মানবদেহের করোটিক স্নায়ুগুলোর নাম , কাজ, উৎপত্তিস্থল তালিকা PDF
মানবদেহের করোটিক স্নায়ুগুলোর নাম
মানুষের ১২ জোড়া করোটিক স্নায়ু আছে। আসুন, আমরা মানবদেহের করোটিক স্নায়ুগুলোর নাম জেনে নেই। এর সাথে আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো বিভিন্ন স্নায়ুর নাম, উৎপত্তিস্থল এবং তাদের প্রকৃতির তালিকা PDF। যেটির মধ্যে বিভিন্ন স্নায়ুর নাম, উৎপত্তিস্থল এবং তাদের প্রকৃতি সম্পর্কিত তথ্য গুলি তালিকা আকারে উপস্থাপন করা আছে | তারপর গল্পচ্ছলে এবং কবিতার মাধ্যমে এদের বিস্তারিত কাজগুলোও জেনে নেব। বিভিন্ন স্নায়ুর নাম PDF টি ডাউনলোড লিঙ্ক পোস্টের শেষে পেয়ে যাবেন
আরও পড়ুন-
- বিভিন্ন প্রকার টিকার নাম ও তাদের আবিষ্কারক তালিকা
- ১০১টি সাধারণ বিজ্ঞান বা General Science SAQ
- General Science for WBSC
- জ্যামিতির সকল প্রকার সংজ্ঞা
ক্র. ন. | স্নায়ুর নাম | উৎপত্তিস্থল | প্রকৃতি |
---|---|---|---|
১. | অলফ্যাক্টরি | টেলেনসেফালন | সংবেদী |
২. | অপটিক | ডায়েনসেফালন | সংবেদী |
৩. | অকুলামোটর | মধ্যমস্তিস্ক | চেষ্টীয় |
৪. | ট্রকলিয়ার | পনস | চেষ্টীয় |
৫. | ট্রাইজেমিনাল | পনস | সংবেদী |
৬. | অ্যাবডুসেন্স | পনস | চেষ্টীয় |
৭. | ফেসিয়াল | পনস | সংবেদী |
৮. | অডিটরী | মেডালা | চেষ্টীয় |
৯. | গ্লোসোফ্যরিন্জিয়াল | মেডালা | সংবেদী |
১০. | ভেগাস | মেডালা | সংবেদী |
১১. | স্পাইনাল অ্যাকসেসরি | মেডালা | চেষ্টীয় |
১২. | হাইপোগ্লোসাল | মেডালা | চেষ্টীয় |
স্নায়ুগুলির নাম ও কাজ মনে রাখার সহজ উপায়। একটি গল্পের মাধ্যমে স্নায়ুগুলির নাম ও কাজ মনে রাখতে শিখেনিন। এখন আমরা সেই গল্পের মাধ্যমে মানুষের ১২ জোড়া করোটিক স্নায়ুর কাজগুলি জেনে নেব।
এক পেটুক চোর রাস্তা দিয়ে হেটেঁ যাচ্ছে।
১) হঠাৎ বিরিয়ানির গন্ধ (হ্যাঁ, হ্যাঁ, বিরিয়ানিই! এত লোভ দেওয়ার কি আছে!) তার নাকে এসে লাগল।
কার্যকর স্নায়ু : অলফ্যাক্টরি স্নায়ু
কাজ: ঘ্রান অনুভূতি মস্তিষ্কে প্রেরণ।
২) দেখল রাস্তার পাশেই এক বাড়ির জানালা খোলা।
কার্যকর স্নায়ু: অপটিক স্নায়ু
কাজ: দর্শন অনুভূতি মস্তিষ্কে প্রেরণ (অবশ্য অপটিক নাম দেখেই কাজ বোঝা যায়)।
৩, ৪, ৫) চোরের স্বভাব, তায় আবার পেটুক! তখন চোরবাবাজি খুব সাবধানে জানালার কাছে গিয়ে শুধু চোখ ঘুরিয়ে এদিক সেদিক দেখল।
কার্যকর স্নায়ু: তিনটি – অকুলামোটর স্নায়ু, ট্রকলিয়ার স্নায়ু, অ্যাবডুসেন্স স্নায়ু ।
কাজ: অক্ষিগোলকের সঞ্চালন।
৬) তারপর জানালার শিক কেটে রান্নাঘরে ঢুকে বিরিয়ানির হাঁড়ির ঢাকনা তুলতে গিয়ে হাতে ছ্যাঁকা খেলো!
কার্যকর স্নায়ু: ট্রাইজেমিনাল স্নায়ু।
কাজ: সংশ্লিষ্ট অঙ্গগুলোর সঞ্চালনে সহায়তা এবং চাপ, তাপ, স্পর্শ ইত্যাদি অনুভূতি গ্রহন।
৭) কোনো মতে ছ্যাঁকা সামলে স্বাভাবিক হতেই বিরিয়ানির গন্ধে মুখ ভরে গেলো লালাতে, চোখে ধোঁয়া লেগে চোখ থেকে অশ্রু বের হতে লাগল।
কার্যকর স্নায়ু: ফেসিয়াল স্নায়ু
কাজ: মুখবিবরের সঞ্চালন, লালাক্ষরন, অশ্রুক্ষরন ইত্যাদি এবং আস্বাদন ও ত্বকের অনুভূতিতে সহায়তা।
৮) খেতে গিয়ে শুধুই বাঁধা, ধুপ করে এক বেড়াল পড়ল ওপরের সানসেড থেকে। শব্দ শুনে ভড়কে গেল চোর।
কার্যকর স্নায়ু: অডিটরী স্নায়ু
কাজ: শ্রবন ও ভারসাম্য রক্ষা।
৯) অবশেষে চামচ দিয়ে বিরিয়ানী নিল মুখে, “আহা! কি স্বাদ!”
কার্যকর স্নায়ু: গ্লোসোফ্যরিন্জিয়াল স্নায়ু
কাজ:স্বাদগ্রহন ও জিহ্বার সন্চালন
১০) খেতে খেতে হঠাৎ বুঝতে পারল আর একটু বেশি খেলেই মনে হয় তার পেটটা ফেটে যাবে।
কার্যকর স্নায়ু: ভেগাস স্নায়ু
কাজ: হৃদপিন্ড,ফুসফুস,স্বরনালী ও পাকস্থলীর সঞ্চালন এবং অনুভূতি গ্রহন।
১১) খাওয়া শেষে কাঁধ ঝাকিয়ে নিল বেশ, মুখ-হাত ধুয়ে একটু ফ্রেশ হল।
কার্যকর স্নায়ু: স্পাইনাল অ্যাকসেসরি স্নায়ু
কাজ: মাথা ও কাঁধের সঞ্চালন
১২) সবশেষে চোরবাবাজি জিভ দিয়ে ঠোঁট চেটে, শিষ দিতে দিতে চলে গেল।
কার্যকর স্নায়ু: হাইপোগ্লোসাল স্নায়ু
কাজ: জিহ্ববার সঞ্চালন
আরও পড়ুন-
- বিভিন্ন প্রকার টিকার নাম ও তাদের আবিষ্কারক তালিকা
- ১০১টি সাধারণ বিজ্ঞান বা General Science SAQ
- General Science for WBSC
- জ্যামিতির সকল প্রকার সংজ্ঞা
এবার মজার ছড়াটি দেখে নিই। এই ছড়ার মাধ্যমে সহজেই করোটিক স্নায়ুগুলির নাম, কাজ ও উৎপত্তি জানা হয়ে যাবে।
করোটিক স্নায়ুর কাব্য
– ড. এম. মনজুরুল আলম ।
জন্ম থেকেই দেখছো চোখে নিচ্ছ নাকে ঘ্রাণ
বলছ কথা কথা মনের সুখে শুনছে তোমার কান।
পড়ছে তোমার চোখের পলক নড়ছে কত পেশী
মজার খাবার নিলেই মুখে স্বাদ পেয়ে হও খুশী।
কিন্তু কেন হচ্ছে এসব প্রশ্ন কি হয় মনে?
আমার কাজের কথা তুমি নাও তাহলে জেনে।
যুক্ত হয়ে ব্রেইনের সাথে তথ্য করি সার্ভ
কেউ ডাকে মোরে রোটিক স্নায়ু, কেউ ক্র্যানিয়াল নার্ভ।
আমরা যে সব জোড়া স্নায়ু মস্তিষ্ক হতে
গমন করি নানান অঙ্গে করোটি-ছিদ্র পথে।
আমাদেরই নাম করোটিক স্নায়ু, রেখো তুমি স্মরণ
সেনসরি বা মিশ্র, মোটর, একেক জনার ধরণ।
আন-এমনিয়টায় জোড়া দশেক, এমনিয়টায় বার
সংখ্যার অমিল একটু পেলেও সন্দেহটা ছাড়।
উৎপত্তি আর কাজ বিস্তারে সকল ভার্টিব্রেটে
একই রকম পাবে মোদের দেখ যদি ঘেঁটে।
এবার চল করি বর্ণনা আমাদের পরিচয়
রাখলে মনে মোদের কথা থাকবে না সংশয়।
নার্ভাস সিস্টেম পড়তে গিয়ে অনেকে হয় নার্ভাস
নিজের কথাই ছন্দে-ছন্দে বলব তাদের আজ।
অলফ্যাক্টরী লোব হতে উৎপত্তি আমার
নাসিকার মিউকাস মেমব্রেনে হই যে বিস্তার।
ঘ্রাণ উদ্দীপনা বহন করি ধরণ সেনসরি
প্রথম করোটিক স্নায়ু আমি নামটা অলফ্যাক্টরী।
ডায়েনসেফালনের যেথায় অপটিক থ্যালামাই
আমার উৎপত্তি কিন্তু সেই খানেতে ভাই।
রেটিনা হতে আলোর উদ্দীপনা বহন করি
মস্তিষ্কে নিয়ে যাই ধরণটা সেনসরি।
দর্শন কাজে আমার নাকি কোন জুড়ি নাই
দ্বিতীয় করোটিক স্নায়ু আমি, অপটিক নার্ভ ভাই।
মেজেনসেফালনের নীচের প্রতি পার্শ্ব হতে
সৃষ্টি হয়ে গেছি আমি চোখের চার পেশীতে।
চক্ষু গোলক, চোখের পাতা, আর চক্ষু লেন্স
চালনাতে রয়েছে যে আমার-ই নির্দেশ।
ধরণ আমার রেখো মনে, “সেনসরি নয়”! “মোটর”
তিন নম্বর করোটিক স্নায়ু, আমি অকুলোমোটর।
মেজেনসেফালনের পৃষ্ঠের প্রতি পার্শ্ব দিয়া
উৎপন্ন হয়ে আমি গিয়াছি চলিয়া।
সুপেরিয়র অবলিক নামক পঞ্চম চক্ষু-পেশী
নিয়ন্ত্রণ করি আমি হয়ে হাসি-খুশি।
অক্ষি গোলক সঞ্চালন করি, সিরিয়াল আমার চার
মোটর ধরণ স্নায়ু আমি, নামটি ট্রকলিয়ার।
জন্ম আমার মেডুলা অবলংগাটার অগ্রভাগে
মিশ্র আমার ধরণ তুমি জানতে কি তা আগে?
অপথালমিক, ম্যাক্সিলারি, ম্যান্ডিবুলার নামে
আমার তিনটি শাখা আছে, জানে সবাই জানে।
চোখের পাতা, নাকের পর্দা, চোয়ালের ত্বক-পেশী
বিস্তৃতিটা আমার কিন্তু অনেকখানি বেশী।
এখান থেকেই অনুভূতি বহন করে আমি
নিয়ে যাই মস্তিস্কে তা হোক না দিবা-যামী।
চোয়াল এবং জিহবা নাড়ান, আমার বিশেষ কাজ
ট্রাইজেমিনাল স্নায়ু আমি, নম্বরটা পাঁচ।
যেখানেতে মেডুলা অবলংগাটার অঙ্কীয় দেশ
সেখানেতে জন্ম আমার নামটা এবডুসেন্স।
ছয় নম্বর চক্ষু পেশী, এক্সটারনাল রেকটাস
বিস্তার আমার হয়েছে সেথায় করি তথায় বাস।
অক্ষি গোলক সঞ্চালন প্রধান কর্ম মোর
ষষ্ঠ করোটিক স্নায়ু আমি, ধরণটা মোটর।
মেডুলা অবলংগাটার দুপাশ হতে জন্ম মোর
গ্যাসেরিয়ন গ্যাংলিয়নে মিলে বাঁধি ডোর।
ট্রাইজেমিনালের সাথে একই ছিদ্র পথ দিয়া
বের হয়ে দুটি শাখায় গিয়াছি চলিয়া।
প্যালাটাইন, হায়োম্যান্ডিবুলার এদের নাম
পড়তে গিয়ে রাখলে মনে, হবে না বদনাম।
কর্ণপটহ, নিম্ন চোয়াল আরও মুখবিবর
বিচরণের ক্ষেত্র আমার জান কি খবর?
স্বাদ, চর্বণ, ঘাড় সঞ্চালন, ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন
এসব কিছুই কর্ম আমার বলেন গুণীজন।
মিশ্র ধরণ স্নায়ু আমি রাখিও খেয়াল
সাত নম্বর করোটিক স্নায়ু আমি ফেসিয়াল।
ফেসিয়াল স্নায়ুর উৎপত্তি যেইখানেতে ভাই
সেইখানেতে জন্ম আমার মনে রাখা চাই।
ফেসিয়ালের পেছনেতে অবস্থান তাই করি
খেয়াল শুধু রেখো আমার ধরণটা সেনসরি।
অন্তঃকর্ণে বিস্তার আমার শ্রবণ কর্ম করি
আট নম্বর করোটিক স্নায়ু, আমি অডিটরি।
আমারও উৎপত্তি ভাইরে ফেসিয়ালের মত
অবস্থান তাই অডিটরির পেছনে রক্ষিত।
ভেগাস গ্যাংলিয়ন নামক স্নায়ু গ্রন্থির সাথে
যুক্ত হয়ে দুটি শাখায় বিভক্ত হই পথে।
মুখ বিবর, গলবিল আর হায়োম্যাণ্ডিবুলারে
বিস্তৃত হই মিশ্র স্নায়ুর প্রকৃতিটা ধরে।
স্বাদ গ্রহণ আর জিহবা নাড়ার কাজে রাখি খেয়াল
নয় নম্বর স্নায়ু আমি, গ্লোসোফ্যারিঞ্জিয়াল।
মেডুলা অবলংগাটায় জন্ম শোন আমি বলি
করোটির এক্স-অক্সিপিটাল ছিদ্র পথে চলি।
গলবিলে সূক্ষ্ণ শাখা সরবরাহ করে
চারটি শাখায় কর্ম করি সারা জীবন ধরে।
প্রথম শাখা ল্যারিঞ্জিয়াল দ্বিতীয় কার্ডিয়াক
স্বরযন্ত্রে, হৃদযন্ত্রে, বিস্তৃতি মোর থাক।
তৃতীয়টা পালমোনারি, চতুর্থ গ্যাষ্ট্রিক
ফুসফুস আর পাকস’লীতে বিচরণ করি ঠিক।
সংকোচন-প্রসারণ করে, করে সিক্রিশণ
বিস্তৃতির এই অঙ্গগুলি করি নিয়ন্ত্রণ।
সর্ববৃহৎ স্নায়ু আমি, মিশ্র আমার কাজ
দশ নম্বর করোটিক স্নায়ু আমি যে ভেগাস।
মেডুলা অবলংগাটা এবং স্পাইনাল কার্ডের পাশ
মোটর হিসেবে জন্ম সেথায়, অন্য কোথাও বাস।
গ্রীবা দেশের পেশী কিংবা ল্যারিংস, ভোকাল কর্ড
বিস্তার আমার এইখানেতেই সেথায় আমি লর্ড।
ল্যারিংস, ফ্যারিংস, গ্রীবার পেশী, সঞ্চালন করি
একাদশ করোটিক স্নায়ু আমি, স্পাইনাল এক্সোসরি।
স্পাইনাল এক্সেসরির মত আমার একই কথা
মেডুলার অংকীয় দেশে জীবন আমার গাঁথা।
জিহবা ও গ্রীবার পেশী বিস্তৃতির সীমা
সঞ্চালনও করি এদের এটাই যে মহিমা।
হাইপোগ্লোসাল নামটি আমার, মোটর বলেই ধরো
সর্বশেষ করোটিক স্নায়ু, নম্বর আমার বারো।
শেষ হলো মোর জীবন কথা রেখো শুধু মনে
আমার সকল কথা তুমি দেখবে গেছো জেনে।
করোটিক স্নায়ু পড়তে আর হবে না নার্ভাস
পরীক্ষাতেও নম্বর তুমি পাবে যে সাব্বাস!
⇒ বিভিন্ন স্নায়ুর নাম, উৎপত্তিস্থল এবং তাদের প্রকৃতির তালিকা PDF