‘জাকুজ্জি অব ডিসেপেয়ার’ || রহস্যময় সমুদ্র যেখানে গেলে কেউ ফিরে আসেনা!
‘জাকুজ্জি অব ডিসেপেয়ার’
ভৌতিক সিনেমায় অথবা গল্পে অনেক জায়গার কথা শোনা যায়, যেখানে গেলে নাকি কেউ ফিরে আসে না। সেই গল্প দেখে বা শুনে ভয়ে আমাদের গাঁ শিউরে ওঠে। কিন্তু জানেন কি বাস্তবে এমন এক জায়গা রয়েছে যেখানে নাকি কোনো মানুষ বা প্রাণি একবার গেলে আর সত্যি সত্যিই জীবিত ফেরে না। হ্যাঁ, এমন এক সমুদ্র রয়েছে ( ‘জাকুজ্জি অব ডিসেপেয়ার’ ) যেখান থেকে কেউ ফিরতে পারেনা।
মেক্সিকো উপসাগরের তলদেশে একটি স্থান আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা জায়গাটির নাম দিয়েছেন ‘জাকুজ্জি অব ডিসেপেয়ার’। এখানকার জল বেশ গরম এবং বিষাক্তও। মানুষ অথবা কোনো প্রাণি যদি এ জায়গা দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে অবধারিতভাবে সঙ্গে সঙ্গেই তার মৃত্যু ঘটে। জায়গাটি নিয়ে রয়েছে অনেক রহস্য। তবে ঘটনা হল, বিজ্ঞানীরা এর কূল কিনারাও খুঁজে বের করেছেন। এর ফলে জানা যায়, এরকম ঘটে কোনো ভৌতিক বা অলৌকিক কারণে নয়। বিষাক্ত কিছু পদার্থের কারণেই সেখানে গেলে জীবের মৃত্যু ঘটে। ব্যপারটা আরও একটু বিস্তারিত যেনে নিন তাহলে-
২০১৪ সালে রিমোট কন্ট্রোল রোবটের মাধ্যমে একটি সামুদ্রিক প্রবাল দিয়ে পরীক্ষা চালান টেমপল কলেজের জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক ‘এরিক করডেস’। তখন তিনি এই রহস্য জনক হ্রদটির সন্ধান পান। এরপর ২০১৫ সালে জায়গাটি ভালো করে দেখার জন্য তিনি আরো তিন জনকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান।
তিনি সেখানে কী দেখেছিলেন? এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আপনি যখন সমুদ্রের নিচে যাবেন তখন দেখবেন একটি হ্রদ অথবা নদী বয়ে যাচ্ছে। মনে হবে আপনি এই গ্রহে নয়, অন্য কোথাও আছেন। আমরা একটি গিরিখাতের মতো স্থান থেকে এটি দেখছিলাম। আমরা দেখলাম বাধের মতো লবণের স্তরযুক্ত একটি দেয়াল। এটিকে বেগুনি, সাদা ও কালো রঙের অসাধারণ একটি জলাশয় মনে হচ্ছিল।’
ওশানোগ্রাফি নামে একটি জার্নালের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই হ্রদটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩ হাজার ৩০০ ফুট নিচে। ১০০ ফুট এলাকা জুড়ে অবস্থিত এই হ্রদটি ১২ ফুট গভীর। হ্রদটির উষ্ণতা ৬৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট। কিন্তু এর আশেপাশের জলের উষ্ণতা ৩৯ ডিগ্রী ফারেনহাইট। এর তলদেশে দেখা যায় কাঁকড়া মরে পড়ে আছে।
সামুদ্রিক প্রানী মারা যাওয়ার কারন কী?
সামুদ্রিক প্রানী মারা যাওয়ার কারন হিসাবে বিজ্ঞানীদের অনুমান অতিরিক্ত লবণতা। জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক এরিক করডেস জানিয়েছেন, সেখানকার জল উপসাগরের জলের তুলনায় ৪/৫ গুণ বেশি লবণাক্ত পাওয়া গেছে। এই স্থানটিতে কয়েকটি মিশ্র উপাদান রয়েছে যেমন- লবণাক্ত উপাদান, হাইড্রোজেন সালফাইড, তৈলাক্ত ভূগর্ভস্ত আকরিক ও উপসাগরের তলানি ইত্যাদি। এসব উপাদান একসঙ্গে মিশে একটি বিষাক্ত উপাদানে পরিণত হয়েছে। আবার এর নিচ থেকেও মিথেন গ্যাসের নিঃসরণ হয়। যে কারণে এখানে অক্সিজেনের অভাব থাকে। তাই বিষক্রিয়ার কারণে কাঁকড়াসহ যে কোনো প্রাণী সেখানে গেলেই তার মৃত্যু ঘটে অবলীলায়।
আরও বিস্তারিত জানার জন্য ভিডিওটি দেখে নিতে পারেন