বিশেষ নিবন্ধ : পরিবেশ দূষণ – পৃথিবীর এক মারণ রোগ || সৌম্যরূপ গোস্বামী

পোস্টটি শেয়ার করুন
Rate this post

পরিবেশ দূষণ

“আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে / শাখে শাখে পাখি ডাকে কত শোভা চারিপাশে”

কিন্তু সেই শোভা আর আছে কি? মানুষ তো নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে চলেছে এই পরিবেশকে। আমরা গ্রীষ্মকালে একটু গরম পড়লেই এয়ার কন্ডিশনার যুক্ত ঘরে রাতের ঘুম উপভোগ করি। খাবার সতেজ রাখার জন্য চালিয়ে দিচ্ছি রেফ্রিজারেটর। কায়িক পরিশ্রম কম হবে বলে চালিয়ে দিচ্ছি মেশিন। ব্যবহার করছি যানবাহন। কিন্তু আমাদের অজান্তেই এই সুন্দর পরিবেশ নিদারুণ ভাবে হয়ে যাচ্ছে অসুন্দর। বাড়ছে দূষণ। কিন্তু আমরা সেগুলো মানি না। যতদিন যাচ্ছে বাড়ছে মানুষের চাহিদা। আর এই চাহিদার ফলেই প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতি আর তারা ভারসা করতে পারছে না। এছাড়া জায়গায় জায়গায় মানুষ গাছ কেটে চলেছে। এরফলেও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

বিশেষ নিবন্ধ : পরিবেশ দূষণ - পৃথিবীর এক মারণ রোগ || সৌম্যরূপ গোস্বামী

পরিবেশ দূষণ বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো সঙ্কট। এই সঙ্কট কিন্তু একদিনে সৃষ্টি হয়নি। আদিম মানুষ অনেকটাই পরিবেশ নির্ভর ছিল। কিন্তু মানুষ একদিন জ্বালাতে শিখল আগুন। আবিষ্কার করল চাকা। এরপর মানুষের কৌতূহল অনেকটাই বেড়ে গেল। সেই কৌতূহল মানুষকে উন্নতির দিকে ঠেলে দিল। তারা আবিষ্কার করল নানান ধাতু। শিখল চাষবাস। চাষবাস শেখার পর মানুষের মাথায় এল কি করে কম সময়ে বেশি ফসল ফলানো যায়। ফল স্বরূপ আবিষ্কার হল সার। আবার মানুষ নিজের ফসলকে কীট পতঙ্গের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োগ করল কীটনাশক। এমনি করে ধাপে ধাপে মানুষ উন্নতির পথে পাড়ি দিতে লাগল। একসময় ঘটল ইউরোপে শিল্প বিপ্লব। তরান্বিত হল পরিবেশ দূষণ।

Join us on Telegram

[প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা ২০২০-র সমস্ত প্রবন্ধ পড়ুন এক ক্লিকে]

ইউরোপে শিল্প বিপ্লব ছিল পরিবেশ দূষণের মূল ভিত্তি। এরপর সারা পৃথিবীতে শিল্পের বিকাশ বেড়ে যেতে লাগল। তৈরি হল কারখানা। আর সেই কারখানা স্থাপনের জন্য মানুষ কেটে ফেলল গাছ। তৈরি হল নানান যানবাহন। আর সেই কারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়া মিশল বায়ুতে। ঘটল বায়ুদূষণ। চাষিরা জমিতে প্রয়োগ করল সার। ঘটল মাটি দূষণ। আর ওই সার মিশল জলে। ঘটল জলদূষণ। এছাড়াও যানবাহনের হর্ন , ট্রেনের হুইসল, প্লেন চলাচলের শব্দ সৃষ্টি করলো শব্দ দূষণ। ফলে পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান দূষিত হতে লাগল।

পরিবেশ দূষণের ফলাফল বর্তমানে খুব ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আমরা জানি পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০,০০০ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত আছে বায়ুস্তর। আর সেই বায়ুস্তরে আছে ওজোন স্তর। যা সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে আসতে বাধা দেয়। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত পরিবেশ দূষণের ফলে সেই স্তরে ফুটো হয়ে যাচ্ছে। এরফলে মানুষের রোগ বাড়ছে। বায়ুদূষণের ফলে হাঁপানি বেড়ে যাচ্ছে মানুষের। দূষিত জল পান করে বাড়ছে পেটের অসুখ। কখনো কখনো মৃত্যু হচ্ছে মানুষের। পাশাপাশি প্লাস্টিক বা প্লাস্টিক জাত জিনিস মাটিতে মানুষ যত্রতত্র ফেলছে। এরফলে গাছের শিকড় চালন ব্যাহত হচ্ছে। এরফলে ঘটছে ভুমিক্ষয়। পৃথিবী গরম হবার পরে মেরুর বরফ গলে যাচ্ছে। এছাড়াও বৃষ্টির খামখেয়ালিপনা বেড়ে যাচ্ছে। এরফলে সৃষ্টি হচ্ছে বন্যা ও খরা।

মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত জীব। তাই মানুষই পারে এই পরিবেশ দূষণের কবল থেকে পরিবেশকে রক্ষা করতে। আমরা যদি কয়েকবছর পিছনে চলে যাই তাহলে আমরা দেখব যে মানুষ যত উন্নত হয়েছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়েছে উন্নয়ন। সেই উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ঘটেছে দূষণ। কিন্তু মানুষ ও মানবজাতি তো থেমে থাকতে পারে না। উন্নয়ন করতেই হবে। তবে এমন উন্নয়ন করতে হবে যাতে পরিবেশের কোনও ক্ষতি না হয়। একে স্থিতিশীল উন্নয়ন বলে। পাশাপাশি বৃক্ষরোপণ, রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সারের ব্যাবহার বাড়াতে হবে, অপেক্ষাকৃত কম দূষিত হয় এমন যানবাহন ব্যবহার করতে হবে, জায়গায় জায়গায় জনসচেতনতা মূলক মিছিল, মিটিং ও আন্দোলন করতে হবে, প্লাস্টিকের ব্যবহার ত্যাগ করতে হবে।

পরিশেষে বলা যায় মানুষ যদি এখনো সচেতন না হয় তাহলে কিন্তু মানবসভ্যতা একদিন চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তাই পরিবেশ দূষণের গতিজাড্যে বল প্রয়োগ করে থামাতে হবে। আমাদের আজ শপথ করতে হবে যে আমাদের এই পৃথিবীকে সুস্থ রেখে, এই পৃথিবীবাসীকে সুস্থ রেখে, এই পরিবেশকে সুস্থ রেখে এক নির্মল পৃথিবী গড়ে তুলব।

লেখকঃ- সৌম্যরূপ গোস্বামী (খাতড়া, বাঁকুড়া)
[লেখক নবম শ্রেণীর ছাত্র, খাতড়া শিশু নিকেতন]

তথ্যসূত্রঃ-

(১) Children’s Encyclopedia Earth – Ashish Bhardawaj

(২) আমাদের পৃথিবী – অষ্টম শ্রেণী।

© মিশন জিওগ্রাফি ইন্ডিয়া, ভূগোলিকা-Bhugolika, Geography & Environment, স্টুডেন্টস কেয়ার

Students Care

স্টুডেন্টস কেয়ারে সকলকে স্বাগতম! বাংলা ভাষায় জ্ঞান চর্চার সমস্ত খবরা-খবরের একটি অনলাইন পোর্টাল "স্টুডেন্ট কেয়ার"। পশ্চিমবঙ্গের সকল বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের এবং সমস্ত চাকুরী প্রার্থীদের জন্য, এছাড়াও সকল জ্ঞান পিপাসু জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিবর্গদের সুবিধার্থে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।  

error: স্টুডেন্টস কেয়ার কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত !!