ইন্টারভিউ দেওয়ার কৌশল: প্রস্তুতি, পোশাক, করণীয় বিষয়, উপস্থাপনা
লিখিত পরীক্ষাতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর কর্মপ্রার্থীর আত্মপ্রকাশ ক্ষমতা কতটা রয়েছে যে সম্বন্ধে জানার জন্য ইন্টারভিউ নেওয়া হয়। বর্তমানে প্রতিযোগীতায় টিকে থাকার জন্য সঠিক ভাবে ইন্টারভিয় প্রস্তুতি নিতে হয় (Interview Preparation tips in Bengali)। এই নিবন্ধের মাধ্যমে ইন্টারভিউ দেওয়ার কৌশল: ইন্টারভিউ প্রস্তুতি (Interview tips in Bengali), ইন্টারভিউ দেওয়া পোশাক, করণীয় বিষয়, ইন্টারভিউ বোর্ডে নিজেকে কিভাবে উপস্থাপ করবেন সে সকল বিষয়ে ধারনা প্রদান করা হয়েছে।
ইন্টারভিউ কি?
বর্তমানে সামাজিক পরিবেশে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে সমাজের অন্যতম একটি বহুল প্রচলিত শব্দ হল “ইন্টারভিউ” (Interview)। “ইন্টারভিউ” শব্দটির আভিধানিক অর্থ হল “সাক্ষাৎকার”।
কিন্তু আজকের দিনে শব্দটির বাস্তবিক অর্থ হল যে কোনো ধরণের কর্মী নিয়োগের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকর্তাদের সাথে কর্মপ্রার্থী সরাসরি সাক্ষাৎকার এবং মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ। সরকারী ও বেসরকারি উভয়ক্ষেত্রেই কর্মী নিয়োগের জন্য ইন্টারভিউ নেওয়া হয়। যার জন্য আগে থেকে সঠিক পথে প্রস্তুতি নেওয়াটা আবশ্যিক।
ইন্টারভিউ দেওয়ার কৌশল
আপনি যত স্মার্ট আর সুযোগ্য প্রার্থীই হোন না কেন, চাকরির ইন্টারভিউতে যেতে হলে আপনাকে প্রস্তুতি নিতেই হবে। ইন্টারভিউ একটা যুদ্ধক্ষেত্রের মতো। এখানে প্রথমেই নিজের সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা দিতে হবে। ভুল করলে দ্বিতীয় সুযোগ আর পাওয়া যাবে না। তাই ইন্টারভিউ দক্ষতা বাড়াতে কিছু কৌশল গ্রহণ করুন।
লিখিত পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ এর মধ্যবর্তী সময়ে আপনার কী করনিয়?
‘ইন্টারভিউ’ মানে জীবনযুদ্ধে জয়লাভ করার একেবারে শেষ ধাপে এসে আপনি উপস্থিত হয়েছেন। এই ধাপে কোনো কারনে আপনার পা পিছলে গেলে আপনি একেবারে সোজা ওপর থেকে নীচে এসে পরবেন! বর্তমানে প্রচুর সংখক প্রার্থী শেষ ধাপে পা পিছলে পরে যায় অর্থাৎ ইন্টারভিউতে সাফল্য লাভ করতে পারেন না। তার কারণ হল ইন্টারভিউ এর জন্য পূর্ব পরিকল্পিত দীর্ঘ কালীন উপযুক্ত প্রস্তুতির অভাব।
অনেক প্রার্থী রয়েছেন যারা লিখিত পরীক্ষাতে সফল হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন, ফলে ইন্টারভিউ এর জন্য উপযুক্ত পরিমাণ প্রস্তুতিতে খামতি রয়ে যায়। তারা মনে করে প্রাথমিক বাধা অর্থাৎ লিখিত পরীক্ষাতে সফল না হয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার কোনো মূল্য নেই। কিন্তু এই চিন্তা ভাবনা সম্পূর্ণ ভুল।
কারণ লিখিত পরীক্ষাতে সফল হয়ে ইন্টারভিউ তে ডাক পাওয়ার পর আপনি হাতে মাত্র কয়েকটা দিন সময় পাবেন প্রস্তুতির জন্য। এই সময়ে সম্পূর্ণ রূপে নিজেকে প্রস্তুত করতে কখনই পারবেন না। তাই ইন্টারভিউ এর প্রস্তুতি কখনোই লিখিত পরীক্ষায় রেজাল্টের পর নেওয়া উচিত নয়। বরং লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির সাথে সাথে ইন্টারভিউ এরও প্রস্তুতি ধীরে ধীরে নিয়ে রাখা বাঞ্ছনীয়।
কিভাবে ইন্টারভিউ প্রস্তুতি নেবেন?
লিখিত পরীক্ষায় সফল হওয়ার পর আপনি যখন ইন্টারভিউ প্রস্তুতি নেবেন তখন মোটামুটি দুই থেকে তিন মাস সময় হাতে পাবেন। এই সময়ের মধ্যে আপনাকে বিস্তারিত পড়াশোনা করে প্রস্তুতি নিয়ে নিতে হবে। এবং নিজের দুর্বলতা গুলিকে সারিয়ে নিতে হবে।
মনে রাখবেন ইন্টারভিউ তে পার্সোনালিটি টেস্ট নেওয়া হয়, এখানে পরীক্ষার্থীর কথা বলার ধরণ, চালচলনা, স্মার্টনেস, বিচারবুদ্ধি গুলিকে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। সবাইতো আর জন্মসূত্রে এইসকল বৈশিষ্টের অধিকারী হতে পারেনা কিন্তু একটু অভ্যাস করলে আপনি নিজের মধ্যে এই সকল চরিত্র গুলিকে নিজের মধ্যে সংযুক্ত করে নিতে পারবেন। এই কয়েক মাসেই আপনি ইন্টারভিউ দেওয়ার কৌশল আয়ত্ব করে নিতে পারবেন। লিখিত পরীক্ষার পর এই কয়েকমাস কি কি ভাবে ইন্টারভিউ প্রস্তুতি নেবেন তার একটা রূপরেখা বানিয়ে দিলাম-
১. প্রথমত লিখিতি পরীক্ষা দেওয়ার হওয়ার পর পড়াশোনা প্রতি একটা রিদম্ ধরে রাখার জন্য আপনি স্পোকেন ইংলিশ, কম্পিউটার কোর্স গুলি করতে পারেন এবং সাথে সাথে ইন্টারভিউ এর জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন।
২. প্রতিনিয়ত সময় করে গল্প বই পড়া, কবিতা পাঠ বা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রিডিং পড়ুন এবং নিজেই নিজেকে বিচার করুন আপনার ব্যক্তিত্বের কতটা উন্নতি হচ্ছে।
৩. প্রতিদিনের সংবাদ পত্রগুলিকে খুঁটিয়ে পড়ার অভ্যাস করুন, কারণ একজন যোগ্য প্রার্থীর সাম্প্রতিক বিষয়বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
৪. সাম্প্রতিক জ্ঞান সংগ্রহ করার জন্য অনলাইন মাধ্যম গুলিকে বেছে নিতে পারেন, দুপুর অথবা রাতে ঘুমাতে যাওয়া সময় বা বিছানাতে শুয়ে ঘন্টা খানেক স্মার্ট ফোনকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন গ্রহনযোগ্য অনলাইন নিউজ পোর্টাল্গুলি পড়তে পারেন। এতে করে বিশ্বের নানা প্রান্তের খবর আপনার আয়ত্বের মধ্যে থাকবে।
৫. বিগত বছরের পরীক্ষার প্রশ্নগুলিকে বার বার ঝালিয়ে নিতে পারেন।
৬. সাধারণ জ্ঞান হিসাবে নিজের ব্লক, জেলা, রাজ্য, থানার খুঁটিনাটি তথ্যাবলী সংগ্রহ করে একটি খাতায় লিখে রাখুন। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ, ভারতের মন্ত্রীসভার সদস্যদের নামের তালিকা, অন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার নাম তাদের সদর দপ্তরের নাম ইত্যাদি বিষয়গুলিকে নখদর্পনে করে রাখুন।
৭. বাংলা ও ইংরেজির বিভিন্ন ম্যাগাজিন গুলিকে প্রতিনিয়ত পড়ে রাখুন, সাম্প্রতিক কালে প্রকাশিত বিভিন্ন বই এর নাম, পুরস্কার তালিকা প্রভৃতি বিষয়গুলিকে জেনে রাখুন।
৮. উপরিউক্ত বিষয়গুলিকে ভালো করে পড়ার পর বন্ধুদের সাথে ওই বিষয়গুলিকে নিয়ে সপ্তাদের একটা দিন আড্ডা দিন এবং নিজেদের মধ্যে আলোচনা করুন, একে অপরের জ্ঞান ভাগ করুন। দেখবেন নিজের প্রতি একটা বিশ্বাস তৈরি হবে।
ইন্টারভিউ এর আগের দিনে নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করবেন?
আপনারা সকলেই জানেন, ইন্টারভিউ তে যারা সুযোগ পাবেন তাদেরকে কয়েকদিন আগে থেকেই ‘কল লেটার’ পৌঁছে দেওয়া হয়। কল লেটার হাতে পাওয়ার পর, ইন্টারভিউ এর স্থান জেনে যাবেন।
ইন্টারভিউ এর স্থা যদি আপনার বাড়ির নিকটে হয় তাহলে কোনো সমস্যা থাকেনা, কিন্তু যদি বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে হয় তাহলে আগে থেকে কাছাকাছি কোন হোটেল বুকিং করে নিন অথবা নিকটবর্তী কোনো আত্মীয় বাড়ি থেকে থাকলে আগের দিন থেকে চলে যান। তাহলে অন্তত কিছুটা টেনশন মুক্ত হয়ে থাকবেন এবং মানসিক শান্তি পাবেন। ইন্টারভিউ এর আগের দিন কি কি ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবেন তার একটি রূপরেখা দেওয়া হল-
১. ইন্টারভিউ এর আগের দিন যেখানে রাত্রি যাপন করবেন সেখানে পৌঁছে আগে দেখে নিন আপনার প্রয়োজনীয় যাবতীয় ডকুমেন্ট গুলি আপনার সঙ্গে রয়েছে কিনা।
২. সঙ্গে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও জলের ব্যবস্থা করে রাখুন।
৩. এতদিন যে যে বিষয়গুলি পড়ে এসেছেন সেগুলি কে মনে মনে একবার করে ভেবে নিন, প্রয়জনে আত্মীয় বা বন্ধুদের সাথে আলোচনা করতে পারেন।
৪. রাতের খাওয়ার যদি নিরামিষ হয় তাহলে খুব ভালো হবে আপনার পক্ষে। আগের দিন জল বেশি করে খাবেন।
৫. ইন্টারভিউ এর আগের দিন বেশি রাত পর্যন্ত জেগে থাকবেন না। রাত্রি ৯টার মধ্যে প্রস্তুতি সেরে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট গুছিয়ে রেখে ঘুমোতে যেতে পারেন। ঘুম না এলে সাম্প্রতিক ঘটনা গুলি ভাবুন অথনা ১০০, ৯৯, ৯৮, ৯৭, ৯৬ অর্থাৎ পেছোনদিকে কাউন্ট করতে পারেন ঘুম চলে আসবে!
৬. সর্ব পরি অকারনে মানসিক ও শারীরিক বাড়তি চাপ নিয়ে নেবেন না। এই সময়ে শরির ও মন দুটোরই সুস্থতা বজায় রাখার প্রয়োজন রয়েছে।
ইন্টারভিউ এর দিন নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করবেন?
ইন্টারভিউ এর দিনটি আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিন গুলির মধ্যে একটি। তাই দিন টিকে স্মরনীয় করে রাখার জন্ন নিজেকে ১০০% উজার করে দিন। ইন্টারভিউতে যাওয়ার দিন কিভাবে ইন্টারভিউ প্রস্তুতি নেবেন এবং কিকি করবেন কিছুটা ধারনা দিলাম-
১. প্রার্থনা-প্রাণায়াম করুন-
ভোর ৫টার মধ্যেই ঘুম থেকে উঠে পড়ুন, ঘুম থেকে উঠে জল খান বেশি করে। এরপর কিছুটা সময় প্রাণায়াম করুন এবং সাথে সাথে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিপূর্ণ মন দিয়ে প্রার্থনা করুন। এর ফলে আপনার মনবল কিছুটা বৃদ্ধি পাবে।
২. নিজেকে ফ্রেশ করে নিন-
প্রার্থনা প্রাণায়াম এর পর সেভ করে নিন (ছেলেদের ক্ষেত্রে), তারপর স্নান করে ফ্রেশ হয়ে যান।
৩. কিধরণের খাওয়ার খাবেন?
ইন্টারভিউ এর দিন খুব বেশি ভারী খাওয়ার না খাওয়াই ভালো। হাল্কা ধরণের ব্রেকফাস্ট করতে পারেন। চেষ্টা করবেন তেল জাতীয় খাবার যেমন- লুচি, চপ, পুরি, পরটা, সিঙ্গাড়া প্রভৃতি না খাওয়াই আপনার পক্ষে ভালো হবে।
৪. ইন্টারভিউতে যাওয়ার জন্য যেগুলি অবশ্যই সঙ্গে নেবেন-
ইন্টারভিউ তে যাওয়ার আগে আপনাকে যে কাজ গুলি করতে হবে তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল ইন্টারভিউ এর জন্য প্রয়জনীয় কাগজপত্র গুছিয়ে নেওয়া। ইন্টারভিউ তে যাওয়ার আগে যেগুলি অবশ্যই নেবেন সেগুলি একটি তালিকার আকারে দেওয়া হল-
ক. অবশ্যই কল লেটার নেবেন মনে করে।
খ. মাধ্যমিক পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড
গ. মাধ্যমিক থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন পর্যন্ত সকল প্রকার মার্কসিট ও সার্টিফিকেট।
ঘ. বি.এড এর মার্কসিট ও সার্টিফিকেট
ঙ. জন্ম সার্টিফিকেট
চ. Cast Certificate
ছ. লিখিত পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড
জ. সহপাঠক্রমিক ক্রিয়াকলাপ। যেমন ধরুন- NSS, NCC Certificate, কম্পিউটার কোর্সের সার্টিফিকেট, শিক্ষকতা করা অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট ইত্যাদি।
উপরিউক্ত কাগজ পত্র গুলির আসল ও প্রত্যয়িত নকল দুটোই সঙ্গে রাখবেন। এছাড়া পরিচয় পত্র একটি সঙ্গে রাখবেন।
ইন্টারভিউ তে যাওয়ার জন্য কি ধরনের পোশাক পরবেন?
ইন্টারভিউ কক্ষে আপনার রুচি ও পছন্দ ফুটিয়ে তুলে আপনার পোশাক। পোশাক যে কোনো মানুষের স্মার্টনেস অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। ক্যাজুয়াল ড্রেসে ইন্টারভিউতে যাওয়া ঠিক নয়। আপনাকে মার্জিত পোশাক পরতে হবে। আপনার মাঝে পেশাদার ও দক্ষতার ছাপ থাকা জরুরি। তাই ইন্টারভিউতে কি ধরনের পোশাক পরবেন সেটা একটু ভেবে আগে থেকেই ঠিক করে রাখবেন। এখানে ছেলে এবং মহিলাদের ইন্টারভিউ এর পোশাক কেমন হওয়া বাহ্ননিয় পোশাক কেমনভাবে ইন্টারভিউ প্রস্তুতি কে প্রভাবিত করে সেটা আলাদা ভাবে আলোচনা করা হল-
ইন্টারভিউতে ছেলেদের পোশাক কেমন হওয়া প্রয়োজন?
1. ছেলেরা হালকা রঙের (সাদা, হাল্কা আকাশি, ক্রিম রঙের) জামা এবং হালকা জামার সাথে মানানসই একটি ঘন রঙের প্যান্ট (যেমন ধরুন কালো বা নেভি ব্লু)। রঙের আধিক্য রয়েছে এমন শার্ট প্যান্ট এড়িয়ে চলুন। কালো রঙ-এর শার্ট-প্যান্ট একসাথে পরবেন না, চাকরির ইন্টারভিউ দিতে একচেটিয়া কালো রঙ এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।সাধারণত সাদা শার্ট ও কালো প্যান্টকে সাধারণত ইন্টারভিউ-এর আদর্শ পোশাক ধরা হয়।
2. জামা ফুল হাতা হলে ভালো হয়। কিন্তু যদি হাতা গুটিয়ে পরেন তাহলে অবশ্যই যেন কুনুই এর নীচে থাকে।
3. নানান রঙের জামা এবং জিন্স প্যান্ট না পরাই আপনার পক্ষে ভালো হবে!
4. জামা ‘ইন সাইড’ করে পরবেন। এবং সাধারণ দেখতে ‘বেল্ট’ ব্যবহার করবেন।
5. জুতোর মধ্যে ‘বুট’ পরে যাবেন। এবং ইন্টারভিউ এর আগে কালো বুট একবার অন্তত পালিশ করে নেবেন। ছেলেরা কালো সুজ পছন্দ করতে পারেন। সুজের ক্ষেত্রে একটি বিষয় খেয়াল রাখবেন যাতে এটা বেশি স্টাইলিশ না হয়। সুজ অবশ্যই রাবার সোল্ড হতে হবে। কারণ রাবার সোল্ডের সুজ হলে হাঁটার সময় শব্দ হয় না। আর অবশ্যই কালো মোজা পছন্দ করবেন।
6. অবশেষে হালকা সুগন্ধ যুক্ত আপনার পছন্দমত পারফিউ ব্যবহার করতে পারেন।
7. সাজগোজের ক্ষেত্রে ছেলেদের জন্য চুল ছোট এবং পরিপাটির বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।
ইন্টারভিউতে মহিলারা কেমন পোশাক পরে যাবেন?
1. মহিলারা ইন্টারভিউ এর দিন শাড়ী পরে যাবেন। হালকা শেডের, সরু স্ট্রাইপের তাঁতের শাড়ী পরলে খুবি ভালো। সঙ্গে ঘন শেডের ব্লাউজ পরবেন।
2. সিল্ক বা অন্যান্য ধরনের শাড়ী ওই দিন এড়িয়ে যাবেন।
3. জুতোতে বেশি হিল যেন না থাকে এবং খেয়াল রাখবেন হাঁটার সময় ঠক্ ঠক্ শব্দ যেন না হয়!
4. ইন্টারভিউ এর দিন নখ বা নখে নেলপালিশ লাগিয়ে রাখবেন না। আর যদিও বা লাগিয়ে রাখেন সেটা যেন একেবারে হালকা শেডের হয়।
5. বেশি গহনা পরে যাবেন না। সাধারণ মানের গোল টিপ কপালে পরতে পারেন।
6. হাতে লেদার স্ট্রাপ ঘড়ি পরে যাবেন।
7. মার্জিত রুচিসম্পন্ন মানানসই অতি সাধারণ চুলের স্টাইল বাঞ্ছনীয়। খোপা বা বিনুনী করে যাবেন। বিনুনী দুই দিকে করবেন না।
8. মেয়েদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মেক আপ না নেওয়াই উত্তম। চাকরির ইন্টারভিউতে যতটা সম্ভব সজীব, পরিচ্ছন্ন ও স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুন।
আরও কিছু গুরুত্বপূর্ন বিষয় খেয়াল রাখবেন-
১. ইন্টারভিউ তে যাওয়ার আগে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ঔষধ পকেট চিরুণী, ঘড়ি, রুমাল, কয়েকটি সাদা কাগজ পেন, পেনসিল এগুলি বেগে গুছিয়ে নেবেন।
২. এরপর আপনার করনিয় বিষয় হল, ইন্টারভিউ এর দিনের সংবাদপত্রটি মন দিয়ে একবার চোখ বুলিয়ে নেবেন।
ইন্টারভিউ কেন্দ্রে পৌঁছানোর পর কি করণীয়?
ইন্টারভিউ কেন্দ্রে নির্দিষ্ট সময়ের এক ঘন্টা আগেই পৌঁছানোর চেষ্টা করুন। এর পর কিভাবে ইন্টারভিউ প্রস্তুতি নেবেন এবং কিকি করবেন তার একটা নমুনা আপনাদের জানালাম-
নিজের মানসিক দুর্বলতা দূর করুণ-
ইন্টারভিউ কেন্দ্রে পৌঁছে অনেকেই মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পরেন, সেক্ষেত্রে আপনার অসফল হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থেকে থাকে। তাই আপনি এই সময় কি কি করবেন দেখে নিন-
১. অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের সাথে ক্যাজুয়াল গল্প করুণ। অপ্রয়োজনীয় কথা না বলাই ভালো।
২. রিলাক্সভাবে বসবেন এবং বেশি পরিমাণ নিশ্বাস নেবেন, এতে বেশি পরিমাণ অক্সিজেন আপনি সংগ্রহ করতে পারবেন এবং আপনি শীঘ্রই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবেন।
৩. সাথে করে যদি ম্যাগাজিন নিয়ে যান তাহলে ওটার পাতা ওলটাতে পারেন। এতে করে মনযোগ বৃদ্ধি পাবে।
ওয়েটিং রুমে আপনার কী করণীয়?
ইন্টারভিউ কেন্দ্রে পৌঁছে ওয়েটিং রুমে আপনার যেই কাজ গুলি করণীয় তার একটা উদাহরণ আপনাদের জানালাম-
১. অন্যান্য প্রার্থীরা কে কি রেজাল্ট করেছে সেই বিষয়ে আগ্রহ দেখাতে যাবেন না।
২. আপনি যে কেন্দ্রে পৌঁছেছেন তার উপস্থিতি কেন্দ্রে উপস্থিত নির্ধারিত ব্যক্তির কাছে জানাবেন এবং প্রয়োজন হলে ডকুমেন্ট জমা দেবেন।
৩. ইন্টারভিউ রুম থেকে পূর্ববর্তী প্রার্থী বেরিয়ে এলে তাদের কী প্রশ্ন করেছে তা জানার চেষ্টা না করাই ভালো হবে।
৪. আপনার ডাক আসার আগে, বাথরুমে গিয়ে ছোখে মুখে জল ঝাপটা নিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে যান।
৫. বাথরুমে আয়না থাকলে নিজের চুল ঠিক করেনিন, জামার ইন ঠিক ঠাক আছে কিনা দেখে নিন, মেয়েরা অবশ্যই শাড়ির ভাঁজ ঠিক ঠাক আছে কিনা দেখে নেবেন।
৬. হালকা চা, বিস্কুট খেতে পারেন ইন্টারভিউ কক্ষে প্রবেশ করার আগে।
ইন্টারভিউ কক্ষে প্রবেশ করার নিয়ম-
আপনার সকল প্রস্তুতি শেষ, এবার আপনার ডাক আসবে ইন্টারভিউ কক্ষে প্রবেশ করার জন্য। কিভাবে প্রবেশ করবেন ইন্টারভিউ কক্ষে? জেনে নিন-
১. ইন্টারভিউ কক্ষের সামনে থাকা কর্মচারী আপনার নাম বা রোল নম্বর ডাকলে আপনি ইন্টারভিউ কক্ষের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে “May I coming Sir/Mam” অথবা বাংলাতে “আমি কি আসতে পারি” বলবেন, এবং অনুমতি পেলে তবেই প্রবেশ করবেন।
২. ধীর গতিতে রুমে প্রবেশ করে ভারতীয় সংস্কৃতি অনুসারে দুই হাত তুলে নমস্কার করবেন বা সামান্য মাথা ঝুঁকিয়ে নমস্কার জানাতে পারেন।
৩. সামান্য শব্দ করে কক্ষে প্রবেশ করবেন।
আজ এই পর্যন্তই, পরবর্তী বিষয়ে জানার জন্য আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন এবং পরবর্তী পর্বগুলির দিকে নজর রাখুন।
কিভাবে উপস্থিত হবেন ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে?
আপনাকে প্রবেশ করার অনুমতি দিলে তারপর খুব তাড়াহুড়ো না করে নির্ধারিত চেয়ারের সামনে গিয়ে দাঁড়াবেন। এখানে গুড মর্নিং বা গুড আফটারনুন বলতে পারেন। পরীক্ষকগণ যতক্ষন পর্যন্ত বসার অনুমতি না দেন ততক্ষন পর্যন্ত বসবেন না। বা আপনি বলতে পারেন, “আমি কি বসতে পারি?” যদি উত্তর “হ্যাঁ” হয়, তখন বসবেন।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতীয় সংস্কৃতি বজায় রেখে কিছুটা ঝুঁকে নমস্কার জানাতে পারেন।
ইন্টারভিউ বোর্ডে করণীয় কিছু বিষয়ঃ
- নিজের ভদ্র-নম্র, নমনীয়তা, শিষ্টাচার বজায় রাখুন।
- নিজেকে জাহির করবার চেষ্টা করবেন না।
- বোর্ডের সদস্যদের প্রাপ্য সম্মান জানিয়ে নিজের উত্তর প্রদান করবেন।
- সঠিক উত্তর জানা না থাকলে অযথা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন না, নিজের উখমতা সরাসরি জানানোই ভালো।
- অবশ্যই বোর্ডের সদস্যদের চোখে চোখ রেখে কথা বলবেন।
- কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম করবার সময় তার নামের আগে বিশেষ সম্মান্সূচক উপাধি ব্যবহার করবেন।
- প্রশ্নকর্তা কীভাবে, কোন স্টাইলে কথা বলছেন, তা উপলব্ধি করুন, আগে ভালো করে শুনুন তারপর উত্তর দিন।
- সর্বপরি নিজের মস্তিষ্ককে যতটা সম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করবেন।
ইন্টারভিউ বোর্ডে যে কাজগুলি করবেন না-
ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে প্রবেশ করে আপনি যে যে কাজ গুলি করবেন না সেগুলির একটা দৃষ্টান্ত দেওয়া হল-
- প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় মাথায় হাত, গালে, কানে হাত দেবেন না।
- চুল বা শরীরের বিভিন্ন অংশে চুলকাবেন না।
- কোনো রকম অভদ্র আচরন, অধৈর্য্য, বা অসহিষ্ণুতা ব্যবহার করবেন না।
- কথা বলার সময় বার বার জিভ টেনে বের না করাই ভালো।
- চোখের পাতা মিছি মিছি ফেলবেন না
- টেবিলে আঘাত করবেন না।
- অতিরিক্ত উচ্চস্বরে কথা বলবেন না।
- আবার খুব ধীরেও কথা বলবেন না।
- শব্দের উচ্চারণ তাড়াতড়ি করবেন না।
- মুখ দিয়ে দাঁত, নখ কাটবেন না।
- জামাকাপর ঠিক করা, চুল ঠিক করা, বোতাম লাগানো, বার বার ঘড়ি দেখা এই সকল কাজগুলি করবেন না।
বর্তমানে বিভিন্ন চাকরীর পরীক্ষাতে ইন্টারভিউ দিয়ে কর্মে নিযুক্ত হতে হয় যেমন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা হওয়ার ইন্টারভিউ, আপার প্রাইমারি ইন্টারভিউ, নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষকতার ইন্টারভিউ, একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষকতার ইন্টারভিউ, কলেজে অধ্যাপক-অধ্যাপিকা হওয়ার ইন্টারভিউ, পুলিশ পরীক্ষার ইন্টারভিউ, WBCS-পরীক্ষার ইন্টারভিউ, গ্রুপ-ডি বা গ্রুপ-সি পরীক্ষার ইন্টারভিউ।
এছাড়া, সেলস এন্ড মার্কেটিং জব ইন্টারভিউ, ব্যাংকে চাকরির ইন্টারভিউ এর মাধ্যমে প্রার্থীর দক্ষতা নির্ধারণ করা হয়। তাই আগে থেকে সঠিক ভাবে ইন্টারভিউ প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন।