ভারতের গণপরিষদ : গঠন, উদ্দেশ্য, অধিবেশন, উল্লেখযোগ্য কমিটি PDF

পোস্টটি শেয়ার করুন
5/5 - (1 vote)

ভারতের গণপরিষদ : গঠন, উদ্দেশ্য, অধিবেশন, উল্লেখযোগ্য কমিটি

গণতান্ত্রিক দেশের সংবিধান জনগণ দ্বারা রচিত ও গৃহিত হয়। জনগণের পক্ষ থেকে সংবিধান রচনার গুরুদায়িত্ব যে সাংবিধানিক কমিটির মাধ্যমে সম্পাদিত হয় তাকে বলে গণপরিষদ (Constituent Assembly)। গণপরিষদের প্রথম স্থায়ী সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদ। আজ আমরা ভারতের গণপরিষদ সম্পর্কে নানা তথ্য জেনে নেবো।


আরও পড়ুন

⇒ গণপরিষদের গঠন

১৯৪৬ সালের ক্যাবিনেট মিশন পরিকল্পনা অনুসারে ৪টি মূলনীতির ভিত্তিতে ভারতীয় গণপরিষদ গঠনের ব্যবস্থা গৃহীত হয়। সেই নীতিগুলি হল—

১। ব্রিটিশ-শাসিত প্রদেশ ও দেশীয় রাজ্যগুলির জনসংখ্যার অনুপাতে গণপরিষদে প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা করা।

২। গণপরিষদের সমস্ত আসন সাধারণ (মুসলমান ও শিখ ছাড়া অন্য সব সম্প্রদায়), মুসলমান ও শিখ— এই তিন সম্প্রদায়ের মধ্যে আনুপাতিক হারে বন্টন করা।

Join us on Telegram

৩। প্রাদেশিক আইনসভা গুলিতে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের সদস্যদের একক হস্তান্তরযোগ্য সমানুপাতিক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নিউজ নিজ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। দেশীয় রাজ্য গুলির লোকসংখ্যার অনুপাত অনুযায়ী গণপরিষদে প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করা।

[আরও পড়ুন- ভারতীয় সংবিধানের সমস্ত ধারা pdf Download Now]

ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী গণপরিষদের মোট সদস্য সংখ্যা ৩৮৯ স্থির করা হয়। ব্রিটিশ-শাসিত প্রদেশগুলি থেকে ২৯২ জন সদস্য গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় (এর মধ্যে মুসলমানদের জন্য ৭৮টি,শিখদের জন্য ৪টি এবং সাধারণের অর্থাৎ মুসলমান ও শিখ ছাড়া অন্য সবসম্প্রদায়ের জন্য ২১০টি আসন নির্দিষ্ট করা হয়)। এ ছাড়া অনধিক ৯৩জন সদস্য দেশীয় রাজ্যগুলি থেকে এবং ৪ জন সদস্য চিফ। কমিশনার-শাসিত প্রদেশগুলি থেকে নেওয়া হবে বলে স্থির করা হয়। যদিও পরবর্তীকালে অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৪৭ সালে গণপরিষদের সদস্য সংখ্যা কমে ২৯৯ হয়, যার মধ্য প্রদেশ গুলি থেকে ২২৯ জন এবং ভারতের রাজ্যগুলি থেকে ৭০ জন প্রতিনিধি ছিলেন। ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী ১৯৪৬ সালের জুলাই মাসে গণপরিষদ গঠনের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। চিফ কমিশনার-শাসিত প্রদেশ গুলোর | ৪টি আসন সমেত ব্রিটিশ ভারত থেকে মোট ২৯৬ জন প্রতিনিধির জন্য গণপরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দলগত বিচারে গণপরিষদ নির্বাচনে কংগ্রেস ২০৮টি আসন, মুসলিম লীগ ৭৩ টি আসন, ইউনিয়নিস্ট পার্টি ১টি, ইউনিয়নিস্ট মুসলিম- ১টি, ইউনিয়নিস্ট সিডিউল কাস্ট- ১টি, কৃষক প্রজা পার্টি- ১টি, সিডিউল কাস্ট ফেডারেশন- ১টি, শিখ (নন কংগ্রেস)- ১টি, কমিউনিস্ট পার্টি- ১টি এবং ইন্ডিপেনডেন্ট- ৮টি আসনে জয়লাভ করে। উপরন্তু, ভারত বিভাগের সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পর মুসলিম লীগের প্রতিনিধি ভারতীয় গণপরিষদ থেকে পদত্যাগ করলে কার্যত পরিষদের কংগ্রেসের প্রাধান্য বহু গুণ বৃদ্ধি পায়।

⇒ ধর্মীয় সম্প্রদায় অনুযায়ী গণপরিষদে প্রতিনিধিত্বকারী সদস্যগণ:

সম্প্রদায়ের নাম

সদস্যগণ

হিন্দু ১৬৩
মুসলিম ৮০
তপশিলি জাতি ৩১
ভারতীয় খ্রিষ্ট্রান
অনগ্রসর উপজাতি
শিখ
ইঙ্গ-ভারতীয়
পার্সী

⇒ ভারতের গণপরিষদের খসড়া কমিটির উত্পত্তি

ভারতীয় সংবিধানের একটি নমুনা বা খসড়া প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে এই খসড়া কমিটি গঠন করা হয়। খসড়া কমিটির হাতে সংবিধানের চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার দায়িত্ব অর্পণ করা হয় ।

ভারতীয় সংবিধানের বিভিন্ন উৎস তালিকা PDF


◊ খসড়া কমিটি কবে গঠিত হয়?

১৯৪৭ সালের ২৯ আগস্ট ড. বি. আর. আম্বেদকরের নেতৃত্বে খসড়া কমিটি গঠিত হয়।

◊ খসড়া কমিটর সভাপতি কে ছিলেন?

ডঃ ভীমরাও রামজি আম্বেদকর ছিলেন ভারতীয় সংবিধানের স্থপতি ।

◊ খসড়া কমিটর কতজন সদস্য ছিল?

মোট ৭ জন সদস্য।  ড. আম্বেডকর ছাড়াও এই কমিটিতে আরও ছয় জন সদস্য ছিলেন। খসরা কমিটি অন্যান্য সদস্য ছিলেন এন. গোপালগোস্বামী আয়েঙ্গার, মহম্মদ সাদুল্লাহ, আল্লাদী কৃষ্ণস্বামী আয়ার, কে. এম মুন্সি, ডি.পি খৈতান ও বি. এল. মিত্র প্রমুখ।

⇒ ভারতের গণপরিষদের উদ্দেশ্য

গণপরিষদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, এমন একটি খসড়া সংবিধান রচনা করা, যা সামাজিক বিপ্লবের চরম লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে। পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর অভিমত ছিল, গণপরিষদের প্রধান কাজ হবে একটি নতুন সংবিধানের মাধ্যমে স্বাধীন ভারতবর্ষের ক্ষুধার্ত ও বস্ত্রহীন মানুষের জন্য অন্নবস্ত্রের সংস্থান করা এবং যোগ্যতা অনুযায়ী প্রতিটি ভারতবাসীআত্মবিকাশের জন্য সর্বাধিক সুযোগের ব্যবস্থা করা। সভাপতি ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদ ঘোষণা করেন, গণপরিষদের লক্ষ্য হবে দেশের সাধারণ নাগরিক দুঃখ দারিদ্র্যের পরিসমাপ্তি ঘটানোর, বৈষম্য ও শোষণের অবসান ঘটানো এবং সুন্দর জীবনযাত্রার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা।


আরও পড়ুন

⇒ গণপরিষদের অধিবেশন সমূহ

অধিবেশনসময়কালকর্মসূচি ও তথ্যাবলি
প্রথম অধিবেশন৯-২৩ ডিসেম্বর ১৯৪৬মুসলিম লীগের সদস্য এই অধিবেশনে যোগদান করেন। ২০৭ জন সদস্য এই অধিবেশনে যোগদান করেছেন। ডক্টর সচ্চিদানন্দ সিনহা এই অধিবেশনে প্রথম অস্থায়ী সভাপতি হন। ১১ ডিসেম্বর ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদকে স্থায়ী সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ১৩ ডিসেম্বর জওহরলাল নেহরু Objective Resolution ঘোষণা করেন এবং ২২ ডিসেম্বর গণপরিষদে তা অনুমোদিত হয়ে। পরবর্তীকালে এই ঘোষণা সংবিধানের প্রস্তাবনায় রূপ পায়।
দ্বিতীয় অধিবেশন২০-২৫ জানুয়ারি ১৯৪৭এই অধিবেশনে হরেন্দ্র কুমার মুখোপাধ্যায় গণ পরিষদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। রাজেন্দ্র প্রসাদের নেতৃত্বে পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়। জওহরলাল নেহেরু সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় ক্ষমতা কমিটি" গঠিত হয়। সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে সংখ্যালঘু অধিকার ও মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত কমিটি’ এবং বি এন রাও-এর সভাপতিত্বে উপদেষ্টা কমিটি' গঠিত হয়।
তৃতীয় অধিবেশন২৮ এপ্রিল – ২ মে ১৯৪৭জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সাংবিধানিক কমিটি এবং সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের সভাপতিত্বে ‘প্রাদেশিক সাংবিধানিক কমিটি গঠিত হয়।
চতুর্থ অধিবেশন১৪-৩১ জুলাই ১৯৪৭২২ জুলাই ভারতের জাতীয় পতাকা সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য একটি অস্থায়ী কমিটি গঠিত হয়। ২৬ জুলাই পাকিস্তানের জন্য পৃথক গণপরিষদ ঘোষণা করা হয়।
পঞ্চম অধিবেশন১৪-৩০ আগষ্ট ১৯৪৭পঞ্চম অধিবেশনের সময় থেকে ভারতীয় গণপরিষদ ‘স্বাধীনতা আইন অনুযায়ী সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন। পরিষদের মর্যাদা অর্জন করে। সংবিধান রচনা করার পাশাপাশি আইনসভা হিসেবে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। পালন করে থাকে। এই অধিবেশনের শুরুতে লর্ড মাউন্টব্যাটেন স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল এবং পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু কে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করা হয়। এছাড়া কেন্দ্রীয় আইনসভা হিসেবে গণপরিষদের প্রথম অধ্যক্ষ নির্বাচিত হন জি ভি মাভলঙ্কার। খসড়া সংবিধান প্রণয়নের জন্য বি আর আম্বেদকরের সভাপতিত্বে খসড়া কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির অন্যান্য সদস্য ছিলেন- কৃষ্ণস্বামী আইয়ার, এন গোপালাস্বামী আইয়েঙ্গার, কে এম মুন্সি, সৈয়দ মহম্মদ শাহেদুল্লাহ, বি এল মিত্র এবং ডি পি খৈতান। পরবর্তীকালে ডি পি খৈতান ও বি এল মিত্রের জায়গায় টি টি কৃষ্ণ ব্রহ্মচারী এবং এন মাধব রাও নির্বাচিত হন।
ষষ্ঠ অধিবেশন২৭ জানুয়ারি ১৯৪৮কেবলমাত্র ১ দিনের জন্য এই অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। খসড়া কমিটি প্রথম সংবিধানের খসড়াটি ১৯৪৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এবং দ্বিতীয় খসড়াটি ১৯৪৮ সালের অক্টোবর মাসে প্রকাশ করবে বলে। সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল।
সপ্তম অধিবেশন৪ নভেম্বর ১৯৪৮ – ৮ জানুয়ারি ১৯৪৯এটি গণপরিষদের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন অধিবেশন, যা ৬৬ দিন ধরে চলেছিল।
অষ্টম অধিবেশন১৬ মে-১৬ জুন ১৯৪৯---
নবম অধিবেশন৩০ জুলাই- ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৯---
দশম অধিবেশন৬-১৭ অক্টোবর ১৯৪৯---
একাদশ অধিবেশন১৪-২৬ নভেম্বর ১৯৪৯১৪ নভেম্বর থেকে সংবিধানের তৃতীয় পাট শুরু হয়েছিল। ২৬ নভেম্বর, ১৯৪৯ ভারতের সংবিধান গণপরিষদে পাশ হয়েছিল। নাগরিকতা, নির্বাচন, প্রাদেশিক পার্লামেন্ট এবং কিছু ধারা- ৫৯, ৬০, ৩২৪, ৩৬৬, ৩৭২, ৩৭৯, ৩৮, ৩৯১, ৩৯২ এবং ৩৯৩ নং ধারাগুলি ২৬ নভেম্বর, ১৯৪৯ থেকে কার্যকরী হয়। সংবিধানের বাদ বাকি বৃহৎ অংশগুলি ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে কার্যকরি হয়েছিল।

⇒ গণপরিষদের উল্লেখযোগ্য কমিটি সমূহ ও চেয়ারম্যানের নাম

সংবিধান রচনার উল্লেখযোগ্য ক্রিয়াকর্মের জন্য গণপরিষদ বিভিন্ন কমিটি গঠন করেছিল। কমিটিগুলি সাধারণত দুটি ভাগে বিভক্ত (১) মেজর কমিটি, (২) মাইনর কমিটি। সমস্ত কমিটিগুলির মধ্যে ৮টি মেজর কমিটি এবং বাদ বাকিগুলি মাইনর কমিটি। নীচে এই কমিটির নাম এবং চেয়ারম্যানের নাম দেওয়া হল—

ভারতের গণপরিষদের উল্লেখযোগ্য কমিটি ও চেয়ারম্যান তালিকা PDF


⇒ ভারতের গণপরিষদ : PDF Download Now

[আরও পড়ুন- ভারতের সংবিধানের বই ডাউনলোড করুণ]


Constituent Assembly of India in bengali pdf, ভারতের গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন কোথায় বসে, ভারতের গণপরিষদ কবে গঠিত হয়, ভারতের গণপরিষদের সদস্য সংখ্যা কত, গণপরিষদ কাকে বলে, ভারতের গণপরিষদের গঠন, ভারতীয় সংবিধানের সমস্ত ধারা pdf, গণপরিষদের মোট সদস্য সংখ্যা কত, ভারতের সংবিধানের জনক

Students Care

স্টুডেন্টস কেয়ারে সকলকে স্বাগতম! বাংলা ভাষায় জ্ঞান চর্চার সমস্ত খবরা-খবরের একটি অনলাইন পোর্টাল "স্টুডেন্ট কেয়ার"। পশ্চিমবঙ্গের সকল বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের এবং সমস্ত চাকুরী প্রার্থীদের জন্য, এছাড়াও সকল জ্ঞান পিপাসু জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিবর্গদের সুবিধার্থে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।  

2 thoughts on “ভারতের গণপরিষদ : গঠন, উদ্দেশ্য, অধিবেশন, উল্লেখযোগ্য কমিটি PDF

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: স্টুডেন্টস কেয়ার কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত !!