জলপ্লাবনের মধ্যেও আসামের কৃষকদের বন্যা প্রতিরোধী ধান চাষ

পোস্টটি শেয়ার করুন
Rate this post

বন্যা প্রতিরোধী ধান চাষ

সম্প্রতি, আসামের গোলাঘাট জেলার কৃষকরা তাদের ঐতিহ্যবাহী ধান চাষ থেকে সরে এসে, এক নতুন ধরণের অপ্রথাগত বন্যা প্রতিরোধী ধানের প্রজাতি চাষ করেছেন। এর নেপথ্যে রয়েছেন নিতু বোরা’। কে এই নিতু বোরা?

আসামের গোলাঘাট জেলা, দেরগাঁও উন্নয়ন ব্লক বালিদুয়া গ্রামের নিতু বোরা (৪৩ বছর বয়সী) গত কয়েক বছর ধরে জেলা কৃষি অফিস, গোলাঘাটের সাথে যুক্ত প্রগতিশীল কৃষকদের একজন।

২০১৯ সালে তিনি তাঁর নিজের জমিতে অপরিচিত, অপ্রথাগত ‘রঞ্জিত সাব-১ (Ranjit Sub 1), বাহাদুর সাব-১ (Bahadur Sub 1) এবং স্বর্ন সাব-১ (Swarna Sub 1) জাতের ধান চাষ করেছিলেন।

স্বর্ণ সাব-১ ধানের জাতটি “Indian Council of Agricultural Research” ও  “International Rice Research Institute” – ২০০৯ সালে উন্নতীকরন করেছিলেন। এর  পর ২০১৮ সালে রঞ্জিত সাব -১ সহ বন্যা-প্রতিরোধী জাত গুলি পুনরায় উন্নতীকরণ করা হয়েছিল।

Join us on Telegram

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ধানের প্রজাতির নামকরনে ‘সাব (Sub)’ এর অর্থ হল ‘submergence’ বা নিমজ্জিত অর্থাৎ জলের মধ্যে প্রায় দুই সপ্তাহ ডুবে থেকেও এদের বৃদ্ধিতে প্রভাব পরেনা।

আসাম রাজ্য বিপর্যয় পরিচালন কর্তৃপক্ষের মতে, ২২ শে মে থেকে এই বছরের বন্যার ফলে রাজ্যের ৩৩ টি জেলার ২৫ টি জুড়ে ১২৫,০৯৭ হেক্টর জমিতে ফসল, প্রধানত ধানের ক্ষতি হয়েছে।

গোলাঘাট জেলার পশ্চিম ব্রহ্মপুত্র অঞ্চল বালিদুয়া গ্রামে নিতু বোড়ার ০.৯-হেক্টর ধানক্ষেতও বন্যাকবলিত হয়েছিল। তবে আসামের বেশিরভাগ কৃষকের তুলনায় তাঁর রঞ্জিত সাব-1 জাতের ধানের শীষ জলবায়ু সহ্য করেছিল। এবং কম ক্ষয়ক্ষতির কবলে পরেছিল।

এমতবস্থায়, এই বিকল্প প্রজাতির ধানের চাষের সুফল সমগ্র চাষিদের মনে নতুন করে আস্থা জুগিয়েছে। আসামের পশ্চিম ব্রহ্মপুত্র অঞ্চলের প্রায় ৬০ শতাংশ কৃষক এই নতুন প্রজাতির ধানের চাষ শুরু করেছে।

গুরুত্ব-

১) ‘রঞ্জিত সাব-১ (Ranjit Sub 1), বাহাদুর সাব-১ (Bahadur Sub 1) এবং স্বর্ন সাব-১ (Swarna Sub 1) এই তিনটি প্রজাতি প্রায় ১৫দিন জলের নীচে ডুবে থাকলেও নষ্ট হয় না৷ বন্যার জল নেমে যাওয়ার পর আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে৷

২) বন্যা সহিষ্ণু এই ধান প্রতি হেক্টির প্রতি প্রায় ৫ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়৷

৩) আসামের ১,৫০০ কৃষক প্রায় ৯৫০ হেক্টর জমিতে ফসল অঞ্চলে চাষ করেন যা নিয়মিত বন্যার দ্বারা প্রভাবিত হয়। এই উর্বর জমিতে নতুন বন্যা সহিষ্ণু ধান চাষ করা হচ্ছে। সুতরাং, ধানের জাতগুলি বন্যাজনিত ফসলের ক্ষয়ক্ষতি যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস করতে পারবে।

৪) এই জাতগুলি বন্যার ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হলে পুনরায় জন্মে যেতে পারে, তাই সর্বাধিক উত্পাদনশীলতা নিশ্চিত করে।

ভারতের ধানের ফলন সম্পর্কিত কিছু তথ্য-

১) ধান ক্রান্তীয় অঞ্চলের উচ্চ উষ্ণতা (২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের বেশি) ও উচ্চ আদ্রতা যুক্ত এবং বার্ষিক ১৫০ সেমির বেশি বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলের ফসল।

২) ভারতের মোট চাষযোগ্য অঞ্চলের প্রায় এক চতুর্থাংশ অঞ্চলে ধান চাষ করা হয়।

৩) ধান উৎপাদনে অগ্রণী তিনটি রাজ্য হল যথাক্রমে- পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ এবং পাঞ্জাব।

৪) হেক্টরপ্রতি ধান উৎপাদনে অগ্রণী রাজ্য গুলি হল- পাঞ্জাব, তামিলনাডু, হরিয়ানা, অন্ধ্র প্রদেশ, তেলেঙ্গানা, পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা প্রভৃতি।

৫) পশ্চিমবঙ্গে বছরের বিভিন্ন সময়ে তিন প্রকার ধান চাষ করা হয়। যথা- আউশ, আমন এবং বোরো।

৬) পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলাকে ধানের গোলা অ্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।

৭) বিশ্বে ধান উৎপাদনে ভারতের স্থান দ্বিতীয়। চিনের পরেই ভারতের স্থান। সমগ্র বিশ্বের প্রায় ২১.৬ শতাংশ ধান ভারতে উৎপাদিত হয়।

আপনার জন্য আরও রয়েছে পড়ুন

স্টুডেন্টস কেয়ারে লেখা পাঠাতে হলে এখানে ক্লিক করুণ

স্টুডেন্টস কেয়ার মূলত ইউজার জেনারেটেড বা স্টুডেন্টস কেয়ারের পাঠক-লেখকদের তৈরি করা কন্টেন্ট প্রকাশ করছে। আপনি চাইলে ৩০০ বা তার অধীক শব্দের মাঝে যে কোনো পছন্দমত লেখা, ছোট গল্প, সাধারণ জ্ঞান, জানা অজানা তথ্য, কারেন্ট আপডেট, ছাত্র-ছাত্রীদের উপযোগী লেখা, ফিচার স্টুডেন্টস কেয়ারে কন্ট্রিবিউট করতে পারেন। ১-৩ দিনের মাঝে লেখা মানসম্মত হলে তা প্রকাশিত হবে। কন্ট্রিবিউশন কন্টেন্টের জন্য কোনো সম্মানীর ব্যবস্থা নেই। তবে স্টুডেন্টস কেয়ার টিমের কন্টেন্ট রাইটার টিমে যুক্ত হতে এটা আপনাকে সহযোগিতা করবে। লেখা প্রকাশের আগে আমাদের নীতিমালা ভালো করে পড়ে নিন। যে কোনো প্রয়োজনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

Students Care

স্টুডেন্টস কেয়ারে সকলকে স্বাগতম! বাংলা ভাষায় জ্ঞান চর্চার সমস্ত খবরা-খবরের একটি অনলাইন পোর্টাল "স্টুডেন্ট কেয়ার"। পশ্চিমবঙ্গের সকল বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের এবং সমস্ত চাকুরী প্রার্থীদের জন্য, এছাড়াও সকল জ্ঞান পিপাসু জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিবর্গদের সুবিধার্থে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: স্টুডেন্টস কেয়ার কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত !!