বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দশটি দেশ

পোস্টটি শেয়ার করুন
Rate this post

স্টুডেন্টস কেয়ারের পক্ষ থেকে সকলকে জানাই নমস্কার। সকলে নিশ্চয় ভালো আছেন। আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয়ে আমরা দেখে নেব বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী (world’s largest Internet users) দশটি দেশের তালিকা। মূল বিষয়ে যাওয়ার আগে আমরা কয়েকটি প্রাথমিক বিষয়ে জেনে নেই, তাহলে আপনাদের ব্যপারটা বুঝতে সুবিধা হবে।

⇒যোগাযোগ ব্যবস্থা কাকে বলে?

এক কথায় যোগাযোগ ব্যবস্থা হল মানুষের কথা ও বার্তার পারস্পরিক আদান প্রদান। অর্থাৎ, যে সুনির্দিষ্ট ও পরিকল্পিত ব্যবস্থার মাধ্যমে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা সংস্থার নধ্যে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, তথ্য, সংবাদ ভাব-আবেগ, আদেশ-নির্দেশ প্রভৃতি আদান প্রদান ঘটে, তাকেই যোগাযোগ ব্যবস্থা বলে।

বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগের মাধ্যম-

ব্যবহারের প্রকৃতি, ব্যপ্তি অনুসারে যোগাযোগ ব্যবস্থা কে বিভিন্ন ভাবে বিভক্ত করা যেতে পারে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যম গুলি নিম্নরূপ-

(ক) টেলিফোন (খ) মোবাইল ফোন (গ) টেলিগ্রাফ (ঘ) টেলিফ্যাক্স (ঙ) ডাক পরিসেবা (চ) দুর-সংবেদন ব্যবস্থা (ছ) দূরদর্শন (জ) ভিডিও কনফারেন্স (ঝ) খবরের কাগজ (ঞ) ইন্টারনেট

ইন্টারনেট কী?

আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হল ইন্টারনেট। ইংরেজি Internet এর বাংলা অর্থ হল ‘অন্তর্জাল’। Internet কথাটি ‘Interconnected Network’ এই দুটি শব্দের মিলিত রূপ। সমগ্র বিশ্ব জুড়ে কম্পিউটার, মোবাইল, মডেম ইত্যাদির মাধ্যমে কৃত্রিম উপগ্রহর সাথে যুক্ত করে জালিকা বিন্যাসের দ্বারা যোগাযোগ স্থাপন করা হয়। এই জালিকা বিন্যাস বা নেটওয়ার্ক কে ইন্টারনেট বলে। ভারতে ইন্টারনেট ব্যবস্থা ১৯৭০ সালে শুরু হলেও এর ব্যবহার তৎকালীন সময়ে খুব বেশি দেখা যেতনা। এর পর ২০০০ সালের পর আস্তে আস্তে এর ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

Join us on Telegram

ইন্টারনেটের গুরুত্ব কী?

বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেটের গুরুত্ব কতখানি সেটা আপনাদের না বললেও আপনারা ভালই অনুভব করতে পারবেন। দেখে নেওয়া যাক এর কি কি সুবিধা রয়েছে-

১. বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে খুব অল্প সময়ে যোগাযোগ স্থাপন করার ক্ষেত্রে এর জুড়ি মেলা ভার।

২. ব্যবসা বাণিজ্য, ব্যাংক, দূর শিক্ষা এমনকি চিকিৎসা ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সৃষ্টি করেছে।

৩. বাড়িতে বসে ই-মেল, ফেসবুক, হোয়াটস-অ্যাপ এর মাধ্যমে আপনি যে কোনো জায়গাতে খুব দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছেন।.

৪. ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাড়িতে বসে ‘ওয়েবসাইটের’ মাধ্যমে আপনি বিশ্বের যে কোনো তথ্য খুব সহজেই পেয়ে যেতে পারবেন।

৫. ঘরে বসে রেল, বিমান, জাহাজ, বাসের আসন সংরক্ষক সুবিধা প্রদান করে থাকে এই ইন্টারনেট।

৬. বর্তমান দিনে বিশ্বের দূরত্বের ব্যবধানের হ্রাস ঘটিয়ে বৃহৎ পৃথিবীকে একটি ক্ষুদ্র গ্রামে পরিনত করেছে এই ইন্টারনেট। যাকে আমরা ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ বলে থাকি।

বিভিন্ন ধরনের ইন্টারনেট পরি সেবার মাধ্যম গুলি কি কি?

(ক) ই-মেল (খ) ভি-মেল (V-Mail) (গ) Cyber Space (ঘ) ওয়েবসাইট (ঙ) ই-কমার্স ইত্যাদি।

 বর্তমান দিনে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ইন্টারনেটের ব্যবহার খুব দ্রত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবং এক্ষেত্রে তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলি এগিয়ে রয়েছে সেটা নিচের আলোচনা থেকেই বুঝতে পারবেন। চলুন দেখে নেওয়া যাক কোন কোন্‌ দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেশি(world’s largest Internet users )।

১০. বাংলাদেশ-

ভারতের প্রতিবেশি দেশ বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জন বসতি পূর্ণ একটি দেশ। বাংলাদেশের বর্তমান জন সংখ্যা প্রায় ১৬ কোটির বেশি। ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুসারে এদেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহার কারীর সংখ্যা হল ৭৩,৩৪৭,০০০। ২০০০-২০১৭ সালের মধ্যে বৃদ্ধির হার প্রায় ৭৩,২৪৭.০ শতাংশ। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ফেসবুক’ ব্যবহারকারীর সংখ্যাটা এদেশে প্রায় ২ কোটি ১০ লক্ষ।

৯. মেক্সিকো-

ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক থেকে উত্তর আমেরিকার এই দেশটি নবম স্থানে রয়েছে। মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৮৫,০০০,০০০। এই দেশে প্রায় ৮৫,০০০,০০০ জন ফেসবুক ব্যবহার করে।

TOP 20 COUNTRIES WITH world's largest Internet users
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কুড়িটি দেশের  তালিকা। সূ্ত্র-
www.internetworldstats.com

৮. নাইজেরিয়া-

নাইজেরিয়ার মোট জন সংখ্যা প্রায় ১৯১,৮৩৫,৯৩৬ জন। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯১,৫৯৮,৭৫৭। যার ফলে নাইজেরিয়া অষ্টম স্থানে রয়েছে। এই দেশে প্রায় ১৬,০০০,০০০ জন ফেসবুক ব্যবহার করে।

আরও পড়ুন- সর্বাধিক নোবেল জয়ী পৃথিবীর মধ্যে প্রথম দশটি দেশ

৭. রাশিয়া-

ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক থেকে রাশিয়া সপ্তম স্থানে রয়েছে। ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত এই দেশে প্রায় ১০৯,৫৫২,৭৪২ জন ইন্টারনেট ব্যবহার করেছে। এবং বৃদ্ধির হার (২০০০-২০১৭)৩,৪৩৪.০ %।

৬. জাপান-

জাপান ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছে। এদেশের মোট জন সংখ্যা প্রায় ১২৬,০৪৫,২১১ জন। এবং ইন্টারনেট ব্যবহার কারী রয়েছে প্রায় ১১৮,৪৫৩,৫৯৫ জন। ২০০০-২০১৭ পর্যন্ত বৃদ্ধির হার মাত্র ১৫১.৬ %। এখান থেকে বোঝা যায় জাপানের মানুষরা অনেক আগে থেকেই ইন্টারনেটের সুফল গুলি বুঝে নিয়ে ছিলেন! জাপানে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ২৬,০০০,০০০ জন।

৫. ইন্দোনেশিয়া-

ইন্দোনেশিয়ার মোট জন সংখ্যা প্রায় ২৬৩,৫১০,১৪৬ জন। এদেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহার করে প্রায় ১৩২,৭০০,০০০ জন। বৃদ্ধির হার প্রায় ৬,৫৩৫.০%। ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১২৬,০০০,০০০ জন।

৪. ব্রাজিল-

বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তর ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দেশ হল ব্রাজিল। ব্রাজিলের মোট জন সংখ্যা হল ২১১,২৪৩,২২০ জন। এর মধ্যে ইন্টারনেট গ্রাহক ১৩৯,১১১,১৮৫ জন। ২০০০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধির হার প্রায় ২,৬৮২.২%। ব্রাজিলে ফেসবুক ব্যবহারকারী জন সংখ্যা হল ১৩৯,০০০,০০০ জন।

আরও পড়ুন- ভারতের এই গ্রামের ঘর বাড়িতে নেই কোনো ‘দরজা’ : কেন জেনে নিন

৩. আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র-

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দেশটি হল আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। জন সংখ্যার পরিমান এদেশে প্রায় ৩২৬,৪৭৪,০১৩ জন। এর মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হলেন ২৮৬,৯৪২,৩৬২ জন। অর্থাৎ প্রায় ৮০% এর ও বেশি মানুষের কাছে ইন্টারনেটের পরি সেবা পৌঁছে গিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ২৪০,০০০,০০০ জন।

২. ভারত-

ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবসতিপূর্ণ একটি দেশ। এবং বর্তমানে উন্নয়নের লক্ষে খুব দ্রুত এগিয়ে চলেছে। তার সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে জন সংখ্যা ও। ভারতের বর্তমান জন সংখ্যা আনুমানিক প্রায় ১৩৪ কোটি। এবং এই জন সংখ্যার মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করে প্রায় ৪৬২,১২৪,৯৮৯ জন। ভারতে ২০০০ সালের পর ২০১৭ সাল পর্যন্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৯,১৪২.৫ শতাংশ। অর্থাৎ বৃদ্ধির হার উচ্চ গতি সম্পন্ন রয়েছে। আরও একটি মজার বিষয় যে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি এমন কি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের থেকে ও বেশি ‘ফেসবুক’ ব্যবহারকারী জন সংখ্যা রয়েছে ভারতে। সংখ্যাটা প্রায় ২৪১,০০০,০০০।

১. চীন-

আমরা সকলেই জানি চীন হল বিশ্বের বৃহত্তম জনবসতিপূর্ণ দেশ। এদেশে প্রায় ১৩৯ কোটি জনসংখ্যা রয়েছে। এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারী(world’s largest Internet users) দেশ গুলির মধ্যে সবার ওপরে অবস্থান করছে এই চীন। প্রায় ৭৩৮,৫৩৯,৭৯২ জন গ্রাহক নিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছে চীন। ২০০০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে বৃদ্ধির হার প্রায় ৩,১৮২.৪ শতাংশ। কিন্তু অবাক করা ব্যপার যেটা, সেটি হল চীনে মাত্র ১,৮০০,০০০ জন ফেসবুক ব্যবহার করে। সংখ্যাটা খুবি কম তাই না? এর মূল কারন হল চীনে ফেসবুক ব্যবহার করা নিষিদ্ধ, শুধু ফেসবুক ই নয় ওয়াটস-অ্যাপ, ইউটিউব ও নিষিদ্ধ।

বর্তমানে বিশ্বে জন সংখ্যা আনুমানিক প্রায় ৭,৫১৯,০২৮,৯৭০ জন। এর মধ্যে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৩,৮৮৫,৫৬৭,৬১৯। এবং ফেসবুক ব্যবহার করে ১,৯৭৯,৭০৩,৫৩০ জন।

তথ্য সূত্র-

১. www.internetworldstats.com

২. www.facebook.com

তথ্যগুলির সর্ব শেষ সংস্করণ ৩০ শে জুন ২০১৭ সাল পর্যন্ত।

Students Care

স্টুডেন্টস কেয়ারে সকলকে স্বাগতম! বাংলা ভাষায় জ্ঞান চর্চার সমস্ত খবরা-খবরের একটি অনলাইন পোর্টাল "স্টুডেন্ট কেয়ার"। পশ্চিমবঙ্গের সকল বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের এবং সমস্ত চাকুরী প্রার্থীদের জন্য, এছাড়াও সকল জ্ঞান পিপাসু জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিবর্গদের সুবিধার্থে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।  

error: স্টুডেন্টস কেয়ার কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত !!