HS History

সমাজ ও শিক্ষা সংস্কারে রাজা রামমােহন রায়-এর অবদান মূল্যায়ন করাে | HS History

পোস্টটি শেয়ার করুন
4/5 - (3 votes)

আজকে ২০১৯ সালের উচ্চমাধ্যমিকে ইতিহাস বিষয়ে আসা বড়ো প্রশ্নের উত্তর গুলি নিয়ে আলোচনা করা হল। আজকের প্রশ্ন হল সমাজ ও শিক্ষা সংস্কারে রাজা রামমােহন রায়-এর অবদান মূল্যায়ন করাে উত্তরটি নিচে দেওয়া হল-

সমাজ ও শিক্ষা সংস্কারে রাজা রামমােহন রায়-এর অবদান মূল্যায়ন করাে

ভূমিকা- 

যেসকল যুক্তিবাদী মহান ব্যাক্তি গর্ব এই ধ্যান-ধারণায় প্রভাবিত হতে বাংলার মানুষকে সাহায্য করেছিল ,তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বাংলা তথা ভারতবর্ষের নবজাগরণের অগ্রদূত রাজা রামমোহন রায়। আধুনিক যুগে প্রবেশ করেও ভারতীয় সমাজ ও সভ্যতা যখন- অশিক্ষা, অসামাজিকতা ও কুসংস্কারের অন্ধকারে ডুবে ছিল, ঠিক তখনই আবির্ভাব ঘটে ভারত পথিক রামমোহন রায়ের এবং তখন তিনি সমগ্র জাতিকে আলোর পথ দেখান। এই জন্য রাজা রামমােহন রায় কে “ভারতীয় নবজাগরণের অগ্রদূত ; ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ ও আধুনিক ভারতের ইরাসমাস” উপাধি দেওয়া হয়।

এই প্রসঙ্গে বিপিনচন্দ্র পাল বলেছেন- 

“ভারতবর্ষের শিক্ষার ইতিহাসে রাজা রামমোহন রায় আধুনিকতার অগ্রদূত”।

Join us on Telegram

প্রসঙ্গ রামমােহনঃ

পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ভারতবাসী পাশ্চাত্যের যুক্তিবাদী এবং মানবতাবাদী ধ্যানধারণার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। যে সকল যুক্তিবাদী মহান ব্যক্তি বাংলার মানুষকে এই ধ্যানধারণায় প্রভাবিত হাতে সাহায্য করেছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন নবজাগরণের অগ্রদুত রাজা রামমােহন রায়। রামমােহনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় উনবিংশ শতাব্দীতে সমাজ ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

রাজা রামমােহন রায়-এর সমাজ সংস্কার

সমাজ সংস্কারক হিসেবে রামমোহন রায়ের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান গুলি হল-

(1) সতীদাহ প্রথার অবসান:

সতীদাহ প্রথার হাত থেকে সমাজকে, নারীজাতিকে মুক্ত করার জন্য সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী জনমত সংগঠিত করার কাজ শুরু করে। এবং তৎকালীন বাংলার বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের সই করা একটি আবেদন পত্র উইলিয়াম বেটিঙ্কের কাছে পাঠান এবং সরকার ১৮২৯ সালের আইন অনুযায়ী সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেন।

(2) নারী মুক্তি:

সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে রাজা রামমােহন রায়ের নারীমুক্তি আন্দোলন ছিল যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ কারণ তিনি সমাজে নারীজাতির অমর্যাদা এবং নানা ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণের বিরােধিতা করতেন। বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, কৌলিন্যপ্রথা, প্রভৃতি সামাজিক কুপ্রথার তিনি ছিলেন সমালােচক।

(3) জাতিভেদ প্রথার বিরোধিতা: 

রামমোহন হিন্দু সমাজে জাতি ভেদ ও অস্পৃশ্যতা প্রথার তীব্র বিরোধিতা করেন । তিনি বজ্রসূচি গ্রন্থটির বাংলা অনুবাদ করে প্রচার করেন যে ,জাতিভেদ প্রথা শাস্ত্রসম্মত না। তিনি ও অসবর্ণ বিবাহের সমর্থনে বিভিন্ন পুস্তিকা রচনা করেন। 

(4) অন্যান্য সামাজিক প্রথা: 

রামমোহন বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ , কন্যাপণ, কৌলিন্য প্রথা , গঙ্গাসাগরে সন্তান বিসর্জন প্রভৃতি কু-প্রথা গুলির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্র ও বিভিন্ন পত্রিকার মাধ্যমে তিনি প্রচার চালিয়ে যান। ্তিনি পুরুষের সমান অধিকার, বিধবা বিবাহ প্রচলন প্রভৃতি বিষয়ের উপর যথেষ্ট তৎপর হয়ে কাজ করেন। 

রাজা রামমােহন রায়-এর শিক্ষা সংস্কার

ভারতের পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের ক্ষেত্রে তিনি একটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন । শিক্ষা সংস্কারের ক্ষেত্রে রামমোহন রায় এর পদক্ষেপ গুলি হল-

(1) পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার :

ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে রামমােহন রায় ছিলেন পথিকৃৎ। ১৮১৩ সালের সনদ আইনে ভারতীয়দের শিক্ষার জন্য ১ লক্ষ টাকা খরচের নির্দেশ আসে। পাশ্চাত্য শিক্ষা খাতে এই ১ লক্ষ টাকার দাবি জানিয়ে তিনি ১৮২৩ সালের ১১ই ডিসেম্বর লর্ড আমহার্স্টকে তার মতামত জানিয়েছিলেন।

(2) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন:

ডেভিড হেয়ারের সহযােগিতায় রামমােহন বহুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮১৭ সালে হিন্দু কলেজ, ১৮২৫ সালে বেদান্ত কলেজ এবং জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশন, বর্তমানের স্কটিশ চার্চ কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গে আলেকজান্ডার ডাফের উদ্দ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে।

(3) গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা রচনা:

বাংলা ভাষায় রচিত গৌড়িয় ব্যাকারণ বেদান্ত গ্রন্থ সহ প্রায় ২৩টি গ্রন্থ তিনি রচনা করেন। তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় সংবাদ কৌমুদি এবং মিরা উল আকবর নামের পত্রপত্রিকা। এছাড়াও তিনি সংবাদপত্র দমন আইনের বিরােধিতা করেছিলেন।

মূল্যায়নঃ

সামগ্রিক মূল্যায়নে বলা যায় যে রাজা রামমােহন রায় যেভাবে শিক্ষা এবং সমাজকে কুসংস্কার মুক্ত করে একটি মূল্যবােধযুক্ত সমাজের পরিকল্পনা করেছিলেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এই কারণে তাকে নির্ধিদায় আধুনিক ভারতের জনক বলাটা অসংগত নয়।

উচ্চমাধ্যমিক ২০১৯ ইতিহাসের অন্যান্য প্রশ্ন ও উত্তর গুলি দেখার জন্য এখানে ক্লিক করো

উচ্চমাধ্যমিকের বিগত বছরের প্রশ্ন ও উত্তর PDF ডাউনলোড করার জন্য এখানে ক্লিক করো।

Source: wbchse.nic.in

Students Care

স্টুডেন্টস কেয়ারে সকলকে স্বাগতম! বাংলা ভাষায় জ্ঞান চর্চার সমস্ত খবরা-খবরের একটি অনলাইন পোর্টাল "স্টুডেন্ট কেয়ার"। পশ্চিমবঙ্গের সকল বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের এবং সমস্ত চাকুরী প্রার্থীদের জন্য, এছাড়াও সকল জ্ঞান পিপাসু জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিবর্গদের সুবিধার্থে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: স্টুডেন্টস কেয়ার কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত !!