বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দশটি দেশের সেনাবাহিনী (World top ten army 2018)
আমরা কেউ ই যুদ্ধ দাঙ্গা পছন্দ করিনা। কিন্তু কোনো একটি রাষ্ট্রর সুরক্ষার জন্য সেই রাষ্ট্রের সুরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তুলতে হয়। রাষ্ট্রকে বহিঃশক্তির হুমকি থেকে নিরাপদে রাখতে পারে একমাত্র এই সামরিক বাহিনীরাই। এমনকি দেশের অভ্যন্তরের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতেও সামরীক বাহিনীর জুড়ি মেলা ভার। তাই কোনো রাষ্ট্রের শক্তি বিচার করতে হলে সেই দেশের সামরিক বাহিনীর কথা সবার প্রথমে চলে আসে।
তাই আজ আমরা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রথম দশটি দেশের সামরিক বাহিনীর সম্পর্কে জানবো। এর জন্য আমরা একটি সংস্থার সাহায্য নেবো, যেই সংস্থাটি বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশের সামরীক বাহিনীর তথ্য সংগ্রহ করে ওই তথ্যের ভিত্তিতে প্রতি বছর একটি করে তালিকা প্রকাশ করে। আমরা সেই তালিকা অনুসারে একটি একটি করে আলোচনা করবো। হ্যাঁ ওই সংস্থার নাম হল- Global Firepower । আজ আমরা জানবো বিশ্বের প্রথমসারির শক্তিধর দেশ গুলি সম্পর্কে (World top ten army 2018)
Global Firepower- এর ২০১৭ সালের তালিকাকে নিয়ে আমরা আজ আলোচনা করবো। যেই তালিকাতে ১৩৩ টি দেশ রয়েছে। ওই ১৩৩টি দেশের মধ্যে প্রথম দশটি দেশের সম্পর্কে (World top ten army 2018) তথ্য দেওয়া হল-
১০. ইজিপ্ট-
২০১৭ সালের তথ্য অনুসারে ইজিপ্টের ‘পাওয়ার ইন্ডেক্স’ হল ০.২৬৩৪ (World top ten army 2018)। ইজিপ্টের মোট সামরিক বাজেট ৪৪০ কোটি ডলার। মোট সক্রিয় সেনার সংখ্যা ৪৫৪,২০৫ জন। সংরক্ষণে রয়েছে ৮৭৫,০০০ জন। এয়ারক্রাফ্ট (সব ধরনের) ১১৩২ টি। ট্যাঙ্কের সংখ্যা ৪১১০ টি। মোট নৌবাহিনীর জাহাজ রয়েছে প্রায় ৩১৯টি। এর মধ্যে ২টি এয়াক্রাফট ক্যারিয়ার ও রয়েছে। বর্তমানে দক্ষিন কোরিয়া কে সেরা দশ থেকে ছিটকে দিয়ে ইজিপ্ট সেরা দশের মধ্যে প্রবেশ করেছে।
৯. জার্মানি-
২০১৭ সালের তালিকা অনুসারে(World top ten army 2018) জার্মানির স্থান রয়েছে নবম। জার্মানির ‘পাওয়ার ইন্ডেক্স’ হল ০.২৬১৯। জার্মানির মোট সামরিক বাজেট ৩৯.২ বিলিয়ন ডলার। মোট সক্রিয় সেনার সংখ্যা ১৮০,০০০ জন। সংরক্ষণে রয়েছে ৩০,০০০ জন। এয়ারক্রাফ্ট (সব ধরনের) ৬৯৮ টি। ট্যাঙ্কের সংখ্যা ৫৪৩ টি। মোট নৌবাহিনীর জাহাজ রয়েছে প্রায় ৮১ টি। সাবমেরিন রয়েছে ৬টি। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর জার্মানির শক্তি আস্তে আস্তে কমানোর জন্য বহিঃবিশ্বের থেকে ক্রমান্বয়ে চাপ এসেছে।
৮. তুরস্ক-
তুরস্ক শক্তির বিচারে তালিকাতে অষ্টম স্থানে রয়েছে। তুরিস্কের ‘পাওয়ার ইন্ডেক্স’ ০.২৪৯১। মোট সামরিক বাজেট মাত্র ৮২০ কোটি ডলার। মোট সক্রিয় সেনার সংখ্যা ৩৮২,৮৫০ জন। সংরক্ষণে রয়েছে ৩৬০,৫৬৫ জন। এয়ারক্রাফ্ট (সব ধরনের) ১০১৮ টি। ট্যাঙ্কের সংখ্যা ২৪৪৫টি। মোট নৌবাহিনীর জাহাজ রয়েছে প্রায় ১৯৪টি। সাবমেরিন রয়েছে ১২টি।
আরও পড়ুন- ভারতের বিরুদ্ধে ফেক ছবি পোস্ট করে ‘ব্যান’ পাকিস্তানি ডিফেন্স টুইটার অ্যাকাউন্ট
৭. জাপান-
জাপান ‘পাওয়ার ইন্ডেক্স’ ০.২১৩৭ পয়েন্ট নিয়ে সপ্তম স্থানে অবস্থান করছে। জাপানের মোট সামরিক বাজেট ৪৩.৮ কোটি ডলার। মোট সক্রিয় সেনার সংখ্যা ২৪৮,৫৭৫ জন। সংরক্ষণে রয়েছে ৬৩,৩০০ জন। এয়ারক্রাফ্ট (সব ধরনের) ১,৫৯৪ টি। ট্যাঙ্কের সংখ্যা ৭০০ টি (দ্বীপ রাষ্ট্র হওয়ায় এদের ট্যাঙ্ক খুব একটা প্রভাব ফেলবেনা)। মোট নৌবাহিনীর জাহাজ রয়েছে প্রায় ১৩১ টি। যার মধ্যে সাবমেরিন বা ডুবজাহাজ রয়েছে ১৭টি। যেহেতু জাপান দ্বীপ রাষ্ট্র তাই জাপানের নৌশক্তি বিশ্বের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালি।
৬. ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য-
‘পাওয়ার ইন্ডেক্স’ ০.২১৩১ পয়েন্ট নিয়ে ব্রিটেন বিশ্বের মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। যাদের মোট সামরিক বাজেট ৪৫.৭ কোটি ডলার। মোট সক্রিয় সেনার সংখ্যা ১৫১,১৭৫ জন। সংরক্ষণে রয়েছে ৮১,৫০০ জন। এয়ারক্রাফ্ট (সব ধরনের) ৮৫৬টি। ট্যাঙ্কের সংখ্যা ২৪৯টি। মোট নৌবাহিনীর জাহাজ রয়েছে প্রায় ৭৬টি। যার মধ্যে সাবমেরিন বা ডুবজাহাজ রয়েছে ১১টি। জাপানের মত ব্রিটেন এর ও ভৌগোলিক সুবিধা থাকার ফলে এরা সেনা বাহিনীর থেকে নৌবাহিনী তে বেশি মন নিবেশ করে থাকে।
৫. ফ্রান্স
০.১৯০৪ ‘পাওয়ার ইনিডেক্স’ নিয়ে ফ্রান্স প্রথম পাঁচের মধ্যে রয়েছে। ফ্রান্সের মোট সামরিক বাজেট ৩৫ কোটি ডলার। যেহেতু এরা যথেষ্ট পরিমানে অস্ত্র উৎপাদনে সক্ষম সেহেতু এদের খুব বেশি সামরীক বাজেটের প্রয়োজন হয়না। মোট সক্রিয় সেনার সংখ্যা ২০৪,০০০ জন। সংরক্ষণে রয়েছে ১৮৩,৬৩৫জন। এয়ারক্রাফ্ট (সব ধরনের) ১,৩০৫ টি। ফ্রান্সের বিমান বাহিনীতে রয়েছে বিশ্বের প্রথম সারির ফাইটার জেট। যেমন রাফায়েল, মিরাজ ইত্যাদি। ট্যাঙ্কের সংখ্যা ৪০৬ টি। মোট নৌবাহিনীর জাহাজ রয়েছে প্রায় ১১৮ টি। যার মধ্যে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ডুবজাহাজ রয়েছে প্রায় ১০ টি।
আরও পড়ুন – WBCS প্রস্তুতি
৪. ভারত-
ভারত বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম শক্তিশালী দেশ। সেনা সংখ্যার দিন থেকে ভারত চীনের পরেই রয়েছে। গ্লোবাল ‘পাওয়ার ইনিডেক্স’ অনুসারে ভারতের পয়েন্ট ০.১৫৯৩। ভারতে সামরিক খাতে ব্যয়ের পরিমান বাৎসরিক ৫১ কোটি ডলার। ভারতের মোট সক্রিয় সেনা সংখ্যা প্রায় ১৩৬২৫০০ জন। সংরক্ষণে রয়েছে আরও ২৮৪৪৭৫০ জন। এয়ারক্রাফ্ট (সব ধরনের) ২১০২ টি। ভারতের প্রধান যুদ্ধ বিমান বর্তমানে রয়েছে Su-30 MKI। আর কয়েক বছরের মধ্যেই ফ্রান্স থেকে রাফায়েল যুক্ত হতে চলেছে। ফলে ভারতের বায়ু সেনার শক্তি যে বৃদ্ধি পেতে চলেছে তা বলা বাহুল্য। এছাড়াও যুক্ত্রাষ্ট্র থেকে ‘অ্যাপাচি হ্যালিকপ্টার ও চিনুক পন্য পরিবন কারী হ্যালি ও যুক্ত হতে চলেছে। এগুলি ছাড়াও ভারতের নিজের চেষ্টায় বানানো ‘তেজাস’ লাইট এয়ার ক্রাফট রয়েছে। ট্যাঙ্কের সংখ্যা প্রায় ৬৪০০টি। নৌবাহিনীতে প্রায় ৩০০ টির মত জাহাজ। ১৫টি ডূবজাহাজ রয়েছে। এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার রয়েছে বর্তমানে একটি, কিন্তু আরো ২টি তৈরী হচ্ছে। ভারতের কাছে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগামী সুপার ক্লুজ মিশাইল ‘ব্রম্ভোস’। এছাড়াও প্রায় ৯০-১১০ টির মত পারমানবীক অস্ত্র ও রয়েছে।
৩. চীন-
০.০৯৪৫ পয়েন্ট নিয়ে চীন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শক্তিশালী দেশ হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। চীনের মোট সক্রিয় সেনার সংখ্যা প্রায় ২২৬০০০০ জন। সংরক্ষণে রয়েছে আরও ১৪৫২৫০০ জনের মত। মোট সামরিক বাজেট প্রায় ১৬১ কোটি ডলার। এয়ারক্রাফ্ট (সব ধরনের) ২৯৫৫ টি। ট্যাঙ্কের সংখ্যা ৬৪৫৭ টির ও বেশি। মোট নৌবাহিনীর জাহাজ রয়েছে প্রায় ৭১৪টি। সাবমেরিন রয়েছে প্রায় ৬৮ টি। এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার রয়েছে বর্তমানে একটি। সংখ্যা গত দিক থেকে ভারতের থেকে চীনের সংখ্যা বেশি হলেও মনে রাখতে হবে ভারতের থেকে চীন প্রায় ৩গুণ বড় এবং চীনের সীমান্ত বর্তী দেশ ১০ এর অধীক এবং বৈদেশিক শত্রু সংখ্যা ও ভারতের থেকে অনেক বেশি।
২. রাশিয়া-
গ্লোবাল ‘পাওয়ার ইনিডেক্স’ ০.০৯২৯ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শক্তিশালী দেশ হিসাবে অবস্থান করছে। রাশিয়ার মোট সামরিক বাজেট ৪৪.৬ কোটি ডলার (২০১৭ সালের তথ্য অনুসারে)। মোট সক্রিয় সেনার সংখ্যা ৭৯৮৫২৭ জন। সংরক্ষণে রয়েছে আরও ২৫,৭২,৫০০ জন। এয়ারক্রাফ্ট (সব ধরনের) ৩৭৯৪ টি। ট্যাঙ্কের সংখ্যা ২০,২১৬টি (সবমিলিয়ে)। মোট নৌবাহিনীর জাহাজ রয়েছে প্রায় ৩৫২টি। যার মধ্যে সাবমেরিন রয়েছে প্রায় ৬৩ টি। এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার রয়েছে ১টি। ট্যাঙ্কের দিক থেকে রাশিয়া খুবই শক্তিশালী। যুক্তরাষ্ট্রের পর এদের নৌবাহিনীও শক্তির দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে।
১. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
তালিকার শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে ৯টি দেশ এক সঙ্গে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে তাদের সামরিক বাহিনীর পেছনে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একাই তার চাইতে বেশি অর্থ ব্যয় করে। এদের মোট সামরিক বাজেট ৫৮৭.৮ কোটি ডলার। গ্লোবাল ‘পাওয়ার ইনিডেক্স’ ০.০৮৫৭ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের তালিকাতে(World top ten army 2018) প্রথম স্থানে অবস্থান করে চলেছে যুগের পর যুগ ধরেই। মোট সক্রিয় সেনার সংখ্যা ১৩,৭৩,৬৫০ জন। সংরক্ষণে রয়েছে আরও ৯৯০,০২৫ জন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত্রে এদের সেনা বাহিনীর অবস্থান লক্ষ করা যায়। এয়ারক্রাফ্ট (সব ধরনের) ১৩,৭৬২ টি। ট্যাঙ্কের সংখ্যা ৫৮৮৪টি। মোট নৌবাহিনীর জাহাজ রয়েছে প্রায় ৪১৫ টি। ডুবজাহাজ রয়েছে ৭০টি। এবং এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার রয়েছে ১৯ টি(২০১৭)। এই তথ্য গুলি দেখেই ভেবে নিতে পারেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেনো বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্র!
আজ এই পর্যন্তই থাক। পরবর্তী পোষ্টে আরো ভালো কিছু দেবার চেষ্টা করবো। আপনাদের যদি কোনো মতামত থাকে তাহলে নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।