ক্রোমোজোম কাকে বলে ? ক্রোমোজোমের প্রকারভেদ ও গঠন PDF
ক্রোমোজোম কাকে বলে
ক্রোমোজোম কাকে বলে : কোষের নিউক্লিয়াসে অবস্থিত অনুলিপন ক্ষমতা সম্পন্ন ক্ষুদ্রাঙ্গ যা বংশগতীয় উপাদান, মিউটেশন, প্রকরন ইত্যাদি কাজে ভূমিকা পালন করে তাকে ক্রোমোসোম বলে। ক্রোমোসোম অর্থ হলো রঞ্জিত দেহ বা রংধারনারী দেহ।
প্রতিটি কোষে অবস্থিত একপ্রকার তন্তময় বস্তু যা ক্ষারীয় রঞ্জক দ্বারা রঞ্জিত হয় তাকে ক্রোমোজোম বলা হয়। সকল জীবকোষের ক্রোমোজোম তন্তুর মত হলেও এদের আকৃতি কোষ বিভাজনের বিভিন্ন দশায় ও উপদশায় পরিবর্তিত হয়।
জীবন বিজ্ঞান বিষয়ের টপিক অনুযায়ী সকল পোস্ট পড়ুন এখানে ক্লিক করে
আরও পড়ো- কোশ কাকে বলে ও কোশের গঠন PDF
ক্রোমোজোম ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড বা ডিএনএ বা জীন অণু ধারণ করে এবং ডিএনএ-এর মাধ্যমে প্রোটিন সংশ্লেষ করে। ইহা নিউক্লিয়াসের মধ্যে অবস্থিত থাকে।
ক্রোমোজোমের আবিষ্কারকঃ
১৮৭৫ সালে স্ট্রেসবার্জার ক্রোমোসোম আবিষ্কার করেন। এ ওয়েলডেয়ার ১৮৮৮ সালে ক্রোমোসোম নামকরন করেন।
১৯৩৩ সালে বিজ্ঞানী বোভেরি (Bovery) প্রমাণ করেন যে ক্রোমোজোমই বংশগতির ধারক ও বাহক। ১৯৩৫ সালে বিজ্ঞানী হেইজ (Heitz) সর্বপ্রথম ক্রোমোজোমের গঠনের বিস্তারিত বর্ণনা দেন। ১৯৬৬ সালে বিজ্ঞানী ডুপ্রো (Dupraw) ক্রোমোজোমের সূক্ষ্ম গঠন বর্ণনা করেন।
ক্রোমোজোমের আকার
দৈর্ঘ্যে ক্রোমোজোম ০.২ – ৫০ মাইক্রন (µ) বা মাইক্রোমিটার (µm) এবং প্রস্থ ০.২ – ২ মাইক্রন (µ) বা মাইক্রোমিটার (µm)। মানুষের ক্রোমোজোমের দৈর্ঘ্য ৬ মাইক্রন (µ) বা মাইক্রোমিটার (µm)।
ক্রোমোসোমের গঠনঃ
ক্রোমোজোমের গঠনকে আমরা দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি ১. ভৌতিক গঠন বা ক্রোমোজোমের ভৌত গঠন এবং ২. ক্রোমোজোমের রাসায়নিক গঠন।
একটি আদর্শ ক্রোমোসোম নিম্নোক্ত অংশের সমন্বয়ে গঠিত-
১. ক্রোমাটিডঃ
কোষ বিভাজনের মেটাফেজ পর্যায়ে প্রাতটি ক্রোমোসোম অনুদৈর্ঘ্য বরাবর দুটি খন্ডে বিভক্ত থাকে। এ ধরনের প্রতিটি খন্ডকে ক্রোমাটিড বলে। ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার অঞ্চলের দিকে প্রসারিত বাহুদের বলা হয় ক্রোমাটিড। সেন্ট্রোমিয়ারের প্রতি পাশের ক্রোমাটিড দুটি একই আকারের হয়ে থাকে। তবে সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুসারে একদিকের দুটি ক্রোমাটিড অপর পাশের দুটি ক্রোমাটিড থেকে ছোট বা বড় হতে পারে। ছোট বাহুর ক্রোমাটিডকে বলা হয় p এবং বড়ো বাহুর ক্রোমাটিডকে বলা হয় q।
২. ক্রোমাটিনঃ
ক্রোমাটিডের দৈর্ঘ্য বরাবর সূক্ষ তন্তুর ন্যায় এক বা একাধিক যে অংশ দেখা যায় তাকে ক্রোমাটিন তন্তু বা ক্রোমেনেমা বলে। ক্রোমোজোমের মূল উপাদান হলো ক্রোমাটিন যা মূলত DNA প্রোটিন যৌগ।
৩. সেন্ট্রোমিয়ারঃ
রঞ্জিত করলে ক্রোমোসোমের যে অংশ রংহীন থাকে তাকে সেন্ট্রোমিয়ার বলে। মেটাফেজ ক্রোমোজোম এর কোন একটি অংশে একটি করে বিশেষ খাঁজ থাকে। এই অংশের নাম মুখ্য খাঁজ বা সেন্ট্রোমিয়ার। ক্ষারীয় রঞ্জক দিয়ে ক্রোমোজোমকে রঞ্জিত করলে সেন্ট্রোমিয়ার অংশটি অধিকমাত্রায় রঞ্জিত হয়।এজন্য সেন্ট্রোমিয়ার অঞ্চলটি হেটারোক্রোমাটিন অঞ্চল বলে চিহ্নিত হয়েছে।
৪. মুখ্যকুঞ্চনঃ
সেন্ট্রোমিয়ার যে স্থানে থাকে সে স্থানে ক্রোমোজোমে একটি খাঁজ এর সৃষ্টি হয়। এই খাঁজকে মুখ্যকুঞ্চন বলে।
৫. বাহুঃ
সেন্ট্রোমিয়ারের দুই পাশের ক্রোমোজোমাল অংশকে বাহু বলা হয়। প্রতিটি ক্রোমোসোমের দুটি বাহু থাকে।
৬. কাইনেটোকোরঃ
প্রতিটি ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ারে এটি ছোট গাঠনিক অবকাঠামো থাকে যাকে কাইনেটোকোর বলে। সেন্ট্রোমিয়ার এর পাশে অবস্থিত কাইনেটোকোর অংশটি দেখতে চাকতির মত হয়। এই চাকতি অংশেই মাইক্রোটিউবিউল গুলি যুক্ত থাকে। সাধারণত ৪ থেকে ৪০ টি মাইক্রোটিউবিউল কাইনেটোকোর অংশ যুক্ত হতে পারে। অধিকাংশ ক্রোমোজোমে একটি কাইনেটোকর থাকে। তাই একে বলা হয় মনোসেন্ত্রিক। তবে কিছু ক্ষেত্রে কাইনেটোকোর অংশটির কোন নির্দিষ্ট অবস্থান থাকে না ফলে মাইক্রোটিউবিউল গুলি সমগ্র ক্রোমোজোম জুড়ে ছড়িয়ে থাকে। এরূপ ক্রোমোজোমকে বলা হয় হলোসেন্ট্রিক।
৭. ক্রোমোমিয়ারঃ
মিয়োসিসের প্যাকাইটিন উপপর্যায়ে ক্রোমোজোমের উপর যে গোলাকার দানার মতো অংশগুলো দেখা যায় তাকে ক্রোমোমিয়ার বলে।
৮. গৌন কুঞ্চনঃ
সেন্ট্রোমিয়ার ছাড়াও কোন কোন ক্রোমোসোমে এক বা একাধিক কুঞ্চিত অংশ রয়েছে একে গৌন কুঞ্চন বলে।
৯. স্যাটেলাইটঃ
গৌন কুঞ্চন দ্বারা পৃথক করা গোলাকার অংশকে স্যাটেলাইট বলে। স্যাটেলাইট যুক্ত ক্রোমোজোমকে “স্যাট ক্রোমোজোম “ বলে।
১০. টেলোমিয়ারঃ
ক্রোমোসোমের প্রান্তের বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ন অঞ্চলকে টেলোমিয়ার বলে। বিজ্ঞানী মুলার সর্বপ্রথম টেলোমিয়ার অঞ্চলের উল্লেখ করেন।
১১. পেলিকলঃ
ক্রোমোসোমের কল্পিত বহিরাবরনকে বলে পেলিকল।
১২. ম্যাট্রিক্সঃ
ক্রোমাটিন তন্তুর চারদিকে পেলিকল দ্বারা আবৃত স্তরকে ম্যাট্রিক্স বলে।
ক্রোমোজোমের প্রকারভেদ–
সেন্ট্রোমিয়ারের সংখ্যা অনুযায়ী ক্রোমোজোম ৫ প্রকার। যথা-
১. মনোসেন্ট্রিক –১টি সেন্ট্রোমিয়ার থাকে
২. ডাইসেন্ট্রিক- ২টি সেন্ট্রোমিয়ার থাকে
৩. পলিসেন্ট্রিক- ২ এর অধিক সেন্ট্রোমিয়ার থাকে
৪. ডিফিউজড- সেন্ট্রোমিয়ার নির্দিষ্ট স্থানে সুস্পষ্টভাবে থাকে না
৫. অ্যাসেন্ট্রিক- কোন সেন্ট্রোমিয়ার থাকে না।
সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে ক্রোমোজোম ৪ প্রকার। যথা–
১. মধ্যকেন্দ্রিক বা মেটাসেন্ট্রিকঃ
যে সকল ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার একেবারে মাঝখানে অবস্থান করে তাদেরকে মধ্যকেন্দ্রিক বা মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে।এর আকৃতি ইংরেজী V অক্ষরের মত।
২.উপ-মধ্যকেন্দ্রিক বা সাব-মেটাসেন্ট্রিকঃ
যে সকল ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার মাঝখান একটু একপাশে অবস্থান করে তাদেরকে উপ-মধ্যকেন্দ্রিক বা সাব-মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে। এর আকৃতি ইংরেজী L অক্ষরের মত।
৩. উপ-প্রান্তকেন্দ্রিক বা এক্রোসেন্ট্রিকঃ
যে সকল ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ারটি এক প্রান্তের কাছাকাছি অবস্থিত থাকে তাদেরকে উপ-প্রান্তকেন্দ্রিক বা এক্রোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে। এর আকৃতি ইংরেজী J অক্ষরের মত।
৪. প্রান্তকেন্দ্রিক বা টেলোসেন্ট্রিকঃ
যে সকল ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ারটি একবারে প্রান্তে অবস্থিত থাকে তাদেরকে প্রান্তকেন্দ্রিক বা টেলোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে। এর আকৃতি ইংরেজী I অক্ষরের মত।
কাজ, দেহ গঠন ও লিঙ্গ নির্ধারনের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ক্রোমোজোম দুই ধরনের। যথা-
১. অটোসোমঃ
যে সকল ক্রোমোজোম দৈহিক বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রনকারী জিন বহন করে তাদেরকে অটোসোম বলে। অটোসোমের সেটকে A চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়। মানুষের দেহকোষে মোট ২২ জোড়া অটোজোম থাকে।
২. সেক্স ক্রোমোজোমঃ
যে সকল ক্রোমোজোম জীবের লিঙ্গ নির্ধারন করে তাদেরকে সেক্স ক্রোমোজোম বলে। এরা দুই ধরনের যথা- X ও Y । পুরুষে থাকে XY এবং স্ত্রীতে থাকে XX ক্রোমোজোম।
ক্রোমোজোমের কাজ
ক্রোমোজোমের কাজ হলো মাতাপিতা হতে জিন সন্তানসন্ততিতে বহন করে নিয়ে যাওয়া। মানুষের চোখের রং, চুলের প্রকৃতি, চামড়ার গঠন ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য ক্রোমোজোম কর্তৃক বাহিত হয়ে বংশগতির ধারা অক্ষুন্ন রাখে। এ কারণে ক্রোমোজোমকে বংশগতির ভৌতভিত্তি (Physical basis of heredity) বলে আখ্যায়িত করা হয়৷
ক্রোমোজোম কাকে বলে ? ক্রোমোজোমের প্রকারভেদ ও গঠন PDF