মাংস খেকো গাছ || মাংসাশী উদ্ভিদ || এরা মাংস খেয়েই বেঁচে থাকে !
মাংস খেকো গাছ || মাংসাশী উদ্ভিদ (It’s a trap: Carnivorous plants)
আমাদের এই রহস্যময় পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের রহস্যময় বস্তু রয়েছে। আজ সেরকমি একটি রহস্যময় জীবন্ত বস্তু সম্পর্কে আলোচনা করব। আমরা আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা দেখে থাকি। এই সকল গাছের মধ্যে কোনো গাছ ভেষজ ও উপকারী। আবার কোনো কোনো গাছ হয় অপকারী ও ভয়ংকর। গাছ আবার কিভাবে ভয়ংকর? এটাই ভাবছেন তো? চলুন তাহলে বলেই ফেলি, আসলে আমাদের এই রহস্যময় পরিবেশে এমন কিছু গাছ রয়েছে যারা কিনা মাংস খেতে ভালবাসে! অর্থাৎ মাংস খেকো গাছ! হ্যাঁ ঠিকি ভেবেছেন, কিছু কিছু গাছ আছে যারা পোকামাকর, মাকড়সা ইত্যাদি প্রাণীকে ফাঁদে ফেলে। তবে কোন কোন সময় ইঁদুর বা ব্যাঙ জাতীয় ছোট ছোট প্রাণীরা এদের শিকারে পরিণত হয়।
মাংসাশী উদ্ভিদ সংখ্যাঃ
পৃথিবীতে প্রায় ৪৫০ প্রজাতির মাংসাশী উদ্ভিদ থাকলেও, এ যাবত্ গুটি কয়েক উদ্ভিদের সম্বন্ধে তথ্য পাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে।
কয়েকটি প্রজাতির মাংসাশী উদ্ভিদের নামঃ
পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাংস খেকো গাছ পাওয়া যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রজাতি গুলো হল নিম্নরূপ-
১.কলস,
২.স্ন্যাপ ট্র্যাপ,
৩.লবস্টার-পট ট্র্যাপ,
৪.ফ্লাইপেপার ট্র্যাপ,
৫.ব্লাডার ট্র্যাপ,।
৬.ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ ইত্যাদি।

এরা মাংসাশী শ্রেনীর হয়েছে কেন?
মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে আর এক মানুষকে ও খেতে দ্বিধাবোধ করেনা। ঠিক সেরকমি এরাও নিজেদের কে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেবার জন্য এবং নিজেদের অস্তিত্ব কে টিকিয়ে রাখার জন্য এই ধরনের বৈশিষ্টে বিবর্তিত হয়েছে।
ব্যাখ্যা->>> আমরা সকলে জানি, বেঁচে থাকার জন্য সব উদ্ভিদকেই সালোকসংশ্লেষের সাথে সাথে মাটি থেকে জল এবং বিভিন্ন রকম খনিজ পদার্থ সংগ্রহ করতে হয়। সূর্যের উপস্থিতিতে এসব উপাদানের সঙ্গে কার্বন ডাই অক্সাইড মিলিত হয়ে গাছের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য প্রস্তুত করে থাকে। গাছের বৃদ্ধির জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হলো নাইট্রোজেন। এজন্য নাইট্রোজেনসমৃদ্ধ মাটিতে অধিকাংশ উদ্ভিদ সবচেয়ে ভালো জন্মে, কিন্তু আলোচ্য বিষয়ে মাংসাশী উদ্ভিদ গুলি জন্মায় ভেজা আর স্যাঁতস্যাঁতে নিচু জলাভূমিতে। ফলে এখানকার আর্দ্র মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ খুব অল্প পরিমানে থাকে। যেসব গাছ মূল দিয়ে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে তারা এ পরিবেশের মাটিতে জন্মা্নো ও বংশবিস্তার করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। বেঁচে থাকার জন্য মাংসাশী উদ্ভিদরা অন্য একটি পদ্ধতিতে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে থাকে। পদ্ধতিটি হল, তারা বিভিন্ন প্রাণীকে ফাঁদে আটকে ফেলে। এসব প্রাণী মারা যাওয়ার পর তাদের মৃতদেহ থেকে খনিজ উপাদান সংগ্রহ করে। মাংসাশী উদ্ভিদের পাতাগুলো এ কাজে বিশেষভাবে তাদের কে সহায়তা করে থাকে।
কিভাবে এরা শিকার করে?
অন্যান্য প্রাণীর মত এসব উদ্ভিদ কাছে গিয়ে কোন কিছু শিকার করতে পারেনা। প্রথমত এসব উদ্ভিদ প্রাণীদের বিভিন্ন পদ্ধতিতে আকর্ষন করে। বেশিরভাগ সময় শিকার কখন কাছে আসবে এজন্য তাদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। এ জন্য পোকামাকড় এবং অন্য প্রাণীদের আকর্ষণ করতে তাদের বিশেষ কিছু পদ্ধতি রয়েছে।যেমন-
১) কোন কোন মাংসাশী উদ্ভিদ বাতাসে একধরণের গন্ধ ছড়ায় যা মাছি, মৌমাছি কিংবা পিঁপড়ার মত পোকামাকড়কে আকর্ষণ করে। আবার
২) কোন কোন উদ্ভিদ মাছি কিংবা অন্য পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করতে একধরণের পঁচা গন্ধ ছড়ায়।

৩) অনেক মাংসাশী উদ্ভিদের দেহে উজ্জ্বল রঙের ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। যা পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করার টোপ হিসেবে কাজ করে।
সেরা দশ || বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর সুন্দর হ্রদ || World’s most beautiful lake
৪) কোন কোন উদ্ভিদের পাতার চারদিকে ছোট্ট মুক্তোদানার মত চকচকে কিছু জিনিসের আবরণে ঢাকা থাকে। এগুলো উজ্জ্বল রঙ এবং সুমিষ্ট গন্ধের সাহায্যে পোকামাকড়কে প্রলুদ্ধ করে। সুকৌশলে আটকে রাখা এসব ফাঁদে প্রাণীরা আটকা পড়ে।
কয়েকটি মাংসাশী গাছের বিবরণঃ
এখন কিছু অদ্ভুত ধরনের মাংসাশী গাছের কয়েকটি বিশেষ বৈশিষ্ট তুলে ধরা হল-
(১) কলসি গাছ-
এর পাতা দেখতে অনেকটাই কলসির মতো। তাই এদের কলসি উদ্ভিদ বলে। পাতাগুলোর মাধ্যমেই উদ্ভিদটি শিকার করে। এদের গঠন ও আকৃতি থেকেই নাম দেওয়া হয় কলসি উদ্ভিদ।
উদ্ভিদটি কোথায় কোথায় পাওয়া যায়?
বিশ্বের নানা প্রান্তে এই উদ্ভিদ পাওয়া যায়। দক্ষিণ আমেরিকা, মালয়েশিয়া, মাদাগাস্কার, শ্রীলংকা,ভারতসহ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্রজাতির কলসি উদ্ভিদ রয়েছে।
কলসি গাছের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট—
অ) কলস উদ্ভিদের ইংরেজি নাম পিচার প্ল্যান্ট।
আ) এর বৈজ্ঞানিক নাম হল নেপেন্থেস অ্যাটেনবারোওঘি।
ই) বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ৮০ প্রকারের কলসি উদ্ভিদ দেখা যায়।
ঈ) এদের দেখতে কলসির মতো লাগে। ভেতরের অংশটা থাকে ফাঁপা। পাতার মুখের কাছে ঢাকনাও থাকে।
উ) দৈর্ঘ্যে ২ ইঞ্চি থেকে শুরু করে ২ ফুট পর্যন্ত হতে পারে কলসি উদ্ভিদের পাতা।

এদের শিকারের পদ্ধতি কেমন?-
সাধারণত কলসির মুখে এক ধরনের মধু উৎপন্ন হয়। মূলত এই মধুর লোভেই পোকামাকড় হামাগুড়ি দিয়ে কলসি উদ্ভিদের ভেতর প্রবেশ করে। পোকাটি কলসির ভেতরে ঢুকেই বিপদে পড়ে যায়। কারণ এর ভেতরের দেয়ালটি বরফের মতো মসৃণ ও পিচ্ছিল ধরণের। ফলে পোকাটি কলসির আরও গভীরে পড়ে যায়। কলসির তলদেশে রয়েছে অসংখ্য শূঙ্গ। এই শূঙ্গের জলে একবার কোনো পোকা পতিত হলে সেটি আর বের হতে পারে না। তখন কলসি উদ্ভিদের পরিপাকে সাহায্যকারী উৎস গুলো কলসির তলদেশে বেরিয়ে আসে। এর ফলে পোকার দেহের নরম অংশগুলো পরিপাক হয়ে কলসি উদ্ভিদের দেহে শোষিত হয়। আর শক্ত অংশগুলো কলসির তলদেশে জমা থাকে।
(২) ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ
পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত মাংসাশী গাছ। আসুন জেনে নেই এই মাংসাশী উদ্ভিদের সম্পর্কে
এটি কোথায় পাওয়া যায়?
সাধারণত এটি পাওয়া যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলিনার জলাভূমিতে।
এক নজরে ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ
অ) একে “মাছি ফাঁদ” উদ্ভিদ (Dionaea muscipula) নামেও ডাকা হয়ে থাকে।
আ) এই উদ্ভিদের জীবনকাল প্রায় মোটামুটি ২০ থেকে ৩০ বৎসর পর্যন্ত।
ই) এই উদ্ভিদগুলির মাঝ বরাবর লম্বা দন্ডাকৃতির কান্ডে দৃষ্টিনন্দন সাদা ফুল ফুটে এবং এই ফুল থেকে চকচকে কৃষ্ণকালো অনেকগুলি ফল থোকায় থোকায় ধরে।

ঈ) এই গাছগুলির গোড়ার দিকে ১ ইঞ্চির সমান লম্বা সবুজ পাতা জন্মায়। এই পাতাগুলি দেখতে অনেকটাই ঝিনুকের মত অথবা অনেকটা মুখের চোয়ালের মতো হয়।
উ) গাছের প্রতিটি পাতা তিন থেকে ছয় ইঞ্চির মতো লম্বা হয় এবং এতে অনেক গুলো ছোট ছোট লোম থাকে।
ঊ) এরা বিভিন্ন প্রানী পোকামাকড় কে এদের এই বিশেষ “পাতা দিয়া খায়”।
ঋ) মজার বিষয় হল একটা পোকা হজম করতে ভেনাস ট্র্যাপের সময় লাগে ১০ দিনের মতো।
তথ্য সূত্র—ইন্টারনেট, বিভিন্ন গবেষণা মুলক লেখা এবং পাঠ্য বই।