২৪ ঘন্টায় ১ দিন এখন অতীত, এবার থেকে পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্য ২৫ ঘন্টায় ১ দিন!
২৪ ঘন্টা এখন অতীত, এবার থেকে পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্য ২৫ ঘন্টায় ১ দিন
পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেয়ে হচ্ছে ২৫ ঘন্টা
জীবনে বেঁচে থাকার জন্য “সময়ের গতিকে” জানা আমাদের কাছে এক অপরিহার্য বিষয়। আমরা ঘড়ির কাঁটাকে সময়ের ট্রেনের সাথে তুলনা করতে পারি। আর ১,২,৩,৪ লেখা গুলি হল সময়ের স্টেশন। আমরা দৈনন্দিন জীবনে সময়ের ট্রেনে চড়ে এক একটা স্টেশন অতিক্রম করে চলেছি। সেরকমি পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্য ২৫ ঘন্টায় ১ দিন হতে চলেছে ।

সারাদিনের নানান কাজ, খেলাধুলা, ঝগড়াঝাঁটি, আড্ডা, বন্ধু-বান্ধবিদের সাথে কাটানো সময়েত মাঝে আমাদের হাতে খুব বেশি সময় পরে থাকেনা। মাঝে মাঝে আমরা বলেই ফেলি দিন কেন এত ছোটো! কিন্তু ভবিষ্যতে এর কিছুটা সুরাহা মিলতে চলেছে। অদূর ভবিষ্যতে ২৪ ঘন্টার বদলে ২৫ ঘন্টায় হবে এক দিন। হ্যাঁ আপনি ঠিকি ভেবেছেন, সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের গবেষণায় এই তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
♥ কি ঘটতে চলেছে?
কলম্বিয়া ইউনিভারসিটি এবং ইউনিভারসিটি অব উইস্কন্সিন ম্যাডিসন এর গবেষকরা দাবী করছেন যে, অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্য ২৪ ঘন্টা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৫ ঘন্টা হতে চলেছে। তাঁরা গবেষণার মাধ্যমে জানিয়েছেন, বিশ্ব ব্রম্ভ্রান্ড সৃষ্টি হওয়ার সময় দিনের দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র ৩০ মিনিট, অর্থাৎ সেই সময় ১৫-৩০ মিনিটের মধ্যে একবার করে চাঁদ ও সূর্যের দেখা মিলত। কিন্তু সময় বিবর্তন হয়েছে। সূর্য ও গ্রহ, উপগ্রহ গুলির মধ্যে তৈরি হয়েছে দূরত্ব। তাই দিনের সময়ের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেতে পেতে আজ থেকে ১০০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্য হয়েছিল ১৮ ঘন্টা ৪১ মিনিট, যেটা বর্তমানে হয়েছে ২৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড বা ২৪ ঘন্টা। এবং ভবিষ্যতে ২০ কোটি বা ২০০ মিলিয়ন বছরের মধ্যে পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেয়ে হবে আনুমানিক ২৫ ঘন্টা।
যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. স্টিফেন মায়ারস দাবি করেছেন, ভবিষ্যতে ২৪ নয়, ২৫ ঘণ্টায়ই এক দিন হবে। তার সঙ্গে একমত দেশটির কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অ্যালবার্তো শিলিনভেরনোও। সম্প্রতি তারা যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সে এ বিষয়ে কথা বলেছেন।
ড. মায়ারস বলেন, “পৃথিবী ও চাঁদের সম্পর্ক নিয়ে শিলিনভেরনোর সঙ্গে আমি অনেকদিন কাজ করেছি। প্রায় ১৪০ কোটি বছর আগের পাথরের নমুনা পরীক্ষা করে আমরা চেষ্টা করেছি প্রাচীন ভৌগোলিক সময়সীমা সম্পর্কে ধারণা নিতে।”
©কপিরাইট – স্টুডেন্টস কেয়ার দ্বারা সংরক্ষিত
♥পৃথিবীর সময়ের সাপেক্ষে অন্যান্য গ্রহের এক দিনের দৈর্ঘ্য :
আমরা জানি পৃথিবী নিজের চারিদিকে আবর্তন করে প্রায় ২৪ ঘন্টা বা ১ দিন সময়ে। এই হিসাবে প্রতিটি গ্রহের নিজের চারপাশে একবার আবর্তন করতে যে সময় লাগে সেই সময় হল সংশ্লিষ্ট গ্রহের এক দিন। নিচে সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহের এক দিনের দৈর্ঘ্যরর একটি তালিকা দেওয়া হল-
১. বুধ – বুধে ৫৯ দিনে এক দিন হয়।
২. শুক্র- শুক্র গ্রহে ২৪৩ দিনে এক দিন হয়।
৩. মঙ্গল – মঙ্গল গ্রহের ২৪ ঘন্টা ৩৭ মিনিট ৪ সেকেন্ডে এক দিন হয়।
৪. বৃহস্পতি – বৃহস্পতি গ্রহে ৯ ঘন্টা ৫০ মিনিট সময়ে এক দিন হয়। অর্থাৎ কুলীন গ্রহগুলির মধ্যে বৃহস্পতির গতিবেগ সবচেয়ে বেশি।

৫. শনি- শনিতে ১০ ঘন্টা ২৫ মিনিটে এক দিন হয়।
৬. ইউরেনাস – ইউরেনাস গ্রহে ১০ ঘন্টা ৪৫ মিনিটে এক দিন হয়।
৭. নেপচুন- নেপচুনে ১৬ ঘন্টায় এক দিন হয়।
৮. সেরেস – সেরেস হল বামন গ্রহ। এখানে এক দিন হতে সময় লাগে প্রায় ৯ ঘন্টা
৯. প্লুটো – প্লুটোতে এক দিন হতে সময় লাগে প্রায় ৬.৩৯ দিন।
১০. হাউমেয়া তে ৩.৯ ঘন্টায় এক দিন হয়।
১১. মাকেমাকেতে ২২.৫ ঘন্টায় এক দিন হয়।
১২. এরিসে ২৫.৯ ঘন্টায় এক দিন হয়।
বি: দ্র: ওপরের গ্রহগুলির সময় পৃথিবীর সময়ের অনুকরণে নির্ণয় করা হয়েছে।
♥ পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির হার:
এতক্ষনে আমরা জেনে গিয়েছি, আগত ২০০ মিলিয়ন বছর বা ২০ কোটি বছরের মধ্যে পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ এক ঘন্টা বৃদ্ধি পেয়ে ২৫ ঘন্টা হতে চলেছে। এই বৃদ্ধির হিসাব নিকাশ করতে বসলে আমরা জানতে পারি যে, দুই মিলি সেকেন্ড দিনের বৃদ্ধির জন্য সময় লাগে প্রায় ১০০ বছর। আবার দিনে অতিরিক্ত ১ মিনিট যোগ হওয়ার জন্য সময় লাগবে প্রায় ৬.৭ মিলিয়ন বছর। এই বিষয়ে গবেষণারত কো-লিডার মোরিশন এর মতে “এটি খুবি ধীরগতি সম্পন্ন একটি প্রক্রিয়া”
♥ সময়ের হিসাব করা সম্ভব হল কিভাবে?
গবেষক রা তাদের গবেষণায় দিনের দৈর্ঘ্য হিসাব করার জন্য খ্রিষ্টপূর্ব ৭২০ থেকে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মহাকাশ জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত ঘটনাবলী গুলিকে বিশ্লেষণ করেছেন।
বিভিন্ন ঐতিহাসিক গ্রন্থ, প্রাচীন চিত্র, নানান গল্পকথা গুলিকে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে আনুমানিক কতদিন লাগবে তার একটা হিসাব করেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ, গবেষকরা গত এক সহস্রাব্দ ধরে পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্য কত পরিমান দীর্ঘায়ত হয়েছে তারও একটি আনুমানিক সময় নির্ণয় করতে সক্ষম হয়েছেন।
♥ পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ কী?
কলম্বিয়া ইউনিভারসিটি এবং ইউনিভারসিটি অব উইস্কন্সিন ম্যাডিসন এর গবেষক দের মতে ভবিষ্যতে পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্য ২৫ ঘন্টা হতে চলেছে। এর কারণ হিসাবে পৃথিবী ও চাঁদের মাঝের দূরত্ব কেই চিহ্নিত করা হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে পৃথিবী ও চাঁদের দূরত্ব। ভূ-বিজ্ঞানীরা মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রর অ্যারিজোনায় এই বিষয়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষা চালিয়ে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। ন্যাশানাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস-এ প্রকাশিত হওয়া মাত্রই নিশ্ব জুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে এই ঘটনা। মূল কারণ অনুসন্ধান এর আগে আমাদের জানতে হবে নিম্নলিখিত কিছু প্রাথমিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
১. চাঁদ হল পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ এবং এর সাথে সাথে সৌর জগতের পঞ্চম বৃহত্তম উপগ্রহ।
২. পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে চাঁদের কেন্দ্রের গড় দূরত্ব হল ৩৮৪,৩৯৯ কিলোমিটার ( প্রায় ২৩৮,৮৫৫ মাইল) যা পৃথিবীর ব্যাসের প্রায় ৩০ গুণ। চাঁদের ব্যাস ৩,৪৭৪.২০৬ কিলোমিটার (২,১৫৯ মাইল) যা পৃথিবীর ব্যাসের এক-চতুর্থাংশের চেয়ে সামান্য বেশি।

৩. এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, চাঁদের আয়তন পৃথিবীর আয়তনের ৫০ ভাগের ১ ভাগ।
৪. এর পৃষ্ঠে অভিকর্ষ বল পৃথিবী পৃষ্ঠে অভিকর্ষ বলের এক-ষষ্ঠাংশ। অর্থাৎ, পৃথিবী পৃষ্ঠে কারও ওজন যদি ১২০ পাউন্ড হয় তা হলে চাঁদের পৃষ্ঠে তার ওজন হবে মাত্র ২০ পাউন্ড।
৫. চাঁদ প্রতি ২৭.৩২১ দিনে পৃথিবীর চারদিকে একটি পূর্ণ আবর্তন সম্পন্ন করে। প্রতি ২৯.৫ দিন পরপর চন্দ্র কলা ফিরে আসে অর্থাত্ একই কাজ আবার ঘটে।
৬. পৃথিবী-চাঁদ-সূর্য তন্ত্রের জ্যামিতিতে পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের কারণেই চন্দ্র কলার এই পর্যানুক্রমিক আবর্তন ঘটে থাকে।
♣ কারণ –
যত সময় যাচ্ছে চাঁদ পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তাতেই প্রভাবিত হচ্ছে পৃথিবীর আহ্নিক গতি। নিজের চারদিকে এক চক্কর মারতে বেশি সময় নিচ্ছে পৃথিবী। কাজেই দিন আরও লম্বা হয়ে যাচ্ছে।
পৃথিবীর বয়স যতই বাড়ছে দিনগুলোর সময়ও আগের চেয়ে দীর্ঘ হচ্ছে। আর এ কারণেই ভবিষ্যতে আমরা পেতে চলেছি ২৪ ঘন্টার বদলে ২৫ ঘন্টায় দিন। পৃথিবী থেকে চাঁদ আস্তে আস্তে দূরে সরে যাওয়ার কারণেই পৃথিবীর সময় আরও দীর্ঘ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রতি বছর আমাদের পৃথিবী থেকে চাঁদ ৩.৮২ সে.মি দূরে সরে যাচ্ছে। এই পরিমাণ খুব সামান্য হলেও তা পৃথিবীর গতিবিধিতে যথেষ্ঠ প্রভাব ফেলছে।

এ নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন ম্যাডিসন এর ভূবিজ্ঞানের অধ্যাপক স্টিফেন মেয়ার্স বলেন, “সময় যতোই গড়াচ্ছে চাঁদ পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তাতেই প্রভাবিত হচ্ছে পৃথিবীর আহ্নিক গতি। নিজের চারদিকে একবার ঘুরতে বেশি সময় নিচ্ছে পৃথিবী। যার ফলে দিন আরও লম্বা হয়ে যাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “ভবিষ্যতে ২৫ ঘণ্টাতেই ১ দিন হতে চলেছে। বাড়ছে পৃথিবী ও চাঁদের দূরত্ব।”
উপরিউক্ত সকল তথ্য বিজ্ঞানিদের গবেষণালব্ধ ফলাফল। পরবর্তী কালে আরও নতুন নতুন কারণ অনুসন্ধান হবে এই বিষয়ে আপরা আশাবাদী। লেখাটি ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট শেয়ার অবশ্যই করবেন।
আপনাদের সকলের কাছে আমাদের প্রশ্ন। সকলে অনুসন্ধান করে উত্তর বানিয়ে আমাদের ইমেল করে দিন। আমরা আপনাদের লেখা সকলের সাথে ভাগ করে নেবো।
♦ প্রশ্ন : পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেলে কি কি ঘটবে? অথবা, পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পাওয়ার ফলাফল কি হতে পারে? অথবা, পৃথিবীর গতিবেগ কমে যাওয়ার ফলাফল কি হতে পারে?
প্রশ্নগুলির উত্তর গুলি লিখে আমাদের মেল করুন এই ইমেলে [email protected]
©কপিরাইট – স্টুডেন্টস কেয়ার দ্বারা সংরক্ষিত
পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্য ২৫ ঘন্টায় ১ দিন , পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, পৃথিবীতে ২৫ ঘন্টায় এক দিন, পৃথিবীর গতিবেগ কি কমে যাচ্ছে? পৃথিবীর ঘূর্ণ বেগ কমে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে ১ দিন হবে ২৫ ঘন্টায়

