় রঞ্জিত অধর যে নারীর= বিম্বাধরী

মীনের অক্ষির মতো অক্ষি যে নারীর= মীনাক্ষী

কাঞ্চনের প্রভার ন্যায় প্রভা যা=কাঞ্চনপ্রভ

ঙ) ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস :

পরস্পর একজাতীয় ক্রিয়ার বিনিময় বোঝালে ব্যতিহার বহুব্রীহিসমাস হয় |

যেমন:–

কেশে কেশে আকর্ষণ করে যে যুদ্ধ= কেশাকেশি

পরস্পরের মধ্যে আড়ি= আড়াআড়ি

পরস্পরকে জানা= জানাজানি

হেসে হেসে যে আলাপ = হাসাহাসি

চ) সহার্থক বহুব্রীহি সমাস :

পূর্বপদ বিশেষ্যের সঙ্গে, সহার্থক পরপদের বহুব্রীহি সমাসকে সহার্থক বহুব্রীহিসমাস বলে |

যেমন:–

শ্রদ্ধার সহিত বর্তমান= সশ্রদ্ধ

প্রতিভার সহিত বর্তমান= সপ্রতিভ

বেগের সহিত বর্তমান = সবেগ

চকিতের সহিত বর্তমান= সচকিত

** পূর্বপদ যদি বিশেষণ হয় , তবে তা সহার্থক বহুব্রীহি হয় না |

ছ) সংখ্যাপূর্বক বহুব্রীহি সমাস :

এই বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদটি সংখ্যাবাচক বিশেষণ হয় |

যেমন:–

একদিকেই চোখ যার= একচোখা

দশ আনন যার= দশানন

ত্রি নয়ন যার= ত্রিনয়ন / ত্রিনয়না (স্ত্রীবাচক)

সে (তিন) তার যার= সেতার

দুই দিকে অপ্(জল) যার= দ্বীপ |

৪. তৎপুরুষ সমাস

সংজ্ঞা:- ‘তৎ’ শব্দাংশের অর্থ হল – তার এবং তৎপুরুষ শব্দের অর্থ হল – ‘তার সম্বন্ধীয় পুরুষ’ বা ‘তার পুরুষ’ বা ‘তস্যপুরুষ’। যে সমাসে পূর্বপদের কারকের বিভক্তিচিহ্ন বা বিভক্তিস্থানীয় অনুসর্গের লোপ হয় এবং পরপদের অর্থই প্রধান হয় , তাকে তৎপুরুষসমাস বলে |

যেমন:–

রথকে দেখা = রথদেখা

লোককে দেখানো=লোকদেখানো

প্রকারভেদ

ক) কর্ম তৎপুরুষ সমাস:

এই সমাসে পূর্পদের কর্মকারকের বিভক্তিচিহ্ন ( যেমন ‘কে’ ) লোপ পায় |

উদাহরণ:–

লুচিকে ভাজা=লুচিভাজা

মালাকে বদল = মালাবদল

ছেলেকে ভুলানো = ছেলেভুলানো

খ) করণ তৎপুরুষ সমাস:

এই সমাসে পূর্বপদের করণকারকের বিভক্তি (‘এ’, ‘য়’, ‘তে’)/ অনুসর্গ ( ‘দ্বারা’, ‘দিয়া’, ‘কর্তৃক’ ) লোপ পায় |

উদাহরণ–

আশা দ্বারা আহত=আশাহত

প্রথার দ্বারা বদ্ধ =প্রথাবদ্ধ

জরায় জীর্ণ=জরাজীর্ণ

গ) অপাদান তৎপুরুষ সমাস-

এই সমাসে পূর্বপদের অপাদান কারকের বিভক্তি (‘এ’, ‘তে’ ) / অনুসর্গ ( ‘হইতে’, ‘থেকে’, ‘চেয়ে’ ) লোপ পায় |

উদাহরণ–

জল হইতে আতঙ্ক= জলাতঙ্ক

দল থেকে ছাড়া =দলছাড়া

মৃত্যুতে ভয়=মৃত্যুভয়

অপাদান তৎপুরুষ সমাসকে পঞ্চমী তৎপুরুষসমাস বলে কেন?

অপাদান তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের পঞ্চমী বিভক্তি (হতে,চেয়ে,থেকে প্রভৃতি) লোপ পায়, তাই একে পঞ্চমী তৎপুরুষসমাস বলে। সাধারণত চ্যুত, ভীত, জাত, গৃহীত, ভ্রষ্ট, বিরত, আগত প্রভৃতি পরপদের সাথে পঞ্চমী তৎপুরুষসমাস হয়।

ঘ) নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাস:

এই সমাসে পূর্বপদের নিমিত্ত / জন্য / উদ্দেশ্য প্রভৃতি নিমিত্তবাচক অংশগুলির লোপ হয় |

উদাহরণ—

স্বদেশের জন্য প্রেম =স্বদেশপ্রেম

তীর্থের উদ্দেশ্যে যাত্রা = তীর্থযাত্রা

শিশুর নিমিত্ত সাহিত্য =শিশুসাহিত্য

ঙ) অধিকরণ তৎপুরুষ সমাস:

এখানে পূর্বপদের অধিকরণ কারকের বিভক্তিচিহ্ন (‘এ’, ‘য়’, ‘এতে’ ) লোপ পায় |

উদাহরণ—

গীতায় উক্ত= গীতোক্ত

ওষ্ঠে আগত= ওষ্ঠাগত

স্বার্থে পর (আসক্ত) = স্বার্থপর

চ) সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস:

এই সমাসে পূর্বপদের সম্বন্ধের বিভক্তিচিহ্ন ( ‘র’, ‘এর’, ‘দের’ ) লোপ পায় |

উদাহরণ–

বসন্তের সখা= বসন্তসখ (কোকিল)

মন্ত্রীদের সভা =মন্ত্রীসভা

রোগের রাজা =রাজরোগ

ছ) ব্যাপ্তার্থক তৎপুরুষ সমাস:

এখানে ‘ব্যাপিয়া’ বা বিস্তার অর্থ বোঝায় |

উদাহরণ–

চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী = চিরসুখী

চিরকাল ব্যাপিয়া সুন্দর = চিরসুন্দর

জ) উপপদ তৎপুরুষ সমাস:

উপপদের সঙ্গে কৃদন্ত পদের সমাসকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস, বলে |

ঝ) নঞ তৎপুরুষ সমাস :

নঞ অব্যয় কে পূর্বপদ করে, উত্তরপদ বিশেষ্য বা বিশেষণের সঙ্গে এই সমাসহয় |

** উত্তরপদের প্রথমবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ হলে ‘নঞ’ স্থানে ‘অ’ হয় |

আর স্বরবর্ণ হলে ‘অন্’ হয় |

উদাহরণ–

আবশ্যক নয়= অনাবশ্যক

আস্থা নেই =অনাস্থা

শুভ নয় =অশুভ

স্থির নয়= অস্থির

ঞ) অকারক তৎপুরুষ / উপকারক তৎপুরুষসমাস:

এখানে ‘গত’, ‘প্রাপ্ত’, ‘আপন্ন’, ‘আশ্রিত’, ‘আরূঢ়’, ‘অতীত’ ইত্যাদি শব্দযোগে পূর্বপদের ‘কে’ বিভক্তিচিহ্ন লোপ পায় |

উদাহরণ—

যৌবনকে প্রাপ্ত= যৌবনপ্রাপ্ত

অশ্বে আরূঢ় =অশ্বারূঢ়

দেবকে আশ্রিত =দেবাশ্রিত

ট) উপসর্গ তৎপুরুষ সমাস :

যে তৎপুরুষ সমাসের পূর্বপদ উপসর্গের সঙ্গে পরপদ বিশেষ্য বা বিশেষনের সমাস হয় তাকে উপসর্গ তৎপুরুষসমাস বলে।

৫. দ্বিগু সমাসঃ

‘দ্বিগু’ শব্দের অর্থ হল – দুই গরুর সমাহার বা দুটি গরুর বিনিময়ে কেনা। দ্বিগু সমাসের সঙ্গে কর্মধারয় সমাসের বেশ মিল রয়েছে। এজন্য একে অনেকেই কর্মধারয় সমাসের অন্তর্ভূক্ত করে থাকেন। দ্বিগু সমাসেও পরপদের অর্থই প্রধান। এবং এই সমাসেও বিশেষণ পদের সঙ্গে বিশেষ্য পদের সমাস হয়। তবে এখানে বিশেষণ পদটি সর্বদাই সংখ্যাবাচক হয়, এবং সমাসহয় সমাহার বা মিলন অর্থে।

অর্থাৎ, সমাহার বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক বিশেষণের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে সমাস হয়, এবং পরপদের অর্থই প্রাধান্য পায়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে। যেমন, ‘অষ্ট ধাতুর সমাহার = অষ্টধাতু’। এখানে পূর্বপদ ‘অষ্ট’ একটি সংখ্যাবাচক বিশেষণ। আর পরপদ ‘ধাতু’ বিশেষ্য। অষ্ট ধাতুর মিলন বা সমাহার অর্থে সমাস হয়ে ‘অষ্টধাতু’ সমস্ত পদটি তৈরি হয়েছে যাতে ‘ধাতু’ সম্পর্কে বলা হয়েছে। অর্থাৎ, পরপদের অর্থ প্রধান হিসেবে দেখা দিয়েছে। সুতরাং, এটি দ্বিগুসমাস।

শ্রেণিবিভাগ :

দ্বিগু সমাস দুই প্রকার।যথা :

ক) তদ্বিতার্থক দ্বিগু

খ) সমাহার দ্বিগু

ক) তদ্বিতার্থক দ্বিগু : যে দ্বিগু সমাসে তদ্ধিত প্রত্যয় নিষ্পন্ন পদ গঠিত হয়,  তাকে তদ্বিতার্থক দ্বিগু সমাস, বলে ।

দুই গোরুর মূল্যে কেনা= দ্বিগু।

এক দুই তিন পাঁচ সাত বা নয়টি কড়ির মূল্যে কেনা এমন= এককড়ি, দুকড়ি, তিনকড়ি, পাঁচকড়ি, সাতকড়ি, ন’কড়ি।

খ) সমাহার দ্বিগু : যে দ্বিগু সমাসে এককালে অনেক বস্তু বা ব্যক্তির সমাহার বা সমষ্টি বোঝায়,  তাকে সমাহার দ্বিগুসমাস বলে ।

সপ্ত অহের সমাহার = সপ্তাহ

নব রত্নের সমাহার = নবরত্ন

৬. অব্যয়ীভাব সমাস

সমাসের পূর্বপদ হিসেবে যদি অব্যয় পদ ব্যবহৃত হয়, এবং সেই অব্যয়ের অর্থই প্রধান হয়, তবে সেই সমাসকে বলা হয় অব্যয়ীভাব সমাস। যেমন, ‘মরণ পর্যন্ত = আমরণ’। এখানে পূর্বপদ হিসেবে পর্যন্ত অর্থে ‘আ’ উপসর্গ ব্যবহৃত হয়েছে। আর পরপদ ‘মরণ’। কিন্তু এখানে সমস্ত পদটিকে নতুন অর্থ দিয়েছে ‘আ’ উপসর্গটি। অর্থাৎ, এখানে ‘আ’ উপসর্গ বা অব্যয় বা পূর্বপদের অর্থ প্রাধান্য পেয়েছে। তাই এটি অব্যয়ীভাব সমাস। (উপসর্গ এক ধরনের অব্যয়সূচক শব্দাংশ। উপসর্গ বচন বা লিঙ্গ ভেদে পরিবর্তিত হয় না কিংবা বাক্যের অন্য কোন পদের পরিবর্তনেও এর কোন পরিবর্তন হয় না। এরকম আরেকটি অব্যয়সূচক শব্দাংশ হলো অনুসর্গ।)

♥ সমাসের সাতকাহণ 15 পাতার PDF Download Now

Bangla Samas PDF Download

⇒ সমাস কাকে বলে?

বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অর্থসম্বন্ধযুক্ত একাধিক পদের একটি পদে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াকে সমাস বলে। বাংলা ভাষায় যে সকল প্রক্রিয়ায় নতুন পদ বা শব্দ তৈরি হয় সমাস তার একটি। সমাসের রীতি সংস্কৃত থেকে বাংলায় এসেছে। যেমন: দোয়াত ও কলম = দোয়াতকলম, পীত অম্বর যার = পীতাম্বর।

⇒ সমাস শব্দের অর্থ কী?

সমাস শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল – “এক হওয়া” বা সংক্ষেপ। সমাসের ব্যাকরণসম্মত অর্থ হল সংক্ষিপ্তকরণ বা একপদীকরণ। মূলত, সমাসে একটি বাক্যাংশ একটি শব্দে পরিণত হয়। বাক্যে শব্দের ব্যবহার কমানোর উদ্দেশ্যে সমাস ব্যবহার করা হয়।

⇒ সমাস শব্দের বিভিন্ন বিশ্লেষণ গুলি কী কী?

সমাস শব্দের বিভিন্ন বিশ্লেষণ গুলি আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন। যেগুলি হল-

  • 1) প্রত্যয় : সম্-অস+অ(ঘঞ)
  • 2) সন্ধি : সম+আস
  • 3) সমাস : সম্(এক) আস(হওয়া)= এক হওয়া।

⇒ সমাস কেন পড়ব?

ব্যাকরণ যেমন ভাষার বিভিন্ন কৌশলকে বিশ্লেষণ করে থাকে, তেমনি ব্যাকরণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল, ভাষাকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করে তোলা। সেই লক্ষ্যে বাক্যের অন্তর্গত বিভিন্ন পদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে বাক্যকে সুন্দর করে তুলতে, আমরা ব্যাকরণের একটি অন্যতম প্রক্রিয়া, সমাস সমন্ধে পড়ব, জানব ও নির্ণয় শিখব। এবার আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, সমাসের ফলে ভাষা সমৃদ্ধি হয় কেন?

কারণ, যে কোনো ভাষারই সম্পদ হল তার শব্দ ভাণ্ডার অর্থাৎ শব্দ সংখ্যা। সমাসে অর্থ সমন্ধযুক্ত দুটি শব্দ বা পদ মিলে অথবা একটি উপসর্গ ও একটি পদ নিয়ে নতুন নতুন শব্দ তৈরি হয়। এইভাবে সমাস ভাষাকে সমৃদ্ধ করে তার শব্দ সংখ্যা বৃদ্ধি করে।

⇒ সন্ধি ও সমাসের মধ্যে তফাৎ কী?

সকলেই সাধারণত জানি যে, সমাস অর্থ সম্বন্ধপূর্ণ একাধিক শব্দের মিলন। আর সন্ধি পাশাপাশি অবস্থিত দুইটি ধ্বনির মিলন। বিষয় দুটির সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য দেখানো হল-

সাদৃশ্য : বাক্ সীমিত ও সৌন্দর্য সৃষ্টি।

বৈসাদৃশ্য :

  • ক ) সন্ধি বর্ণের সঙ্গে বর্ণের মিলনে হয় । সমাস পদের সঙ্গে পদের মিলনে হয়।
  • খ) সন্ধিতে মিলন উচ্চারণভিত্তিক। সমাসে মিলন অর্থভিত্তিক।
  • গ) সন্ধিতে বিভক্তি লোপ পায় না। সমাসে অলোপ সমাস ছাড়া বিভক্তি লোপ পায়।

⇒ সমাসের সম্পর্কিত কয়েকটি সংজ্ঞা বা টার্মস-

সমাসের জন্য কয়েকটি সংজ্ঞা/ টার্মস জানা খুবই জরুরি। এগুলো হলো-

১. ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য বা সমাসবাক্য

যে বাক্যাংশ থেকে সমাসের মাধ্যমে নতুন শব্দ তৈরি হয়, তাকে বলা হয় ব্যাসবাক্য। ব্যাসবাক্য শব্দের অর্থ হল বিস্তৃত বাক্য বা বিশ্লেষণকারী বাক্য। যেহেতু এই শ্রেণির বাক্যের দ্বারা সমস্তপদকে বিশ্লেষণ করা যায় বা সমস্তপদের মূল অর্থ বিশ্লেষন করে পাওয়া যায়, তাই এই বাক্যের নাম ব্যাস বাক্য। আবার, ‘বিগ্রহ’ শব্দের অর্থ বিশেষ রূপ বা মূর্তি ধারণ করা, যেহেতু ব্যাসবাক্য সমস্তপদের মূল অর্থকে বিশ্লেষণ করার জন্য বা নির্ণয় করার জন্য বিশেষ রূপ বা মূর্তি ধারণ করে বাক্য গঠন করে, তাই ব্যাসবাক্যের নাম বিগ্রহ বাক্য।

যেমন— বিলাত হতে ফেরত = বিলাতফেরত। এখানে ‘বিলাত হতে ফেরত’ হলো ব্যাসবাক্য।

২. সমস্ত পদ

ব্যাসবাক্য থেকে সমাসের মাধ্যমে যে নতুন শব্দ তৈরি হয়, তাকে বলা হয় সমস্ত পদ। সমাসে একাধিক পদ মিলিত হয়ে যে একটি নতুন পদ গঠন করে, তাকে সমস্তপদ বা সমাসবদ্ধ পদ বলেযেমন— বিলাত হতে ফেরত = বিলাতফেরত। এখানে ‘বিলাতফেরত’ পদটি সমস্ত পদ।

৩. সমস্যমান পদ

যে সকল পদ একত্রিত হয়ে সমাস সংগঠিত হয়, তাদের প্রত্যেকটি পদকে সমস্যমান পদ বলেযেমন – বীণা পাণিতে যার = বীণাপাণি। এখনে ‘বীণা’ ‘পাণিতে’ হল সমস্যমান পদ ও ‘যার’ হল সমস্যমান সহায়ক অন্য পদ। আরও একটি উদাহরণ দেওয়া হল, বিলাত হতে ফেরত= বিলাতফেরত। এখানে ‘বিলাত’ ও ‘ফেরত’ পদ দুটো সমস্যমান পদ ও ‘হতে’ হল সমস্যমান সহায়ক অন্য পদ।

৪. পূর্বপদ

পূর্বপদ অর্থাৎ পূর্ববর্তী পদ বা প্রথমে অবস্থিত পদ। (ব্যাসবাক্যে) সমস্যমান পদগুলির মধ্যে যে পদটি প্রথমে বা আগে থাকে, তাকে পূর্বপদ বলেযেমন- “বীণা পাণিতে যার” ব্যাসবাক্যে “বীণা” হল পূর্বপদ।

৫. পরপদ বা উত্তরপদ

সমস্ত পদের শেষ অংশ/ শব্দকে পরপদ/ উত্তরপদ বলে। অর্থাৎ, সমস্ত পদের শেষ সমস্যমান পদই পরপদ। অথবা (ব্যাসবাক্যে) সমস্যমান পদগুলির মধ্যে যে পদ পরে থাকে, তাকে উত্তরপদ বা পরপদ বলে। যেমন – “বীণা পাণিতে যার” ব্যাসবাক্যে পরে অবস্থিত “পাণিতে” হল উত্তরপদ, সেক্ষেত্রে “যার” হল সমস্যমান সহায়ক অন্যপদ।

উলেলখ্য, একই সমস্ত পদ কয়েকভাবে ভেঙে কয়েকটি ব্যাসবাক্য তৈরি করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সঠিক ব্যাসবাক্যও কয়েকটি হতে পারে। সেক্ষেত্রে ব্যাসবাক্য অনুযায়ী সেটি কোন সমাস তা নির্ণয় করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, ব্যাসবাক্যের সঙ্গে সমস্ত পদের অর্থসঙ্গতি যেন ঠিক থাকে। যেমন, ‘বিপদে আপন্ন = বিপদাপন্ন’, এই সমাসটি এভাবে ভাঙলে তা ভুল হবে। এটা করতে হবে ‘বিপদকে আপন্ন = বিপদাপন্ন’।

⇒ কে কেন সমাসকে সুনিপুণ গৃহিণীর সাথে তুলনা করেছেন?

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমাসকে সুনিপুণ গৃহিণীর সাথে তুলনা করেছেন। কারণ, কোনো গৃহিণী যেমন তার সুনিপুণ গৃহিণীপনার সাহায্যে বিভিন্ন উপাদানের দ্বারা খাদ্যবস্তু তৈরি করে এবং বিভিন্ন স্বভাবের ব্যক্তিবর্গকে একসূত্রে আবদ্ধ রাখে সমাস প্রক্রিয়াও তেমনি বিভিন্ন অর্থযুক্ত (যদি অর্থগত সম্বন্ধ থাকে) শব্দ বা পদ নিয়ে নতুন শব্দ বা পদ গঠন করে। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমাসকে সুনিপুণ গৃহিণীপনার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

⇒ সমাসের শ্রেণিবিভাগ

বাংলা ব্যকরণে সমাসকে সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন ভাবে ভাগ করা হয়েছে। যেমন-

১. সংস্কৃতে সমাস চারটি প্রকার দেখা যায়-

  • ক) দ্বন্দ্ব
  • খ) তৎপুরুষ
  • গ) বহুব্রীহি
  • ঘ) অব্যয়ীভাব

২. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় সমাসের তিনটি ভাগ দেখিয়েছেন-

  • ক) সংযোগমূলক সমাস – দ্বন্দ্বসমাস।
  • খ) ব্যাখ্যামূলক সমাস – কর্মধারয়,  তৎপুরুষ, দ্বিগু সমাস।
  • গ) বর্ণনামূলক সমাস – বহুব্রীহিসমাস।

৩. আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পদের অর্থগত দিক থেকে সমাসকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে

  • ক) উভয় পদের অর্থপ্রধান – দ্বন্দ্বসমাস।
  • খ) পরপদের অর্থপ্রধান – তৎপুরুষ, কর্মধারয়, দ্বিগু।
  • গ) পূর্বপদের অর্থপ্রধান – অব্যয়ীভাব সমাস।
  • ঘ) অন্যপদের অর্থপ্রধান – বহুব্রীহি সমাস।

সব মিলিয়ে আলোচনার সুবিধার্থে আমরা সমাসকে নিম্নলিখিত প্রধান ৬টি ও ব্যতিক্রমী আরও ৩টি ভাগে ভাগ করে বিশ্লেষণের চেষ্টা করব

  • 1) দ্বন্দ্ব সমাস
  • 2) দ্বিগু সমাস
  • 3) কর্মধারয় সমাস
  • 4) তৎপুরুষ সমাস
  • 5) বহুব্রীহি সমাস
  • 6) অব্যয়ীভাব সমাস

ব্যতিক্রমী সমাস :

  • 7) অলোপ/অলুক সমাস
  • 8) নিত্য সমাস
  • 9) বাক্যাশ্রয়ী সমাস |

তথ্য জেনে রাখুন- বিভিন্ন সমাসে বিভিন্ন পদের অর্থপ্রাধান্য :

ক) পূর্বপদের অর্থপ্রাধান্য = অব্যয়ীভাব সমাস

খ) পরপদের অর্থপ্রাধান্য = তৎপুরুষ সমাস, কর্মধারয় সমাস, দ্বিগু সমাস ।

গ) উভয় পদের অর্থপ্রাধান্য = দ্বন্দ্ব সমাস

ঘ) অন্যপদের অর্থপ্রাধান্য = বহুব্রীহি সমাস]

আপনাদের সুবিধারজন্য সমাস পর্বটিকে দুটি ভাগে ভাগ করা আলোচনা করা হল। সমাসের ভাগগুলি পড়ার জন্য পরবর্তী পৃষ্ঠাতে যান।

Students Care

স্টুডেন্টস কেয়ারে সকলকে স্বাগতম! বাংলা ভাষায় জ্ঞান চর্চার সমস্ত খবরা-খবরের একটি অনলাইন পোর্টাল "স্টুডেন্ট কেয়ার"। পশ্চিমবঙ্গের সকল বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের এবং সমস্ত চাকুরী প্রার্থীদের জন্য, এছাড়াও সকল জ্ঞান পিপাসু জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিবর্গদের সুবিধার্থে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।  

10 thoughts on “সমাস কাকে বলে ? কত প্রকার ও কি কি? Bangla Samas PDF Download

Comments are closed.

error: স্টুডেন্টস কেয়ার কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত !!