ভারতের লে-পাক্ষি( Lepakshi ) মন্দিরের ঝুলন্ত স্তম্ভ রহস্য

পোস্টটি শেয়ার করুন
Rate this post

ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুর জেলার একটি গ্রামটির নাম লে-পাক্ষি বা Lepakshi । এটি হিন্দুপুরের পূর্বে ১৫ কিলোমিটার (৯.৩ মাইল) এবং বেঙ্গালোরের প্রায় ১২০ কিলোমিটার (৭৫ মাইল) অবস্থিত। লে-পাক্ষি সাংস্কৃতিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে খুবি উল্লেখযোগ্য। কারণ এখানে শিব, বিষ্ণু ও বীরভদ্রের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত ঐতিহাসিক মন্দির রয়েছে যেগুলি বিজয়নগর সাম্রাজ্য কালের(১৩৩৬-১৬৪৬) সময় নির্মিত হয়ে ছিল।

Veerabhadra Temple, Lepakshi
চিত্রে দেখতে পাচ্ছেন লে-পাক্ষি মন্দিরের একটি দৃশ্য

অনন্তপুর বিশ্বের কাছে খুবই প্রসিদ্ধ এবং আলোচনার একটি বিষয়, তার কারন এখানে ‘লে-পাক্ষি’ বা Lepakshi মন্দিরের অবস্থান। লে-পাক্ষি মন্দিরটি স্থাপত্য শৈলের দিক থেকে বিশ্ববাসির কাছে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে। এটি অবস্থিত অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুর জেলাতে। মন্দিরের স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যগুলি বিজয়নগর শৈলীতে, চিত্র কলার প্রসার লক্ষ করা যায়, মন্দিরের প্রায় প্রতিটি উন্মুক্ত পৃষ্ঠার খোদাইয়ে বিজয়নগরী চিত্রকলার নিদর্শন রয়েছে।এটি ভারত সরকার দ্বারা সংরক্ষিত জাতীয় মনুমেট গুলির মধ্যে একটি। এখানে গেলে আপনি দেখবেন, রামায়ণ, মহাভারত ও পুরাণের গল্পগুলি থেকে রাম ও কৃষ্ণের দৃশ্যের সাথে বিশেষভাবে উজ্জ্বল শহিদুল এবং রংগুলির মাধ্যমে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে এবং সেগুলি ভাল ভাবে সংরক্ষিত রয়েছে।

আমাদের ফেসবুক পেজে যুক্ত হওয়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন

মন্দিরটিকে স্থাপন করেছিলেন Virupanna Nayaka এবং Viranna। এরা দুজনে দুই ভাই ছিলেন। প্রায় ১৫৩০ খ্রিষ্টাব্দে এই দুই ভাইয়ের উদ্যোগে এই মন্দিরের স্থাপন হয়েছিলো। Penukonda-র রাজা অচাতারায়ার শাসনামলে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের অধীন গভর্নর ছিলেন বীরুপন্না নায়েক ও ভিরানা। মন্দিরটি নির্মাণের খরচ সরকার কর্তৃক দমন করা হয়। মন্দিরটি এক গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। তবে পৌরাণিক দর্শনের কাছে এটাই প্রমাণিত হয় যে ঋষি অগস্ত্য কর্তৃক বীরভদ্র মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল। এতে গণেশ, নন্দী, বীরভদ্র, শিব, ভদ্রকালী, বিষ্ণু ও লক্ষ্মীর মূর্তি রয়েছে।

Join us on Telegram
[আরও পড়ুন- বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দশটি দেশ

মন্দিরটির নামকরণ হল কিভাবে?

কথিত আছে যে, এই মন্দিরের ওপর দিয়ে রাবণ সীতাকে হরণ করে নিয়ে যাবার সময় ‘জটায়ু’ রাবণের সাথে যুদ্ধে হেরে এখানেই পতিত হয়,

ভারতের লে-পাক্ষি( Lepakshi ) মন্দিরের ঝুলন্ত স্তম্ভ রহস্য
দেখতে পাচ্ছেন রাবন ও জটায়ুর যুদ্ধারত অবস্থা

এরপর শ্রী রাম জটায়ু কে দেখে প্রথম যে শব্দটি উচ্চারণ করেছিলেন সেটি হল ‘উড়ন্ত পাখি’। সেই থেকেই এই মন্দিরের নাম হয় “লে-পাক্ষি”।  “ Lepakshi ” শব্দ টির তেলেগু অর্থ হল “rise bird”। মন্দিরটির বেশিরভাগই কুর্সাইলাম নামক একটি নিচু, পাথুরে পাহাড়ে নির্মিত হয় – যা তেলেগুতে অনুবাদ করলে বোঝায় কচ্ছপ পাহাড় !

Veerabhadra Temple, Lepakshi
চিত্রে দেখতে পাচ্ছেন, রাম, লক্ষনের সাথে জটায়ুকে

এবার আসা যাক মূল আলোচ্য বিষয়ে। এতক্ষন আমরা জানলাম মন্দিরের সম্পর্কে, কিন্তু লে-পাক্ষি মন্দিরটি বিশ্ববাসির কাছে একটি রহস্যজনক স্থান হিসাবে পরিচিত। তার কারন এই মন্দিরে এমন একটি ‘স্তম্ভ’ রয়েছে যেটি কিনা ভূমিকে স্পর্শই করেনি! আমরা ভারতের অনেক রহস্যময় ঘটনা, স্থান, বস্তুর কথা শুনেছি। আজকের রহস্যটি হল, এই লে-পাক্ষি মন্দিরের “ঝুলন্ত স্তম্ভ” কে নিয়ে।

lepakshi temple hanging pillar
দেখতে পাচ্ছেন, স্তম্ভটি কিভাবে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে।

হ্যাঁ, এখানে যে স্তম্ভটি রয়েছে সেটি প্রকৃত পক্ষে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে, কেন এমন অবস্থায় রয়েছে সেটি পরীক্ষা করার জন্য সয়ং ব্রিটিশ রাও চেষ্টা করেছিলেন তৎকালীন সময়ে, কিন্তু পারেনি। ১৬ শতাব্দির এই মন্দিরে প্রায় ৭০টি স্তম্ভ আছে কিন্তু এগুলির মধ্যে মাত্র একটি স্তম্ভ রয়েছে যেটি এরকম রহস্য সৃষ্টি করেছে।   রহস্যময় প্রাচীন ভারতের স্থাপত্য তাই না?

Lepakshi | Veerabhadra Swamy Temple
দেখছেন কিভাবে স্তম্ভের নিচে দিয়ে একটি কাপড় প্রবেশ করে গিয়েছে। চিত্র সূত্র- Flickr

এছাড়াও আর কি কি রয়েছে এখানে?

নাগ লিঙ্গ- এখানে ভারতের অন্যতম বৃহত্তর মোনোলিথ হিসাবে একটি নাগ লিঙ্গ রয়েছে। প্রচলিত আছে যে, এই ভাস্কর্যটি তৈরি হয়েছিল মাত্র এক ঘন্টায়।

Naglinga
চিত্রে দেখা যাচ্ছে নাগলিঙ্গটিকে

Lepakshi Saree Designs- এই মহা মন্দিরের আগমনের সময়, আপনি স্তম্ভগুলি উপর খোদিত সুন্দর ‘লে-পাক্ষি শাড়ি’ নকশায় দেখার সুযোগ পাবেন। উজ্জ্বলভাবে খোদিত অঙ্গভঙ্গি ভারতীয় ভাস্কর্যের সৃজনশীলতা একটি উপমা।

Lepakshi Saree Designs
লে-পাক্ষি মন্দিরের ছাদে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শিল্প কলা

মাতা সীতার পদ চিহ্ন- কথিত আছে যে, এখানে মাতা সীতা পদার্পণ করেছিলেন। এবং তাঁর পদচিহ্ন এই স্থানে রেখে গিয়েছেন। নিচের চিত্রটি হল মাতা সীতার পদ চিহ্ন।

the footprint of Maa Sita
এই সেই পদ চিহ্ন, মাতা সীতার পদচিহ্ন এটি

নন্দী- এই মন্দিরের বাইরে প্রায় ১ মাইল আগে আরো একটি স্থাপত্য আছে, সেটি হল গ্রানাইট শিলা দিয়ে গঠিত একটি ষাঁড়। যার নাম ‘নন্দি’।

নন্দি
ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন নন্দিকে

এটি উচ্চতায় ২০ ফুট এবং দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩০ ফুট। যেটি এই মন্দিরের শোভাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। Gomateshwara বা বাহুবলির পরে এটি দক্ষিন ভারতের অন্যতম স্থাপত্য বলা যাতেই পারে।

Statue of Gomateshwara
চিত্রটি হল Gomateshwara বা বাহুবলির। এনার কথা আপনারা সবাই সুনেছেন নিশ্চই।

কথিত আছে যে এই ষাঁড় টি মন্দির তথা ভগবান শিবকে পাহাড়ার মধ্যে রেখেছে, এবং প্রভুর আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে সেটি ওর অবস্থানভঙ্গি দেখলেই বেশ বোঝা যায়।

চিত্রগুলির সূত্র ফ্লিকার

[আরও পড়ুন- সর্বাধিক নোবেল জয়ী পৃথিবীর মধ্যে প্রথম দশটি দেশ]

Students Care

স্টুডেন্টস কেয়ারে সকলকে স্বাগতম! বাংলা ভাষায় জ্ঞান চর্চার সমস্ত খবরা-খবরের একটি অনলাইন পোর্টাল "স্টুডেন্ট কেয়ার"। পশ্চিমবঙ্গের সকল বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের এবং সমস্ত চাকুরী প্রার্থীদের জন্য, এছাড়াও সকল জ্ঞান পিপাসু জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিবর্গদের সুবিধার্থে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।  

error: স্টুডেন্টস কেয়ার কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত !!