ঔপনিবেশিক সমাজে জাতি সংক্রান্ত প্রশ্ন ও তার প্রভাব আলোচনা করো

পোস্টটি শেয়ার করুন
4.4/5 - (5 votes)

আজকে ২০১৮ সালের উচ্চমাধ্যমিকে ইতিহাস বিষয়ে আসা বড়ো প্রশ্নের উত্তর গুলি নিয়ে আলোচনা করা হল। আজকের প্রশ্ন হল ঔপনিবেশিক সমাজে জাতি সংক্রান্ত প্রশ্ন ও তার প্রভাব আলোচনা করো। উত্তরটি নিচে দেওয়া হল-

ঔপনিবেশিক সমাজে জাতি সংক্রান্ত প্রশ্ন ও তার প্রভাব আলোচনা করো

উঃ ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদী জাতিগুলি অন্য জাতিকে হীন বলে মনে করে তাদের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা প্রভৃতির মাধ্যমে বারংবার প্রকাশ করত। যেমন—

(১) জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার :

ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদী জাতিগুলি তাদের অধিকৃত উপনিবেশে নিজেদের সীমাহীন জাতিগত গৌরবের কথা প্রচার করে। যেমন, জেমস মিল মনে করতেন ব্রিটিশ শাসনে অনুন্নত ভারতীয়দের মঙ্গল হচ্ছে।

(২) অভিভাবকত্বের মানসিকতা :

সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলির কিছু মানুষ এশিয়া ও আফ্রিকার উপনিবেশগুলির বাসিন্দাদের সঘোষিত অভিভাবক হিসেবে নিজেদের তুলে ধরেন। তাঁরা উপনিবেশের পিছিয়ে পড়া মানুষদের সংস্কৃতবান করে তোলার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন লর্ড ক্রোমার, লর্ড মিলার, লর্ড লুগার্ড প্রমুখ।

Join us on Telegram

(৩) জাতির শ্রেষ্ঠত্ব :

সাম্রাজ্যবাদী জাতিগুলি চার্লস ডারউইনের যোগ্যতম জাতির শ্রেষ্ঠত্ব রক্ষা’-র তত্ত্ব প্রচার করে। তারা বলে, পৃথিবীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জীবনধারণের উপকরণে ঘাটতি দেখা দিলে বিভিন্ন জাতির মধ্যে সংঘাত অনিবার্য। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে যোগ্য বা শক্তিশালী জাতি এই সংগ্রামে জয়ী হয়ে পৃথিবীতে টিকে থাকবে।

(৪) শ্বেতাঙ্গদের উন্নাসিকতা :

সাম্রাজ্যবাদী জাতিগুলির বদ্ধমূল ধারণা ছিল যে, কৃষ্ণাঙ্গ জাতির চেয়ে শ্বেতাঙ্গ জাতির মানুষ অনেক বেশি উন্নত সভ্যতার অধিকারী। এশিয়া ও আফ্রিকার মানুষ কখনোই তাদের সমকক্ষ হতে পারে না। সাম্রাজ্যবাদী নীতির মাধ্যমে তাদের উন্নত সভ্যতার রূপটি প্রকাশিত হয় বলে শ্বেতাঙ্গরা মনে করত।

(৫) জাতিগত ব্যবধান ঃ

উপনিবেশগুলিতে শাসক জাতি ও শাসিত জাতির মধ্যে মর্যাদাগত ব্যবধান সহজেই চোখে পড়ে। সাম্রাজ্যবাদী দেশের আইন, শাসন ও বিচার বিভাগের যাবতীয় বিশেষ সুযোগ সুবিধা শাসক জাতি ভোগ করলেও শাসিত জাতি তা থেকে বজ্জিত হয়।

(৬) সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠা :

ঔপনিবেশিক শাসক জাতি সর্বদাই নিজের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে শ্রেষ্ঠতর এবং উপনিবেশে বসবাসকারী শাসিত জাতির সংস্কৃতিকে নিকৃষ্ট বলে মনে করত। ভারতে লর্ড বেন্টিঙ্ক-এর আইন সচিব ও শিক্ষাবিদ মেকলে প্রাচ্যের সভ্যতাকে দুর্নীতি, অপবিত্র ও নির্বুদ্ধিতা বলে অভিহিত করেন।

(৭) বিকৃত জাতীয়তাবাদ :

ঊনবিংশ শতকের শেষ এবং বিংশ শতকের প্রথমার্ধে ইউরোপের বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রে বিকৃত বা উগ্রজাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটে। এ ধরনের রাষ্ট্রের শাসকেরা নিজেদের দেশ ও জাতিকে শ্রেষ্ঠতম বলে মনে করে এশিয়া ও আফ্রিকার অনগ্রসর দেশগুলিকে পদানত করার উদ্যোগ নেয়।

সুতরাং দেখা যায়, সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির শাসনাধীনে বিভিন্ন উপনিবেশের অনগ্রসর জাতিগুলি নানান শোষণ-পীড়ন ও দুর্দশার শিকার হয়। ফলে জাতিগত ব্যবধানের সমর্থক ও নঞর্থক উভয় ধরনের প্রভাব লক্ষ করা যায়।

নঞর্থক প্রভাব

(১) অমানবিকতা :

ইউরোপের ঔপনিবেশিক শাসক জাতির দ্বারা এশিয়া ও আফ্রিকার কৃয়াঙ্গ শাসিত জাতি দীর্ঘকাল ধরে ঘৃণা, বিদ্বেষ, অবহেলা ও অমানবিকতার শিকার হয়। শাসিত জাতিগুলি নিজেদের দেশেই দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে স্বীকৃত হয়।

(২) জাতিগত শোষণ :

উপনিবেশে শাসক ও শাসিতের মধ্যে জাতিগত ব্যবধান অনগ্রসর মানুষের উপর তীব্র শোষণ ও অত্যাচারের সূত্রপাত ঘটায়। উপনিবেশের পরাধীন জাতিগুলির উপর বিপুল পরিমাণে করের বোঝা চাপানো হয়। কৃষিব্যবস্থা, কুটিরশিল্প বিদেশি জাতিগুলির শোষণে ধ্বংস হয়। তীব্র আর্থিক শোষণ, খাদ্যাভাব প্রভৃতি ঘটনা পরাধীন জাতিগুলিকে সীমাহীন দুরাবস্থায় ফেলে দেয়।

(৩) দেশীয় ঐতিহ্যে আঘাত :

নিজেদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে গর্বিত শ্বেতাঙ্গ জাতি এশিয়া ও আফ্রিকার উপনিবেশগুলিতে বিভিন্ন জাতির প্রাচীন ঐতিহ্যে জোর আঘাত হানে। ফলে প্রাচীন বহু সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য লুপ্ত হতে শুরু করে।

(৪) শ্রমিক রপ্তানি :

পশ্চিমের শ্বেতাঙ্গ জাতিগুলি প্রথম দিকে আফ্রিকার কৃয়াঙ্গ ক্রীতদাসদের আমেরিকার বিভিন্ন উপনিবেশে রপ্তানি করে সেখানকার উৎপাদনমূলক কাজগুলি সচল রাখত। খামারগুলিতে কৃষ্ণাঙ্গ শ্রমিকদের শ্রমের বিনিময়ে শ্বেতাঙ্গ প্রভুদের জীবনে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য আসত।

(৫) বৈষম্য ঃ

উপনিবেশে শাসক শ্বেতাঙ্গ ও শাসিত কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে তীব্র বৈষম্য বিদ্যমান ছিল। শাসিত জাতিরা শাসক জাতির নিকট কখনো সুবিচার পায় না। যেমন সরকারি চাকুরি, আদালত সব শ্বেতাঙ্গদের জন্য সংরক্ষিত হত বিশেষভাবে।

সদর্থক প্রভাব

(১) পাশ্চাত্য শিক্ষার সান্নিধ্যঃ

ঔপনিবেশিক শাসন প্রসারের ফলে প্রাচ্যের শিক্ষার ও সংস্কৃতি পাশ্চাত্য শিক্ষার সংস্পর্শে এসে এক নতুন দিক সংযোজিত হয়। খ্রিষ্টান মিশনারিরা ঔপনিবেশের মানুষদের মধ্যে ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে এসে শিক্ষার প্রসার এবং সমাজকল্যাণ মূলক কাজে উদ্যত হয়।

(২) জ্ঞানের প্রসার ঃ

ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক জাতিগুলি জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে এশিয়া ও আফ্রিকার উপনিবেশগুলি বাসিন্দাদের তুলনায় যথেষ্ট আগ্রহী ছিল। ইউরোপের জ্ঞানভাণ্ডার এশিয়া ও আফ্রিকায় সঞ্চালিত হয়।

(৩) শিল্পকলার অগ্রগতি ঃ

পাশ্চাত্যের স্থাপত্য ও ভাস্কর্যর সংস্পর্শে এসে তাদের শিল্প সৃষ্টিতে নতুনত্ব আনে।

(৪) গণতান্ত্রিক আদর্শের প্রসার :

ব্রিটিশ চিন্তাবিদ্ লেনার্ড উলফ মনে করেন যে, ইউরোপীয় সভ্যতাগুলি উপনিবেশে অত্যাচার ও শোষণ চালালেও, ইউরোপীয় সভ্য জাতিগুলি কালো মানুষদের সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার আদর্শে দীক্ষিত করেছিল।

(৫) সংগীতে অগ্রগতি ঃ

প্রাচ্যের সংগীতের অনুরাগী হয়ে পড়েন পাশ্চাত্যের জাতিগুলি। বহুশিল্পী প্রাচ্যের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে পড়েন।

(৬) নবজাগরণের সূচনা ঃ

ইউরোপের সভ্য জাতিগুলি এশিয়া ও আফ্রিকার পিছিয়ে পড়া মানুষদের মধ্যে আধুনিক গণতান্ত্রিক আদর্শ প্রচারের ফলে নবজাগরণের সূচনা হয় ।

উচ্চমাধ্যমিক ২০১৮ ইতিহাসের অন্যান্য প্রশ্ন ও উত্তর গুলি দেখার জন্য এখানে ক্লিক করো

উচ্চমাধ্যমিকের বিগত বছরের প্রশ্ন ও উত্তর PDF ডাউনলোড করার জন্য এখানে ক্লিক করো।

Source: wbchse.nic.in

Students Care

স্টুডেন্টস কেয়ারে সকলকে স্বাগতম! বাংলা ভাষায় জ্ঞান চর্চার সমস্ত খবরা-খবরের একটি অনলাইন পোর্টাল "স্টুডেন্ট কেয়ার"। পশ্চিমবঙ্গের সকল বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের এবং সমস্ত চাকুরী প্রার্থীদের জন্য, এছাড়াও সকল জ্ঞান পিপাসু জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিবর্গদের সুবিধার্থে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: স্টুডেন্টস কেয়ার কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত !!