চেন্নাইয়ের এই ৫৫ বছর বয়সী অধ্যাপকের রয়েছে ১৪৫ টি ডিগ্রি !
চেন্নাইয়ের এই ৫৫ বছর বয়সী অধ্যাপকের রয়েছে ১৪৫ টি ডিগ্রি
একজন অতি-উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তির কতগুলি ডিগ্রি থাকতে পারে? তিনটে, চারটে, পাঁচটা বা খুব বেশি হলে দশটা! কিন্তু আমাদের এই ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে ভারতের চেন্নাই নিবাসী এই ভদ্র লোকের রয়েছে ১৪৫ টি ডিগ্রি। অবাক হলেন নাকি? নানা অবাক হবেন না। উনি ওনার কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এই ডিগ্রিগুলি লাভ করেছেন। আজ আমাদের “অনুপ্রেরনামূলক” বিভাগে ওনার সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
অধ্যাপকের নাম ভি এন পার্থিবান। থাকেন দক্ষিণ ভারতের তামিলনাডু রাজ্যের চেন্নাই শহরে। অধ্যাপকের বয়স মাত্র ৫৫ বছর। এই বয়সেই তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ১৪৫ টি উচ্চমানের ডিগ্রি। ওনার ডিগ্রিগুলি সম্পর্কে জানার আগে আমরা অধ্যাপকের ব্যাক্তিগত জীবনী সংক্ষেপে জেনে নেই।

চেন্নাইয়ের একটি অত্যন্ত গরীব পরিবারে বড় হন ভি এন পার্থিবান। জানলে অবাক হবেন, তাঁদের পরিবারে পড়াশোনা বিষয়টাই ছিল অত্যন্ত বিলাসিতা। নেক কষ্ট করে নিজের ইচ্ছেতেই পড়াশোনা চালু রেখেছিলেন তিনি। ২০ বছর বয়সে অনেক কষ্টে জোগাড় করেছিলেন তাঁর প্রথম ডিগ্রিটি। এরপর আর থেমে থাকেননি তিনি। নিজের জেদে ডিগ্রি সংগ্রহ অভিযানে নেমে পরেন। যার ফলস্বরূপ শেষ ৩০ বছরে তিনি একটা রবিবারও বিশ্রাম নেন নি। প্রতিটি রবিবারকে তিনি যথাযথ ভাবে কাজে লাগিয়েছেন। রবিবারগুলোকে তিনি কাজে লাগান বিভিন্ন পরীক্ষা প্রস্তুতি এবং পরীক্ষা দেওয়ার কাজে। যার ফল আজ আমাদের সামনে প্রকাশিত।
কিভাবে সম্ভব হল ১৪৫টি ডিগ্রি লাভ করা? তাঁর বক্তব্য থেকে জেনে নেবো-
“আমি উত্তর মাদ্রাজে (চেন্নাই) একটি সাধারণ পরিবারের থেকে জন্মগ্রহন করেছি। আমি আমার প্রথম কলেজ ডিগ্রি শেষ করতে কঠোর পরিশ্রম করেছি এবং এর পর বিচার বিভাগে চাকরি পেয়েছি। এর পর যেখানে রেজিস্ট্রেশনের জন্য আলাদা করে মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়না সেখানে আমি আবেদন করতে শুরু করি। ফলে আমি একি সময়ে অনেকগুলি কোর্স করতে সক্ষম হয়েছি। গত ৩০ বছর ধরে ক্রমাগত ভাবে আমি এই পদ্ধতি অনুস্মরণ করে একের পর এক পরীক্ষা দিয়েছি এবং নতুন নতুন ডিগ্রি ও ডিপ্লোমা কোর্সে আবেদন করেছি। এবং আমার এই ৩০ বছরের অভিযানে প্রতিটি রবিবারে আমি কিছু পরীক্ষা দিতাম অথবা রিসার্চ পেপারে লেখার কাজ করতাম”।
♦ পরিবার-
তাঁর পরিবার বলতে তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। এমনকি তাঁর স্ত্রীর ঝুলিতেও রয়েছে ন’টি ডিগ্রি। তাঁর এই সাফল্যের পেছনে অনেকটা অবদান রয়েছে তাঁর স্ত্রীর। তাই তিনি স্ত্রীকে কৃতিত্ব দিতেও ভুলে যাননি। নিজের প্রতিটি সময় পড়াশোনার কাজে ব্যাস্ত রাখার ফলে দুই ছেলেমেয়েকে বড় করার দায়িত্ব স্ত্রী-র হাতেই তুলে দিয়েছেন। আর তাঁর স্ত্রী এই দায়ীত্ব যথাযথ ভাবে পালন করেচলেছেন।
♦ জেনে নিন তাঁর ঝুলিতে কি কি ডিগ্রি রয়েছে:
অধ্যাপক ভি এন পার্থিবানের ঝুলিতে রয়েছে দশটি মাস্টার অব আর্টস ডিগ্রি (এমএ), আটটি মাস্টার অব কমার্স ডিগ্রি (এম কম), তিনটি মাস্টার অব সায়েন্স (এমএসসি), ১২ টি রিসার্চ ডিগ্রি (এম ফিল), ন’টি মাস্টার অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিগ্রি (এমবিএ), আটটি মাস্টার অব ল ডিগ্রি।

♦ পেশা-
তাঁর পেশা স্বাভাবিক ভাবেই অধ্যাপনা। চেন্নাই শহরের বিভিন্ন কলেজে তিনি প্রায় ১০০-র বেশি বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের পড়ান। জানলে অবাক হবেন পার্থিবান স্যারের ভিজিটিং কার্ডটি দেখতে অনেকটা একটি ছোট বইয়ের মত!
♦ তাঁর কিছু দুর্বল দিক-
১৪৫ টি ডিগ্রি থাকলেও পার্থিবানের অঙ্কে ভয় এখনও কাটেনি। একবার অঙ্ক পরীক্ষায় ফেলও করেছিলেন তিনি। তিনি জানান অঙ্কই একমাত্র বিষয়, যেটিকে তিনি এখনও পুরোপুরি আয়ত্তে আনতে পারেননি। এছাড়াও তাঁর কিছু দুর্বল দিক রয়েছে, সবসময় পড়াশোনায় ডুবে থাকার ফলে মাঝে মধ্যে অনেক কিছুই তিনি মনে রাখতে পারেন না। অনেক সময় আবার নিজের পরিচিত কাছের মানুষ জনকেও চিনতে পারেন না তিনি। এমনকি মাঝে মাঝে নিজের বাড়ির রাস্তাও গুলিয়ে ফেলেন। এইসকল দুর্বল দিক গুলি থাকলেও ১৪৫ টি ডিগ্রি অর্জন করে তিনি এক কৃতিত্ব স্থাপন করেছে।
লেখাটি ভালো লাগলে সকলে একটি করে শেয়ার করে দেবেন