সফল হতে চাইলে এই ৮টি অভ্যাস অবশ্যই ত্যাগ করুন
সফল হতে চাইলে এই ৮টি অভ্যাস অবশ্যই ত্যাগ করুন
একজন মানুষ ধনী না গরিব হবে, সেটা তার অভ্যাস আর দৈনন্দিন জীবনযাপন দেখলেই বোঝা যায়। এটা খুবই সাধারণ ব্যাপার যে সফল আর ধনী ব্যক্তিদের অভ্যাস আর জীবনযাপন সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশ আলাদা হবে। তাঁদের গাড়ি, বাড়ি, জনপ্রিয়তা, চলাফেরা – সবই সাধারণ মানুষের চেয়ে আলাদা।
কিন্তু মজার ব্যাপারটা হচ্ছে ধনীরা ধনী হওয়ার আগেই কিংবা সফলরা সফল হওয়ার আগেই কিছু অভ্যাসের চর্চা করেন যা সাধারণ মানুষের চেয়ে আলাদা । আর এই অভ্যাস আর বা লাইফস্টাইলই তাঁদের ধনী বা সফল হতে সাহায্য করে।
চলুন জেনে নিই সেই ৮ টি “বদ” অভ্যাস যার কারণে আপনি ধনী হতে পারছেন না:
১. প্রচুর টিভি দেখা:
আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, বাইরে থেকে ফিরেই প্রথমে টিভি খুলে বসেন। একের পর এক চ্যানেল ঘোরাতে থাকেন, এরপর কোনও প্রোগ্রাম ভালো লাগলে বসে বসে তা দেখেন, আর সময় নষ্ট করেন। সারাদিন ইউটিউব/ফেসবুকে পড়ে থাকাও সময় নষ্টের একটি প্রধান মাধ্যম।
এটা মানুষকে একটি ঘোরের মধ্যে নিয়ে যায়। আমাদের অবচেতন মন কল্পনা আর বাস্তবের মধ্যে পার্থক্য ধরতে পারে না। দুই ক্ষেত্রেই সে একই প্রতিক্রিয়া দেখায়। আর এই কারণেই টিভি প্রোগ্রামের ঘটনাগুলো কাল্পনিক – এটা জানার পরও আমাদের মধ্যে অনুভূতির জন্ম হয়। প্রিয় কোনও চরিত্র মারা গেলে আমাদের খারাপ লাগে, যদিও আমরা জানি সে আসলে মরেনি, এটা শুধুই অভিনয়। মানুষের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই আসলে ডিরেক্টর, প্রডিউসর, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা করে খাচ্ছেন।
আপনি যখন আপনার মন ভালো করার জন্য টিভির জগতে হারিয়ে যান, তখন আপনার অজান্তে মূল্যবান কাজের সময়ও হারিয়ে যায়। আর সমস্যার কথা ভুলে থাকলে কিন্তু তার সমাধানও হবে না। সফল মানুষেরা এড়িয়ে যান না, তাঁরা সেগুলোর সমাধান করতে চান।
২. সাধারণ মানুষ তরুণ বয়সে ধনী ও সফলদের তুলনায় দেরিতে ঘুম থেকে ওঠে:
শুধুমাত্র সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস দেখেই বলে দেয়া যায় একজন মানুষ ভবিষ্যতে সফল নাকি সাধারণ হবে। পৃথিবীর বড় বড় সফল আর ধনী মানুষদের জীবনী থেকে দেখা যায় তাঁরা প্রায় সবাই তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতেন, এবং ওঠেন।
ব্যর্থ মানুষদের জীবন ঘাঁটলে দেখা যায় তাঁদের বেশিরভাগেরই রাত জাগা ও দেরি করে ঘুমানোর অভ্যাস ছিল। সাধারণ মানুষেরা যখন অযথা রাত জাগে, তখন ভবিষ্যৎ ধনী ও সফল মানুষেরা চুপচাপ ঘুমিয়ে তাঁদের মস্তিষ্ককে পরের দিনের জন্য রেডি করে নেন। অনেকেই হয়তো বলবেন ভিঞ্চির মত সফল জিনিয়াস তো রাত জেগে কাজ করতেন। অনেকেই জানেন না যে তিনি আসলে সন্ধ্যার পরপরই ঘুমিয়ে পড়তেন এবং গভীর রাতে উঠে তাঁর কাজ শুরু করতেন।
ভিঞ্চির কথা বাদ দিলেও বর্তমান যুগের বিল গেটস, ইলন মাস্ক বা ওয়ারেন বাফেট – সবারই তরুণ বয়সে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস ছিল। এবং তাঁরা এখনও সেই অভ্যাস ধরে রেখেছেন।
৩. সাধারণ মানুষ খেলাধুলা নিয়ে বেশি মাতামাতি করে:
অনেকে হয়তো রেগেও যেতে পারেন। তবে বলে রাখা ভালো, আপনার লক্ষ্য যদি হয় পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে সফল হওয়া, তবে আপনার জন্য খেলা নিয়ে মেতে থাকাই সবচেয়ে ভালো। কিন্তু কিছু মানুষ আছেন, যারা নিজেরা খেলোয়াড় না হয়েও সারাদিন খেলার খবর, লাইভ খেলা, খেলার হাইলাইটস – এসব নিয়ে মেতে থাকেন। নিজের দেশের খেলা থাকলে অন্য কথা। কিন্তু এরা অন্য দেশের খেলা হলেও সবকিছু বাদ দিয়ে বসে বসে সেই খেলা দেখে।
এতে কিন্তু সত্যিকার কোনও লাভ নেই। মূল্যবান সময়ই শুধু নষ্ট হয়। অনেক সত্যিকার কাজের মানুষ, খেলা নিয়ে অন্যদের অতিরিক্ত মাতামাতি দেখে হাসেন।
কোনও বিশেষ খেলা বা দলের প্রতি দুর্বলতা থাকলে সফল মানুষরা মাঝে মাঝে হয়তো স্কোরটা দেখে নেন, অথবা খেলার শেষের অংশটা দেখেন ; কিন্তু সাধারণ মানুষের মত সারাদিন খেলা নিয়ে পড়ে থেকে সময় নষ্ট করেন না।
৪. বেশিরভাগ সাধারণ মানুষই খারাপ পরিস্থিতিতে পড়লে অন্যদের দোষ দেয়:
বেশিরভাগ মানুষ যখন ভুল করে, তখন সেই দোষ এড়ানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে। তাঁরা অন্য মানুষ, পরিস্থিতি এমনকি ভাগ্যের ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে নিজেকে বাঁচাতে চায়। নিজের ভুল কোনওভাবেই স্বীকার করতে চায় না। অন্যদিকে সফল মানুষেরা ভুল করার পর আগে বুঝতে চেষ্টা করেন তার নিজের কোন জিনিসটার অভাব ছিল। কোথায় কোথায় ভুল হয়েছে সেগুলো ভেবে বের করে সেগুলো যাতে আর না হয়, সেই চেষ্টা করেন।
৫. সাধারণ মানুষ তাড়াতাড়ি সন্তানের মুখ দেখতে চায়:
সন্তান অবশ্যই মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। এই সম্পদ পেয়ে গেলে পৃথিবীর বাকি সব সম্পদই মূল্যহীন মনে হয়। বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, অনেক সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাই সন্তান জন্মের পর নিজের উচ্চাকাঙ্খা হারিয়ে ফেলেছেন। তবে ব্যতিক্রমও আছে, সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য অনেকেই পরিশ্রমের মাত্রা বাড়িয়ে দেন।
আবার সন্তান মানুষ করার খরচের বিষয়টাও আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। বেশিরভাগ ধনী মানুষই তাঁদের লক্ষ্য পূরণ হওয়ার আগে সন্তান নেন না।যারা নিজের চেষ্টায় ধনী হতে চান – তাঁরা কখনওই নিজের আর্থিক লক্ষ্য পূরণ হওয়ার আগে সন্তানের মুখ দেখার ইচ্ছে পূরণের চেষ্টা করেন না।
৬. সাধারণ মানুষ আয় করার আগেই খরচ করা শুরু করে:
একজন মানুষের ধনী হওয়ার সবচেয়ে বড় একটি যোগ্যতা হচ্ছে, সে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে জানে। যদি তার কোনওকিছু পছন্দ হয়, তবে সে তা কখনওই ধারের টাকা দিয়ে কিনবে না। বরং সে আরও কাজ করে সেই বাড়তি টাকাটি আয় করে, অথবা তার আয়ের থেকে কিছু কিছু বাঁচিয়ে তারপর তার পছন্দের জিনিসটি কেনে। তাঁরা একমাত্র ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করার সময়েই টাকা নিয়ে ঝুঁকি নেয়।
৭. সাধারণ মানুষ সাফল্যের জন্য অন্যের সাহায্যের আশায় থাকে:
সফলেরা একদম শুরু থেকেই বুঝতে পারেন যে নিজের কিছু না থাকলে অন্যের সাহায্য পাওয়া যায় না। এখানে শুধু সম্পদের কথা বলা হচ্ছে না। যে কোনও বিষয়ে যদি কেউ অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করে, তবে তার সেই দক্ষতা কাজে লাগানোর জন্য অন্যরা আসবেই। আর সেই সিঁড়ি ধরেই ধাপে ধাপে একজন মানুষ চূড়ান্ত সাফল্য পেতে পারে।
সাধারণ মানুষ সারাটা জীবন অন্যের অপেক্ষায় থেকে ধীরে ধীরে তাঁদের কাজ করার আদর্শ সময়টা পার করে ফেলে। অন্যের সাহায্যের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে তাঁরা নিজেরা কোনও কিছুতেই অসাধারণ দক্ষ হয়ে উঠতে পারে না, আর তাই কেউ তাঁদের কাছে আসে না।
৮. সাধারণ মানুষ সস্তায় পেলে অপ্রয়োজনীয় জিনিসও কিনে ফেলে:
মানুষ দুই কারণে কেনাকাটা করে: প্রয়োজনে, আর আবেগে। সাধারণ মানুষ আর ধনীদের মাঝে একটি প্রধান পার্থক্য হলো, ধনীরা কখনওই আবেগের বশে বেহিসেবী কেনাকাটা করে না। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ বেশিরভাগ সময়ে আবেগের বশেই কেনাকাটা করে থাকে।
কোনও পন্য ডিসকাউন্টে বিক্রি হলেই ধনীরা তা কেনার জন্য ব্যস্ত হয়ে যান না। আগেই বলা হয়েছে, ধনী হওয়ার আগেই তাঁরা এই প্রাকটিসটি করে থাকেন। ব্যাপারটা এমন নয় যে, তাঁরা অনেক টাকার মালিক বলে ছাড়ের পন্য কেনেন না।। অপ্রয়োজনীয় জিনিস যত সস্তাই হোক না কেন, একজন ধনী ব্যক্তি কখনওই সেই পন্য কিনবেন না।