জম্মু ও কাশ্মীরের পুনর্গঠনের পড়ে ভারতের নতুন মানচিত্র দেখুন
জম্মু ও কাশ্মীরের পুনর্গঠনের পড়ে ভারতের নতুন মানচিত্র
জম্মু ও কাশ্মীরের পুনর্গঠনের পড়ে ভারতের নতুন মানচিত্র : ভারতের মানচিত্র মানে বুঝি নিচের মানচিরটির মত। এই মানচিত্রের সর্ব উত্তরে রয়েছে ভূস্বর্গ আমাদের প্রাণের প্রিয় জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য। বাস্তবিক অর্থে এই জম্মু ও কাশ্মীরের কিছুটা অংশ (যেটা আপনারা নিচের ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন) ভারতের অধীনে রয়েছে। বাকিটা পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর নামে পরিচিত অর্থাৎ, কাশ্মীরের বাকি অংশটি ১৯৪৭ থেকে পাকিস্তান দখল করে রেখেছে।
আমরা জানি ভারতের ২৯টি রাজ্য ও ৭টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রয়েছে। কিন্তু ৫ই আগস্ট ২০১৯ এর পর ভারতের রাজ্যের বিন্যাসের পরিবর্তন হয়েছে। তা সরকারি ভাবে সীকৃতি পেয়েছে ১ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে। এবং ২৭ নভেম্বর ২০১৯ সালে লোকসভাতে দাদরা নগরহাভেলি ও দমন দিউ কে একত্রী করণের একটি বিল পাশ হয়েছে। যার ফলে এই দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের একত্রীওকরণ ঘটেছে। ফলে বর্তমানে ভারতের রাজ্য সংখ্যা ২৮টি এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সংখ্যা ৮টি। কারন ৬৯ বছর পর রদ হল ৩৭০ ধারা এবং ৩৫এ ৷ ১৯৪৭ সালে এই ধারার খসড়া তৈরি করেছিলেন সেখ আবদুল্লা। সংবিধানের ১১ নম্বর অংশে কিছু অস্থায়ী ব্যবস্থার কথা বলা রয়েছে। সেই ক্ষমতা বলেই তৈরি হয় ৩৭০ ধারা। ১৯৫৪ সালে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে ধারাটি ৩৭০-এ ঢোকানো হয় সংবিধানে। এই ৩৭০ ধারা রদ করা হল বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা হারাল জম্মু ও কাশ্মীর ৷ জম্মু ও কাশ্মীরকে দুটি খন্ডে বিভক্ত করে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত করা হয়েছে। ফলে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ নামে দুটি নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠিত হয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীরের পুনর্গঠনের পড়ে ভারতের মানচিত্র কেমন দেখাবে ? জম্মু ও কাশ্মীরের ভৌগোলিক অবস্থান কেমন হবে? জেনে নেওয়া যাক কিছু তথ্য
জম্মু ও কাশ্মীর ‘রাজ্যের’ বর্ণনা- মূল বিষয়ে আসার আগে আমরা জম্মু কাশ্মীর সম্পর্কে কিছু তথ্য আগে সংক্ষেপে জেনে নেই। আমরা জেনে এছেছি ভারতের অঙ্গরাজ্য সংখ্যা ২৯টি। এই ২৯ টি রাজ্যের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীর ও রয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের মোট জেলার সংখ্যা ২২টি। জম্মু ও কাশ্মীরের বৃহত্তর জেলা ছিল ‘লেহ’। আয়তনের এই লেহ্ কিন্তু ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা। (ভারতের বৃহত্তম জেলার হল গুজরাতের কচ্ছ)। লেহ্ এর পর জম্মু ও কাশ্মীরের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা হল কার্গীল। এবং তৃতীয় বৃহত্তম জেলা হল কৃষ্টবার। এইভাবে মোট ২২টি জেলা রয়েছে।
♥ জম্মু ও কাশ্মীরে কয়টি প্রশাসনিক বিভাগ রয়েছে?
জম্মু ও কাশ্মীরে মোট ৩টি প্রশাসনিক বিভাগ ছিল। যথা- কাশ্মীর বিভাগ, জম্মু বিভাগ ও লাদাখ বিভাগ।
♥ পুনর্গঠিত নতুন বিভাগটি কেমন হল?
আমরা আগেই বলেছি জম্মু ও কাশ্মীর আর ভারতের রাজ্য থাকছে না। রাজ্যটিকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত করা হয়েছে। প্রথমত হল- লাদাখ অঞ্চল এবং দ্বিতীয়টি হল- জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চল।
[আরও পড়ুন- ভারতের সকল রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের নামের তালিকা]
১. লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল- এই অঞ্চল টি জম্মু ও কাশ্মীরের দুটি জেলা যথা- লেহ্ ও কার্গিলকে একসাথে যুক্ত করে গঠন করা হয়েছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘লাদাখ’। লাদাখ একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। লাদাখের জেলার সংখ্যা ২টি (লেহ্ ও কার্গিল)।
২. জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল- জম্মু ও কাশ্মীরের বাকি ২০টি জেলাকে নিয়ে জম্মু ও কাশ্মীর নামক আরও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করা হয়েছে। যার নাম রাখা হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর। জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ২০টি জেলা রয়েছে।
♥ আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা কেমন হবে?
এবার থেকে দুটি আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত হবে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ ৷ জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা থাকলেও লাদাখে কোনও আলাদা বিধানসভা থাকবে না ৷ অর্থাৎ জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জন্য আলাদাকরে মূখ্যমন্ত্রী থাকবে কিন্তু লাদাখের কোনো আলাদা মূখ্যমন্ত্রী থাকবে না। অর্থাৎ লাদাখ থাওবে গভর্নরের অধীনে। আমরা জানি যে সকল কেন্ত্রশাসিত অঞ্চলে মূখ্যমন্ত্রী নেই, শুধু মাত্র দিল্লি ও পডুচেরিতেই মূখ্যমন্ত্রী তথা বিধানসভা রয়েছে। পাশাপাশি দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলেই দুজন লেফটেন্যান্ট গভর্নর থাকবেন।
♥ ৩৭০ ধারার ৩৫-এ ধারা রদ হওয়ার পর কি কি পরিবর্তন লক্ষ করা যাবে?
১. সংসদের মাধ্যমে দেশে যে আইন কার্যকর হচ্ছে, তা জম্মু ও কাশ্মীরের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক নয়। যে কোনও আইন এখানে কার্যকর হবে কিনা, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভার। এই ধারা উঠলে গোটা দেশের মতো এখানেও আইন কার্যকর হবে ৷
২. বাতিল হবে দ্বৈত নাগরিকত্ব ৷ এবার সব কাশ্মীরের নাগরিক শুধুমাত্র ভারতের নাগরিক হিসেবেই পরিচিত হবেন ৷ কাশ্মীরের জন্য কোনও আলাদা নাগরিকত্ব আর থাকবে না ৷
৩. কারা রাজ্যের নাগরিক হওয়ার অধিকারী, তা স্থির করার একমাত্র অধিকারী বিধানসভা ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। অর্থাৎ রাজ্যের নাগরিকত্ব নিয়ে কোনও আদালতে চ্যালেঞ্জ বা মামলা করার সুযোগ ছিল না। এবার রাজ্যের বাসিন্দা হওয়ার দাবি জানানো যাবে৷
৪. রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া অন্য কেউ জমি বা সম্পত্তি কিনতে পারতেন না । এই নিয়মের জন্য রাজ্যে লগ্নি করতেন না বিনিয়োগকারীরা। এই সমস্যার সমাধান হবে।.
৫. দেশের সেরা পেশাদার ও বিশেষজ্ঞরাও জম্মু ও কাশ্মীরে কাজ করতে আগ্রহ দেখাতেন না ৷ উপত্যকায় বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রের সংখ্যা হাতে গোণা। বেসরকারি শিক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যাও অনেক কম। ৩৭০ ধারা ওঠায় স্বাস্থ্য ও শিক্ষা পরিষেবা উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।.
৬. বিশেষ মর্যাদা লিঙ্গবৈষম্য তৈরি করে বলে মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের। কারণ এখানে পুরুষদের জন্য কিছু অধিকার দেওয়া হয়েছে ৷
৭. ব্যাঙ্ক ও আর্থিক লেনদেন ছাড় পেতেন উপত্যকাবাসী। এইভাবে উপত্যকায় সন্ত্রাসে টাকা যোগানো হত বলে অভিযোগ। যা আটকানো সম্ভব হবে।
৮. একইসঙ্গে ৩৭০ ধারা ওঠায় বড়সড় পরিবর্তন আসতে চলেছে উপত্যকার রাজনীতিতে। এতদিন এই ধারাকে সামনে রেখেই রাজনীতিতে ফয়দা তুলত পিডিপি ও ন্যাশনাল কনফারেন্সের মতো দলগুলো। ৩৭০ ধারা ওঠায় এবার উপত্যকাবাসীর পাশাপাশি নতুন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লাদের।
৯. জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভার মেয়াদ ছিল ছয় বছর, তা কমে হচ্ছে পাঁচ বছর।
১০. জম্মু কাশ্মীরে আলাদা করে পতাকা ও সংবিধান আর থাকবেনা, ভারতীয় পতাকার ব্যবহার লক্ষ করা যাবে।
♥ অন্যদিকে ৩৭০ নম্বর ধারা ওঠার পর বেশ কিছু নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলি কী?
১. বিশেষত সাধারণ মানুষ যে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন, তাতে অনেকটাই কোপ পড়তে পারে।
২. কম দামে খাদ্যশস্য, আয়কর ছাড় ও চিকিৎসা ও পরিবহণের সুযোগ হারাবেন উপত্যকার মানুষ ৷
৩. প্রতিযোগিতার মুখে জীবিকা ও ব্যবসায় সুযোগ হারানোর আশঙ্কাও থাকছে ৷
৪. উপত্যকায় অপরাধপ্রবণতা বাড়তে পারে।
৫. দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হতে পারে।
♥ ভারতের নতুন মানচিত্র ১ নভেম্বর ২০১৯
জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য বিভাজিত হয়ে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিনত হওয়ার পর ভারতের মানচিত্রের রূপের পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে ভারতের নতুন মানচিত্র দেখতে কেমন হবে সেই নিয়ে সকল ভারতবাসীর মনে উৎসাহ রয়েছে। আমরা প্রকাশ করলাম ২০১৯ সালে গঠিত ভারতের নতুন মানচিত্র। দেখে নিন কেমন দেখতে ভারতের নতুন মানচিত্রটি।
© www.studentscaring.com