অনুসর্গ কাকে বলে PDF? অনুসর্গের শ্রেণিবিভাগ | Bangla Anusarga PDF
অনুসর্গ কাকে বলে PDF
অনুসর্গ কাকে বলে PDF : ‘অনু ‘অর্থে পশ্চাৎ বা পরে। ‘সর্গ ‘- অবস্থান। ‘অনুসর্গ ‘কথাটির অর্থ হল পশ্চাৎ বা পরে অবস্থান যার। বাংলা ভাষার যে সকল শব্দ বা অব্যয় বাক্যের মধ্যে অবস্থিত বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের পরে আলাদাভাবে বসে শব্দ বিভক্তির কাজ করে তাদের অনুসর্গ বা কর্মপ্রবচনীয় বা পরসর্গ (post position) বলে । এই পদগুলি বাক্যে বিভিন্ন পদের পরে স্বাধীন ভাবে অবস্থান করে।
অনুসর্গগুলি বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের পরে বসে শব্দ বিভক্তির মত কাজ করে। যেমন – দ্বারা, দিয়া, কতৃক, হইতে, থেকে, চেয়ে, নিমিত্ত, জন্য, তরে, ছাড়া, প্রতি, সংগে, সহিত, দিকে, অভিমুখে, পানে, বাইরে, ভিতরে, সম্মুখে, সামনে, মাঝে, মধ্যে, পিছনে, উপরে, নীচে, সনে, আশে, পাশে, তলে, অপেক্ষা, কারণে, লাগিয়া, পিছে, বিহনে, পাছে, ব্যতীত, সাথে, পরিবর্তে, বই, বাবদ, দরুন প্রভৃতি। পাশাপাশি, আবার কতগুলি অসমাপিকা ক্রিয়া আছে যেগুলি অনুসর্গ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন – করিয়া, বলিয়া, চলিয়া, থাকিয়া, লইয়া, ধরিয়া প্রভৃতি।
অনুসর্গ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শব্দের পরে বসে। তবে কখনও কখনও শব্দের পূর্বেও বসে। উদাহরণ : ‘ বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনী। ‘
পদের সংগে বিভক্তি যোগ করার পরেও কখনো কখনো অনুসর্গ যুক্ত করা হয়। যেমন – ‘সে হাতে করে এনেছে।
বাংলা ব্যাকরণের আরও কিছু পোস্ট-
- ৬৫০+ বাংলা বাগধারা তালিকা pdf
- বাংলা সমাস PDF
- উপসর্গ কাকে বলে PDF
- কারক ও বিভক্তি নির্ণয় ও সহজে মনে রাখার কৌশল PDF
- বাংলা ব্যাকরণ বই PDF Free
- বাংলা ভাষার সকল যুক্ত বর্ণের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা pdf
- ২৫০+ এক কথায় প্রকাশ PDF
- বাংলা ভাষার বর্ণ ও ধ্বনি প্রকরণ
- উচ্চতর বাংলা ব্যাকরণ বই PDF – শ্রী বামনদেব চক্রবর্তী
- সন্ধি বিচ্ছেদ MCQ PDF
⇒ অনুসর্গের বৈশিষ্ট্য
১. অনুসর্গ অব্যয় পদ এবং এগুলোর নিজস্ব অর্থ আছে।
২. অনুসর্গ শব্দের পরে বসে সংশ্লিষ্ট শব্দের সঙ্গে পরবর্তী শব্দের অর্থবোধক সম্পর্ক সৃষ্টি করে।
৩. বিভক্তি দিয়ে যেমন কারক চেনা যায়, তেমনই অনুসর্গ দিয়েও কারক চেনা যায়।
৪. অব্যয়গুলোর নিজস্ব অর্থ থাকায় সেগুলো পৃথকভাবে ব্যবহৃত হলে অনুসর্গ হয় না।
৫. অনুসর্গের পূর্ব পদটি বিশেষ্য হলে সেটি বিভক্তিযুক্ত হতে পারে, আবার না-ও হতে পারে। কিন্তু সর্বনাম হলে অবশ্যই বিভক্তিযুক্ত হবে।
৬. অনুসর্গ বিভক্তির মতো কাজ করে।
৭. কতকগুলো অনুসর্গ শব্দ-বিভক্তির মতো কারক নির্ণয়ে সাহায্য করে। এগুলো : হইতে, হতে, চেয়ে, দ্বারা, দিয়া, দিয়ে, কর্তৃক ইত্যাদি।
৮. ক্ষেত্রবিশেষে অনুসর্গের ব্যবহার সাধু ও চলিত ভাষায় ভিন্ন হতে পারে।
⇒ অনুসর্গের প্রয়োজনীয়তা
১. অনুসর্গগুলো বাংলা ভাষায় বিভক্তির কাজ করে। এজন্য বাক্য গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২. অনুসর্গগুলো বাক্য গঠনে সহায়তা করে। অনুসর্গ ব্যতীত বাক্য গঠন সম্ভব হয় না।
৩. অভাব, তুলনা ইত্যাদি ভাব প্রকাশ করতে অনুসর্গের প্রয়োজন।
৪. অনুসর্গ ছাড়া কারকের অর্থ প্রকাশ পায় না।
৫. বিভক্তির কাজ অনুসর্গ দিয়ে করা যায়।
৬. অনুসর্গ বাক্যে শব্দবিভক্তির ন্যায় ব্যবহৃত হয়ে কারক-বাচকতা প্রকাশ করে।
৭. অনুসর্গ বাক্যের পদগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে।
৮. বাংলা অনুসর্গ বিভক্তির কাজ করে, ফলে এর দ্বারা কারক নির্ণয় করা সহজ হয়।
৯. অনুসর্গের দ্বারা বাক্যের ভাব সুষ্ঠু ও পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করা যায়।
১০. বাংলা অনুসর্গ বিভক্তির ন্যায় বসে, যার ফলে এর দ্বারা কারক নির্ণয় করা সহজ হয়।
⇒ অনুসর্গের প্রধান শ্রেণিবিভাগ
বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অনুসর্গগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা : ১. শব্দজাত অনুসর্গ ও ২. ক্রিয়াজাত অনুসর্গ।
১. শব্দজাত অনুসর্গ – যেমন — দিকে, প্রতি, নিকট, তরে, বিনা, ছাড়া, সহিত, সঙ্গে, সম্মুখে, সামনে, আগে, নিমিত্ত, জন্য, অবধি, পক্ষে, কারণে, সদৃশ ইত্যাদি হলো শব্দজাত অনুসর্গ।
২. ক্রিয়াজাত অনুসর্গ– যেমন — করে, করিয়া, লাগিয়া, ধরে, বলিয়া, বলে, হতে ইত্যাদি ।
⇒ অনুসর্গের অ-প্রধান শ্রেণিবিভাগ
১. অনুসর্গ কোন পদের পরে বসে বাক্যের সাথে ওই পদকে সম্পর্কিত করতে পারে, তার প্রকৃতি বিচার করে ৩টি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
ক. বিশেষ্য অনুসর্গ : এই জাতীয় বিশেষ্য পদের পরে বসে। যেমন– প্রাণের চেয়ে প্রিয়, ছাদের উপর খোলা আকাশ
খ. সর্বনাম উপসর্গ : এই জাতীয় সর্বনাম পদের পরে বসে। যেমন– আমার চেয়ে সে বড়, ওর কাছে বইটি আছে।
গ. বিশেষণ উপসর্গ : এই জাতীয় বিশেষণ পদের পরে বসে। যেমন– মন্দের চেয়ে একটু ভালো, খারাপের চেয়ে খারাপ
২. উৎস ও উৎপন্নের বিচারে অনুসর্গ
উৎসের বিচারে অনুসর্গ তিন প্রকার।
ক. সংস্কৃত উপসর্গ : সংস্কৃত শব্দ সরাসরি বসেছে এমন উপসর্গ। যেমন– অপেক্ষা, অভিমুখে, উপরে, কর্তৃক, ইত্যাদি।
খ. সংস্কৃত-বিবর্তিত : সংস্কৃত শব্দের ক্রমবিবর্তনের মধ্য আগত কোন শব্দ যখন অনুসর্গ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন সংস্কৃত অগ্রে>প্রাকৃত অগ্গে>বাংলা আগে। এরূপ অন্যান্য অনুসর্গ হতে পারে কাছে, ছাড়া, পাশে
গ. বিদেশী অনুসর্গ : বাংলা, সংস্কৃত, সংস্কৃত থেকে ক্রমবিবর্তিত অপরাপর শব্দ যা অনুসর্গ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন– ফারসি : দরুন, বদলে,বনাম।
৩. উৎপন্নের বিচারে অনুসর্গ দুই প্রকার।
ক. নামজাত অনুসর্গ : ক্রিয়ামূল থেকে উৎপন্ন অনুসর্গ ছাড়া অন্যান্য অনুসর্গের সাধারণ পরিচয় দেওয়া হয় নামজাত অনুসর্গ বলা হয়। যেমন- উপরে, অপেক্ষা ইত্যাদি।
খ. ক্রিয়াজাত অনুসর্গ : কোনো ক্রিয়ামূলের সাথে থেকে উৎপন্ন এমন কিছু শব্দ, যেগুলো অনুসর্গ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন– √কর্+ইয়া=করিয়া>করে বা ক’রে। [ভালো করে কাজ করো]
৪. বিভক্তির সংযুক্তির বিচারে অনুসর্গ
অনুসর্গের সাথে বিভক্তি আছে কি নেই তার উপর ভিত্তি করে, অনুসর্গকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন–
ক. বিভক্তিহীন অনুসর্গ : এই সকল অনুসর্গের সাথে কোনো বিভক্তি থাকে না বা বিভক্তি যুক্ত করা যায় না। যেমন দ্বারা, কর্তৃক, নাগাদ ইত্যাদি।
খ. বিভক্তিযুক্ত অনুসর্গ : এই সকল অনুসর্গের সাথে বিভক্তি যুক্ত থাকে। নামজাত অনুসর্গে ‘এ’ বিভক্তি যুক্ত থাকে। যেমন– আগ>আগে, উপর>উপরে, কারণ>কারণে
ক্রিয়ামূলজাত অনুসর্গে ‘ইয়া’ বিভক্তযুক্ত হয়ে অনুসর্গ তৈরি হয়। যা সাধু রূপে ব্যবহৃত হয়। চলিত রূপে এর সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহৃত হয়। যেমন– √কর্+ইয়া=করিয়া>করে বা ক’রে, √ধর্+ইয়া=ধরিয়া>ধরে বা ধ’রে।
⇒ উপসর্গ ও অনুসর্গের পার্থক্য
উপসর্গ ও অনুসর্গের মধ্যে পার্থক্য নিচে আলোচনা করা হলঃ
১. উপসর্গ বিভক্তির মত ব্যবহার হয় না। অপরদিকে, অনুসর্গ বিভক্তির মত ব্যবহৃত হয়।
২. উপসর্গ এমন অব্যয়সূচক শব্দাংশ যা স্বাধীন পদ হিসেবে বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে না। অপরদিকে, অনুসর্গ এমন অব্যয়সূচক শব্দাংশ যা স্বাধীন পদ হিসেবে বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে।
৩. উপসর্গের নিজস্ব অর্থ নেই। অপরদিকে, অনুসর্গের নিজস্ব অর্থ আছে।
৪. প্র, পরা, অপ, অনা, নি, অব ইত্যাদি হলো উপসর্গ। অপরদিকে, নিকট, দিয়ে, দ্বারা, থেকে, কর্তৃক, হতে ইত্যাদি হল অনুসর্গ।
৫. উপসর্গ অন্য শব্দের পূর্বে বসে শব্দের অর্থের সম্প্রসারণ, পরিবর্তন, পূর্ণতা, সংকোচন, এমন কি নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরি করতে পারে। অপরদিকে, অনুসর্গ কখনো কখনো বাক্যের মধ্যে বিশেষ্য বা সর্বনামের পরে বসে, আবার কখনো বা শব্দ বিভক্তির ন্যায় বাক্যর মধ্যে ব্যবহৃত হয়ে বাক্যের অর্থ প্রকাশে সাহায্য করে।
বাংলা ব্যাকরণের আরও কিছু পোস্ট-
- ৬৫০+ বাংলা বাগধারা তালিকা pdf
- বাংলা সমাস PDF
- উপসর্গ কাকে বলে PDF
- কারক ও বিভক্তি নির্ণয় ও সহজে মনে রাখার কৌশল PDF
- বাংলা ব্যাকরণ বই PDF Free
- বাংলা ভাষার সকল যুক্ত বর্ণের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা pdf
- ২৫০+ এক কথায় প্রকাশ PDF
- বাংলা ভাষার বর্ণ ও ধ্বনি প্রকরণ
- উচ্চতর বাংলা ব্যাকরণ বই PDF – শ্রী বামনদেব চক্রবর্তী
- সন্ধি বিচ্ছেদ MCQ PDF