বিশেষ নিবন্ধ : সুন্দরবন বসতির এক পর্যটন কেন্দ্র – লেখকঃ- অনিমেষ জানা
সুন্দরবন বসতির এক পর্যটন কেন্দ্র
বকখালি হল সুন্দরবনের তথা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যটন কেন্দ্র। এই অঞ্চলটি বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী অঞ্চল। এখানে ম্যানগ্রোভ, কুমীর প্রকল্প, মৎস্য বন্দর ইত্যাদি রয়েছে। এখানে প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য, ৮ কিমি দীর্ঘ সমুদ্রতট, বিকেলের সূর্যাস্ত দেখার জন্য মানুষকে বারবার টেনে নিয়ে আসে। এই অঞ্চলটি পিকনিক স্পটের জন্য খুব জনপ্রিয়। পর্যটকরা সাধারণত ২ থেকে ৪ দিনের জন্য এখানে আসেন। বেশিরভাগ পর্যটকই এখানে আসেন ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। এটাই হল বকখালির ‘Peak Season’। আবার জুন থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত সবথেকে কম পর্যটক এখানে আসেন।
[লেখা পাঠান এই ইমেলে– [email protected]]
প্রায় ১০০ বছর আগে বাংলার তৎকালীন লেফটেন্যান্ট গভর্নর অ্যান্ড্রু ফ্রেজার এই মনোরম জায়গাটি আবিষ্কার করেন। তাঁর নাম অনুসারে এই জায়গাটির নাম হয় ‘ফ্রেজারগঞ্জ’। তিনি প্রথম এই বকখালি অঞ্চলে একটি সরকারী ট্যুরিজম রিসোর্ট নির্মাণ করেন, যা বর্তমানে ‘বকখালি ট্যুরিস্ট রিসোর্ট’ নামে পরিচিত। এটি ফ্রেডেরিক দ্বীপের পশ্চিমে অবস্থিত।
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার নামখানা ব্লকের ফ্রেজারগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে অমরাবতী ও লক্ষ্মীপুর আবাদ মৌজার মধ্যে অবস্থিত বকখালি অঞ্চল। প্রায় ২১.৯ বর্গকিমি অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত। এটি কাকদ্বীপ মহকুমার অন্তর্গত। এই অঞ্চলের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। এই অঞ্চলের চারিদিকে নদী ও সমুদ্র দেখা যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই অঞ্চলের উচ্চতা মাত্র ৪ মিটার।
[প্রবন্ধ প্রতিযোগীতার সকল লেখা পড়ুন এখানে ক্লিক করে]
বকখালি অঞ্চলটিতে একটি সুন্দর প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ দেখা যায়। এখানে নানা ধরণের জীববৈচিত্র্য দেখা যায়। এখানে ঝাউ বন, ম্যানগ্রোভ অরণ্য দেখা যায়। এখানে উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলি হল – বকখালি সমুদ্রতট, হেনরি দ্বীপ, ফ্রেজারগঞ্জ জেটি ঘাট, জম্বুদ্বীপ ইত্যাদি। এখানে সমুদ্রতটে এক ধরণের লাল কাঁকড়া দেখা যায়। এছাড়া এখানে বিকেলে সূর্যাস্ত দেখার জন্য প্রচুর মানুষের ভিড় দেখা যায়। বকখালি বাসস্ট্যান্ডের পিছনে সাঁকো পেরিয়ে বনবিভাগের এলাকায় রয়েছে কুমীর প্রকল্প, কচ্ছপ প্রকল্প আর ডিয়ার পার্ক। বকখালি থেকে ভ্যানরিকশা ভাড়া করে বেড়িয়ে আসা যায় নামখানা-বকখালি পথে পশ্চিমবঙ্গ মৎস্য উন্নয়ন দফতরের প্রকল্প হেনরি দ্বীপ থেকে। বকখালিতে অনেক ছোট বড়ো হোটেল আছে। টোটো/গাড়ি ভাড়া করে বকখালির আশেপাশের অঞ্চলও দেখে আসা যায়।
বকখালি অঞ্চলে যাওয়া এখন অনেকটাই সহজ। এই অঞ্চলে সরকারী বাস, বেসরকারি বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ট্রেনের মাধ্যমে যাওয়া যায়।
(১) বাস পরিষেবাঃ- কলকাতার সঙ্গে বকখালি সড়কপথে যুক্ত৷ কলকাতা থেকে ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক পথে কলকাতা থেকে সরাসরি বাসযোগে বকখালি যাওয়া যায়। বর্তমান সময়ে অনেক সরকারি বাস পরিষেবা পাওয়া যায়, যা WBTC দ্বারা চালিত। এছাড়া অনেক বেসরকারি বাস পরিষেবা আছে। কলকাতা থেকে ফ্রেজারগঞ্জের দূরত্ব ১৩২ কিমি।
(২) ট্রেন পরিষেবাঃ- পূর্ব রেল শিয়ালদহ ডিভিশনে (দক্ষিণ শাখা) নামখানা পর্যন্ত রেলপথে যাওয়া যায়। নামখানা থেকে বাস করে সোজা বকখালি। নামখানা স্টেশন থেকে বেসরকারি বাসে বকখালি যাওয়া যায়। এছাড়া শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে ডায়মন্ড হারবার এসে, সেখান থেকে কাকদ্বীপ/নামখানা পর্যন্ত বাসে যাওয়া যায়। কাকদ্বীপ/নামখানা থেকে বাসে বকখালি যাওয়া যায়।
বকখালি অঞ্চল পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পর্যটকের ভিড় প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে এখানের প্রকৃতির ওপর। তাই এখনই আমাদের সচেতন হতে হবে। পরিবেশ বান্ধব পর্যটন ব্যবস্থা সম্প্রসারিত করতে হবে। বকখালির প্রধান আকর্ষণ বকখালি সৈকতকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এই এলাকার অনেক মানুষের রুটিরুজি পর্যটনের সাথে যুক্ত, তাই পর্যটকদের সুবিধা ও নিরাপত্তা প্রদানের সাথে সাথে প্রকৃতি সংরক্ষণের কাজটিতেও গুরুত্ব দিতে হবে।
লেখকঃ- অনিমেষ জানা (কাকদ্বীপ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা)
তথ্যসূত্রঃ-
(১) NATMO
(২) GOOGLE EARTH
(৩) WBTC অফিস (বকখালি)
(৪) নামখানা রেল স্টেশন অফিস
(৫) ফ্রেজারগঞ্জ পঞ্চায়েত অফিস
© মিশন জিওগ্রাফি ইন্ডিয়া, ভূগোলিকা-Bhugolika, Geography & Environment, স্টুডেন্টস কেয়ার