সুয়েজ সংকট কি? সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও

পোস্টটি শেয়ার করুন
5/5 - (1 vote)

আজকে ২০১৮ সালের উচ্চমাধ্যমিকে ইতিহাস বিষয়ে আসা বড়ো প্রশ্নের উত্তর গুলি নিয়ে আলোচনা করা হল। আজকের প্রশ্ন হল সুয়েজ সংকট কি? সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও উত্তরটি নিচে দেওয়া হল-

সুয়েজ সংকট কি? সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও

সুয়েজ সংকট কি?

উঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পরিবর্তনের হাওয়া লাগে। জাতীয়তাবাদ দেশে দেশে জয়যুক্ত হয়। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মিশরের সুয়েজ খাল জাতীয়করণকে কেন্দ্র করে এক সংকট সৃষ্টি হয় যা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ইতিহাসে আলোড়ন সৃষ্টি করে। কায়েমী স্বার্থের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে তাঁর দৃষ্টান্ত ছিল মিশরের সুয়েজ খাল জাতীয়করণ (২৬ জুলাই ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ)

ইউনিভার্সাল সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি নামে এক সংস্থাকে একটি চুক্তির ভিত্তিতে ৯৯ বছরের মেয়াদে খালটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই মিশরের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসের এক ঘােষণার মাধ্যমে সুয়েজ খাল ও সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি—দুটিকেই জাতীয়করণ করে নেন। ফলে সুয়েজ খালকে কেন্দ্র করে এক সমস্যা তৈরি হয়। বিশ্বজুড়ে এই সমস্যাকেই সুয়েজ সংকট বােঝায়।

সুয়েজ সংকটের কারণ

গামাল আবদেল নাসের ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে মিশরের ক্ষমতা দখলের পর থেকে বিভিন্ন কারণে পশ্চিমি শক্তিবর্গের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে যা সুয়েজ সংকটের অন্যতম কারণ হয়ে ওঠে।

Join us on Telegram

(১) মিশরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সুয়েজ খালের নিরাপত্তার জন্য এই অঞ্চলে ব্রিটিশ সেনা মোতায়েন থাকায় সুয়েজ খাল ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে মিশরের কোনো কর্তৃত্ব ছিল না।

(২) আফ্রিকায় অবস্থিত ফরাসি উপনিবেশ আলজিরিয়ায় ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহ শুরু হলে নাসের বিদ্রোহীদের সাহায্য করেন। এতে নাসের উপর ফ্রান্স ক্ষুদ্ধ হয়।

(৩) মধ্যপ্রাচ্যে রুশ আগ্রাসন প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে আমেরিকার নেতৃত্বে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে বাগদাদ চুক্তি (CENTO) স্বাক্ষরিত হলে মিশর এই চুক্তি থেকে দূরে থাকে। এতে পশ্চিমি শক্তিজোট অসন্তুষ্ট হয়।

(৪) মধ্যপ্রাচ্যে আরব জাতীয়তাবাদের বিরোধী ইজরায়েলের উত্থান নাসের মেনে নিতে পারেনি।

(৫) পশ্চিমি শক্তিবর্গের কাছে বারংবার আর্থিক ও সামরিক সাহায্য চেয়েও মিশর ব্যর্থ হয়। ফলে রাশিয়ার সাথে মিশরের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।

(৬) ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে খনন শুরু হওয়া সুয়েজ খাল দিয়ে ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাণিজ্যিকভাবে জাহাজ চলাচল শুরু হয় এবং Universal Suez Canal Company এক চুক্তির ভিত্তিতে ৯৯ বছরের মেয়াদে এই খাল পরিচালনার দায়িত্ব পায়। মিশরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হলেও সুয়েজ খাল থেকে আদায় অর্থের খুব সামান্য অংশ মিশর পেত।

এই পরিপ্রেক্ষিতে ও পরিস্থিতিতে নাসের, সুয়েজ খাল জাতীয়করণের কথা ঘোষণা করেন এবং বলেন –

(ক) মিশর সুয়েজ খালের জাতীয়করণ করছে এবং এই খালের পরিচালনা করবেন তিনি নিজে।

(খ) সুয়েজ খাল থেকে সংগৃহীত অর্থ আসওয়ান বাঁধ নির্মাণে ব্যয় করা হবে।

(গ) কোম্পানির বিদেশি অংশীদারদের প্রচলিত বাজারদর অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

(ঘ) আন্তর্জাতিক যোগসূত্র হিসেবে সব দেশের জাহাজ এই জলপথ ব্যবহার করতে পারবে।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সুয়েজ সংকটের প্রভাব

সুয়েজ সংকটের কারণে আন্তর্জাতিক স্তরে যেসব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, তা হল-

পাশ্চাত্য দেশগুলির প্রতিক্রিয়া :

মিশরের রাষ্ট্রপতি নাসেরের সুয়েজ খাল জাতীয়করণ ঘোষণায় সারা বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কেননা এতে পশ্চিমি জোটের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ বিপন্ন হয়ে পড়ে।

ঐতিহাসিক উইলক্সিড ন্যাপ বলেন যে, এই জাতীয়করণ ঘোষণার ফলে পাশ্চাত্য দেশগুলির মধ্যে ভীতি, বিরোধিতা ও কর্মতৎপরতা শুরু হয়ে যায়। সুয়েজ খাল জাতীয়করণের ফলে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ব্রিটেন ও ফ্রান্স।

ফলে এই ঘটনায় এই দুই রাষ্ট্র ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়। তখন তারা উভয়ে মিশরের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণে তৎপর হয়ে ওঠে। সুয়েজ খালকে আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণে আনাই ছিল আমেরিকার লক্ষ্য।

লণ্ডন সম্মেলনে সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী ২২টি দেশ যোগদান করে। ব্রিটেন-ফ্রান্স সহ ১৮টি দেশ জাতীয়করণের পরিবর্তে সুয়েজখালের ওপর আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব দেয়।

রাশিয়া, ভারত, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশ জাতীয়করণের পক্ষে মত জানায়। মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জন ফস্টার ডালেস ‘সুয়েজ খাল’ ব্যবহারকারী সংস্থা গঠন করে তার মাধ্যমে জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব দেয়। তখন মিশরের এই সুয়েজ সমস্যা সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নিকট প্রেসিডেন্ট নাসের পেশ করেন।

ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও উজরায়েল একসাথে মিশর আক্রমণ করলে জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ যুদ্ধ বিরতির ডাক দেয়। তার নির্দেশে মিশর থেকে সৈন্য অপসারণ করা হয়। ভারত এই সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। নাসেরের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। ব্রিটেনের প্রচুর আর্থিক ক্ষতি সংঘটিত হয়।

উচ্চমাধ্যমিক ২০১৮ ইতিহাসের অন্যান্য প্রশ্ন ও উত্তর গুলি দেখার জন্য এখানে ক্লিক করো

উচ্চমাধ্যমিকের বিগত বছরের প্রশ্ন ও উত্তর PDF ডাউনলোড করার জন্য এখানে ক্লিক করো।

Source: wbchse.nic.in

Students Care

স্টুডেন্টস কেয়ারে সকলকে স্বাগতম! বাংলা ভাষায় জ্ঞান চর্চার সমস্ত খবরা-খবরের একটি অনলাইন পোর্টাল "স্টুডেন্ট কেয়ার"। পশ্চিমবঙ্গের সকল বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের এবং সমস্ত চাকুরী প্রার্থীদের জন্য, এছাড়াও সকল জ্ঞান পিপাসু জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিবর্গদের সুবিধার্থে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: স্টুডেন্টস কেয়ার কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত !!