Daily Update : করোনা ভাইরাস সময় সারণী (৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে বর্তমান)
করোনা ভাইরাস সময় সারণী
করোনা ভাইরাস সময় সারণী: করোনাভাইরাস ১৯৬০-এর দশকে প্রথম আবিষ্কৃত হয়। প্রথমদিকে মুরগির মধ্যে সংক্রামক ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাস হিসেবে এটি প্রথম দেখা যায়। পরে সাধারণ সর্দি-হাঁচি-কাশিতে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এরকম দুই ধরনের ভাইরাস পাওয়া যায়। মানুষের মধ্যে পাওয়া ভাইরাস দুটি ‘মনুষ্য করোনাভাইরাস ২২৯ই’ এবং ‘মনুষ্য করোনাভাইরাস ওসি৪৩’ নামে নামকরণ করা হয়।এরপর থেকে বিভিন্ন সময় ভাইরাসটির আরো বেশ কিছু প্রজাতি পাওয়া যায় যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ২০০৩ সালে ‘এসএআরএস-সিওভি’, ২০০৪ সালে ‘এইচসিওভি এনএল৬৩’, ২০০৫ সালে ‘এইচকেইউ১’, ২০১২ সালে ‘এমইআরএস-সিওভি’ এবং সর্বশেষ ২০১৯ সাল চীনে এসএআরএস-সিওভি-২’ পাওয়া যায়(যা বর্তমানে সাধারণত নোভেল করোনাভাইরাস নামেই পরিচিত। এগুলোর মধ্যে অধিকাংশ ভাইরাসের ফলে শ্বাসকষ্টের গুরুতর সংক্রমণ দেখা দেয়. ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে সমগ্র বিশ্ব ব্যাপী ‘Covid-19’ কিভাবে ছড়িয়েছে দেখুন
৩১ ডিসেম্বর: সূচনা
গত বছর, অর্থাৎ ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীন ‘হু’ (WHO) কে সতর্ক করে বলে ছিল যে, চীনের ‘হুবাই’ প্রদেশের ‘উহান’ নামক স্থানে ‘নিউমোনিয়ার’ মত কিছু ঘটনা (রোগের) পাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, উহান একটি বন্দর শহর, যার জনসংখ্যা প্রায় ১১ মিলিয়নের ও বেশি।
জানুয়ারি ১: উৎস
উহান সামুদ্রিক পাইকারী খাদ্য বাজারে (Huanan Seafood Wholesale Market) কর্মরত কর্মিরা এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয় এবং তাৎক্ষনাৎ ১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে বাজারটি বন্ধ করে দেওয়া হয় চীন সরকার দ্বারা।
৭ জানুয়ারি : বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি
প্রায় এক সপ্তাহ পড়ে ৭ জানুয়ারি WHO দ্বারা ঘোষণা করা হল, তারা একটি নতুন ধরণের ভাইরাসের খোঁজ পেয়েছে। এবং সেই সময় এই ভাইরাসের নাম দেওয়া হল 2019-nCoV। করোনা ভাইরাসের বর্গ বা পরিবার এর সদস্য হিসাবে এইরূপ নামকরণ করা হয়েছিলো।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০০২-২০০৩ সালে এই রূপ একটি ভাইরাস ‘SARC’ (Severe acute respiratory syndrome) সংক্রমণের ফলে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৭৭০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিলো। এই ‘SARS’ ও এই করোনা ভাইরাস বর্গের অন্তর্গত।
১১ জানুয়ারি : COVID-19 ভাইরাসের ফলে প্রথম মৃত্যু
১১ জানুয়ারি চীনের সরকারী গণমাধ্যম ঘোষোণা করলো, ৬১ বছরের এক বৃদ্ধ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে। তিনি ওই উহান সী ফুড মার্কেট থেকে পণ্য কিনেছিল এবং সম্ভবত সেখান থেকে সঙ্ক্রামিত হয়েছিলো।
১৩ জানুয়ারি : চীনের বাইরে প্রথম ঘটনার খোঁজ
এর পর, ১৩ জানুয়ারি ‘হু’ ঘোষণা করলো যে চীনের উহান প্রদেশের বাইরে ‘থাইল্যান্ডে’ প্রথম এই ধরণের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্তর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। সঙ্ক্রমিত হয়েছে এক মহিলা, যিনি চীনের উহান প্রদেশ থেকে থাইল্যান্ডে এসেছিলেন।
২৩ জানুয়ারি : অবমূল্যায়ন
২৩ জানুয়ারি ২০২০ তে চীন সরকার ‘উহান’ শহরকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়। এবং শহরের সকল নাগরিকদে কোয়ারেন্টাইন অবস্থায় থাকতে বলা হয়।
এই ক্ষেত্রে ‘হু’ একটি ভুল কাজ করে যেটা হল, হু এর মতে এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি যেখান থেকে ধারণা করা যায় যে এই ভাইরাস এক মানুষ থেকে আর এক মানুষের ছড়ায়। এবং ‘হু’ এটাও বলে যে, এখনও বিশ্বব্যাপী জরুরী অবস্থা জারী করার সময় আসেনি।
৩০ জানুয়ারি : আনুষ্ঠানিক ঘোষণা
এর পর এক সপ্তাহ বাদে ৩০ জানুয়ারি ‘হু’ বিশ্ব ব্যাপী জরুরী অবস্থা জারি করে। এর কারণ হিসাবে তারা উল্লেখ করে, চীনের ৩১ টি প্রদেশের প্রায় ৭,৭১১ জনের মধ্যে এই ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে এবং যার মধ্যে ১৭০ জনের মৃত্যু ও পর্যন্ত হয়েছে।
ভারত এবং ফিলিপিন্সে প্রথম করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় ৩০ জানুয়ারি ২০২০।
২ ফেব্রুয়ারি: চীনের বাইরে প্রথম মৃত্যু
২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সালে ফিলিপিন্স অধিবাসী চীনের এক নাগরীকের মৃত্যু হয়। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনের বাইরে এটাই প্রথম মৃত্যু।
৭ ফেব্রুয়ারি : চীনের এক ডাক্তারের মৃত্যু
ঠিক ৫ দিন পর, ৭ই ফেব্রুয়ারিতে, চীনের এক ডাক্তার ‘লি ওয়েনলিং’, যিনি প্রথম করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক করার চেষ্টা করেছিলেন, তাঁর মৃত্যু হয়, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে।
এবং সাথে সাথে, হং কং “Prison Sentences” আইন চালু করে। যার অর্থ হল, যারা কোয়ারেন্টাইন নিয়ম ভঙ্গ করবে তাদের কে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে।
১০ ফেব্রুয়ারি : জিংপিং নাগরিকদের সাথে সাক্ষাৎ করেন
১০ ফেব্রুয়ারিতে চীনের প্রেসিডেন্ত জিংপিং চীনের এক হসপিটালে গিয়ে নাগরিকদের সাথে প্রথমবার সামনা সামনি সাক্ষাৎ করেন এবং আশ্বাস দেন এই যুদ্ধে একসাথে লড়াই করার।
১১ ফেব্রুয়ারি : সরকারী ভাবে ভাইরাসের নাম ঘোষণা করা হল
১১ ফেব্রুয়ারিতে “WHO” ঘোষণা করলো এই করোনা ভাইরাসের নতুন নাম SARS-CoV-2 অর্থাৎ, severe acute respiratory syndrome coronavirus 2 এবং এই ভাইরাসের দ্বারা রোগের নাম হল “Covid-19”। অর্থাৎ, Co=Corona, Vi= Virus, D= Disease এবং 19= 2019 সাল।
১৪ ফেব্রুয়ারি : আফ্রিকাতে Covid-19 এর যাত্রা শুরু এবং ইউরোপে প্রথম মৃত্যু
১৪ ফেব্রুয়ারিতে আফ্রিকার মিশরে প্রথম করোনা ভাইরাসের সন্ধান মেলে এবং এই সাথে ইউরোপের ফ্রান্সে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
২১ ফেব্রুয়ারি : ইতালিতে সূত্রপাত
ইতালিতে প্রথম Human Transmission এর ঘটনা ধরা পরে। এই সাথে ইজরায়েলে প্রথম Covid-19 তে আক্রান্ত হয় এক নাগরীক, যে কিনা সম্প্রতি জাহাজে করে দেশে ফিরেছিল।
২৩ ফেব্রুয়ারি : ইরাণ সীমানা বন্ধ করে দেওয়া হয়
ইরাণের সংক্রমণের সংখ্যা ও মৃত্যু সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে, ইরাণের সাথে যে যে দেশের সীমানা ছিল সেই সকল দেশ তাদের সীমানা বন্ধ করে দেয়।
২৫ ফেব্রুয়ারি : ইরাণের মন্ত্রীর করোনা ভাইরাস ধরা পরলো
২৫শে ফেব্রুয়ারিতে ইরান সরকারের মন্ত্রীর শরীরে করোনা ভাইরাসের খোঁজ মিলল। এবং এই সময় ইরানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৯৫ এবং মৃত্যু সংখ্যা ছিল ১৫।
৭ মার্চ : মার্চের প্রথম সপ্তাহ
মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বিশ্বের ৯ টি দেশের প্রায় ১০২,০০০ জন ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং ৩,৫০০ জনের মৃত্যু ঘটে।
১১ মার্চ : সরকারীভাবে বিশ্ব মহারী ঘোষণা করা হয়।
১১ মার্চ ‘WHO’ দ্বারা করোনা ভাইরাসকে ‘Pandemic’ ঘোষনা করা হয়।
২২ মার্চ : জনতা কার্ফিউ
২২ মার্চ ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আহ্বানে দেশের সকল নাগরিক জনতা কার্ফিউ পালন করে।
২৫ মার্চ : ভারতকে সরকারী ভাবে লক ডাউন ঘোষণা করা হয়
সারা বিশ্ব জুড়ে এই মারন ভাইরাস থাবা বসানোর পর ২৫ শে মার্চ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সারা ভারতকে লক ডাউন ঘোষণা করেন। এবং এই লক ডাউনের সময়সীমা রাখা হয় ২১ দিন।
২৭ মার্চ : ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন
২৭ শে মার্চ ২০২০ তে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিশ জনসন্ করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হন
২৯ মার্চ “ বিশ্বের সর্বোচ্চ সংক্রামিত দেশ USA
২৯ শে মার্চ সর্বোচ্চ সংক্রামিত দেশে পরিনত হয় আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। প্রায় ১২৪,০০০ জন করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়।
৩ এপ্রিল : বিশ্ব করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্তের সংখ্যা
৩ এপ্রিল ২০২০ তারিখে সমগ্র বিশ্ব ব্যাপী এই মারণ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যাটি ১০ লক্ষ ছাড়িয়ে যায়।
৩ এপ্রিল : ভারতের তথ্য
৩ এপ্রিল ২০২০ তারিখ পর্যন্ত ভারতের ২৫০০ জন আক্রান্ত ছাড়িয়ে যায়।
১০ এপ্রিল: বিশ্ব ব্যাপী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু সংখ্যা ১ লক্ষ ছাড়িয়ে গেলো।
দৈনিক আপডেট
.১১ এপ্রিল সকাল ৯টা পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বের ২০৩ টি দেশ এবং দুটি আন্তর্জাতিক জাহাজের প্রায় 1,709,593 জন আক্রান্ত হয় এবং 103,506 জনের মৃত্যু হয়।
১১ এপ্রিল ২০২০ তারিখ সকাল ৯টা পর্যন্ত ভারতের 7,600 জন আক্রান্ত ছাড়িয়ে যায়। যার মধ্যে মৃত্যু ঘটে 249 জনের।