বিশেষ নিবন্ধ : নদীর গ্রাসে মালদার নদী তীরবর্তী অঞ্চল সমূহ | সায়ন্তনী সিং

পোস্টটি শেয়ার করুন
Rate this post

নদীর গ্রাসে মালদার নদী তীরবর্তী অঞ্চল

পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী হল মানুষ আর তার বিচরণ সব ক্ষেত্রে, মানুষ তার চার পাশের পরিবেশের সাথে মানিয়ে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে টিকে রয়েছে।সম্ভবনাবাদের জনক ভিদাল দ্য লা ব্লাশের মতানুসারে প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষের সামনে কতকগুলি সম্ভাবনা দিয়ে থাকে মানুষ তার প্রয়োজন অনুযায়ী গ্রহণ করে। কিন্তু মানুষ তার ইচ্ছে মত পরিবেশকে ব্যবহার করতে গিয়ে মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করে ফেলে যার ফলস্বরূপ মানুষের জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। এই বিপর্যয় (Disaster) শব্দটি ব্যুৎপত্তিগত ভাবে ফরাসি শব্দ ‘DES’ অর্থে অশুভ এবং ‘ASTRE’ অর্থে তারা থেকে এসেছে। সুতরাং এই দুই শব্দের যোগ করে তৈরি হয় ‘DESASTRE’ যার অর্থ হল অশুভ তারা। WHO এর সংজ্ঞা অনুযায়ী বিপর্যয় হল এমন এক অবস্থা যার কারণে ক্ষয়ক্ষতি হয়, অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়, মানুষের প্রাণহানি হয় এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার অবনতি হয় যে, আক্রান্ত এলাকার বাইরে থেকে সাহায্যের প্রয়োজন হয়। সুতরাং বলা যায় যে আকস্মিকভাবে সংঘটিত এমন ঘটনা যার প্রভাবে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয় তাকে বিপর্যয় বলে। এই বিপর্যয়কে দুইভাগে ভাগ করা হয় — একটি হল প্রাকৃতিক বিপর্যয় (Natural Disaster) ও অন্যটি হল মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয় (Man-Made Disaster)। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের একটি হল ভূমিরূপগত বিপর্যয় যার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি বিপর্যয় হল নদীর পাড়ের ক্ষয় (River Bank Erosion)। সাধারণত নদী তার প্রবাহকালে যখন নিম্নগতিতে এসে পৌঁছায় তখন সে নিম্নক্ষয় অপেক্ষা পার্শ্বক্ষয় বেশী করে একে নদীর পাড়ের ক্ষয় বলে। একটু অন্যভাবে বলা যায় যে নদী যখন বার্ধক্য অবস্থায় পৌঁছায় তখন সে তার সাথে বয়ে আনা নুড়ি, কাঁকড়, বালি, কাদা নদীর বুকে জমা করে, নদী অগভীর হয়ে পড়ে এবং নদী তার দুই পাশে ক্ষয় করতে থাকে। তাকে নদীর পাড়ের ক্ষয় বলা হয়। উদাহরণ স্বরূপ পশ্চিমবঙ্গের মালদা, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব বর্ধমান, নদীয়া প্রভৃতি জেলার নদীর পাড়ের ক্ষয় দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা। ভূমিরূপগত বিপর্যয় গুলির মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এর মাধ্যমে। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ বিপর্যস্ত হয় শুধু এই কারণে। এটি একটি গতিশীল প্রক্রিয়া। নদী যখন এঁকে বেঁকে প্রবাহিত হয়, তখন সে অবতল ঢালে ধাক্কা দেয় এবং উত্তল ঢালে চর সৃষ্টি হয়। ভারতের দীর্ঘতম ও বৃহত্তম নদী গঙ্গা, যা কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ গুহা থেকে উৎপন্ন হয়ে ভাগীরথী এবং শতোপন্থ হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে অলকানন্দা নদী দেবপ্রয়াগের কাছে মিলিত হয়ে গঙ্গা নামে প্রথমে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে, তারপর পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে দীর্ঘ ২৫২৫ কিমি পথ অতিক্রম করে সাগর দ্বীপের কাছে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে।এই নদী ঝাড়খণ্ডের রাজমহল পাহাড়ের কাছে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে ধুলিয়ানের কাছে দুইটি শাখাতে বিভক্ত হয়ে একটি পদ্মা নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করে অন্যটি ভাগীরথী-হুগলি নামে পশ্চিমবঙ্গে প্রবাহিত হয়। নদী তার নিম্নগতিতে তার সাথে বয়ে আনা নুড়ি কাঁকড় বালি নদীর বুকে জমা করে যার ফলে নদীর গভীরতা হ্রাস পায় এবং নদীর পার্শ্বক্ষয় বেশী হয়। পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার নদীর পাড় ক্ষয় এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা যা ভয়াবহ রূপ ধারন করেছে। এর ফলে অনেক মানুষ বিপর্যস্ত হয়। মালদা জেলাটি প্রায় ৩৪৭২ বর্গকিমি জুড়ে বিস্তৃত, যার পূর্বদিকে বাংলাদেশ, পশ্চিমে ঝাড়খণ্ড এবং উত্তরে উত্তর দিনাজপুর ও দক্ষিণে মুর্শিদাবাদ রয়েছে।এ জেলার ১৫ টি ব্লকই বন্যা প্রবণ এবং সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্লকগুলি হল — মানিকচক, কালিয়াচক ১ ও ২, রতুয়া ১ ও ২ প্রভৃতি। এ জেলার গঙ্গা ছাড়াও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নদী হল — মহানন্দা, কালিন্দী, টাঙ্গন, পুনর্ভবা ; এছাড়াও কিছু শাখানদী যেমন – ফুলহার, পাগলা, বেহুলা প্রভৃতি রয়েছে।

৭ই আগস্ট, ২০০৩ সময় শেষ রাত।… ভোরের আলো ফুটলে দেখা গেল মালদার কালিয়াচক ২ নং ব্লকের নসরত টোলা গ্রামটা হারিয়ে গেছে গঙ্গার গর্ভে। গঙ্গার জল বাড়ছিল কয়েকদিন ধরেই, পরের কয়েক সপ্তাহে নদী আরও ফুলে ফেঁপে উঠল, গ্রাস করল আরও ১০ টি গ্রাম – হাজারিটোলা, কবীরটোলা, মুন্নাটোলা, জাহানটোলা, ছক্কুটোলা, গঙ্গা ভাবন পাড়া, পাল পাড়া, বাবুটোলা, চেথ্রুটোলা ও পিয়ারাপুর। মালদার মানচিত্র থেকে এই গ্রামগুলি মুছে গেল চিরতরে। আশপাশে এলাকা সহ সব মিলিয়ে ভিটে মাটি হারালেন দুই হাজারের বেশী পরিবার। (কল্যাণ রুদ্র – গঙ্গা ভাঙন কথা)

নদী তার আপন গতিতে বয়ে চলে, প্রতিটি নদীই তার গতি, ঢাল, দৈর্ঘ্যের সাথে সাম্যঞ্জস্য রেখে এগিয়ে চলে। নদী তার প্রয়োজনে গতিপথ পরিবর্তন করে থাকে। নদীর গতির পরিবর্তন ও পাড় ক্ষয়ের কারণ স্বরূপ দেখা যায় যে নদীর পাড় ভূতাত্বিক দিক থেকে খুব দুর্বল এবং বেশীরভাগই বালির স্তর, যে কারণে নদীতে জলের পরিমাণ ও বেগ বৃদ্ধি পেলেই বালির স্তরে জল প্রবেশ করে ভাঙন ধরে। অর্থাৎ নদীর দুই পাশের শিলার গঠন, নদীর স্রোতের বিন্যাস, প্রবাহের মাত্রা, স্বাভাবিক উদ্ভিদের অবস্থান, নদীবক্ষের গভীরতা, ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। তবে মানুষের হস্তক্ষেপেও নদীর পাড়ের ক্ষয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছু মনুষ্যসৃষ্ট কাজ যেমন – নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে কৃষিকাজ ও বৃক্ষহীন নদীর পাড়, নদীর ধারে বসতি নির্মান, কাঁচা সড়ক পথ নির্মাণ ইত্যাদিতে নদীর পাড় ক্ষয় হয়ে থাকে। রাজমহল পাহাড়ের কাছে গঙ্গা নদী দুইটি শাখাতে বিভক্তের পর তার প্রবাহপথে প্রায় ৬০ কিমি অঞ্চল জুড়ে চর সৃষ্টি করেছে যা ভুতনি দিয়ারা চর নামে পরিচিত। দিয়ারা কথার অর্থ হল পলি সঞ্চয়ের ফলে সৃষ্ট ভূমি। মালদা জেলা ভূমিগত দিক থেকে তিনভাগে বিভক্ত — (১) তাল (২) বারিন্দ (৩) দিয়ারা। এ জেলার নদীর তীরবর্তী ব্লকগুলি তাল ও দিয়ারার অন্তর্গত। ১৯৬১ সালে ২২৪০ মিটার দীর্ঘ ফারাক্কা ব্যারেজ তৈরিতে নদীর গতির ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। কিন্তু তার আগে ১৯২০—১৯২১ সালে অর্থাৎ ফারাক্কা বাঁধ গঠনের প্রাক্-কালে নদী সোজা পথে প্রবাহিত হত। সেখানে কোনো বাধা না থাকায় নদী তার গতিশীলতা বজায় রেখে চলত। [টপোগ্রাফিক্যাল ম্যাপ নং 72 p/13 –( ১৯২২-২৩)] ১৯৬১ সালে ফারাক্কা বাঁধ গঠনের পর নদী বেঁকে প্রবাহিত হয় ও গতিপথ পরিবর্তন করে। নদী রাজমহল পাহাড়ের কাছে বাঁদিকে বেঁকে এবং ফারাক্কার কাছে ডান দিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়েছে। বাঁকের পরিমাণ দিন দিন বাড়তে থাকে সাথে সাথে চরের পরিমাণও বাড়তে থাকে, ২০১২ সালে প্রকাশিত প্রবন্ধ ‘River bank erosion hazard study of river Ganga, upstream of farakka barrage using remote sensing and GIS’ by PK THAKUR, C LAHA, SP AGARWAL – NATURAL HAZARDS 2010 – Springer-তে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের ফলে কতটা চরের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে তা জানা যায় ; যেমন – ১৯৫৫ সালে অর্থাৎ ফারাক্কা বাঁধ গঠনের আগে চরের পরিমাণ ছিল ২.১ বর্গকিমি, ১৯৭৭ সালে সেটা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ২৪.৮৬ বর্গকিমি, পরবর্তী ১৯৯০, ২০০১, ২০০৩, ২০০৫ সালে দেখা গেছে চরের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ৭১.১৩, ৯০.২১, ১১৯.১১, ১১৬.৮৭ বর্গ কিমি এবং ২০১০ সালে তা বেড়ে হয় ২৯৬.৬৯ বর্গকিমি। বর্তমানে ফারাক্কা বাঁধের সাথে নদীর গতির তির্যকভাবে অবস্থান করায় নদীর জল ঠিকমত প্রবাহিত হতে পারে না ফলে নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করেছে। ফলস্বরূপ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে, যেমন — (১) বন্যার প্রকোপ বাড়ছেঃ- নদীর পাড় ভাঙনের ফলে বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, মালদা জেলার ১৫ টি ব্লক বন্যা কবলিত হলেও ৫ টি ব্লক যেমন মানিকচক, কালিয়াচক ১,২ ও ৩ এবং রতুয়া ১ ও ২ প্রভৃতি অঞ্চল বেশী প্রভাবিত হয়। (২) কৃষি জমির উপর প্রভাবঃ- নদীর দু’ধারের মাটি উর্বর হওয়াতে কৃষিকাজে সুবিধা হয়। মালদায় ফজলি আম বিখ্যাত, এছাড়াও ভুট্টা, ডাল চাষ করা হয়। কিন্তু নদীর পাড়ের ক্ষয়ের ফলে কৃষিকাজের ক্ষতি হচ্ছে। (৩) জনজীবন বিপর্যস্তঃ- মানুষকে নদী যেমন সাহায্য করে অন্যদিকে তেমন ক্ষতিও করে। নদীর ধারে গড়ে ওঠা গ্রাম ক্ষতির মুখে পড়ে, কত গ্রাম নদীর বুকে হারিয়ে গেছে শুধুমাত্র নদীর ভাঙনের কারণে। (৪) যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্নঃ- অনেক সময় নদীর দুপাশে পলি জমে উঁচু বাঁধের সৃষ্টি হয় একে স্বাভাবিক বাঁধ বলে। বন্যার সময় সাধারণত এই বাঁধ গুলো ভেঙে যায় না সেই কারণে উঁচু করে সড়ক পথ ও রেলপথ নির্মান করা হয় কিন্তু নদীর পাড় ক্ষয়ের ফলে এই স্বাভাবিক বাঁধগুলি ভেঙে যায় ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিছিন্ন হয়ে যায়। (৫) অর্থনৈতিক বিপর্যয়ঃ- নদীর ভাঙনের ফলে চাষের জমির পরিমাণ হ্রাস পায়, উর্বরতা হ্রাস ফলে উৎপাদন ক্ষমতাও হ্রাস পায় এবং মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। (৬) জীবিকা সংকটঃ- নদীর বুকে হারিয়ে যাওয়া গ্রামগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মানুষ জীবিকা হারায়। (৭) পরিব্রাজনঃ- ভূমিহীন, জীবিকাহীন মানুষেরা অন্যত্র পরিব্রাজন করে। নদীর ডানদিকে ফারাক্কা ব্যারেজ অবস্থিত হওয়াতে বাঁ দিকেই বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৬৯ – ১৯৮৯ সালের নদীর বাঁ দিকে ক্ষয়ের পরিমাণ বেশী হওয়াতে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো হল — মানিকচক ২২ নং মৌজা, কালিয়াচক ১, ২ ও ৩ এবং রতুয়া ১ ও ২। বর্ষার সময় নদী রাজমহল পাহাড়ে আঘাত করে ৪৫ ডিগ্রি কোনে বেঁকে প্রবাহিত হয়ে পঞ্চানন্দপুরে এসে ধাক্কা মারে যার ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওই এলাকাটিই। গঙ্গা ভাঙন অ্যাকশন নাগরিক কমিটির মাধ্যমে জানা যায়, মানিকচকের ৭৫০ বর্গকিমি এলাকা নদীর বুকে হারিয়ে গেছে। ১৯৯০-২০০১ সালের মধ্যে হরিনন্দপুর, মানিকচক, গোপালপুর, কালিয়াচক ২ আবার ভাঙনের মুখে পড়ে। ২০০৪-০৫ সালে কাঁকড়বন্ধা গ্রামটি সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয় শুধুমাত্র নদীর ভাঙনের কারণে। সম্প্রতি ২০১৮ সালে আবার নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রতুয়ার দুইটি গ্রাম। ২০১৯ সালের জুন মাসে ফুলহার নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রতুয়ার ১ নং ব্লক, আবার অক্টোবর মাসে ফুলহার নদীর ভাঙনে ১০০ মিটার বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। বিগত কয়েক বছরে নদীর ভাঙনের ফলে অনেক জমি নদী গর্ভে তলিয়ে গেছে। ২০১৫ সালের জুন মাসে প্রকাশিত ‘Journal of engineering computers and applied science,volumn 4, No 06, June 2015’-এ বিগত কয়েক বছরের নদীর ক্ষয়ের ফলে নদীর বুকে হারিয়ে যাওয়া জমির পরিমাণ সম্পর্কে জানতে পারি, যেমন,
১৯৭৯ >> ৬০ হেক্টর জমি,
১৯৮০ >> ১০০ হেক্টর জমি,
১৯৮১ >> ২৭০ হেক্টর জমি,
১৯৮২ >> ৭০ হেক্টর জমি,
১৯৮৩ >> ৯০ হেক্টর জমি ,
১৯৮৪ >> ৭০ হেক্টর জমি,
১৯৮৫ >> ৯০ হেক্টর জমি,
১৯৮৬ >> ১০০ হেক্টর জমি,
১৯৮৭ >> ৭০ হেক্টর জমি,
১৯৮৮ >> ১৫০ হেক্টর জমি,
১৯৮৯ >> ১৫০ হেক্টর জমি,
১৯৯০ >> ১৫৩ হেক্টর জমি,
১৯৯১ >> ১৫৫ হেক্টর জমি,
১৯৯২ >> ১৪৫ হেক্টর জমি ,
১৯৯৩ >> ১৪৭ হেক্টর জমি,
১৯৯৪ >> ১৭০ হেক্টর জমি ,
১৯৯৫ >> ১৫০ হেক্টর জমি ,
১৯৯৬ >> ৩০৫ হেক্টর জমি,
১৯৯৭ >> ৬০ হেক্টর জমি,
১৯৯৮ >> ৩৩৫ হেক্টর জমি।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে যত দিন যাচ্ছে নদীর বুকে হারিয়ে যাচ্ছে আরও ভূমি। নদীর পাড় ক্ষয়ের ফলে সেখানকার ভুমির আবরণ ও মানুষের ভুমির ব্যবহারের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন এসেছে। নদীর গতিপথে ফারাক্কা বাঁধের অবস্থান ও অবতল অংশে নদীর ক্ষয়ের ফলে নদীর পাড় ভাঙনে মানুষের জীবনে নেমে আসে বিপর্যয় আর সেই জন্যে কিছু উপযুক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ — (১) নদীর বাঁ দিকে ক্ষয়ের চাপ কমিয়ে আনতে হবে। (২) নদীর বাঁ দিকে যে চর রয়েছে সেটিকে ড্রেজিং পদ্ধতিতে অপসারিত করে নদীর নাব্যতা বাড়াতে হবে। (৩) ভারি ও মাঝারি শিলা দিয়ে বাঁধ তৈরি করতে হবে যাতে সহজে ভেঙ্গে না যায়। (৪) সঠিক সমীক্ষার মাধ্যমে নদীর গতিপথ সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করতে হবে। (৫) নদীর পাড়ে মোটা কাঠের গুঁড়ি দিয়ে পাড় বাঁধতে হবে। (৬) একের পর এক বালির বস্তা সাজিয়ে নদীর ক্ষয় রোধ করা যেতে পারে। এগুলি ছাড়াও নদীর পাড় ভাঙন প্রতিরোধের জন্যে জিও- সিন্থেটিক পদ্ধতিতে নদীর ভাঙন রোধ করা যেতে পারে। উপগ্রহ চিত্র, ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা (GIS) এর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে যাতে বিপদের আগেই তার মোকাবিলা করা যায়। পরিশেষে বলা যায় যে নদীর পাড় ক্ষয় একটি অন্যতম ভূমিরূপগত বিপর্যয় যা মানুষের জীবনে হঠাৎ করে আসে এটিকেও অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মত ঠিকঠাক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যেতে পারে তার জন্যে সবার প্রথমে মানুষের সচেতন হওয়াটা জরুরি। তার সাথে সাথে পরিকল্পনা গুলিকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে হবে।

Join us on Telegram

লেখিকাঃ- সায়ন্তনী সিং [পাঁচপাড়া, নিমতলা, হাওড়া]


তথ্যসুত্রঃ-

Wikipedia – Malda and Murshidabad ;
Shifting courses of Ganga River, its causes and resultant hazards of Manickchak block, Malda district, West Bengal. By Sriparna mitra
dynamicity of river ganga and bank erosion induced land loss in Manickchak Diara of Malda district of west Bengal ,India : A RS and GIS based geo spatial approach By Jayanta Mondal, Sandipta Debanshi, and Sujata Mandal ; Banerjee, S N and Chakroborty P (1983) some observations on recent trends of shifting of the Ganga between Rajmahal and Ahiron. Journal of the Geological Society of India, 24: 318-321 ; International journal of Geometics and geosciences, vol 4, 2015
Monitoring Bank line erosion of river Ganga, Malda district and west Bengal …by Bhaskar Das, Ajoy Das, and Milan Mondal ; River bank erosion hazard study of river ganga, upstream of farkka barrage using remote sensing and gis by Praveen .K.Thakur, Chalantika Laha, S.P. Aggarwal ; সমকালীন ভূগোল – অমিতাভ মৈত্র ; টাইমস অফ ইন্ডিয়া ; এবিপি আনন্দ

© মিশন জিওগ্রাফি ইন্ডিয়া, ভূগোলিকা-Bhugolika, Geography & Environment, স্টুডেন্টস কেয়ার

Students Care

স্টুডেন্টস কেয়ারে সকলকে স্বাগতম! বাংলা ভাষায় জ্ঞান চর্চার সমস্ত খবরা-খবরের একটি অনলাইন পোর্টাল "স্টুডেন্ট কেয়ার"। পশ্চিমবঙ্গের সকল বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের এবং সমস্ত চাকুরী প্রার্থীদের জন্য, এছাড়াও সকল জ্ঞান পিপাসু জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিবর্গদের সুবিধার্থে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।  

error: স্টুডেন্টস কেয়ার কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত !!