ভারতের রাষ্ট্রপতি পদ, নির্বাচন পদ্ধতি, কার্যকাল, ক্ষমতা ও কার্যাবলী PDF
নমস্কার বন্ধুরা। আপনি এই পোস্টে এসেছেন এর অর্থ আপনি স্কুল, কলেজের ছাত্র-ছাত্রী অথবা আপনি চাকরীর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আজকের পোস্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজ ভারতের রাষ্ট্রপতি পদ, নির্বাচন পদ্ধতি, কার্যকাল, ক্ষমতা ও কার্যাবলী PDF নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যেটি WBCS, PSC, SSC, TET, Railway exam, Kolkata Police Exam, WB Police Exam, PTET, SLST PT, ICDS, Bank-সহ বিভিন্ন চাকরীর পরীক্ষাতে ভারতের রাষ্ট্রপতি (Indian President in Bengali) বিষয়ক তথ্যগুলি কাজে লাগবে।
ভারতের ভারতীয় শাসনব্যবস্থা সংসদীয় এবং রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসনব্যবস্থার সমন্বয়ে গঠিত হওয়ার ফলে এক অভিনব শাসনব্যবস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি তত্ত্বগতভাবে শাসন বিভাগের চূড়ান্ত কর্তৃত্বের অধিকারী হলেও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত একটি ক্যাবিনেটের পরামর্শে পরিচালিত হন বলে কার্যত তিনি নিয়মতান্ত্রিক বা নামসর্বস্ব শাসক হিসেবেই পরিচিতি লাভ করেছেন।
ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার যােগ্যতা :
ভারতের রাষ্ট্রপতি (Indian President) পদে নির্বাচিত হতে গেলে প্রার্থীকে অবশ্যই কতকগুলি যােগ্যতার অধিকারী হতে হয়। যেমনঃ
(i) অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক, (ii) অন্তত ৩৫ বছর বয়স্ক, (iii) লােকসভায় নির্বাচিত হওয়ার যােগ্যতাসম্পন্ন হতে হবে। (iv) তা ছাড়া কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার বা স্থানীয় সরকারি কর্তৃপক্ষের কোনাে লাভজনকপদে তিনি অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না। (v) রাষ্ট্রপতিপদে নির্বাচন প্রার্থীর নাম অন্তত ৫০ জন নির্বাচক কর্তৃক প্রস্তাবিত এবং ৫০ জন নির্বাচক কর্তৃক সমর্থিত হতে হবে। তা ছাড়া, প্রত্যেক প্রার্থীকে মনােনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় ১৫,০০০ টাকা জামানত রাখতে হয়।।
আরও পড়ুনঃ
- ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নামের তালিকা PDF
- ভারতের রাষ্ট্রপতির নামের তালিকা PDF
- ভারতের গণপরিষদের উল্লেখযোগ্য কমিটি ও চেয়ারম্যান তালিকা PDF
- ভারতের গণপরিষদ : গঠন, উদ্দেশ্য, অধিবেশন, উল্লেখযোগ্য কমিটি
- Indian Polity/Constitution Book In Bengali PDF
- ভারতের হাইকোর্টের তালিকা PDF
ভারতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি :
১) নির্বাচক সংস্থা গঠন :
একক-হস্তান্তরযােগ্য ভােটের ভিত্তিতে সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব-এর নিয়মানুযায়ী গােপন ভােটের মাধ্যমে একটি নির্বাচক সংস্থা কর্তৃক ভারতীয় রাষ্ট্রপতি পরােক্ষভাবে নির্বাচিত হন। (i) ভারতীয় পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের নির্বাচিত সদস্যদের এবং (ii) রাজ্য-আইনসভার নিম্নকক্ষের অর্থাৎ বিধানসভার নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে এই নির্বাচক সংস্থা গঠিত হয়।
ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তিনটি পর্যায় :
রাষ্ট্রপতির নির্বাচন পদ্ধতির তিনটি পর্যায় হল :
(১) রাজ্য-বিধানসভার নির্বাচিত সদস্যের ভােটসংখ্যা নির্ণয় :
প্রথমেই প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের বিধানসভার নির্বাচিত প্রত্যেক সদস্যের ভােটসংখ্যা নির্ধারণ করতে হয়। এই সংখ্যা নির্ধারণের জন্য রাজ্যের মােট জনসংখ্যাকে সেই রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচিত সদস্যসংখ্যা দিয়ে ভাগ করতে হয়। তারপর ভাগফলকে ১,০০০ দিয়ে ভাগ করতে হবে।
ভাগশেষ যদি ৫০০ বা তার বেশি হয়, তবে দ্বিতীয় ভাগফলের সঙ্গে ১ যােগ করে যে-সংখ্যা পাওয়া যাবে, তা হবে সেই রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচিত প্রতিটি সদস্যের ভােটসংখ্যা। ভােটদানের সময় বিধানসভার প্রত্যেক সদস্য একটি করে ভােট দিলেও ভােটগণনার সময় সেই একটি ভােটের মূল্য হিসেবে পূর্বোক্ত ভােটসংখ্যাকেই ধরা হবে। .
(২) পার্লামেন্টের সদস্যের ভােটসংখ্যা নির্ণয় :
ভারতের রাষ্ট্রপতির নির্বাচন পদ্ধতির দ্বিতীয় পর্যায় হল—পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের নির্বাচিত সদস্যদের ভােটসংখ্যা নির্ণয়ের জন্য রাজ্য বিধানসভাসমূহের সদস্যদের মােট ভােটসংখ্যাকে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সংখ্যা দ্বারা ভাগ করতে হয়। ভাগশেষ যদি ভাজক সংখ্যার অর্ধেক বা। অর্ধেকের বেশি হয়, তবে পূর্বোক্ত ভাগফলের সঙ্গে ১ যােগ করে যে সংখ্যা পাওয়া যাবে, তা হবে পার্লামেন্টের প্রতিটি নির্বাচিত সদস্যের ভােটের মূল্য।
(৩) একক-হস্তান্তরযােগ্য ভােটের ভিত্তিতে সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব :
রাষ্ট্রপতির নির্বাচন পদ্ধতির তৃতীয় পর্যায় হল ভােটদান। ভােটদানের ক্ষেত্রে একক-হস্তান্তরযােগ্য ভােটের ভিত্তিতে সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নীতি গৃহীত হয়েছে। এই পদ্ধতি অনুসারে যতজন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, প্রত্যেক ভােটদাতা ততগুলি পছন্দ জানাতে পারবেন।
এইভাবে প্রত্যেক ভােটদাতা প্রার্থীর নামের পাশে ১, ২, ৩ ইত্যাদি সংখ্যা লিখে তার পছন্দ প্রকাশ করতে পারেন। প্রত্যেক ভােটদাতাকে তাঁর প্রথম পছন্দ অবশ্যই জানাতে হবে; অন্যথায় তার ভােটপত্র বাতিল হয়ে যাবে।
এইভাবে ভােটগ্রহণের পর সব প্রার্থীর প্রথম পছন্দের ভােটগুলি যােগ করা হয়। তারপর যােগফলকে ২ দিয়ে ভাগ করে ভাগফলের সঙ্গে ১ যােগ করলে যে সংখ্যা পাওয়া যায়, তাকে ‘কোটা’ বলা হয়। রাষ্ট্রপতিপদে নির্বাচিত হতে গেলে প্রার্থীকে ‘কোটা’-নির্দিষ্ট ভােট পেতেই হবে।
যদি কোনাে প্রার্থীই নির্দিষ্ট কোটায় পৌঁছােতে না পারেন, তবে যিনি সর্বাপেক্ষা কম সংখ্যক প্রথম পছন্দের ভােট পেয়েছেন, তাঁকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বাদ দিয়ে তার ভােটপত্রগুলিকে পরবর্তী চিহ্নিত পছন্দ অনুযায়ী অন্যান্য প্রার্থীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
যতক্ষণ পর্যন্ত কোনাে প্রার্থী নির্দিষ্ট কোটা’ লাভ করতে না পারছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত, প্রার্থী বাতিল এবং ভােটপত্রের এরূপ হস্তান্তর চলতে থাকবে। রাষ্ট্রপতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে, কোনাে বিতর্ক সৃষ্টি হলে সুপ্রিম কোর্ট তার মীমাংসা করতে পারেন।
ভারতের রাষ্ট্রপতির কার্যকাল ও পদচ্যুতি:
রাষ্ট্রপতি ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। অবশ্য, (i) রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে; (ii) তার মৃত্যু হলে; অথবা (iii) সংবিধানভঙ্গের অপরাধে। পার্লামেন্ট তাকে পদচ্যুত করলে; কিংবা (iv) আদালত নতুন রাষ্ট্রপতির নির্বাচন বাতিল করে দিলে কার্যকালের মেয়াদ পরিসমাপ্তির আগেই রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হতে পারে।
সংবিধানের ৫৬ নং ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতিকে সংবিধানভঙ্গের অপরাধে ৬১নং ধারায় বর্ণিত ‘ইমপিচমেন্ট’ পদ্ধতির মাধ্যমে পদচ্যুত করা যায়। পার্লামেন্টের যে-কোনাে কক্ষই। রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে প্রস্তাব আকারে সংবিধানভঙ্গের অভিযােগ আনতে পারে। যে কক্ষে এরূপ অভিযােগ প্রস্তাব আনীত হবে, সেই কক্ষের মােট সদস্যসংখ্যার অন্যূন এক চতুর্থাংশের স্বাক্ষরিত লিখিত বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার।
অন্তত ১৪দিন পরে প্রস্তাবটি আলােচনার জন্য সংশ্লিষ্ট কক্ষে উত্থাপন। করা যায়। প্রস্তাবটি সেই কক্ষের মােট সদস্যসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের। সম্মতিসূচক ভােটে গৃহীত হলে অপর কক্ষ অভিযােগটি সম্পর্কে অনুসন্ধান করে।
এর পর সেই কক্ষেও প্রস্তাবটি অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভােটে গৃহীত হলে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা হয়। অবশ্য অনুসন্ধানের সময়ে রাষ্ট্রপতি স্বয়ং কিংবা তার মনােনীত কোনাে প্রতিনিধির মাধ্যমে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারেন। উপরিউক্ত যে-কোনাে কারণে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে ৬ মাসের মধ্যেই নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হয়।
ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলি :
সংবিধান অনুসারে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী। | তাঁর ক্ষমতাবলিকে আট ভাগে ভাগ করে আলােচনা করা যেতে পারে।
(১) শাসন-সংক্রান্ত ক্ষমতা :
ভারতের রাষ্ট্রপতি হলেন দেশের সর্বোচ্চ শাসন বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ। তিনি নিজে কিংবা তার ‘অধস্তন কর্মচারীবৃন্দের মাধ্যমে সংবিধান অনুসারে শাসন-সংক্রান্ত কার্যাবলি সম্পাদন করতে পারেন [৫৩ (১) নং ধারা]।
এখানে অধস্তন কর্মচারীবৃন্দ বলতে মন্ত্রীদের বােঝানাে হয়েছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি শাসন-সংক্রান্ত ক্ষমতাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে:
(i) কেন্দ্রীয় সরকারের যাবতীয় শাসনকার্য তাঁর নামেই সম্পাদিত হয় [৭৭ (১) নং ধারা]।
(ii) কেন্দ্রের যাবতীয় কার্য-পরিচালনা সম্পর্কে মন্ত্রীসভার সিদ্ধান্ত ও আইন প্রণয়নের | প্রস্তাবসমূহ সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত রাখা, কেন্দ্রের কার্যাবলি পরিচালনা ও আইন প্রণয়নের প্রস্তাবসমূহ সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি যে তথ্য জানতে চাইবেন তা সরবরাহ করা এবং মন্ত্রীসভা কর্তৃক বিবেচিত হয়নি | এমন কোনাে বিষয়ে কোনাে মন্ত্রী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে রাষ্ট্রপতি | বিচারবিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়টিকে মন্ত্রীসভার কাছে উপস্থাপন করার নির্দেশ দিলে সেইমতাে কাজ করা প্রধানমন্ত্রীর কর্তব্য [৭৮ (ক)-(গ) নং ধারা]।
(iii) অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপাল, প্রধানমন্ত্রী-সহ অন্যান্য মন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেল, মহাহিসাব নিয়ামক ও নিরীক্ষক, নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় জনপালন কৃত্যক কমিশন, অর্থ কমিশন, অন্তঃরাজ্য পরিষদ | প্রভৃতির সদস্যগণ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন।
(iv) তিনি যে-কোনাে | মন্ত্রীকে এবং রাজ্যপাল, অ্যাটর্নি জেনারেল ও জনপালন কৃত্যক, কমিশনের সভাপতি বা সদস্যদের পদচ্যুত করতে পারেন। তবে জনপালন কতক কমিশনের সভাপতি বা কোনাে সদস্যকে পদচ্যুত করার আগে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিকে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোেগ সম্পর্কে তদন্ত করাতে হয়।
(v) কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং উপজাতি-অধ্যুষিত অঞ্চলসমূহের প্রধান প্রশাসক হলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। প্রতিটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের শাসনকার্য পরিচালনার জন্য তিনি একজন করে প্রশাসক নিয়ােগ করতে পারেন। আবার, প্রয়ােজন মনে করলে তিনি কোনাে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসনিক দায়িত্ব পার্শ্ববর্তী কোনাে রাজ্যের রাজ্যপালের হাতে অর্পণ করতে সমর্থ।
(vi) ভারতের রাষ্ট্রপতি রাজ্যসরকারগুলিকে কেন্দ্রীয় আইন মান্য করে এবং কেন্দ্রীয় শাসন বিভাগের কার্যাবলির সঙ্গে সংগতি রক্ষা করে কার্য সম্পাদন করার জন্য নির্দেশ দিতে পারেন। তা ছাড়া, জাতীয় ও সামরিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ যােগাযােগ ব্যবস্থা, রেলপথ ইত্যাদির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাজ্য| সরকারগুলিকে তিনি প্রয়ােজনীয় নির্দেশ দেন। এমনকী, রাজ্য-সরকারের সম্মতিক্রমে তিনি রাজ্য-সরকারি কর্মচারীদের ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু কিছু কার্য সম্পাদনের দায়িত্ব অর্পণ করতে পারেন।
(২) সামরিক ক্ষমতা :
ভারতের রাষ্ট্রপতি হলেন ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। তিনি স্থলবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধানদের নিয়ােগ করেন। জাতীয় প্রতিরক্ষা কমিটির প্রধান হিসেবে তাকে কার্য | সম্পাদন করতে হয়। ওই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে তিনি যুদ্ধ ঘােষণা | কিংবা শান্তি স্থাপন করতে পারেন। অবশ্য এই দুটি বিষয়ে তিনি পার্লামেন্ট ও ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করেন মাত্র।
(৩) কুটনৈতিক ক্ষমতা ;
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি হলেন। সমগ্র ভারতের প্রধান প্রতিনিধি। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনি বিভিন্ন রাষ্ট্রে | ভারতীয় কূটনৈতিক প্রতিনিধি প্রেরণ করেন। বিদেশি কূটনৈতিক প্রতিনিধিরা | তার কাছে নিজ নিজ পরিচয়পত্র পেশ করেন এবং তিনি তাদের স্বাগত জানান। আবার, পার্লামেন্টের সম্মতিসাপেক্ষে বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে সন্ধি স্থাপন বা চুক্তি সম্পাদনের কার্য তার নামেই সম্পাদিত হয়।
(৪) আইন-সংক্রান্ত ক্ষমতা :
ভারতের রাষ্ট্রপতি পার্লামেন্ট বা কেন্দ্রীয় আইনসভার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
(i) তিনি পার্লামেন্টের অধিবেশন আহ্বান করতে, স্থগিত রাখতে এবং প্রয়ােজনবােধে লােকসভা ভেঙে দিতে পারেন।
(ii) সাধারণ নির্বাচনের পর এবং প্রতি বছরের প্রথম অধিবেশনে তিনি পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেন।
(iii) পার্লামেন্টের যে-কোনাে কক্ষে কিংবা উভয় কক্ষের যৌথ অধিবেশনে তিনি ‘বাণী প্রেরণ করতে এবং ভাষণ দিতে পারেন।
(iv) তিনি রাজ্যসভায় ১২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং লােকসভায় ২ জন ইঙ্গ-ভারতীয় প্রতিনিধি মনােনয়ন করতে পারেন।
(v) পার্লামেন্ট কর্তৃক গৃহীত প্রতিটি বিল ভারতের রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য প্রেরণ করতে হয়। তিনি অর্থবিল ছাড়া অন্য বিলে সম্মতি জ্ঞাপন করতে পারেন কিংবা না-ও পারেন, অথবা পুনর্বিবেচনার জন্য বিলটি ফেরত পাঠাতে পারেন। কিন্তু পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে পুনর্বিবেচনার পর তার সম্মতির জন্য বিলটি প্রেরিত হলে তাতে তিনি সম্মতি দিতে বাধ্য থাকেন। তা ছাড়া, সংবিধান সংশােধনসংক্রান্ত কোনাে বিল পার্লামেন্টে গৃহীত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভের জন্য প্রেরিত হলে তিনি সেই বিলে অসম্মতি জ্ঞাপন করতে পারেন না।
(vi) রাজ্য-বিধানসভায় গৃহীত হওয়ার পর যেসব বিল রাষ্ট্রপতির বিবেচনার্থে রাজ্যপাল প্রেরণ করেন, সেইসব বিলে তিনি সম্মতি জ্ঞাপন করতে পারেন অথবা না-ও পারেন। রাষ্ট্রপতির বিল বাতিল করার ক্ষমতাকে ‘ভিটো ক্ষমতা’ বলা হয়।
(vii) পার্লামেন্টের অধিবেশন বন্ধ থাকাকালে প্রয়ােজন মনে করলে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ’ বা | অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারেন। অবশ্য পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু। হওয়ার দিন থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে এরূপ অধ্যাদেশকে পার্লামেন্ট কর্তৃক অনুমােদিত হতে হয়। তবে অধ্যাদেশ জারি করার ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির ইচ্ছাই শেষ নয়। সে সম্পর্কে আদালতে প্রশ্ন তােলা যেতে পারে।
(viii) বাজেট, অতিরিক্ত বাজেট, অর্থবিল, অর্থ কমিশনের সুপারিশ, কেন্দ্রীয় জনপালন কৃত্যক কমিশনের প্রতিবেদন প্রভৃতি রাষ্ট্রপতির নির্দেশেই কেবল পার্লামেন্টের সম্মুখে উপস্থাপিত হতে পারে।
(ix) কোনাে রাজ্যের সীমানা বা নাম পরিবর্তন, নতুন রাজ্য গঠন, অর্থবিল । উত্থাপন, ভারতের সঞ্চিত তহবিল থেকে অর্থব্যয়ের প্রস্তাব প্রভৃতি সম্পর্কিত বিলের ওপর রাষ্ট্রপতির সুপারিশ বা পূর্বসম্মতি ছাড়া পার্লামেন্টে কোনােরূপ আলােচনা অনুষ্ঠিত হতে পারে না।
(৫) অর্থ-সংক্রান্ত ক্ষমতা :
ভারতের রাষ্ট্রপতির হাতে অর্থ-সংক্রান্ত কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে। ক্ষমতাগুলি হল-
(i) প্রত্যেক আর্থিক বছরের জন্য সরকারের সম্ভাব্য বাজেট বা আয়ব্যয়ের বিবরণ অর্থমন্ত্রীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে উপস্থাপন করেন।
(ii) তার সুপারিশ ছাড়া কোনাে ব্যয়-মঞ্জুরি প্রস্তাব পার্লামেন্টে পেশ করা যায় না।।
(iii) আকস্মিক ব্যয়সংকুলান তহবিল-এর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব তাঁর হাতেই অর্পণ করা হয়েছে।
(iv) রাষ্ট্রপতির পূর্ব সুপারিশ ছাড়া কর, ঋণ প্রভৃতি সম্পর্কিত বিল পার্লামেন্টে উত্থাপন করা যায় না।
(v) কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে রাজস্ব বণ্টনের জন্য প্রতি ৫ বছর অন্তর তিনি একটি অর্থ কমিশন গঠন করেন। রাজস্ব বণ্টন সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশসমূহ পার্লামেন্টের। অনুমােদন লাভ করলেই কেবল কার্যকর হতে পারে।
(৬) বিচার-সংক্রান্ত ক্ষমতা :
ভারতের রাষ্ট্রপতির বিচার-সংক্রান্ত ক্ষমতাগুলি। হল-
(i) সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্ট-এর বিচারপতিগণকে তিনি নিয়ােগ করেন। আবার, পার্লামেন্টের সুপারিশক্রমে তিনি তাদের পদচ্যুতও করতে পারেন।
(ii) তা ছাড়া, অপরাধীকে ক্ষমা প্রদর্শন, দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত ব্যক্তির দণ্ডাজ্ঞা হ্রাস, দণ্ডাজ্ঞা স্থগিত, এমনকী মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত অপরাধীকে ক্ষমা প্রদর্শন কিংবা মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে অন্য শাস্তিবিধানের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে (৭২ নং ধারা)।
(৭) জরুরি অবস্থা জারি-সংক্রান্ত ক্ষমতা :
ভারতের রাষ্ট্রপতি নিম্নলিখিত তিন প্রকার জরুরি অবস্থা ঘােষণা করতে পারেন: .
(ক) জাতীয় জরুরি অবস্থা :
যুদ্ধ, বহিরাক্রমণ কিংবা দেশের মধ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহের ফলে সমগ্র ভারত কিংবা তার কোনাে অংশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে বলে রাষ্ট্রপতি সন্তুষ্ট হলে তিনি সমগ্র দেশে কিংবা তার কোনাে অংশে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘােষণা করতে পারেন [৩৫২ (১) ধারা]।
তবে বর্তমানে ক্যাবিনেটের লিখিত সুপারিশ ছাড়া রাষ্ট্রপতি এরূপ জরুরি অবস্থা ঘােষণা করতে পারেন না [৩৫২ (3) নং ধারা]। | এরূপ জরুরি অবস্থা ঘােষণার বৈধতা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তােলা যায়।
আবার, এরূপ ঘােষণাকে এক মাসের মধ্যে পার্লামেন্টের কাছে উপস্থাপন করতে হয়। পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের মােট সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠের এবং উপস্থিত ও ভােটদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন লাভ করলে জাতীয় জরুরি অবস্থা ৬ মাস পর্যন্ত বলবৎ থাকতে পারে। এর পর প্রয়ােজন মনে করলে পার্লামেন্ট পুনরায় ৬ মাসের জন্য এর মেয়াদ বৃদ্ধি করতে সক্ষম। সর্বাধিক কতদিন পর্যন্ত এরূপ জরুরি অবস্থা বলবৎ থাকতে পারবে, সে বিষয়ে সংবিধানে কোনাে সুস্পষ্ট নির্দেশ নেই। এরূপ জরুরি অবস্থার সময় কেন্দ্রীয় সরকার অস্বাভাবিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
জাতীয় জরুরি অবস্থায়
(i) পার্লামেন্ট রাজ্য-তালিকা ও যুগ্ম-তালিকাভুক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে;
(ii) পার্লামেন্ট লােকসভা এবং রাজ্য-বিধানসভার কার্যকালের মেয়াদ প্রতিবার এক বছর করে বৃদ্ধি করতে সক্ষম;
(iii) শাসনকার্য পরিচালনার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারগুলিকে প্রয়ােজনীয় নির্দেশ দিতে পারে;
(iv) কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে রাজস্ব বণ্টনব্যবস্থা ভারতের রাষ্ট্রপতির নির্দেশে পরিবর্তিত হতে পারে;
(v) সংবিধানের ১৯ (১) নং ধারায় বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলিকে স্থগিত রাখা যায়;
(vi) মৌলিক অধিকারগুলিকে কার্যকর করার জন্য সংবিধানের ৩২ ও ২২৬ নং ধারা অনুসারে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার অধিকারকে সাময়িকভাবে বাতিল করে দেওয়া যেতে পারে; এবং
(vii) পার্লামেন্ট আইন প্রণয়নের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার বা তার পদস্থ কর্মচারী ও কর্তৃপক্ষের হাতে ক্ষমতা প্রদান করতে পারে। তবে ৪৪-তম সংবিধান সংশােধনে বলা হয়েছে যে, জরুরি। অবস্থার সময়েও রাষ্ট্রপতি নির্দেশদানের মাধ্যমে সংবিধানের ২০ ও ২১ নং ধারায় বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলিকে খর্ব করতে পারবেন না। অদ্যাবধি ভারতে, ১৯৬২, ১৯৭১ এবং ১৯৭৫ সালে জাতীয় জরুরি। অবস্থা ঘােষিত হয়েছিল।
(খ) রাজ্যসমূহে সাংবিধানিক অচলাবস্থাজনিত জরুরি অবস্থা :
কোনাে রাজ্যের রাজ্যপালের রিপাের্টের ভিত্তিতে কিংবা অন্য কোনােভাবে যদি রাষ্ট্রপতি ‘সন্তুষ্ট হন যে, সংশ্লিষ্ট রাজ্যে উদ্ভূত বিশেষ পরিস্থিতিতে সংবিধান অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালিত হওয়া সম্ভব নয়, তবে তিনি ওই রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থাজনিত জরুরি অবস্থা ঘােষণা করতে পারেন [৩৫৬ (১) নং ধারা]।
এরূপ জরুরি অবস্থাকে সাধারণভাবে ‘রাষ্ট্রপতির শাসন’ বলে অভিহিত করা হয়। বর্তমানে কোনাে রাজো ‘রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা হলে তার বৈধতা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তােলা যেতে পারে। রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থাজনিত জরুরি অবস্থার সাধারণ মেয়াদ হল ২ মাস। এই সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই। এধরনের ঘােষণাকে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের কাছে পেশ করতে হয়। পার্লামেন্ট কর্তৃক অনুমােদিত হলে তা ৬ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
এইভাবে পার্লামেন্টের অনুমােদন লাভের মাধ্যমে তা ১ বছর পর্যন্ত বলবৎ থাকতে পারে। অবশ্য (a) সমগ্র ভারত কিংবা সংশ্লিষ্ট রাজ্য বা। তার কোনাে অংশে ৩৫২ নং ধারা অনুযায়ী জাতীয় জরুরি অবস্থা বলবৎ থাকলে
এবং (b) সংশ্লিষ্ট রাজ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মতাে অনুকুল পরিবেশ নেই বলে নির্বাচন কমিশন ঘােষণা করলে রাষ্ট্রপতি শাসনের। মেয়াদ সর্বাধিক ৩ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যেতে পারে। তবে কেবল পাঞ্জাবের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি শাসনের মেয়াদ সর্বাধিক ৫ বছর হতে পারে বলে ৬৭-তম সংবিধান সংশােধনী আইনে (১৯৯০) বলা হয়েছে।
কোনাে রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থাজনিত জরুরি অবস্থা ঘােষিত। হলে রাষ্ট্রপতি (i) রাজ্যের শাসন-সংক্রান্ত যাবতীয় বা যে-কোনাে ক্ষমতা নিজের হাতে গ্রহণ করতে, (ii) রাজ্য-আইনসভার যাবতীয় | ক্ষমতা পার্লামেন্টের হাতে অর্পণ করতে, (iii) রাজ্য-বিধানসভা ভেঙে | দিতে এবং (iv) পার্লামেন্টের অনুমােদন সাপেক্ষে ভারতের সঞ্চিত | তহবিল থেকে ওই রাজ্যের ব্যয়-নির্বাহের জন্য অনুমতি দিতে পারেন। .
(গ) আর্থিক জরুরি অবস্থা :
সমগ্র ভারত বা তার যে-কোনাে। অংশের আর্থিক স্থায়িত্ব বা সুনাম বিপন্ন হয়েছে বলে যদি রাষ্ট্রপতি ‘সন্তুষ্ট হন, তাহলে তিনি আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘােষণা করতে পারেন।
তবে এই ধরনের জরুরি অবস্থা ঘােষণা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তােলা | যেতে পারে। এরূপ জরুরি অবস্থা-সংক্রান্ত ঘােষণাটিকে ২ মাসের। মধ্যেই পার্লামেন্টের কাছে পেশ করতে হয়। পার্লামন্টের উভয় কক্ষের সম্মতি লাভের পর এরূপ ঘােষণার মেয়াদ জাতীয় জরুরি অবস্থার মেয়াদের অনুরূপ হয়।
আর্থিক জরুরি অবস্থা চলাকালে (i) কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য-সরকারগুলিকে আর্থিক ব্যাপারে প্রয়ােজনীয় সর্বপ্রকার নির্দেশ দিতে,
(ii) রাজ্যের আর্থিক অবস্থার উন্নতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য-সরকারি কর্মচারীদের, এমনকী সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের বেতন, ভাতা প্রভৃতি হ্রাসের নির্দেশ দিতে এবং
(iii) অর্থবিল-সহ অন্যান্য যে কোনাে বিল রাজ্য-আইনসভা কর্তৃক গৃহীত হওয়ার পর কেন্দ্রীয় সরকার রাষ্ট্রপতির অনুমােদনের জন্য সেগুলিকে সংরক্ষিত রাখার নির্দেশ দিতে পারে।’
(৮) অন্যান্য ক্ষমতা :
(i) বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মাবলি তৈরি করা; ii) রাজ্যের কোনাে একটি বিলে ভারতের রাষ্ট্রপতি পূর্ব-সম্মতি প্রয়ােজন হলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অধ্যাদেশ জারি করার জন্য রাজ্যপালকে নির্দেশ দেওয়া; iii) জনস্বার্থের দিক থেকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কোনাে আইনগত বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ গ্রহণ করা; (iv) অর্থ কমিশন, সরকারি ভাষা মিশন প্রভৃতির মতাে কমিশন নিয়ােগ করা; (v) পার্লামেন্টের সংশােধন মতার অধীনে থেকে যে-কোনাে অঞ্চলকে তফশিলি অঞ্চল কিংবা কানাে তফশিলি অঞ্চলকে অ-তফশিলি অঞ্চল বলে ঘােষণা করা; vi) যে-কোনাে তফশিলি অঞ্চলের সীমানা পরিবর্তন করা।