রাওলাট আইনের উদ্দেশ্য কী ছিল? গান্ধিজি কেন এই আইনের বিরোধিতা করেছিলেন?

পোস্টটি শেয়ার করুন
5/5 - (1 vote)

আজকে ২০১৮ সালের উচ্চমাধ্যমিকে ইতিহাস বিষয়ে আসা বড়ো প্রশ্নের উত্তর গুলি নিয়ে আলোচনা করা হল। আজকের প্রশ্ন হল রাওলাট আইনের উদ্দেশ্য কী ছিল? গান্ধিজি কেন এই আইনের বিরোধিতা করেছিলেন? উত্তরটি নিচে দেওয়া হল-

রাওলাট আইনের উদ্দেশ্য কী ছিল? গান্ধিজি কেন এই আইনের বিরোধিতা করেছিলেন?

উঃ সূচনা :

প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে ভারতীয়দের ব্রিটিশ বিরোধী গণ আন্দোলন ও বৈপ্লবিক কার্যকলাপ সম্পূর্ণ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার যে সমস্ত দমনমূলক আইন প্রবর্তন করেছিল। তার সার্থক প্রয়াস ছিল ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত রাওলাট আইন।

রাওলাট আইন কি?

১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার ইংল্যান্ডের বিচারপতি স্যার সিডনি রাওলাট-এর সভাপতিত্বে পাঁচজন সদস্যকে নিয়ে একটি “সিডিশন কমিশন’ বা রাওলাট কমিশন গঠন করেন। এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভায় ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি মাসে একটি দমনমূলক বিল উত্থাপিত হয়।

Join us on Telegram

ভারতীয় সদস্যদের প্রতিবাদ উপেক্ষা করে ১৮ মার্চ বিলটি আইনে পরিণত হয়। এটি রাওলাট আইন (Rowlatt Act) নামে পরিচিত।

রাওলাট আইনের উদ্দেশ্য

ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয়তাবাদ, গণ আন্দোলন, বিপ্লবী কার্যকলাপ প্রভৃতি ধ্বংস করার উদ্দেশ্যেই কুখ্যাত রাওলাট আইনটি প্রণয়ন করা হয়। এই আইনে যে সমস্ত ধারা রাখা হয় তা হল –

  • (১) সরকার বিরোধী যে-কোনো প্রচারকার্য দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য করা হবে।
  • (২) সন্দেহভাজন যে-কোনো ব্যক্তিকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করা যাবে।
  • (৩) গ্রেপ্তারের পর বিনা বিচারে তাদের অনির্দিষ্টকাল আটকে রাখা বা নির্বাসন দেওয়া যাবে।
  • (৪) বিনা পরোয়ানায় যে-কোনো ব্যক্তির বাড়ি সরকার তল্লাশি করতে পারবে।
  • (৫) বিশেষ আদালতে সন্দেহভাজন অপরাধীর বিচার হবে। বিচারকগণ কোনো জুরির সহায়তা এবং কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়াই বিচার করতে পারবে।
  • (৬) রাওলাট আইনের দ্বারা সম্পন্ন হওয়া বিচারের রায়ের বিরুদ্ধে কোনো উচ্চতর আদালতে আপিল করা যাবে না।
  • (৭) রাওলাট আইনে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে মুক্তির জন্য অর্থ জমা দিতে হবে।
  • (৮) কোনো সংবাদপত্র স্বাধীনভাবে সংবাদ পরিবেশন করতে পারবে না।

এইভাবে রাওলাট আইনের দ্বারা ভারতীয়দের ব্যক্তি স্বাধীনতাকে ধ্বংস করার পথ প্রশস্ত করা হয়।

রাওলাট আইনের প্রতি ভারতীয়দের প্রতিক্রিয়া

এই অমানবিক কালো আইনের বিরুদ্ধে দেশের সর্বত্র প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের আলস্য মহম্মদ আলি জিন্নাহ, সাজাহার-উল-হক, মদনমোহন মালব্য আইন পরিষদের সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দেন।

‘অমৃতবাজার পত্রিকা’, মাদ্রাজের হিন্দু, ‘দি নিউ ইণ্ডিয়া, লাহোরের ‘পাঞ্জাবি, বোম্বাই-এর ‘বোম্বাই ক্রনিকল’ প্রভৃতি সংবাদপত্র এই আইনের প্রতিবাদ করে।

‘অমৃতবাজার পত্রিকা’, এই আইনকে ‘এক ভয়াবহ ভ্রান্তি’ ও কেশরী পত্রিকায় ‘উৎপীড়নের দানবীয় যন্ত্র’ বলে অভিহিত করে।

গান্ধিজি কেন রাওলাট আইনের বিরোধিতা করেছিলেন?

গান্ধিজি অত্যাচারী রাওলাট আইনের প্রতিবাদ করে বলেন যে, “যে সরকার শাস্তির সময় এই ধরনের নির্মম আইনের আশ্রয় নিয়েছে, সেই সরকার কখনোই নিজেকে ‘সভ্য সরকার বলে দাবি করতে পারে না”।

তিনি এই আইনকে “উকিল নেহি, দলিল নেহি, আপিল নেহি” বলে মন্তব্য করেন।

জিন্নাহ তৎকালীন ভাইসরয়কে লেখা একটি চিঠিতে মন্তব্য করেন যে, এই আইনের মাধ্যমে ন্যায়বিচারের প্রধান আদর্শকে ধ্বংস করা হয়েছে।

সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বোম্বাই হাইকোর্টের বিচারপতি নারায়ণ চন্দ্রভারকার প্রমুখ এই আইনকে ‘অনাবশ্যক’ ও ‘অসংগত’ বলে অভিহিত করেছেন।

নগ্ন দমনমূলক এই আইনের বিরুদ্ধে ভারতের সর্বত্র তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ঐতিহাসিক এইচ. এইচ. ডডওয়েল বলেছেন যে, “এক সংকটজনক মুহূর্তে কুখ্যাত রাওলাট আইন ভারতে সর্বজনীন প্রতিরোধ গড়ে উঠতে সাহায্য করেছিল”।

উচ্চমাধ্যমিক ২০১৮ ইতিহাসের অন্যান্য প্রশ্ন ও উত্তর গুলি দেখার জন্য এখানে ক্লিক করো

উচ্চমাধ্যমিকের বিগত বছরের প্রশ্ন ও উত্তর PDF ডাউনলোড করার জন্য এখানে ক্লিক করো।

Source: wbchse.nic.in

Students Care

স্টুডেন্টস কেয়ারে সকলকে স্বাগতম! বাংলা ভাষায় জ্ঞান চর্চার সমস্ত খবরা-খবরের একটি অনলাইন পোর্টাল "স্টুডেন্ট কেয়ার"। পশ্চিমবঙ্গের সকল বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের এবং সমস্ত চাকুরী প্রার্থীদের জন্য, এছাড়াও সকল জ্ঞান পিপাসু জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিবর্গদের সুবিধার্থে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: স্টুডেন্টস কেয়ার কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত !!