বায়ু দূষণ কাকে বলে? উৎস, বায়ুদূষকের শ্রেণীবিভাগ, প্রভাব ও নিয়ন্ত্রক

পোস্টটি শেয়ার করুন
3.3/5 - (3 votes)

স্বাগত আপনাকে। আজকে এই নিবন্ধের মাধ্যমে আমরা পরিবেশ বিদ্যা থেকে বায়ু দূষণ সম্পর্কে জানবো। বায়ু দূষণ থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন গুলি বিভিন্ন পরীক্ষাতে এসে থাকে যেমন প্রাথমিক টেট পরিবেশ বিদ্যা থেকে, এছাড়াও আপার প্রাথমিক টেটে, WBCS, PSC, Rail, Group D/C, Kolkata Police সহ নানান পরীক্ষাতে প্রশ্ন আসে। এছাড়াও, স্কুল বা কলেজ স্তরের ছাত্র ছাত্রীদের জন্য আজকের নিবন্ধটি খুবই কাজে লাগবে। আজলের বিষয়- বায়ু দূষণ কাকে বলে? উৎস, বায়ুদূষকের শ্রেণীবিভাগ, প্রভাব ও নিয়ন্ত্রক

বায়ু দূষণ কাকে বলে?

সংজ্ঞা : বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে বা মানুষের সৃষ্ট কারণে উদ্ভূত কঠিন বর্জ্য পদার্থ বা অপ্রয়োজনীয় বস্তুর ঘনত্ব বায়ুতে যদি স্বাভাবিক অনুপাতের থেকে কম বা বেশি হয় তবে ওই প্রকার বায়ুকে দূষিত বায়ু বলে এবং এই পদ্ধতিকে বায়ুদূষিত বলে।

আপনি প্রাথমিক টেট প্রার্থী? প্রাথমিক টেটের যাবতীয় PDF বিনামূল্যে পড়ুন Click here

ওয়াল্ড হেলথ্‌ অর্গানাইজেশন (WHO) 1961 সালে দেওয়া একটি সংজ্ঞা অনুসারে “পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের মধ্যে অনিষ্টকর পদার্থের সমাবেশ যখন মানুষ ও তার পরিবেশের ক্ষতি করে, সেই অবস্থাকে বায়ু দূষণ বলে”।

Join us on Telegram

বায়ুদূষণের উৎস গুলি কী কী?

বায়ু দূষণ এর বিভিন্ন ধরণের উৎসগুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বায়ু দূষণের উৎস সম্পর্কে আলোচনা করা হল-

যানবাহনের পরিত্যক্ত ধোঁয়া:

বায়ু দূষণের একটি বিশেষ কারণ হল যানবাহনের পরিত্যক্ত ধোঁয়া। যানবাহনের পরিত্যক্ত ধোঁয়া বায়ুদূষণের জন্য শতকরা 60 ভাগ দায়ী।

যানবাহনের পরিত্যক্ত ধোঁয়ার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং হাইড্রোকার্বন থাকে। ডিজেল ও পেট্রোল চালিত বিভিন্ন গাড়ি, কয়লা চালিত রেলগাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়া ব্যাপক বায়ু দূষণ ঘটায়। এরোপ্লেন থেকে নির্গত ধোয়াও বায়ুদূষণের কারণ।

ধোঁয়া :

শতকরা 10-15 ভাগ বায়ুদূষণ ধোঁয়ার ফলে ঘটে। কলকারখানায় কয়লা ও খনিজ তেল দহনের ফলে প্রচুর পরিমাণে দুষিত ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। এই ধোঁয়াতে SO, থাকায় সহজেই বায়ু দূষিত হয়।

ধোঁয়াশা:

নানারকমের রাসায়নিক বাষ্প ও ধোঁয়ার সাহায্যে কুয়াশা ভারী ও কালো হয়ে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠে নেমে আসে তখন একে ধোঁয়াশা বলে।

ধোঁয়াশা হল ধোঁয়া ও কুয়াশার সংমিশ্রণ। বায়ুর সঙ্গে কলকারখানার ধোঁয়া, বিষাক্ত গ্যাস নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ, অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন, SO2, CO, 03, H2O জৈব পারঅক্সাইড, হাইড্রোপারঅক্সাইড মিশে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়। ধোঁয়াশা দুই রকমের হয়। যথা-

(i) সালফিউরাস ধোঁয়াশা:

2SO2 + 02 → 2SO3 SO3 + H2O → H2SO4 – সালফিউরিক অ্যাসিড দ্বারা সৃষ্ট ধোঁয়াশা।

(ii) ফোটোকেমিক্যাল ধোঁয়াশা:

বায়ুতে NO2 এবং হাইড্রোকার্বন উপস্থিত থাকলে সূর্যরশ্মির উপস্থিতিতে ওই গ্যাস মিশ্রণের মধ্যস্থ NO2 গ্যাসটি বিয়োজিত হয়ে নাইট্রিক অক্সাইড (NO + O) পরমাণুতে পরিণত হয়। এইভাবে উৎপন্ন 0 পরমাণু বায়ুর O2 অণুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ওজোন (O3) অণুতে পরিণত হয়। ওজোন (O3) নাইট্রিক অক্সাইডের NO-র সঙ্গে বিক্রিয়া করে আবার NO2 এবং O2 উৎপন্ন করে।

কুয়াশা ও ধুলো:

কুয়াশা এবং ধুলো বায়ুমণ্ডলকে নানা ভাবে দূষিত করে।

কীটনাশক ও আগাছানাশক:

কীটপতঙ্গদের দমন করার জন্য বিভিন্ন কীটনাশক DDT, BHC. অলডিন, ফলিডল, এনড্রিন ব্যবহার ও খেতের আগাছা দমনের জন্য নানারকম আগাছানাশক ব্যবহার মারাত্মকভাবে বায়ুদূষণ ঘটায়।

তেজস্ক্রিয় পদার্থ:

পারমাণবিক নানাবিধ পদার্থ ধূলিকণারূপে বায়ুমণ্ডলে ভেসে বেড়ায় এবং বৃষ্টির সময় বায়ুমণ্ডল থেকে ভূত্বকে এসে পড়ে। সুতরাং এরা কেবল বায়ু নয়, জল, মাটি এবং খাদ্যকেও দূষিত করে।

মানুষের উপর বায়ু দূষণের প্রভাব কি?

বায়ু দূষণ মানুষের ক্ষতি করে। যেমন— (1) ধোঁয়াশার প্রভাবে চোখ জ্বালা করে। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়। (2) পালফার ডাই-অক্সাইডের প্রভাবে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। ব্রঙ্কাইটিস, যক্ষা প্রভৃতি রোগ দেখা দেয়।। (3) গপ্রাজেন ডাই-অক্সাইডের জন্য শ্বাসকষ্ট হয়। ফুসফুসের ক্ষতি হয়। নিউমোনিয়া হওয়ার আশংকা থাকে। (4) কার্বন মনােক্সাইডের জন্য রক্তের অক্সিজেন সংবহন ক্ষমতা বিঘ্নিত হয়। (5) বেজপাইরিনের জন্য ক্যান্সার হয়। এখানে উল্লেখ করা দরকার যে, রাস্তায় দেওয়ার জন্য। পিচ গলানোর সময়ে যে ধোঁয়া বেরোয়, তাতে বেঞ্জপাইরিন জাতীয় যৌগ পাওয়া যায়। (6) বাতাসে ভাসমান সীসা, বালি, কয়লার গুঁড়ো ইত্যাদি শ্বাসনালী ও ফুসফুসের ক্ষতি করে স্নায়ুরোগের কারণ হয়।     

বায়ুদূষকের শ্রেণিবিভাগ:

বায়ুর বিভিন্ন দূষকগুলিকে তাদের উপাদানের সাপেক্ষে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

(i) প্রাকৃতিক দূষক:

উদ্ভিদ: পচনশীল উদ্ভিদ থেকে সৃষ্ট মিথেন, হাইড্রোজেন সালফাডি, দাবানল সৃষ্ট কার্বন মনোক্সাইড, উদ্ভিদের রেণু।

রোসল: এগুলির মধ্যে যেগুলি অবস্থিত তা হল- শক্ত ও তরল জাতীয় পদার্থের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু।

মৃত্তিকা: ধুলো, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাক।

সমুদ্র: বিভিন্ন প্রকার সামুদ্রিক লবণ।

আগ্নেয়গিরি: ধুলো, ধোঁয়া, ছাই, কার্বন মনোক্সাইড ও অন্যান্য গ্যাসীয় পদার্থ।

মহাজাগতিক বস্তুসমহ: মহাজাগতিক রশ্মি, উল্কা, ধূমকেতু থেকে আগত ধূলিকণা।

(ii) মনুষ্য সৃষ্ট দূষক:

বায়বীয় পদার্থ: কয়লা, পেট্রোল থেকে উৎপন্ন গ্যাস, ধোঁয়া, বিভিন্ন কারখানা ও যানবাহনের পরিত্যক্ত ধোঁয়া, যেমনকার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড, হাইড্রোকার্বন, নাইট্রোজেন অক্সাইড ইত্যাদি।

কঠিন বর্জ্য পদার্থ: শিল্প-কারখানা থেকে পরিত্যক্ত বিভিন্ন কঠিন বর্জ্য পদার্থ।

তাপ: বিভিন্ন শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত বা উৎপন্ন তাপ।

তেজস্ক্রিয় পদার্থ: বিভিন্ন প্রকার পারমাণবিক জ্বালানি, বিস্ফোরণ, যুদ্ধবিগ্রহের ফলে উৎপন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থ।

বায়ু দূষণের মূল উপাদানগুলি কি কি?

মূলত তিনটি উপাদানের মাত্রার উপর নির্ভর করে বায়ু দূষণের পরিমাণ হিসাব করা হয়। যেমন— (১) সালফার ডাই-অক্সাইড (SO2)। (২) নাইট্রোজেন অক্সাইড (NOx)। (৩) বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম কণিকা (Suspended Particulate Matter অর্থাৎ SPM)।

মুখ্য বায়ু দূষক বলতে কি বোঝায়?

প্রাকৃতিক কারণে বা মানুষের বিভিন্ন কাজকর্মের মাধ্যমে সৃষ্ট যে সমস্ত বায়ু দূষক সামগ্রিকভাবে পরিবেশের ক্ষতি করে, তাদের মুখ্য বায়ু দূষক (Primary Pollutants) বলে। বায়ুমন্ডলে দূষণের প্রায় ৯০% এই দৃষকগুলির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। উদাহরণ সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, অধিকাংশ হাইড্রোকার্বন, বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম কণিকা ইত্যাদি।

বায়ুর প্রধান গৌণ দূষকগুলি কি কি?

বায়ুতে যে সমস্ত স্বাভাবিক যৌগগুলি পাওয়া যায়, তার সাথে মুখ্য দৃষকগুলির বিক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট রাসায়নিক পদার্থগুলিকে গৌণ দূষক (Secondary Pollutants) বলে। যেমন- ধোঁয়াশা, ওজোন গ্যাস, সালফার ট্রাই-অক্সাইড, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, সালফিউরিক অ্যাসিড, নাইট্রিক অ্যাসিড ইত্যাদি।

বায়ুদূষণের উপাদান ও উৎস

বায়ুদূষণের উপাদানউৎস
কার্বনের অক্সাইড—C, CO2যানবাহনের পরিত্যক্ত ধোঁয়া, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, কলকারখানার ধোঁয়া ইত্যাদি।
সালফারের অক্সাইড—S2, SO3ধাতু নিষ্কাশন, শিল্পায়ন এবং জীবাশ্ম জ্বালানির দহন।
নাইট্রোজেন অক্সাইড—NO, NO2পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থের দহন, জীবভরের দহন, রাসায়নিক সার প্রয়োগ।
মিথেন ও অন্যান্য হাইড্রোকার্বনবনজঙ্গল দহন, জীবাশ্ম জ্বালানি, পশুপালন এবং জল নিষ্কাশন পদ্ধতি।
CFCs (ক্লোরোফ্লুওরো কার্বন)শীততাপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র, প্লাস্টিক ও রং, ফোম প্রস্তুতি।
SPM (ছাই, ঝুল, ধোঁয়া ইত্যাদি)কয়লা দহন, এবং যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া।
O3, PAN, PB2N (পারঅক্সি বেঞ্জোইল নাইট্রেট)তাপ রাসায়নিক বিক্রিয়া, প্রধানত NO2 হাইড্রোকার্বনের সঙ্গে অক্সিজেনের।
বায়ুদূষণের উপাদান ও উৎস

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ গুলি কী কী?

  • যানবাহনের পরিত্যক্ত ধোঁয়া বায়ুতে না মেশার জন্য প্রত্যেক যানবাহন ব্যবহারকারীর বিশেষ ধরনের কুঞ্চন বাতায়ন এবং ক্যাটালাইটিক কনভারটার ব্যবহার করা দরকার।
  • ওয়েট স্ক্রাবার দিয়ে বায়ুতে জল সিঞ্চন করে বায়ুর অ্যামোনিয়া ও সালফার ডাইক্সাইড দূর করা যায়।
  • বায়ু থেকে ধুলো ও ধোঁয়া অপসারণের জন্য স্থিরতড়িৎ কোনো অধঃক্ষেপক ব্যবহার করা প্রয়োজন।
  • কীটনাশক ব্যবহার কমাতে হবে এবং কীটপতঙ্গকে তাদের শত্রু দিয়ে দমন করার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে বায়ুকে শোধন বা ফিল্টার করে বায়ুমণ্ডলের অনেক ক্ষতিকারক গ্যাসকে দূর করা যায়।
  • শিল্পাঞ্চলে বা শহরাঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষরোপণ করা প্রয়োজন।

কয়েকটি বায়ুদূষণ প্রতিষেধক যন্ত্র:

বায়ুদূষণ প্রতিরোধের কয়েকটি যন্ত্রের নাম নিচে দেওয়া হল

  • ইলেকট্রোস্ট্যাটিক প্রেসিপিটেটর
  • স্ক্রাবার
  • ক্যাটালাইটিক কনভার্টার
  • সাইক্লোন সেপারেটর

বায়ুদূষণ প্রতিরোধের আইনসম্মত উপায়:

  1. নতুন কোনো শিল্প স্থাপন করতে হলে রাজ্য দূষণ পর্ষদের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করা।
  2. কারখানা বা শিল্পদূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অনুমোদন সীমার বেশি ক্ষতিকারক গ্যাস বায়ুতে মেশাতে পারবে না।
  3. শিল্পাঞ্চল কখনোই গ্রামাঞ্চলের বায়ুর উৎকর্ষমানের সীমা অতিক্রম করবে না।
  4. অটোমোবাইল ইঞ্জিনের ধোঁয়া নির্ধারিত সীমার মধ্যে রাখা বাধ্যতামূলক।

আপনি প্রাথমিক টেট প্রার্থী? প্রাথমিক টেটের যাবতীয় PDF বিনামূল্যে পড়ুন Click here

Students Care

স্টুডেন্টস কেয়ারে সকলকে স্বাগতম! বাংলা ভাষায় জ্ঞান চর্চার সমস্ত খবরা-খবরের একটি অনলাইন পোর্টাল "স্টুডেন্ট কেয়ার"। পশ্চিমবঙ্গের সকল বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের এবং সমস্ত চাকুরী প্রার্থীদের জন্য, এছাড়াও সকল জ্ঞান পিপাসু জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিবর্গদের সুবিধার্থে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: স্টুডেন্টস কেয়ার কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত !!