IUCN দ্বারা ভারতের বিপন্ন প্রাণীর তালিকা : রেড ডাটা বুক ২০১৯ | সায়ন্তনী সিং
IUCN দ্বারা ভারতের বিপন্ন প্রাণীর তালিকা
IUCN দ্বারা ভারতের বিপন্ন প্রাণীর তালিকা – UNEP সংঞ্জা অনুযায়ী জীব- বৈচিত্র্য বলতে বোঝায় “কোনও একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে সমস্ত জিন, প্রজাতি ও বাস্তুতন্ত্রের বৈচিত্র্যে ও সমগ্রতা।” পৃথিবীতে ভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। ১৯৬৮ সালে বন্যপ্রানী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ‘রেমন্ড দাসমান’ “একটি ভিন্ন ধরণের দেশ” নামক গ্রন্থে প্রথম ‘জীবগত বৈচিত্র্য বা Biological Diversity’ শব্দটি ব্যবহার করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৬ সালে ওয়াল্টার রোজেন সোমিয়ান ইন্সটিটিউটের ন্যাশনাল ফোরামে “জীব-বৈচিত্র্য” কথাটি ব্যবহার করেন। বর্তমানে মানুষের হস্তক্ষেপে ও যথেচ্ছ হারে সম্পদের ব্যবহারের ফলে জীব বৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে।ফলস্বরূপ অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রজাতি অবলুপ্তির পথে।এক্ষেত্রে জীব বৈচিত্র্যের বিলুপ্তি বিষয়টি জেনে রাখা দরকার, যখন কোন জীব প্রজাতি তার কোনো উত্তারাধিকার না রেখে পৃথিবী থেকে চিরতরে শেষ হয়ে যায় তখন জীব- বৈচিত্র্যের বিলুপ্তি ঘটে। এই জীব বৈচিত্র্যের সংরক্ষণের জন্যে IUCN ( THE INTERNATIONAL UNION FOR THE CONSERVATION OF NATURE) দ্বারা বিপন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর তালিকা রেড ডাটা বুকের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। ১৯৬৪ সালে প্রথম IUCN দ্বারা প্রথম রেড ডাটা বুক (আইইউসিএন লাল তালিকা) প্রকাশিত হয়। এই বইতে প্রধানত বিপন্ন , বিলুপ্ত , সংকটজনক এবং বিরল প্রজাতিভুক্ত উদ্ভিদ ও প্রাণীর তলিকা প্রকাশ করা হয়। বর্তমানে ৭৭৩০০ এর বেশি প্রজাতি এই পুস্তকে রয়েছে। রিও + ২০ আর্থ সামিটে ভারতে ১৩২ টি প্রজাতি উদ্ভিদ ও প্রাণীকে সংকটজনক বলে শনাক্ত করেছে। ২০১৯ সালে মার্চ মাসে IUCN দ্বারা রেড ডাটা বুক প্রকাশিত হয় । ২০১৯ এর সেপ্টেম্বর মাসে আরও ৪৮ টি প্রজাতিকে যুক্ত করা হয়। যেখানে ৪১% উভচর প্রাণী ও ৩৩% প্রবাল প্রাচীর কে বিপন্ন প্রজাতি বলে শনাক্ত করা হয়েছে। এই রেড ডাটা বুক কেন প্রকাশিত করা হয় ? এর উদ্দেশ্যটা কি?
→ রেড ডাটা বুক প্রকাশের উদ্দেশ্য
রেড ডাটা বুক প্রকাশের উদ্দেশ্য হল-
১। বিঞ্জান সম্মত ভাবে বিপন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির তালিকা প্রকাশ করা
২। জীব বৈচিত্র্য সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা
৩। জীব বৈচিত্র্যের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা।
বিভিন্ন আন্তজার্তিক সংস্থা,রাজ্য ও জাতীয় সংস্থা, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ ,কিছু NGOS, জ্যুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া প্রভৃতি সংস্থা এই তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। IUCN দ্বারা সংরক্ষণের তালিকাকে ৯টি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি নিম্নরূপ-
১. বিলুপ্ত প্রজাতিঃ ( Extinct Species)
যেসব প্রজাতির আর কোনো অস্তিত্ব নেই,যাদের অস্তিত্ব পৃথিবী থেকে পুরোপুরিভাবে শেষ হয়ে গেছে। তাদের বিলুপ্ত প্রজাতি বলে।
২. বন্য বিলুপ্ত প্রজাতিঃ( Extinct species in wild)
যে সব প্রজাতির বন্য প্রাকৃতিক পরিবেশে অস্তিত্ব শেষ হয়ে গেলেও কিছু প্রজাতি এখনও বেঁচে রয়েছে ক্যাপটিভিটির মাধ্যমে। তাদের বন্য বিলুপ্ত প্রজাতি বলে।
৩. সংকটপূর্ণ বিপন্ন প্রজাতি: ( Critical Endangered species)
যেসব প্রজাতি গত দশ বছরে তাদের জনসংখ্যার ৯০% বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাকি ১০% বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভবনা প্রবল তাকে সংকটপূর্ণ বিপন্ন প্রজাতি বলে।
৪. বিপন্ন প্রজাতি: ( Endangered species)
গত দশ বছরে যেসব প্রজাতির ৭০% বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং অদূর ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকে তাদেরকে বিপন্ন প্রজাতির তালিকাভুক্ত করা হয়।
৫. বিপদগ্রস্ত প্রজাতিঃ ( Vulnerable Species)
কোন প্রজাতিকে তখনই বিপদগ্রস্ত বলা যেতে পারে যখন সেই প্রজাতির জনসংখ্যার ৫০% গত দশ বছরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবংবাকি ৫০% ভবিষ্যতে বিপন্ন হওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাদের বিপদগ্রস্ত প্রজাতি বলা হয়ে থাকে।
৬. ভবিষ্যতে বিপদ গ্রস্ত প্রজাতিঃ( Near threatened)
যে সব প্রজাতি ভবিষ্যতে বিপদগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেইসব প্রজাতিকে ভবিষ্যত বিপদগ্রস্ত প্রজাতিরূপে চিহ্নিত করা হয়।
৭. স্বল্প সতর্কযুক্ত প্রজাতিঃ( Least concern)
যেসব প্রজাতি যথেচ্ছ সংখ্যক রয়েছে এবং বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভবনা নেই, সেইসব প্রজাতি কম ঝুঁকিপূর্ণ হয়।
৮. স্বল্প তথ্যযুক্ত প্রজাতিঃ ( No data)
যে সব প্রজাতি সম্পর্কে যথাযথ তথ্য পাওয়া যায়না
৯. অপর্যাপ্ত তথ্যঃ ( Not yet evaluation)
উপরের তালিকাযুক্ত নয় এমন প্রাণীর তথ্যের অভাব।
IUCN দ্বারা প্রকাশিত রেড ডাটা বুকের সংরক্ষণযোগ্য প্রজাতির সংখ্যা তালিকাটি একটি ছকের মাধ্যমে দেখানো হল-
সিরিয়াল নং | প্রজাতির বিভাগ | প্রজাতির সংখ্যা |
১ | বিলুপ্ত প্রজাতি | ৮৬৪ |
২ | বন্য বিলুপ্ত প্রজাতি | ৭৮ |
৩ | সংকটপূর্ণ বিপন্ন প্রজাতি | ৫১৭৬ |
৪ | বিপন্ন প্রজাতি | ৭৭০৫ |
৫ | বিপদগ্রস্ত প্রজাতি | ১১৬৫৪ |
৬ | ভবিষ্যতে বিপদ গ্রস্ত প্রজাতি | ৪৪০৬ |
৭ | স্বল্প সতর্কযুক্ত প্রজাতি | ৩৯৯৫৪ |
৮ | স্বল্প তথ্যযুক্ত প্রজাতিঃ | ৮২০৬৫ |
নিচে ছকের মাধ্যমে IUCN দ্বারা প্রকাশিত সংরক্ষণযোগ্য উদ্ভিদ ও প্রাণীকে ছকের মাধ্যমে উপস্থাপিত করা হলঃ
→ সংকটপূর্ন বিপন্ন স্তন্যপায়ী
সিরিয়াল নং | স্তন্যপায়ী প্রাণীর নাম | কোথায় পাওয়া যায় | বিলুপ্তির কারণ |
---|---|---|---|
১ | বেঁটে শুকর (Pygmy Hog) | হিমালয়ের পাদদেশে ৩০০ মিটার উচ্চতায় , ভুটানের দক্ষিণাংশে ভারতের আসামে | মানুষের অত্যধিকহারে বিচরণ এবং অরণ্য হ্রাস বিলুপ্তির কারণ |
২ | আন্দামানের সাদা দাঁতযুক্ত ইঁদুর (Andaman white tooth shrew) | আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ | এরা নিশাচর প্রাণী যারা মূলত চোরা ব্যবসায়ীদের কারণে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন সুনামি ও জলবায়ুর পরিবর্তন |
৩ | Jerkin’s Andaman spiny shrew | দক্ষিণ আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে | |
৪ | নিকবর দ্বীপপুঞ্জের সাদা দাঁতযুক্ত ইঁদুর (Nicobar white tailed shrew) | গ্রেট নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে দেখা যায়। | |
৫ | Kondona rat | পুনে , মহারাষ্ট্রে | অত্যাধিক পশুচারণ, পর্যটন শিল্পের জন্যে |
৬ | এল্ভিরা র্যাট (Large rock rat or Elvira rat) | তামিল নাডুর পূর্বঘাট | জনসংখ্যার চাপ, পশুচারণ ,খনন কাজের জন্যে |
৭ | উরন্ত চরুই (Namdapha flying squirrel) | উত্তর – পূর্ব ভারতের অরুনাচল প্রদেশ | |
৮ | গন্ধগোকুল (Malabar civet) | মালাবার উপকূলে পশ্চিমঘাট অঞ্চলে | চোরাশিকারিদের জন্যে |
৯ | সুমাত্রার দুই শুঁড় যুক্ত গণ্ডার (Sumatran rhinoceros) | ভারতের উত্তর পূর্বে দেখা যায় | চোরাশিকারিদের দাপদএর জন্যে |
১০ | জাভা এক শুঁড় যুক্ত গণ্ডার Java rhinoceros | গঙ্গা ব্রমহাপুত্র নদী অববাহিকা,ভারত মায়ানমার সীমান্তে, তরাই অঞ্চলে, পশ্চিম বঙ্গের উত্তরদিকে | মানুষের হস্তক্ষেপে |
→ সংকটপূর্ন বিপন্ন পক্ষী প্রজাতি
সিরিয়াল নং | পক্ষী প্রজাতির নাম | কোথায় পাওয়া যায় |
---|---|---|
১ | বেয়ারের ভূতিহাস (Aythya baeri) | ভারতের উত্তর পুর্ব দিকে অরুনাচল প্রদেশ, আসাম, মিজোরাম , পশ্চিম বঙ্গ ওডিশা |
২ | বন্য পেঁচা (Forest owlet) | মহারাষ্ট্রের উত্তর দিকে, মধ্য প্রদেশের দক্ষিণ পুর্ব দিকে এবং ওডিশার পশ্চিম দিকে |
৩ | গ্রেট ইণ্ডিয়ান বাস্টার্ড Great Indian bustard | গুজরাট , মহারাষ্ট্র , পঞ্জাব, রাজস্থান, তামিল নাডু, পশ্চিম ঘাট পার্বত্য অঞ্চল |
৪ | বেঙ্গল ফ্লোরিক্যান Bengal florican | তরাই অঞ্চলে , উত্তর প্রদেশ পশ্চিম বঙ্গএর জলদা পাড়া তে ও আরুনাচল প্রদেশে |
৫ | সাইবেরিয়ান ক্রেন (Siberian crane) | পরিযায়ি এই পাখিটি নাগপুরের দক্ষি্নাংশে ও পুর্ব বিহারে দেখা যায় , মূলত ভরতপুর বার্ড স্যাঞ্চুয়ারি তে দেখা যায় |
৬ | Spoon billed sandpiper | কামচাটকা উপকূলে |
৭ | Socialable lapwing | উত্তর পুর্ব ভারতে |
৮ | Jerdon’s courser | পূর্ব ঘাট পর্বতমালা, অন্দ্রপ্রদেশ |
৯ | White back vulture | সমগ্র ভারতে |
১০ | Red headed vulture | ভারতের গিজ্রাত, মহারাষ্ট্র , কেরালা, গোয়া , কারনাতাকা, মধ্য প্রদেশ, বিহাএ, আসাম প্রভৃতি রাজ্যে |
১১ | White bellied heron | পূর্ব হিমালইয়,আরুনাচল প্রদেশ |
১২ | Slender billed vulture | গাঙ্গেয় সমভুমির উত্তরে, হিমাছাল প্রদেশের পশ্চিমে, ওডিশা, সমগ্র আসাম |
১৩ | Indian vulture | মধ্য ভারত ও উপদ্বীপীয় অঞ্চলে |
১৪ | Pink headed duck | ওডিশা, পূর্ব উপকূলে, মহারাষ্ট্র , পশ্চিম বঙ্গ, বিহার,উত্তরাখন্ড, হিমাচল প্রদেশ ,পুর্ব ঘাট |
১৫ | Himalayan quail | উত্তরাখন্ড, উত্তর পুর্ব ভারত। |
→ সংকটপূর্ন বিপন্ন সরীসৃপ
সিরিয়াল নং | সরীসৃপ প্রজাতির নাম | কোথায় পাওয়া যায় |
---|---|---|
১ | Gharial | গঙ্গা , পাঞ্জাব সিন্ধু নদী, উত্তর পুর্ব ভারতের ব্রম্ভপুত্র নদী , গোদাভোরি , আসামের বরাকর নদী |
২ | Hawksbill turtle | ভারতের পুর্ব উপকূলে |
৩ | Leatherback turtle | ভারতের পুর্ব উপকূলে |
৪ | River terrapin | পশ্চিম বঙ্গ, সুন্দরবন, ওডিশা |
৫ | Bengal roof turtle | উত্তর পূব ভারত, |
→ সংকটপূর্ন বিপন্ন মৎস্য
সিরিয়াল নং | মৎস্য প্রজাতির নাম | কোথায় পাওয়া যায় |
---|---|---|
১ | Pondicherry shark | ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলে |
২ | Ganges shark | গঙ্গা নদী ও শাখা নদী |
৩ | Knife tooth sawfish | আরব সাগর |
৪ | Large tooth sawfish | ক্রান্তীয় অঞ্চলে |
→ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাঃ
IUCN দ্বারা সংকটজনক প্রজাতির সংরক্ষনের জন্যে কতগুলি পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা দরকার সেগুলি হলঃ
১. প্রথমত সমগ্র প্রজাতির অবস্থান ও অবস্থা বুঝে তাদেরকে সংরক্ষণের আওতায় এনে জীব বৈচিত্র্য রক্ষা করা।
২. বিজ্ঞান ভিত্তিক উপায়ে জীবজগৎ কে রক্ষা করা প্রয়োজন।
৩. সরকারি, বেসরকারি ,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জীব বৈচিত্র্য রক্ষার্থে কর্ম সূচী গঠন করা
৪.সর্বশেষে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো ।
© লেখিকা- সায়ন্তনী সিং
প্রকাশনায়- www.studentscaring.com
আইইউসিএন লাল তালিকা, ভারতের বিপন্ন প্রাণীর তালিকা, রেড ডাটা বুক কাকে বলে, red data book kaake bole, আইইউসিএন – জীববৈচিত্র্য ও সংরক্ষণ, ক্লাস 12 জীববিদ্যা, লাল ডেটা কি বই?,