লক্ষৌ চুক্তির শর্তাবলী উল্লেখ করাে। এই চুক্তির গুরুত্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে
আজকে ২০১৯ সালের উচ্চমাধ্যমিকে ইতিহাস বিষয়ে আসা বড়ো প্রশ্নের উত্তর গুলি নিয়ে আলোচনা করা হল। আজকের প্রশ্ন হল লক্ষৌ চুক্তির শর্তাবলী উল্লেখ করাে। এই চুক্তির গুরুত্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে উত্তরটি নিচে দেওয়া হল-
লক্ষৌ চুক্তির শর্তাবলী উল্লেখ করাে। এই চুক্তির গুরুত্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে
পটভূমিকাঃ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভারতের জাতীয় আন্দোলন অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়ে। হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায় নিজেদের মধ্যে গণ্ডগােল ভুলে গিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে উদ্দ্যোগী হয় এবং এর বাস্তব প্রয়ােগ ছিল ১৯১৬ সালের লক্ষৌ চুক্তি।
লক্ষৌ চুক্তির শর্তাবলী
লক্ষৌ চুক্তির মূলকথা ছিল প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন, বিকেন্দ্রীকরণ, এবং ভারতীয়করণ। জাতীয় কংগ্রেস এবং মুসলিম লিগের যৌথ উদ্দ্যোগে সম্পাদিত লক্ষৌ চুক্তিতে বলা হয়েছিল-
- (i) পৃথক নির্বাচনের ভিত্তিতে জাতীয় কংগ্রেস মুসলিমদের প্রতিনিধিত্বের দাবিগুলি মেনে নেবে।
- (ii) কংগ্রেসের স্বরাজের দাবিকে মুসলিম লিগ সমর্থন করবে।
- (iii) কেন্দ্রীয় আইন পরিষদ এবং প্রাদেশিক আইন সভার সদস্যদের ১/৩ অংশ হবে মুসলিম প্রতিনিধি। তবে সংরক্ষিত আসন ছাড়া অন্য কোনাে আসনের, কেন্দ্র ও প্রদেশে প্রতিদ্বন্ধুিতা করতে পারবে না।
- (iv) কংগ্রেস এবং মুসলিম লিগ উভয়দল যৌথভাবে শাসন সংস্কারের দাবি উত্থাপন করবে।
- (v) ভারত সচিবের দুজন সরকারীর মধ্যে একজন হবে ভারতীয়।
- (vi) অন্য ডােমিনিয়ানের মর্যাদা এবং প্রতিনিধিত্ব ভারতকে দিতে হবে।
লক্ষৌ চুক্তির গুরুত্ব
(i) ১৯১৬ সালে পার্গেী চুক্তি হিন্দু মুসলমানের মধ্যে ঐক্যের পরিবেশ তৈরী করে ঐতিহাসিক বিপান চন্দ্র বলেছেন, লক্ষৌ চুক্তি হল হিন্দু মুসলমান ঐক্য স্থাপনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে একদিকে হিন্দু মুসলমান ঐ ফিরে এসেছিল, অন্যদিকে বালগঙ্গাধর তিলক এবং মহম্মদ আলি জিন্নার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছিল।
(ii) লক্ষৌ চুক্তির মধ্য দিয়ে যে হিন্দু মুসলিম ঐক্য গড়ে ওঠে তা স্বাধীনতা আন্দোলনে নতুন অধ্যায় রচনা করে এবং খিলাফত আন্দোলনে, অসহযােগ আন্দোলনে মুসলমানদের ব্যাপক সারা লক্ষ্য করা যায়।
(iii) এই চুক্তির ফলে ১৯১৯ সালে মন্টেগু টেমস্ ফোর্ড আইনের দ্বারা ভারতীয়দের স্বায়ত্তশাসনের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সামগ্রিক মূল্যায়ন ও লক্ষৌ চুক্তি সার্বিকভাবে ভারতে হিন্দু মুসলমান ঐক্য গঠন করতে পারেনি। মুসলিমদের জন্য আলাদা নির্বাচনের নীতি মেনে নিয়ে কংগ্রেস ঠিক করেনি বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন। ঐতিহাসিক রমেশ চন্দ্র মজুমদার এই চুক্তিকে অদূরদর্শিতার পরিচায়ক বলে মনে করেন। তিনি বলেন “এই চুক্তির দ্বারা যুক্তপ্রদেশের মুসলিমদের স্বার্থরক্ষার নামে বাংলা এবং পাঞ্জাবের মুসলিমদের স্বার্থ ক্ষুন্ন করা হয়”।
ঐতিহাসিক অমলেশ ত্রিপাঠির মতে “এই চুক্তি ধর্মনিরপেক্ষ প্রচারের আদর্শ প্রসারে সহায়ক ছিল না। এই চুক্তি দিয়েই হিন্দু মুসলিম ঐক ফিরে আসলেও ভবিষ্যৎ-এ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি তৈরীর সম্ভাবনা থেকে যায়”।
উচ্চমাধ্যমিক ২০১৯ ইতিহাসের অন্যান্য প্রশ্ন ও উত্তর গুলি দেখার জন্য এখানে ক্লিক করো
উচ্চমাধ্যমিকের বিগত বছরের প্রশ্ন ও উত্তর PDF ডাউনলোড করার জন্য এখানে ক্লিক করো।
Source: wbchse.nic.in