বিশ্বের অবাক করা ১০টি জিনিস যা দেখে আপনি বিস্মিত হবেনই
বিশ্বের অবাক করা ১০টি জিনিস
আমরা প্রতিনিয়ত নানান জানা অজানা জিনিস দেখে চলেছি, নানান জ্ঞান সংগ্রহ করে চলেছি। জীবিনের শেষ দিন পর্যন্ত আমাদের এই ধারা ক্রমাগত হারে চলতেই থাকবে। আমাদের এই বাসভূমিতে এমন নানান অজানা জিনিস রয়েছে যেগুলি সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত নই। আমরা অর্থাৎ স্টুডেন্টস কেয়ার আপনাদের এরূপ নানান জানা অজানা বিষয়ের সম্পর্কে ধারনা প্রদান করে থাকে। আজ সেরকমি মজাদার বিশ্বের অবাক করা ১০টি জিনিস নিয়ে হাজির হয়েছি। আপনাদের মন ছুঁইয়ে যাবে এই বিষয়ে আমরা আশাবাদী।
১. বিশ্বের সবচেয়ে খাড়া রেলপথ, সুইজারলয়ান্ড

২০১৭ সালের শেষের দিকে বিশ্বের সবচেয়ে খাড়া রেলপথ চালু হলো সুইজারল্যান্ডে। জুরিখের দক্ষিণে শুইৎজ থেকে স্টুস পর্যন্ত প্রায় ১৭শ মিটার দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে এই রেলপথ এবং এই পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে ৪ মিনিটের ও কম। বরফ আচ্ছাদিত আঁকাবাঁকা পাহাড়ের মাঝেই বিশ্বের সবচেয়ে খাড়া ও ঝুলন্ত রেলপথ হল এটি। রেলপথটি তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ৫ কোটি ২৬ লাখ মার্কিন ডলার। সমুদ্র তল থেকে এই রেল পথের উচ্চতা প্রায় ১৩০০ মিটার। এই রেলপথে যেতে হলে আপনাকে প্রায় সাড়ে সাতশ’ মিটার পথ পাড়ি দিতে হবে ৪৭ ডিগ্রী কৌণিক খাড়াভাবে। এ কর্মযজ্ঞের শুরু ২০০৩ সালে এবং প্রায় ১৪ বছরের চেষ্টায় সুইস রা ২০১৭ সালে এই অসম্ভব কে সম্ভব করে বিশ্ববাসীর কাছে কৃতিত্ব স্থাপন করেছে।
২. বিশ্বের সবচেয়ে ধনী গ্রাম হুয়াক্সি, চীন

চীনের জিয়াংশু প্রদেশের অন্তর্গত হুয়াক্সি নামক একটি গ্রাম রয়েছে। প্রচলিত রয়েছে এই গ্রামটি নাকি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী গ্রাম। কিন্তু একসময় এখানকার মানুষ খুব গরিব ছিল। সাধারণত কৃষিকাজ ছিল যাদের পেশা; সেই তারাই এখন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী গ্রামের বাসিন্দা। অবাক বিষয় তাই না! এই গ্রামে রয়েছে হেলিকপ্টার থেকে ট্যাক্সি, থিম পার্ক, বিলাসবহুল হাইরাইস বিল্ডিং, পর্যটকদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের হোটেল, প্রত্যেক বাসিন্দার রয়েছে নিজস্ব বাড়ি ও গাড়ি। এই গ্রামের বাসিন্দাদের বার্ষিক গড় আয় হল ১ লক্ষ ২২ হাজার ৬০০ ইউয়ান। প্রত্যেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আছে ২৫ লাখ ডলার, যা চীনের একজন সাধারণ কৃষকের উপার্জনের ৪০ গুণ বেশি উপার্জন করেন এখানকার বাসিন্দারা।
৩. বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু কাঠের ভবন, জাপান

জাপানের রাজধানী টোকিওকে পরিবেশগতভাবে সুন্দর করার লক্ষ্যে নির্মাণ করা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু কাঠের ভবন। ৩৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তৈরি করা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু কাঠের ভবন। অর্থাৎ ২০৪১ সালে এটি সম্পূর্ণ করার লক্ষমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এটি তৈরি করবে জাপানের সুমিতোমো ফরেস্ট্রি কোম্পানি। ৭০ তলাবিশিষ্ট এই ভবনটি নির্মানের জন্য মাত্র ১০ শতাংশ স্টিল ব্যবহার করা হবে। বাকি অংশ পুরোটাই হবে কাঠ দিয়ে। প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার কিউবিক মিটার দেশীয় কাঠের সমন্বয় করে ভবনটি নির্ণয় করা হবে। এই ভবনে প্রায় আট হাজার ঘর থাকবে। ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হবে ৫৬০ কোটি ডলার। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু কাঠের ভবনটি রয়েছে কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে। শিক্ষার্থী বসবাসের জন্য নির্মিত ভবনটি ৫৩ মিটার উঁচু।

৪. যেখানে সাগর ভাগ হয়ে জেগে ওঠে একটি প্রকান্ড রাস্তা! ফ্রান্স

১৯৫৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘টেন কম্যান্ডমেন্টস’ ছবির সেই অবিস্মরণীয় দৃশ্য দেখেছেনতো? আরে ওই যে যেখানে দুই ভাগ হয়ে যাওয়া সমুদ্রের মধ্যে জেগে ওঠা পথ ধরে সাগর অতিক্রম করে নিঃসঙ্গ দ্বীপে পৌঁছে যাচ্ছে মানুষ, পশু এমনকি সারিবদ্ধ গাড়িও! হ্যাঁ, ওই দৃশ্যটি আসলে বাস্তবেও দেখা মেলে।
‘প্যাসেজ দ্যু গোয়ে’ – ফরাসি ভূন্ডের ভেন্দির সঙ্গে ন্যয়রমৌটিয়ার দ্বীপের সংযোগ ঘটাতে বোর্নিউফ উপসাগর চিরে চলে গেছে এক চিলতে রাস্তা যেটি প্রতিদিন মাত্র দুই বার এক থেকে দুই ঘণ্টার জন্য রাস্তাটি ব্যবহার করা যায়। বাকি সময় ১.৩ থেকে ৪ মিটার জলের নিচে থাকে এই পথ অর্থাৎ ডুবে থাকে।
এর উৎপত্তি কারন হিসাবে নৃতত্ত্ববিদদের মতে, প্রাগৈতিহাসিক যুগে এ অঞ্চলের একটি মালভূমি ভেঙে পড়ে, যার ফলে জন্ম নেয় একটি উপসাগর। মালভূমির উত্তর ও দক্ষিণ দিক বরাবর সমুদ্র সৃষ্টি হয়ে যাওয়ার পর দুই সাগরের ঢেউ দুই দিক থেকে ধেয়ে এসে মুখোমুখি সংঘর্ষ বাধে। এবং ওই ঢেউয়ের সঙ্গে বয়ে আসা পলি, বালি যুগের পর যুগ জমে ক্রমে ক্রমে সমুদ্রতল অগভীর হয়ে পড়ে। তাই ভাটার সময় সমুদ্র জলতল পিছিয়ে গেলেই জেগে ওঠে এক চিলতে ডাঙা। এবং ওই ডাঙা বরাবর তৈরি হয় পথ!
৫. বিশ্বের দীর্ঘতম কাঁচের সেতু, চীন

বিশ্বের দীর্ঘতম কাঁচের সেতুটি অবস্থিত চীনে। দেশটির হুনান প্রদেশে একটি কাঠের ব্রিজের স্থানে এ কাচের ব্রিজ বানানো হয়েছে। এই সেতু লম্বায় ৪৮৮ মিটার। আর চওড়ায় ২১৮ মিটার। এই ব্রীজটি তৈরি হয়েছে কাঁচের ১০৭৭টি আয়তকার শার্সি দিয়ে। শার্সিগুলির সব মিলিয়ে মোট ওজন কমপক্ষে ৭০ মেট্রিক টন। ইঞ্জিনিয়ারদের মতে, এই কাঁচের স্তর ২৫ গুণ মজবুত সাধারণ জানালার কাঁচ থেকে।
৬. Eisriesenwelt Ice Caves (Austria)

আমরা জানি যে “Must Visit” শব্দটিকে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ব্যবহার করা হচ্ছে কিন্তু অস্ট্রিয়াতে Eisriesenwelt Ice Caves একবার সফর সত্যিই আবশ্যকীয় বিষয়। মনে রাখবেন, এটি বিশ্বের বৃহত্তম বরফ গুহা!
এখানের বিষেশ বৈশিষ্ট হল বরফের ভাস্কর্য, বরফ দেয়াল প্রভৃতি। আপনি যদি না যান বিশ্বাস করতে পারবেন না। গুহাটি সম্পূর্ণ অন্ধকার কিন্তু পর্যটকদের কয়েক হাত গ্যাস ক্যান্টিন এবং ম্যাগনেসিয়ামের আলোতে বরফের গুহাটিকে আলোকময় করে এক অপরূপ দৃশ্যের সৃষ্টি করে! এটিকে এক কথায় বর্ণনা করতে বলা হলে বলতে হবে “Mother Nature’s handicraft”। এটি লম্বায় ৪০ কিমি কিন্তু এর অল্প একটুই টুরিষ্টরা দেখতে পারেন, আর তাতেই নাকি তাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।সালজবুর্গ থেকে দূরত্ব প্রায় ৪০ কিমি। সবচেয়ে উপযুক্ত সময় ভ্রমণ করার জন্য- সকাল ১০টার আগে এবং দুপুর ২টার পর। (সূত্র)
৭. ‘স্টোন ফরেস্ট’, অর্থাৎ পাথরের বন

আপনাকে যদি কোনো পাথরের বনে ভ্রমনে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয় তাহলে আপনি হয়ত প্রথমে অবাক হবেন। কিন্তু অবাক হওয়ার কোনো কারন নেই, এই পৃথিবীতে এমন একটি বন রয়েছে যেখানে গাছ পালার বদলে রয়েছে দূর দিগন্ত বিস্তৃত পাথর। এই বনটির অবস্থান চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিং শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে। এগুলো প্রাকৃতিকভাবেই সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে ভূ-তত্ত্ববিদদের মতে, পাথরগুলো অনেক অনেক আগের প্রায় ২৭ কোটি বছর আগের! বহু বছর ধরে সমুদ্রের ঢেউ এই পাথরের গায়ে এসে আঘাত করে, যার ফলে ওদের গায়ে এমন প্রাকৃতিক নকশা তৈরি হয়েছে। এরপর ভৌগোলিক পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের জল কমলে (সমুদ্রতলের পরীবর্তনের ফলে) এক পর্যায়ে বেরিয়ে আসে বছরের পর বছর ধরে নিজেদের আড়াল করে রাখা পাথরগুলো। এবং এর ফলে সৃষ্ট এই ‘স্টোন ফরেস্ট’, অর্থাৎ পাথরের বন। ২০০৭ সালেই ইউনেস্কো পাথুরে বনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট বা বিশ্ব ঐতিহ্যকেন্দ্র হিসাবে ঘোষণা করে।
৮. বিশ্বের বৃহত্তম ও ভয়ঙ্করতম লিফট, চীন

আপনি কি খুব বেশি পরিশ্রম না করে পাহাড় জয় করতে চান? তাহলে আপনাকে যেতে হবে আমাদের প্রতিবেশী দেশ চীনে। চীনে একটি ভয়ঙ্কর ও উচ্চতম লিফট রয়েছে, যার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই পাহাড় জয় করতে পারবেন। চীনের ঝানজিয়াজি ফরেস্ট পার্কে অবস্থিত লিফটটির নাম ‘হান্ড্রেড ড্রাগন স্কাই লিফট’। ইউনেস্কো দ্বারা ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের বস্তুগুলির একটি এটি। লিফটটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১২০ মিলিয়ন ইয়েন বা ১৩ মিলিয়ন ইউরো। ১৯৯৬ সালে শুরু হয় এটার নির্মাণ এবং শেষ হয় ১৯৯৯ সালে। কিন্তু নিরাপত্তার জনিত কারনে এটি চালুর পর কিছুদিনের জন্য বন্ধ ছিল। এরপর ২০১৩ সালে আবারো খুলে দেয়া হয় এটি। দর্শনার্থীদের এটি মাত্র দুই মিনিটে নিয়ে যেতে পারে ৩৬২ মিটার উপরে। এক সাথে এক হাজার ৪০০ যাত্রী নিয়ে চড়তে পারে এই লিফটটি। এখন পর্যন্ত তিনটি বিভাগে ‘গিনেজ বুকে’ নাম উঠেছে ‘হান্ড্রেড ড্রাগন স্কাই লিফটের’।
অ) এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় সার্বক্ষণিক খোলা থাকা লিফট।
আ) এটি বিশ্বের বৃহত্তম দোতলা লিফট।
ই) এটা বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগামী লিফট।
৯. শুকাত্রা দ্বীপ, ইয়েমেন

শুকাত্রা দ্বীপ ইয়েমেনে অবস্থিত। ইয়েমেনের এই জায়গাটি দ্বীপ হিসেবে শুকাত্রা যতটা আকর্ষণীয় তার চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় এখানকার গাছপালা। দ্বীপ টি লম্বায় ১২০ কি মি এবং প্রস্থে ৪০ কিমি। এই দ্বীপের গাছ পালাগুলোও বেশ অদ্ভুত। এই দ্বীপের সবচেয়ে অদ্ভুত গাছ হল ড্রাগন ব্লাড ট্রি। ছাতার মত দেখতে এই গাছগুলি। ড্রাগন ব্লাড ট্রি থেকেই রাবার লাগানো হয়। আরেকটি অদ্ভুত গাছের নাম হচ্ছে ‘Desert Rose’ অথবা মরুভূমির গোলাপ। এই দ্বীপ এ প্রায় ৭০০ রকমের গাছপালা রয়েছে। আজকের বিশ্বের অবাক করা ১০টি জিনিস টপিকে শুকাত্রা দ্বীপের ড্রাগন ব্লাড ট্রি স্থান করে নিয়েছে।
১০. শ্বেত মরুভূমি, মিশর

শ্বেত মরুভূমি নাম শুনলেই আপনার মনে হতে পারে কাল্পনিক কোনো স্থান। কিন্তু এটা কোনো কাল্পনিক নয় বাস্তবে এই শ্বেত মরুভূমির দেখা মিলবে যদি আপনি মিশরের ফারাফ্রা মরূদ্যানে কোনোদিন যান। চোখ ধাঁধানো এই মরুভূমির ইতিহাস থেকে জানা যায় যে পূর্ব সাহারা মরুভূমি যখন জলের নিচে ডুবে ছিল তখন তার একটি অংশে খড়িমাটি জমতে থাকে।

আস্তে আস্তে এই জায়গাটি যখন সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে চলে আসে তখন ওই জমে থাকা খড়িমাটি শ্বেত মরুভূমির সৃষ্টি করে।
ধন্যবাদ সকলকে। আমাদের আজকের বিষয় বিশ্বের অবাক করা ১০টি জিনিস সম্পর্কে আপনাদের কিছুটা ধারনা দিতে পেরেছি। পরবর্তীকালে আবারও ঠিক এই ধরণের তথ্য নিয়ে ফিরে আসবো কথা দিলাম।
—সমাপ্ত—
©স্টুডেন্টস কেয়ার (সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত)