বিশ্বের সবচেয়ে ছোটো নদী- World Smallest River
“Guinness Book of World Record”। এমন একটি বই,যেখানে পৃথিবীর সমস্ত দুর্লভ ঘটনা ও বস্তুর সম্বন্ধে তথ্য রেকর্ড করা থাকে। এই বই টি প্রথম প্রকাশ করা হয় ১৯৫৫ সালে।দেখতে দেখতে ৬০ বছর অতিক্রান্ত করে ফেলেছে এবং পৃথিবীর এমন কিছু অভাবনীয় তথ্য সংগ্রহ করেছে, যেগুলি সাধারণ মানুষের কল্পনার বাইরে। কিন্তু কখনো কখনো এই বই এর প্রকাশক দের কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, আজকে আমরা সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় পৃথিবীর সব থেকে “ছোটো নদী”বা World Smallest River (দৈর্ঘ্যের বিচারে) রেকর্ডের দিক থেকে এই বই তে কার নাম যুক্ত করা আছে? ‘ডি’(River D) না ‘রোই’(River Roi)?? তাহলে শুরু করা যাক “The mystery of World Smallest River”।
যদি আপনাদের জিজ্ঞাসা করা হয়, পৃথিবীর সব থেকে ছোটো নদীর নাম কী?? আপনাদের মধ্যে কেউ কেউ বলবেন ‘ডি’ আবার কেউ কেউ বলবেন ‘রোই’। কিন্তু এর সঠিক উত্তর কি? তাহলে আমাদের এর সম্পূর্ণ ইতিহাস সম্পর্কে অবগত হতে হবে। তাহলে ‘ডি’ নদীকে দিয়ে শুরু করা যাক।

‘ডি’ নদী উৎপন্ন হয়েছে ‘ডেভিল’ নামে এক হ্রদ (Devil’s Lake,USA) থেকে এবং পতিত হয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরে। প্রাথমিক প্রবাহে ‘ডি‘ খুব সরু ও পুঁচকে দেখতে। তাৎক্ষনিক ভাবে ফানেলের আকার ধারণ করে ডেভিল হ্রদ থেকে মিষ্টি জল কে নিয়ে গিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে ফেলে। এটি ৩০ ফুট চওড়া এবং গভীরতা ৩ ফুট এর বেশি হবেনা।
প্রতি বছর কয়েক হাজার পর্যটক এখানে বেড়াতে আসে এখানকার সমুদ্র সৈকতের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে। তাই এখানে গড়ে উঠেছে বিশ্রাম নেওয়ার আস্তানাও। এই নদীর পাশদিয়ে একটি জাতীয় সড়ক প্রবাহিত হয়েছে, যার নাম ‘Hwy.101’। এই সড়কটিন৮ ডিলেক শহরের(বর্তমান নাম Lincoln City) সাথে যুক্ত হয়েছে। সেই সময় ‘ডি’ নদীর স্থানিয় নাম ছিলো-
“the mouth of Devils Lake”
“the channel to Devils Lake”
“Devil’s Creek”
“Delake Creek”
“the outlet” ইত্যাদি।
এর পর ১৯৪০ সালে, ডিলেকের(Delake) একটি সংস্থার উদ্বেগে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় দেশ ব্যাপি।এই প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য হল, এই নদীর নামকরণ করা। অবশেষে, Mrs. Johanna Beard নামে এক ব্যাক্তি নদীটির নাম ‘ডি’(D) দেওয়ার প্রস্তাব দেন এবং তাঁর এই প্রস্তাব গ্রহণ করা হলে তিনি প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন। এবং সবশেষে U.S. Geographic Board-এই ‘D’ নামটি অফিশিয়ালি গ্রহণ করলে, এই নদীর প্রকৃত নাম হয় ‘ডি’।

১৯৬৫ সালে আমেরিকার ওয়াশিংটন ডি. সি. এর ‘Geodetic-Geographic Board’ এর মতানুসারে ‘ডি’ নদীর দৈর্ঘ্য হল ৪৪০ ফিট বা ১৩৪ মিটার। এবং এটিকে “Guinness Book of World Record”-এ নথিভুক্ত করা হল পৃথিবীর সবচেয়ে ছোটো নদী হিসাবে।
কিন্তু প্রায় ২২ বছর পর ১৯৮৭ সালে এই উপাধি হারাতে হয় ‘রোই’ নদীর কাছে। যখন গ্রেট ফল, মন্টানার,(ইউ.এস.এ) একটি স্কুল দাবি করে যে ‘রোই’ নামে একটি নদীর দৈর্ঘ্য ২০১ ফুট বা ৬১ মিটার। তাই ‘রোই’ নদী কেই পৃথিবীর ছোটো নদী হিসাবে ঘোষো না করা উচিত।
‘রোই’ নদীর উৎপত্তি মুসৌরি নদীর একটি সাদু জলের ঝর্ণা থেকে। এই নদীটিকে জনগনের সামনে আনেন মন্টানার একটি স্কুলের ছাত্র A. Petersen এবং প্রাক্তন ফুটবল খেলোয়ার Dallas Neil.
কিন্তু বিষয়টা এত সহযে মেটার ছিলনা, যখন Lincoln City, শহরের একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার(Gene T. Ginther) পুনরায় সার্ভে করে ‘ডি’ নদীর দৈর্ঘ্য পরিমাপ বলেন, প্রকৃত পক্ষে ‘ডি’ নদীর দৈর্ঘ্য হল ১২০ফিট বা ৩৭ মিটার। তাই পূনরায় “Guinness Book of World Record” এর আধিকারিকদের ডেকে ভাবনা চিন্তা করতে বলা হল।

তখন বিষয়টা পরিষ্কার হল যে, ‘ডি’ নদী মহাসাগরের মধ্যে কিছুটা প্রবাহ পথ রয়েছে, যেটি উচ্চ জোয়ার ও নিম্ন জোয়ারের সময় দৈর্ঘ্যর হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে থাকে। এবং তাঁরা এটাও বল্লেন যে-
“‘ডি’ নদীর মোহনায় যেটিকে সবাই উপসাগরের অংশ হিসাবে চিহ্নিত করে থাকে, সেটি আসলে ‘ডি’ নদীর জোয়ার ভাটার ফলে সৃষ্ট পলল সমতলভূমি”
তাই “Guinness Book of World Record” এর আধিকারিক রা দুই পক্ষকে খুশি করে, সিদ্ধান্ত নিলেন ‘ডি’ ও ‘রোই’ নদীকে যুগ্ম ভাবে এই সন্মান প্রদান করা হবে কিন্তু যদি পৃথিবী সবচেয়ে ছোটো নদী হিসাবে চিহ্নিত বা বিবেচনা করতে হয় তাহলে সেটি হল ‘রোই’ নদী।

