১২টি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক আবিষ্কার || 12 important Geographical Discoveries

পোস্টটি শেয়ার করুন
Rate this post

ভৌগোলিক আবিষ্কার

12 important Geographical Discoveries

নমস্কার সকলকে। পৃথিবীতে মানবজাতি আসার পর থেকেই মানুষের প্রখর বুদ্ধিবলে নানারকম বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সাক্ষী আমরা থেকেছি। যুগের পর যুগ ধরে নানান কৃতকার্য দেখিয়ে চলেছে এই মানবজাতি। আমরা এর আগে জেনেছি পৃথিবীর নানান গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ও আবিষ্কারকের সম্পর্কে আজ গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক আবিষ্কার সম্পর্কে জেনে নেবো। আমাদের ফেসবুক পেজটি লাইক করে রাখুন প্রতিনিয়ত আপডেট পাওয়ার জন্য

পরিচ্ছেদসমূহ

১. পৃথিবীর তরল কেন্দ্রমন্ডল আবিষ্কার (১৯০৬)

রিচার্ড ডিক্সন ওল্ডহাম (১৮৫৮-১৯৩৬) জিনি একজন ভূতত্ত্ববিদ এবং ভূমিকম্পবিদ ছিলেন। জন্মগ্রহণ করেছিলেন ভারতে ১৮৫৮ সালে। তিনি মাত্রা ২১ বছর বয়সে জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়াতে নিযুক্ত হন। এর পর ১৮৯৭ সালে আসাম ভূমিকম্পর ওপর গবেষণা করে বিশ্বজগতের সুনামের শিরোনামে আসেন।

পৃথিবীর তরল কেন্দ্রমন্ডল আবিষ্কার
পৃথিবীর তরল কেন্দ্রমন্ডল আবিষ্কার

তাঁর সবচেয়ে কৃতিত্বের আবিষ্কার হল ‘ভূকম্প তরঙ্গের’ মাধ্যমে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ স্তরভাগ নির্নয়ের প্রথা আবিষ্কার। এই পদ্ধতির মাধ্যমে তিনি বলেন, “পৃথিবীর অভ্যন্তরে একটি তরল স্তর রয়েছে, যার নাম Core বা কেন্দ্রমন্ডল”। ভূকম্পনবিদ রিচার্ড ওল্ডহ্যাম নির্ণয় করেন, ভূত্বকের তুলনায় পৃথিবীর কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ভূমিকম্পের তরঙ্গ অনেক ধীর গতিতে প্রবাহিত হয়। এ থেকে তিনি সারাংশে পৌঁছেন যে, পৃথিবীর কেন্দ্রভাগ তরল পদার্থে গঠিত। এর পরবর্তীকালে এই সম্পর্কিত যে যে আবিষ্কারগুলি হয়েছে সেগুলি একটি তালিকারে দেওয়া হল-

অ) ভূত্বক ও গুরুমন্ডল এর মধ্যে সীমানা আবিষ্কার (১৯০৯)-

১৯০৯ সালে অ্যানড্রিজা মোহোরোভিসিক (১৮৫৭-১৯৩৬) ক্রোয়েশিয়ার কুলপা উপত্যকায় ভূমিকম্পের পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে ভূ-ত্বক ও গুরুমন্ডলের মাঝে একটি বিযুক্তিরেখা বা সীমানার প্রমাণ দেখান। যেটি বর্তমানে মোহো বিযুক্তি বা M বিযুক্তি নামে পরিচিত।

Join us on Telegram
পৃথিবীর অভ্যন্তরীন স্তরবিন্যাস
পৃথিবীর অভ্যন্তরীন স্তরবিন্যাস

আ) কেন্দ্রমন্ডলের সীমানা আবিষ্কার (১৯১২)-

ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৯০০ কিমি গভীরতায় ভূমিকম্প তরঙ্গের বেগ হঠাৎ করে কমে যায়, এবং S তরঙ্গ ওই গভীরতার পর আর পৌঁছাতেই না পেরে প্রতিফলিত হয়ে যায় ও P তরঙ্গের গতি হ্রাস পায় তার সাথে প্রতিসরণ ঘটে। ফলে ১৯১২ খ্রীষ্টাব্দে বেনো গুটেনবার্গ একটি বিযুক্তি রেখার ধারনা দেন, যে বিযুক্তি রেখাটি কেন্দ্রমন্ডল ও গুরুমন্ডলকে বিভক্ত করে। বিযুক্তি রেখাটি বর্তমানে গুটেনবার্গ বিযুক্তি রেখা নামে পরিচিত।

ই) তরল কেন্দ্রমন্ডলের ধারণা (১৯২৬)-

হারল্ড জাফরিস (১৮৯১-১৯৮৯) দেখান যে কোর বা কেন্দ্রমন্ডল তরল। তিনি স্থির করেছেন যে পৃথিবীর কেন্দ্র একটি তরল অবস্থায় বড় বড় পাথর এবং ধাতু দ্বারা গঠিত। তিনি ভূমিকম্পের ডেটার সাথে কাজ করে এবং ভূতাত্ত্বিক তরঙ্গ ভ্রমণের অনেক সারণি তৈরি করেছেন, যা আজও ভূমিকম্পের কেন্দ্র ও গভীরতা নির্ধারণে ব্যবহৃত হচ্ছে।

২. অন্তঃকেন্দ্রমন্ডল আবিষ্কার (১৯৩৬)-

১৯৩৬ সালে পৃথিবীর অন্তঃকেন্দ্রমন্ডল আবিষ্কার করেন ইঙ্গে লেহমান। তিনিই প্রথম বলেছিলেন ভূমিকম্পের কিছু তরঙ্গ পৃথিবীর কেন্দ্রভাগের একেবারে গভীর অঞ্চল ভেদ করে যেতে পারে না বরং প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে। এ থেকে বোঝা যায়, পৃথিবীর মূল কেন্দ্র কঠিন লৌহ দিয়ে গঠিত। এই লৌহ কেন্দ্রের চারপাশে তরল লোহার একটি স্তর আছে। তিনি বলেন পৃথিবীর কেন্দ্রমণ্ডল দুটি স্তরে বিভক্ত এবং অভ্যন্তর ভাগ তরল নয় বরং কঠিন। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে অনুমান করা হয় যে, পৃথিবীর কেন্দ্রে রয়েছে কঠিন লোহ এবং অত্যন্ত সুদৃঢ় অবস্থায় রয়েছে। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে এই বিষয়ে বিজ্ঞানীর নিশ্চিত হন। ৫১৫০ কিমি গভীরে অবস্থির কেন্দ্র মন্ডলকে দুই ভাগে বিভক্তকারী স্তরটিকে বলা হয় লেহমান বিযুক্তিরেখা।

পৃথিবীর অন্তঃকেন্দ্রমন্ডল আবিষ্কার করেন ইঙ্গে লেহমান
পৃথিবীর অন্তঃকেন্দ্রমন্ডল আবিষ্কার করেন ইঙ্গে লেহমান

এছাড়াও ১৯৫০-৬০ এর দশকে তিনি গুরুমন্ডল স্তর নিয়ে গবেষণাকালীণ ১৩০ থেকে ২২০ কিমি গভীরতার মধ্যে একটি low velocity স্তরের সন্ধান পান। যেখানে ভূকম্প তরঙ্গগুলির গতিবেগ কমে যায়।

৩. মহীসঞ্চরণ তত্ত্ব (১৯১২)

মহীসঞ্চরণের পুরানো ধারণাগুলির সাপেক্ষে, জার্মান আবহবিদ ‘আলফ্রেড ওয়েগনার’ বিশ্বব্যাপী বর্তমান জলবায়ু ও অতীত জলবায়ুর অনুসন্ধান করতে ১৯১২ সালে তাঁর ধারণা ব্যক্ত করেণ। যেটি ১৯১৫ সালে জার্মান ভাষায় লিখিত “Die Entstenhung Kontinente and Ozeane” নামক বইতে প্রথম প্রকাশ পায়। এরপর ১৯২২ সালে বইটি সংশোধিত করেন এবং ১৯২৪ সালে ইংরাজি অনুবাদ “The Origin of Continent and Ocean” প্রকাশিত হয়।

মহীসঞ্চরণ তত্ত্ব (১৯১২)
মহীসঞ্চরণ তত্ত্ব (১৯১২)

Alfred Wegener প্রস্তাব করেন, প্রায় ২৮-৩৪ কোটি বছর আগে কার্বনিফেরাস উপযুগে, বর্তমান দক্ষিন গোলার্ধের মধ্যভাগে, আফ্রিকাকে কেন্দ্রকরে পৃথিবীর সমস্ত মহাদেশীয় অংশকে নিয়ে একটি বিশাল ভূ-খন্ড ছিল, যার নাম দেন ‘প্যাঞ্জিয়া’ এবং এর চারিদিকে একটি মহাসাগর ছিল যেটি ‘প্যান্থালাসা’ নামে পরিচিত। পরবর্তীতে “মহাদেশীয় বিচ্যুতি” নামক প্রক্রিয়ায় এরা পৃথক হয়ে যায়। দক্ষিণ আমেরিকার সাথে আফ্রিকার খাপে খাপে মিলে যাওয়া, জীবাশ্মের বণ্টন এবং ভূতাত্ত্বিক সাদৃশ্যের মাধ্যমে তিনি এটা প্রমাণ করেন।

৪. সমুদ্রতলের বিস্তৃতি তত্ত্ব (১৯৬০)-

১৯৬০ সালে মার্কিন অধ্যাপক হ্যারি হ্যামন্ড হেস সমুদ্রবক্ষ বিস্তৃতির ধারণা ব্যক্ত করেন এবং ১৯৬২ সালে “History of Ocean Basin” নামক বইতে এই তত্ত্বটি প্রকাশ করেন।

সমুদ্রতলের বিস্তৃতি তত্ত্ব (১৯৬০)
সমুদ্রতলের বিস্তৃতি তত্ত্ব (১৯৬০)

সমুদ্রতলের গভীরতা পরিবর্তন এবং অন্যান্য ভূতাত্ত্বিক আবিষ্কার থেকে পাওয়া উপাত্ত একসাথে করে Harry Hess প্রস্তাব করেন, Wegener কর্তৃক প্রস্তাবিত মহাদেশীয় বিচ্যুতির কারণ হচ্ছে সমুদ্রতলের বিস্তৃতি। তিনি প্রকল্পায়িত করেন, “গ্রেট গ্লোবাল রিফ্ট”-এর (বর্তমানে “মিড-ওশ্যান রিজ”) প্লেটগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে ভূত্বকের নিচ থেকে গলিত ম্যাগমা চুইয়ে চুইয়ে উঠছে। এই উত্তপ্ত ম্যাগমা শীতল হয়ে রিফ্ট থেকে প্লেটগুলোকে দূরে ঠেলে দিতে থাকে এবং মাঝখানে নতুন ভূত্বকের সৃষ্টি হতে থাকে। এর ফলে আটলান্টিক মহাসাগরের প্রস্থ দিন দিন ২সেমি/বছর হারে বাড়তে থাকে। এই হিসাবে আটলান্টিক মহাসাগরের নতুন ভূত্বকের বয়স ২০ কোটি বছর।

৫. প্লেট টেক্টোনিক (১৯৬০-এর দশক)

“পাত-সংস্থান বা পাত গাঠনিক” কথাটির ইংরেজি প্রতিশব্দ “Plate Tectonics Theory”।এখানে “Plate”-মানে “পাত” ও “Tectonics”(গ্রীক শব্দ ‘Tecton’ থেকে এসেছে) মানে হল “গঠনকারী”। এবং “Theory”-শব্দের অর্থ হল “তত্ত্ব”।

পাত সংস্থান তত্ত্বটি “মহীসঞ্চরণ তত্ত্ব” ও “সমুদ্রবক্ষের বিস্তৃতি” তত্ত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু ১৯৬৫ সালে কানাডার ভূ-পদার্থবিদ “জে. তুজো উইলসন” “নেচার” পত্রিকায় সর্বপ্রথম “পাত বা Plate” কথাটি ব্যাবহার করেন। এরপর কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি. পি. ম্যাকাঞ্জি ও আর. এস. পার্কার ১৯৬৭ সালে ‘পাতের চলন’ সম্পর্কে ধারনা দেন। এর পরবর্তী সময়ে মরগান এই তত্ত্বের ব্যাখ্যা করেছিলেন, কিন্তু ১৯৬৮ সালে ‘Le Pichon’ পাত সংস্থান তত্ত্ব সংক্রান্ত সকল বিষয় খুব সহজ ভাবে সর্বাধুনিক ব্যাখ্যা করে জনসমক্ষে তত্ত্বটির গ্রহনযোগ্যতা বৃদ্ধি করেন । তাই পিঁচো কে “পাত সংস্থান তত্ত্বের জনক” বলা হয়ে থাকে।

পাত সংস্থান তত্ত্ব
পাত সংস্থান তত্ত্ব

বিজ্ঞানীদের গবেষণায় প্রমাণিত হয়, পৃথিবীর পৃষ্ঠতল, পরষ্পরের সাথে যুক্ত বেশ কয়েকটি শিলা প্লেটে বিভক্ত করা যায়। পৃথিবীর সর্ববহিঃস্থ স্তর লিথোমণ্ডল-কে অন্তত ৭টি বড় বড় দৃঢ় টুকরোয় ভাগ করা যায়। এই টুকরোগুলো ভিন্ন ভিন্ন দিকে ভিন্ন ভিন্ন গতিতে (বছরে ১-৪ ইঞ্চি) চলাচল করছে এবং পরষ্পরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। ফলে একে অপরকে টানছে এবং তাদের ঘর্ষণে ক্ষয়ও হচ্ছে। প্লেটের সীমানায় সংঘটিত এই ঘটনাগুরোর কারণেই পাহাড়, আগ্নেয়গিরি এবং ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। পৃথিবীর সেরা ভৌগোলিক আবিষ্কার গুলির মধ্যে পাত সংস্থান তত্ত্ব প্রথম সারিতে থাকবে।

৬. বায়ুমণ্ডলের স্তর আবিষ্কার (১৯০২)

ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ঊর্ধ্বদিকে ১০,০০০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত অংশে গ্যাস, সূক্ষ্ণ ধূলিকণা ও জলীয়বাষ্পের যে অদৃশ্য গ্যাসীয় আবরণ পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে এবং পৃথিবীর সঙ্গে আবর্তিত হয়ে চলেছে, তাকে বায়ুমন্ডল বলে। প্রাচীন কালে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল পৃথিবীর উপরের বায়ুমণ্ডলে একটি মাত্র স্তর আছে । কিন্তু এই ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করেন এক ফরাসি আবহবীদ। ফরাসি বিজ্ঞানী লিয় ফিলিপ তেসারেন্স দ্য বোরত প্রথম বায়ুমন্ডলের স্তর আবিষ্কার করেছিলেন

লিয় ফিলিপ তেসারেন্স দ্য বোরত প্রথম এত উঁচুতে বেলুন পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলেন
লিয় ফিলিপ তেসারেন্স দ্য বোরত প্রথম এত উঁচুতে বেলুন পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলেন

১৯০২ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী লিয় ফিলিপ তেসারেন্স দ্য বোরত পরীক্ষার মাধ্যমে দেখালেন যে বায়ুমণ্ডলে অন্তত দু’টো স্তর আছে যাদের নাম তিনি রেখেছিলেন ট্রোপোস্ফিয়ার এবং স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার।

♣ বায়ুমণ্ডলের স্তর আবিষ্কারের ইতিহাস-

লিয় ফিলিপ ১৮৫৫ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন। ফিলিপ কাজ করতেন প্যারিসের ব্যুরো সেন্ট্রাল মেটিওরলোজি্তে । কর্মরত অবস্থায়, গ্যাস বেলুনের সাথে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নিয়ে (গরম বায়ু এবং গ্যাস যুক্ত) গবেষণার জন্য আকাশের ওপরের স্তরে যাওয়ার চেষ্টা করলেন, কিন্তু মাত্র ৫ কিলোমিটার ওঠার পর অক্সিজেনের অভাবে তাঁকে ফিরে আসতে হয়।

লিয় ফিলিপ তেসারেন্স দ্য বোরত প্রথম বায়ুমন্ডলের স্তর আবিষ্কার করেছিলেন
লিয় ফিলিপ তেসারেন্স দ্য বোরত প্রথম বায়ুমন্ডলের স্তর আবিষ্কার করেছিলেন

এর পর, ১৮৯৫ সালে কাজ ছেড়ে দেন, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় পুরো সময় নিয়োজিত করার জন্য। বায়ুমণ্ডল থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্য বেশ কিছু সূক্ষ্ম পরিমাপ যন্ত্র বেলুন-সহযোগে পাঠাতেন একটি বিশেষ ভাবে নির্মিত হ্যাঙ্গার থেকে এবং তার দ্বারা এমন উঁচুতে যেতে পেরেছিলেন যা আগে কখনও হয়নি। ২৩৪ টির মত বেলুন পাঠিয়েছিলেন তিনি। সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে তিনি দেখলেন বায়ুমণ্ডলে পৃথিবীর উপরে ১১ কিলোমিটার পর্যন্ত তাপমান নিয়মিত ভাবে কমে যায়; তার উপরে তাপমান স্থির থাকে। তিনি তখন বায়ুমণ্ডলকে দু’টো স্তরে বিভক্ত করার প্রস্তাব করেন, যাদের নাম দেন : ট্রোপোস্ফিয়ার এবং স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার। পরবর্তীকালে অবশ্য আরও কয়েকটি স্তর যুক্ত করেন : মেসোস্ফিয়ার, থার্মোস্ফিয়ার এবং এক্সোস্ফিয়ার। এছাড়া আরও একটি স্তর রয়েছে যার নাম ম্যাগনেটোস্ফিয়ার।

৭. ভূ-উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্ব উষ্ণায়ন (বিংশ শতকের শেষাংশ)

গ্লোবাল ওয়ার্মিং
গ্লোবাল ওয়ার্মিং

গ্লোবাল ওয়ার্মিং শব্দটি প্রথম কে ব্যবহার করেছিলেন এই নিয়ে নানান বিতর্ক থাকলেও, নাসার মতে বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং শব্দটি ব্যবহার হয়েছিল- ১৯৭৫ সালে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যামমন্ট-ডোহার্টি ভূতাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণভিত্তিক ভূ-রসায়নবীদ “ওয়ালেস ব্রোকারের” বিজ্ঞান নিবন্ধে: “আবহাওয়া পরিবর্তন: আমরা কি বিশ্বে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের তীরে আছি?” (তথ্য সূত্র- Wallace Broecker, “Climatic Change: Are We on the Brink of a Pronounced Global Warming?” Science, vol. 189 (8 August 1975), 460-463.)

“Climatic Change: Are We on the Brink of a Pronounced Global Warming?”

বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর পৃষ্ঠতলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটি ঝোঁক লক্ষ্য করেন। তারা “গ্রিনহাউজ গ্যাস” এর ঘনত্ব বৃদ্ধিকে এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। ভৌগলিক উষ্ণায়ন তত্ত্ব বলে, উনবিংশ শতকের শেষাংশ থেকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির কারণ মানুষ নিজেই। কল-কারখানা থেকে উচ্চ মাত্রায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীল তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ সকল গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ অব্যাহত থাকলে তাপমাত্রা বাড়তেই থাকবে।

৮. মহাজাগতিক বিকিরণ আবিষ্কার (১৭ এপ্রিল, ১৯১২)

মহাজাগতিক বিকিরণ আবিষ্কার
মহাজাগতিক বিকিরণ আবিষ্কার

১৯১২ সালের ১৭ এপ্রিল Victor Hess মহাজাগতিক বিকিরণ আবিষ্কার করেন। ওই বছরেই Victor Hess একটি উষ্ণ বায়ু বেলুনে (অক্সিজেন ছাড়া) চড়ে ১৭,৫০০ ফুট ভ্রমণ করে সিদ্ধান্তে আসেন যে, উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বিকিরণের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। আরও পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন, এই বিকিরণ মহাশূন্য থেকে আসছে। বর্তমানে আমরা জানি মহাজাগতিক বিকিরণের মূল অংশ হচ্ছে প্রোটন, সে হিসেবে তাদের ধনাত্মক আধান আছে।

৯. চৌম্বক ক্ষেত্র বিপর্যাস (১৯০৬)

চৌম্বক ক্ষেত্র বিপর্যাস
চৌম্বক ক্ষেত্র বিপর্যাস

Bernard Brunhes (১৮৬৭-১৯১০) আবিষ্কার করেন, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র তার দিক পরিবর্তন করে নিজেকে উল্টিয়ে ফেলেছে। ১৩ মিলিয়ন বছর আগের মায়োসিন লাভার প্রবাহ জমাট বেঁধে তৈরী হওয়া মাটির “প্যালিওম্যাগনেটিক” পরীক্ষা করে তিনি এই আবিষ্কার করেন। এর প্রায় ৫০ বছর পর বিজ্ঞানী মহলে তার আবিষ্কার স্বীকৃতি পায়।

১০. ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তন (১৮৩০-এর দশক)

ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তন
ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তন

চার্লস লায়েল তার বহু খণ্ডের “Principles of Geology: An Attempt to Explain the Former Changes of the Earth’s Surface by Reference to Causes Now in Operation” (১৮৩০ ও ১৮৩৩ সালে প্রকাশিত) গ্রন্থে প্রমাণ করে দেখান যে, পৃথিবী ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি তখন পর্যন্ত বিতর্কিত “ইউনিফর্মিটারিয়ানিজ্‌ম”-কে সমর্থন করেন। এই তত্ত্বে বলা হতো, পৃথিবী বেশ কয়েক ধাপে ধীর বিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমান অবস্থায় উপনীত হয়েছে। সে সময় বাইবেল বর্ণীয়ত “ক্যাটাস্ট্রফিজ্‌ম” বেশি গ্রহণীয় ছিল।

১১. তেজস্ক্রিয়ামিতিক তারিখ নির্ণয় (১৯০৭)

তেজস্ক্রিয়ামিতিক তারিখ নির্ণয়
তেজস্ক্রিয়ামিতিক তারিখ নির্ণয়

Bertram Boltwood কোন পাথরের তেজস্ক্রিয় ক্ষয় পরিমাপের মাধ্যমে তার বয়স গণনার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তার হিসাবে পৃথিবীল বয়স দাড়ায় ২.২ বিলিয়ন বছর। এই বয়স সে সময়ে গৃহীত বয়সের তুলনায় অনেক অনেক বেশী ছিল। বর্তমানে অবশ্য আমরা জানি, পৃথিবীর প্রকৃত বয়স এরও দ্বিগুণ। কার্বন-১৪ সহ বেশ কয়েকটি তেজস্ক্রিয় পদার্থের মাধ্যমে Boltwood এর গণনা কার্যকর করা যায়। ঐতিহাসিক বস্তুর বয়স নির্ণয়ে সাধারণত কার্বন-১৪ ই ব্যবহার করা হয়।

১২. পর্যাবৃত্ত বরফ যুগ (১৯৩০-এর দশক)

পর্যাবৃত্ত বরফ যুগ
পর্যাবৃত্ত বরফ যুগ

সার্বীয় জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী Miultin Milankovitch দীর্ঘমেয়াদী জলবায়ু পরিবর্তন এবং বরফ যুগের সাথে পৃথিবীর গতির সম্পর্ক স্থাপন করে একটি তত্ত্ব দেন। ঋতু ও অক্ষাংশের ভিত্তিতে সৌর বিকিরণের পরিবর্তন পরিমাপের মাধ্যমে তিনি জলবায়ুর এই গাণিতিক তত্ত্ব দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, পৃথিবী-সূর্য জ্যামিতি যেমন কক্ষপথের আকার বা অক্ষের কোণ ইত্যাদির বৃত্তীয় পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীতে আগত সৌর শক্তির তারতম্য ঘটে। এটিও অন্যতম ভৌগোলিক আবিষ্কার ।

© কপি রাইট- স্টুডেন্টস কেয়ার™ দ্বারা সংরক্ষিত। অনুমতি ব্যাতীত কপি করা নিষিদ্ধ

তথ্য সূত্র-

The Science Channel’s 100 Greatest Discoveries

http://www.saveourenvironment.ca

এখন আপনিও হতে পারেন স্টুডেন্টস কেয়ারের লেখক

আমাদের ব্লগে যদি কোনো লেখক লেখা পাঠাতে চান তাহলে আমাদের নীতিমালা অনুসরণ করে আমাদের Privecy Policy – অনুসারে লেখা পাঠানোর জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন।

ট্যাগ- ভৌগোলিক আবিষ্কার , পৃথিবীর সেরা আবিষ্কারগুলি, ভূগোলের নানান আবিষ্কার, নানান ভৌগোলিক আবিষ্কার কাহিনী,

Students Care

স্টুডেন্টস কেয়ারে সকলকে স্বাগতম! বাংলা ভাষায় জ্ঞান চর্চার সমস্ত খবরা-খবরের একটি অনলাইন পোর্টাল "স্টুডেন্ট কেয়ার"। পশ্চিমবঙ্গের সকল বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের এবং সমস্ত চাকুরী প্রার্থীদের জন্য, এছাড়াও সকল জ্ঞান পিপাসু জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিবর্গদের সুবিধার্থে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।  

error: স্টুডেন্টস কেয়ার কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত !!