ভারতের আসামে পাখির আত্মহত্যা (bird suicide jatinga, india) রহস্য

পোস্টটি শেয়ার করুন
Rate this post

ভারতের আসামের পাখিদের আত্মহত্যার রহস্য(bird suicide jatinga india) কি? এর প্রকৃত কারণ কি জানা গিয়েছে?

জাটিঙ্গা নামে একটি ছোটো গ্রাম আছে আসাম রাজ্যে। জনসংখ্যা প্রায় ২৫০০ জন।  গ্রামটি চিরসবুজ ও পার্বত্যময় সৌদর্য্যে ভরা। কিন্তু এই গ্রামটি এই জন্য বিখ্যাত নয়, গ্রামটি বিখ্যাত একটি অন্য কারনে, এই গ্রামটা পাখিদের আত্মহত্যার ঘটনার (bird suicide jatinga india)জন্য পৃথিবী বিখ্যাত। অবিশ্বাস্য লাগলেও এটাই সত্যি যে,  এখানে বিভিন্ন ধরনের পাখিরা আত্মহত্যা করে থাকে। অবাক হলেন তাই না? ভাবছেন এটা কিভাবে সম্ভব?

আসলে এখানে কি ঘটে?

এখানে প্রতি বছর মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাগমনকালে, সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত সময়ে, ঠিক সূর্যাস্তের পর সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত্রি ১০টার মধ্যে কয়েক হাজার পাখি বিভিন্ন গাছ, বাড়ি, পাহাড় ইত্যাদিতে এসে নিজেদেরকে সজোরে ধাক্কা মারে এবং আত্মহত্যা করে! এটি এখানকার রোজ কার ঘটনা।

পাখিদের আত্মহত্যার ঘটনার ইতিহাসঃ

Join us on Telegram

উনবিংশ শতকের শেষের দিকে এবং বিংশ শতকের শুরুর দিকে এখানে এক ধরনের উপজাতিরা বসবাস করত। যারা স্থানীয় ভাবে Zeme Nagas নামে পরিচিত ছিল। এরাই হল এই ঘটনার প্রথম পত্যক্ষদর্শী। কিন্তু তাদের কোনো ধারণা ছিলনা এই ব্যাপারে, ফলে স্বাভাবিক ভাবে তারা এই ঘটনার সাপেক্ষে খুবি ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তখন তারা সিদ্ধান্ত নিল যে তারা ওই স্থান ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবে। যেমনি ভাবনা তেমনি কাজ, তারা ১৯০৫ খ্রিঃ ওই স্থানটি ‘Jaintias’ দের খাছে বিক্রি করে দিল। ঠিক একই ভাবে ‘Jaintias’ রা এই ঘটনা লক্ষ করল, এবং তারা এটিকে ভগবানের সৃষ্টি ধরে নিয়ে সেখানে স্বাভাবিক ভাবে বসবাস করতে লাগল। এই ভাবেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ঘটনা জনসমক্ষে আসে। কিন্তু এর বাস্তবায়ন ঘটানোটা ছিল চ্যালেঞ্জ সাপেক্ষ।

এই ঘটনার বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি ভঙ্গি-

এই ঘটনা ব্যাখ্যা করার জন্য অনেক বিজ্ঞানী এই ঘটনাকে নিয়ে অনুসন্ধান করেছেন এবং অনেক তত্ত্ব দিয়েছেন। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ধারণা এই রূপ-

১. জাতিঙ্গাতে ওই সময় মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তনের সময়। সেহেতু ওখানে কুয়াশার উপস্থিতি লক্ষ করা যায়, যার ফলে পাখিরা বিচলিত হতে পারে।

২. এই কুয়াশার ফলে পাখিরা বিচলিত হয়ে এরা গ্রামের আলোর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ওই আলোর দিকে ছুটে যাবার চেষ্টা করে।

৩.  ঠিক তখন অবতরণ করার সময় পাখিরা বিভিন্ন গাছ, ঘর বাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে মারা যেতে পারে।

৪. একি ভাবে ওই সময় হুড়মুড় করে উড়ে যাবার ফলে একে অপরের সাথে ধাক্কা লেগেও মারা যেতে পারে।

৫. এই এলাকায় অত্যধিক ম্যাগনেটিক ফিল্ডের উপস্থিতি রয়েছে যা পাখিদের দিক নির্দেশ ক্ষমতা রহিত করে দেয়, ফলাফলে মৃত্যু।

আরো কিছু অস্বাভাবিক বা রহস্যময় খোঁজ

গবেষকরা যখন আরো গভীর ভাবে চিন্তা ভাবনা করে দেখলেন, তাঁরা আরো কিছু রহস্যময় বিষয় খুঁজে পেয়েছেন, যেগুলি হল-

১. মজার বিষয় হল, এই পাখির ক্ষেত্রটি একটি নির্দিষ্ট অবয়বের মধ্যে অবস্থান করেছে, এই অবয়বটি প্রস্থে ২০০ মিটার এবং দৈর্ঘ্যে ১.৫ কিমি।

২. পাখিদের শুধুমাত্র উত্তরের দিকেই উরে যাবার তথ্য মিলেছে।

৩. যদি ওই গ্রামের আলো গুলি দক্ষিণের দিকে হয়, তখন কিন্তু পাখিরা ওই আলোর প্রতি আকর্ষিত হচ্ছে না।

৪. ঘটনা হল যে, এই পাখিগুলি সকলেই স্থানীয় গোত্রের পাখি। কেউই দূরবর্তী কোন স্থানের পাখি নয়।

৫. প্রায় ৪৪ ধরনের প্রজাতির পাখিকে লক্ষ করা যায়।

৬. এই পাখিগুলি স্থানীয় পাহাড়ি ও উপত্যকা থেকে এসে থাকে।

পাখীগুলির প্রজাতি

Kingfishers, Black Bitterns, Tiger Bitterns এবং Pond Herons আরো অনেকে।

পাখিদের আত্মহত্যা সম্পর্কে আরো কিছু ধারণা

বিস্তারিত ভাবে খোঁজ খবরের পর জানা গিয়েছে যে, বর্ষাকালের বৃষ্টিতে এই উপত্যকা অঞ্চলে যখন বন্যার সৃষ্টি হয় তখন পাখিগুলি তাদের স্বাভাবিক বাসস্থান হারিয়ে ফেলে। তখন তারা অস্থায়ী বাসস্থানের জন্য অন্যত্র উড়ে যায়। কাকতালিয় ভাবে এই জাতিঙ্গাই হল তাদের অস্থায়ী বাসস্থান!

এই বিষয়ে কিছু জটিল প্রশ্ন এখন বিজ্ঞানীদের মনে খটকা দিচ্ছে

১. বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত বুঝতে পারলেন না যে, পাখিগুলি প্রতিবছর নিয়ম করে একি পথে উড়ে যায় কেন?

২. পাখি সব ঋতু, দিন রাত্রি নির্বিশেষ পরিব্রাজন করে, কিন্তু এক্ষেত্রে শুধুমাত্র রাত্রিতেই কেন উড়ে যায়? এই প্রশ্নের উত্তর আজ মেলে নি।

এক্ষেত্রে আমরা দুজন বিখ্যাত পক্ষি বিজ্ঞানী দের মতামত তুলে ধরলাম

অ) প্রখ্যাত পক্ষিবিজ্ঞানী Anwaruddin Choudhury-এর মতে “It is not suicide, to be precise, But the fact remains that birds are attracted by light and fly towards any object with a light source. This phenomenon still puzzles bird specialists”

আ) আরো এক প্রখ্যাত পক্ষিবিজ্ঞানী late Salim Ali-এর মতে- “The most puzzling thing to me about this phenomenon is that so many species of diurnal resident birds should be on the move when, by definition, they should be fast asleep. The problem deserves a deeper scientific study from various angles”

Students Care

স্টুডেন্টস কেয়ারে সকলকে স্বাগতম! বাংলা ভাষায় জ্ঞান চর্চার সমস্ত খবরা-খবরের একটি অনলাইন পোর্টাল "স্টুডেন্ট কেয়ার"। পশ্চিমবঙ্গের সকল বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের এবং সমস্ত চাকুরী প্রার্থীদের জন্য, এছাড়াও সকল জ্ঞান পিপাসু জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিবর্গদের সুবিধার্থে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: স্টুডেন্টস কেয়ার কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত !!