পৃথিবীর প্রধান প্রধান তৃণভূমি | দেখে নিন স্থানভেদে তৃণভূমিগুলি নামকরণ

পোস্টটি শেয়ার করুন
3/5 - (2 votes)

পৃথিবীর প্রধান প্রধান তৃণভূমি

পৃথিবীর প্রধান প্রধান তৃণভূমি : অরণ্য একটি পুনর্ভব প্রাকৃতিক সম্পদ। রাষ্ট্রসংঘের ‘খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO 1960) মতে অরণ্য হল– “সেই ধরণের স্বাভাবিক উদ্ভিদের সমাবেশকে অরণ্য বলা হয় যা স্থানীয় জলবায়ু বা জলের বন্টনকে প্রভাবিত করে, পালিত ও বন্যপ্রানীকে আশ্রয় দেয় এবং কাঠ উৎপাদনে সক্ষম”। সাধারনত প্রতি হেক্টর জমির ০.০৫ হেক্টরে একই ধরণের উদ্ভিদের সমাবেশ থাকলে তাকে বনভূমি বলে। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ৩৩.৩৩ % বনভূমি থাকা প্রয়োজন। ভারতে মোট বনভূমির পরিমাণে মধ্য প্রদেশ প্রথম ও শতকরা পরিমান হিসাবে সিকিম প্রথম। বনভূমির গাছ তিন প্রকার- ১) বৃক্ষ ২) গুল্ম ৩) তৃণ।

ভারতীয় রেলের গ্রুপ ডি ও সি পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য এখানে ক্লিক করুন

তৃণভূমি কী?

ক্রান্তীয় ও নাতিশিতোষ্ণ মন্ডলে যেখানে বৃষ্টিপাত বেশ কম (প্রায় ২৫-১০০ সেমি) সেখানে মহাদেশের অভ্যন্তরভাগে স্বল্প বৃষ্টি যুক্ত, শুষ্ক অঞ্চলে বিভিন্ন প্রকার ঘাস দ্বারা নিরবচ্ছিন্ন আচ্ছাদিত ভূভাগকে তৃণভূমি বলা হয়। অবস্থান ও বৈশিষ্ট্যের সাপেক্ষে তৃণভূমি দুই প্রকার-

Join us on Telegram

১) ক্রান্তীয় তৃণভূমি

২) নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমি

চিত্রে দেখতে পাচ্ছেন পৃথিবীর প্রধান প্রধান তৃণভূমিগুলিকে
চিত্রে দেখতে পাচ্ছেন পৃথিবীর প্রধান প্রধান তৃণভূমিগুলিকে

(ক) ক্রান্তীয় তৃণভূমি বা সাভানা (Tropical Grassland or Savana)

ক্রান্তীয় মন্ডলের উভয় গোলার্ধে গড়ে ৫-২০ ডিগ্রি অক্ষরেখার মধ্যে মহাদেশের অভ্যন্তরভাগে চরম প্রকৃতির জলবায়ুতে উজ্জ্বল সবুজ ও রূপালি রঙের দীর্ঘ ও কর্কশ ঘাসে ঢাকা যে প্রকৃতির তৃণভূমি গড়ে ওঠের তাকে ক্রান্তীয় তৃণভূমি অথবা সাভানা বলে।

স্পেনীয় শব্দ Carib Zavana (যার অর্থ তৃণাচ্ছাদিত বৃক্ষহীন প্রান্তর) থেকে এই সাভানা শব্দের উৎপত্তি। 

ক্রান্তীয় তৃণভূমির অবস্থান-

⇒আফ্রিকার গিনি, ঘানা,নাইজেরিয়া,সুদান,কেনিয়া,তাঞ্জানিয়া,মোজাম্বিক ইত্যাদি

⇒দক্ষিণ আমেরিকার কলম্বিয়া ও ভেনেজুয়েলাতে ওরিনকো নদী অববাহিকা অঞ্চল ও আমাজন অববাহিকাতে লক্ষ করা যায়

⇒এছাড়া মেক্সিকো, অস্ট্রেলিয়া, ভারতের গুজরাট ও দক্ষিন মধ্য ভারতে দেখা যায়

সাভানা তৃণভূমি
উষ্ণ ও শুষ্ক ক্রান্তীয় সাভানা জলবায়ু যুক্ত অঞ্চলের সাভানা তৃণভূমি দেখতে পাচ্ছেন।

এক নজরে বিভিন্ন অঞ্চলে ক্রান্তীয় তৃণভূমির স্থানীয় নামকরন

১। ভেনেজুয়েলা——ল্যানোস

২। জিম্বাবোয়ে——-পার্কল্যান্ড

আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন এখান থেকে।

৩। ব্রাজিল———–ক্যাম্পোস

৪। প্যারাগুয়ে——–সেরাডোস

৫। সুদান————সাভানা

৬। অস্ট্রেলিয়া——মিচেল

৭। ইন্দোনেশিয়া—-আলং আলং

৮। কলম্বিয়া——–ল্যানোস

৯। বলিভিয়া——–মন্টানা

১০। আর্জেটিনা—-এল গ্র্যান চাকো

এক নজরে দেখে নিন ক্রান্তীয় তৃণভূমির কিছু তথ্য

১. বিশ্বের বৃহত্তম ক্রান্তীয় তৃণভূমি হল- সাভানা

২. প্রায় ৩-১৫ ফুট লম্বা হাতিঘাস দেখা যায় পার্কল্যান্ড অঞ্চলে।

হাতি ঘাস, পার্কল্যান্ড
চিত্রে দেখতে পাচ্ছেন একপ্রকার ঘাস, এই ঘাস গুলি ৩-১৫ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। এরূপ সুউচ্চ ঘাসবনে হাতি ঢুকলে হাতিকে হারিয়ে গেছে মনে হয় তাই এরূপ ঘাস গুলির নাম দেওয়া হয়েছে হাতি ঘাস

৩. সাভানা অঞ্চলে তিনটি বলয় থাকে যথা- অ) বৃক্ষ সাভানা আ) গুল্ম সাভানা ই) তৃণ সাভানা

৪. ক্রান্তীয় তৃণভূমির বিভিন্ন অংশে ‘প্রাথমিক উৎপাদনের’ পরিমান বিভিন্ন হয়। গড় প্রাথমিক উৎপাদন হল ৯০০ গ্রাম/বর্গমিটার/বছর।

৫. ঘাসগুলি খুব লম্বা হয়। সর্বাধিক দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ মিটার।

৬. ক্রান্তীয় তৃণভূমির প্রধান প্রধান ঘাস হল– হাতি ঘাস, বার্মুডা ঘাস, উলু , কাশ, ক্যাঙ্গারু ঘাস ইত্যাদি।

৭. ক্রান্তীয় তৃণভূমির প্রধান প্রধান উদ্ভিদ হল– বাওবাব, ক্যান্ডেলাব্রা, জ্যাকেলবেরী, জারা, ইউক্যালিপটাস, অ্যাকাসিয়া প্রভৃতি।

৮. ক্রান্তীয় তৃণভূমিতে বিভিন্ন ধরণের জীব-জন্তু দেখা যায়। যেমন- কৃষ্ণসার হরিণ, জিরাফ, হাতি, জেব্রা, উটপাখি, ক্যাঙ্গারু, সিংহ, হায়না, বাঘ প্রভৃতি।

এক নজরে বিভিন্ন মহাদেশে ক্রান্তীয় তৃণভূমি কি নামে পরিচিত দেখে নেওয়া যাক

১। উত্তর আমেরিকা———- দেখা যায় না।

২. ইউরোপ——————-দেখা যায় না।

৩. আফ্রিকা——————-সাভানা, পার্কল্যান্ড

আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন এখান থেকে।

৪. দক্ষিন আমেরিকা———-ল্যানোস, ক্যাম্পোস, এল গ্র্যান চাকো

৫. এশিয়া———————-সাভানা, আলং আলং

৬. ওশিয়ানিয়া—————–মিচেল, ক্যাঙ্গারু

(খ) নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমি বা স্টেপ (Temperature Grassland or Steppe)

উভয় গোলার্ধে ৩০ থেকে ৬০ ডিগ্রির মধ্যে উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলে মহাদেশের অভ্যন্তরভাগে চরম প্রকৃতির জলবায়ুতে নাতি দীর্ঘ ও নরম ঘাসের যে প্রাকৃতিক তৃণভূমি গড়ে ঊঠেছে, তাকে নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমি বা স্টেপ বলে।

নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমির অবস্থান

⇒ইউরেশিয়া তে রাশিয়া, কিরঘিজস্থান, ইউক্রেন, তাজিকিস্তান, মঙ্গোলিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে দেখা যায়।

⇒উত্তর আমেরিকাতে- যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-মধ্য অংশ, কানাডার দক্ষিন মধ্যাংশ অঞ্চলে দেখা যায়।

⇒দক্ষিন আমেরিকাতে আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে তে

⇒আফ্রিকাতে দক্ষিন আফ্রিকার কালাহারি মরুভূমি অঞ্চলে

⇒ওশিনিয়াতে- অস্ট্রেলিয়ার মারে ডার্লিং অববাহিকা অঞ্চলে, নিউজিল্যান্ডের দক্ষিন দ্বীপে ক্যান্টারব্যারি সমভূমিতে।

এক নজরে বিভিন্ন অঞ্চলে নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমির স্থানীয় নামকরন

১. রাশিয়া ও ইউক্রেন———স্টেপ

২. যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা——–প্রেইরি

৩. আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ে—পম্পাস

আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন এখান থেকে।

৪. দক্ষিন আফ্রিকা———–ভেল্ড

৫. অস্ট্রেলিয়া—————-ডাউন্স

৬. হাঙ্গেরি——————-পুস্তাজ

৭. নিউজিল্যান্ড————–তুষোক

এক নজরে দেখে নিন নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমির কিছু তথ্য

১. পৃথিবীর বৃহত্তম নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমি হল- ইউরেশিয়ার স্টেপ।

২. বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমি হল- উত্তর আমেরিকার প্রেইরি

৩. এখানকার প্রধান প্রধান তৃণগুলি হল- ব্লুস্টেম, বাফেলো গ্রাস, লোকো উইড, আলফা আলফা। ফেস্টুকা, স্টিলা, ব্রিজা প্রভৃতি।

৪. দক্ষিন আফ্রিকার ভেল্ড তৃণভূমি ভেরা পালনের জন্য বিখ্যাত।

৫. মধ্য অক্ষাংশের নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমিকে ‘পৃথিবীর শস্যভান্ডার’ বলা হয়।

৬. প্রেইরিকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রুটির ঝুড়ি বলা হয়।

৭. ইউক্র্যানকে ইউরোপের শস্যগোলা বলা হয়।

এক নজরে দেখে নেওয়া যাক তৃণভূমির নামকরনের অর্থ

১. ভেল্ড- এটি একটি ডাচ শব্দ যার অর্থ হল উম্মুক্ত প্রান্তর

২. স্টেপ- স্টেপ হল রাশিয়ান শব্দ যার অর্থ বোঝায় ‘গাছবিহীন তৃণভূমি’

সকল সরকারি চাকরীর পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য এখানে ক্লিক করুন

৩. পম্পাস- এটি পেরুয়ান শব্দ এর অর্থ গাছবিহীন তৃণভূমি।

৪. প্রেইরি- ল্যাটিন শব্দ হল প্রেইরি। যার অর্থ বোঝায় ‘দিগন্ত বিস্তৃত তৃণভূমি’

নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমির অংশ, আফ্রিকার ভেল্ড তৃণভূমির একটি উপবিভাগ “থেমেডো ভেল্ড” এর প্রধান তৃণ- যার নাম “লোহিত তৃণ বা Red grass

লোহিত তৃণ বা Red grass
চিত্র লোহিত তৃণ বা Red grass

একনজরে লোহিত তৃণ
■■■■■■■■■■■■■■■■■■■
★★ এটি ১৫০০-১৭০০ মিটার উচ্চতায় জন্মায়।
★★ বার্ষিক বৃষ্টিপাত দরকার ৬৫০-৭৫০ মিমি।
★★ কৃষ্ণ ও কাদা মৃত্তিকাতে জন্মায়।
★★ প্রধানত আফ্রিকাতে দেখা যায় এগুলি।
★★ এটি সাধারনত গ্রীষ্ম কালে জন্মায় কিন্তু লাল রঙ ধারন ও শক্ত অভঙ্গুর হয় শীতে।
★★ এগুলি দেখতে তীক্ষাগ্র হয়।
★★ এর উচ্চতা ১-১.৫ মিটার।
★★ এই তৃণের স্থানিয় নাম Rooi Gras। যেটি দঃ আফ্রিকাতে বেশি প্রচলিত।
★★ এই তৃণ থেকে বিভিন্ন ধরনের ঔষাধিদ্রব্য তৈরী হয়।

Students Care

স্টুডেন্টস কেয়ারে সকলকে স্বাগতম! বাংলা ভাষায় জ্ঞান চর্চার সমস্ত খবরা-খবরের একটি অনলাইন পোর্টাল "স্টুডেন্ট কেয়ার"। পশ্চিমবঙ্গের সকল বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের এবং সমস্ত চাকুরী প্রার্থীদের জন্য, এছাড়াও সকল জ্ঞান পিপাসু জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিবর্গদের সুবিধার্থে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: স্টুডেন্টস কেয়ার কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত !!