রহস্য সন্ধানে : পৃথিবীর এই পাঁচটি স্থানে অভিকর্ষ বল কাজ করেনা
পৃথিবীর এই পাঁচটি স্থানে অভিকর্ষ বল কাজ করেনা কেন জানেন?
মাথায় আপেল পড়ে বিজ্ঞানী নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ আবিষ্কারের গল্প কম-বেশি আমাদের সবারই জানা। তবে এই গল্পটি পুরোপুরি সত্য না হলেও মাধ্যাকর্ষণ ব্যাপারটি কিন্তু একেবারে সত্য। সূত্র মতে, যেকোনো বস্তুকে উপরের দিকে ছুঁড়ে দিলে সেটি আবার নিচের দিকে ফিরে আসে এই মাধ্যাকর্ষণের কারণেই। এই মাধ্যাকর্ষণ বা গ্র্যাভিটি সকল বস্তুর মধ্যে রয়েছে, এমনকি আপনার মধ্যেও রয়েছে। কিন্তু আপনাকে যদি এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে আপনি দেখবেন আপনার চিরচেনা মাধ্যাকর্ষণ ঠিকভাবে কাজ করছে না, তাহলে কেমন লাগবে? নিজের চোখকে অবিশ্বাস করবেন, নাকি জাদুর প্রভাব মনে করবেন? পৃথিবীতে কিন্তু এমন বেশ কিছু জায়গা রয়েছে, যেখানে গেলে আপনার মনে হবে মাধ্যাকর্ষণ ঠিকভাবে কাজ করছে না। আর এ কারণে এসব এলাকাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন কাহিনী। পৃথিবীর বুকে এই অদ্ভুত জায়গাগুলো নিয়েই আজকের আয়োজন। আজ জানবো কেন পৃথিবীর এই পাঁচটি স্থানে অভিকর্ষ বল কাজ করেনা
১. Santa Cruz এর রহস্যময় স্থানঃ

স্থানটি ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে আবিষ্কার করেন জর্জ ব্রেজার নামে এক ব্যাক্তি।
এই স্থানটির কাছ দিয়ে একদিন জর্জ ব্রেজার যাচ্ছিলেন, তখন তিনি অনুভব করলেন হঠাৎ করে তাঁর মাথা ঘুরছে, শুধু তাই না তার কম্পাসের কাঁটাটাও অস্বাভাবিক আচরন করছে। এর পর থেকেই ওই জায়গার প্রতি তাঁর এতটাই আকর্ষন জন্ম নেয় যে, তিনি ওই জায়গাটিতে গবেষনা করার জন্য পুরো জায়গাটিকেই কিনে ফেলেন।এবং সেখানে একটি বাড়িও বানিয়ে ফেলেন। তারপর তিনি রোজ নতুন নতুন অতিথিদের ডাকতেন এবং সেখানে হওয়া আশ্চর্য ঘটনাগুলো প্রদর্শন করতেন এবং তাঁর গবেষণা চালিয়ে যেতেন। তিনি লক্ষ করেন, ওই বাড়ির যে কোনো সমতল জায়গাতে যে কেউ অনায়াসে দাঁড়াতে পারে। এছাড়াও, কোনো বল ছুঁড়ে দিলে সেটি মাটিতে পরেনা, বল উপরের দিকে গড়াগড়ি খায়! যা পৃথিবীর অন্যান্য জায়গায় করা যাবে না।আশ্চর্যজনক হলো এখানে জল নিচের দিকে না গিয়ে উপরের দিকে যায়।
বর্তমানে বাড়িটি ক্যালিফোর্নিয়ারর সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। পর্যটকরা অবাক হন এই বাড়িতে আসলে। কিছুকিছু লোক মনে করে যে এখানে মাটির নিচে চুম্বক ক্ষেত্র থাকার ফলে সেখানে গ্যাভেটি কাজ করে না। তবে এর স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত মেলেনি।
২. কানাডার চৌম্বকীয় পাহাড়ঃ
কানাডায় একটি মজাদার পাহাড় আছে যেখানে অনেক আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে। এখানেও অভিকর্ষ কাজ করে না। এই পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়িগুলোর ইঞ্জিন বন্ধ থাকলেও তা উপরের দিকে ওঠতে থাকে।এই ঘটনাটি মানুষ প্রথম ১৯৩০ সালে উপলব্ধি করে। ভেবে দেখুনতো যেই লোকটি প্রথম এই ঘটনাটি দেখেন তার কত সারপ্রাইজড ছিলেন নাকি ভয় পেয়েছিলেন? তিনি হয়ত ভাবতেও পারেনি ইঞ্জিন বন্ধ হওয়া স্বত্বেও গাড়ি চলছে।
একি রকম একটি স্থান রয়েছে ভারতের লাদাখে।
ভারতের লাদাখের চুম্বক পাহাড়-

লাদাখের একটি পাহাড়কে ‘চুম্বক পাহাড়’ বলে ডাকা হয়। এই পাহাড়ের চূড়ার দিকে যে সড়ক গিয়েছে তা বরাবর গাড়ি চালিয়ে যেতে যেতে যদি কেই গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে দেন এবং গিয়ারকে নিউট্রাল পজিশনে রাখেন, তবে দেখা যাবে সেই গাড়ি খাড়া রাস্তা বেয়ে নিজে নিজেই চলতে শুরু করেছে। এবং তার গতি নেহাত মন্দ নয়। ২০-৩০ কিলোমিটার প্রতিঘণ্টা বেগে সেই গাড়ি উপর দিকে ধাবিত হতে থাকবে। এহেন মজার কারণে ‘ম্যাগনেটিক হিল’ আজ একটি জনপ্রিয় পর্যটনক্ষেত্র।
গ্র্যাভিটি হিলের আসল রহস্য কি?
আপনাদের মনে হতেই পারে এখানে কোনো চুম্বকীয় পাহাড় রয়েছে। যার ফলেই গাড়ি গুলিকে নিজের দিকে টেনে নেয়! কিন্তু নানান পরীক্ষাতে দেখা গিয়েছে, শুধুই যে চৌম্বকত্ব গাড়িকেই টানে তা নয়, জল কিংবা বল কেও ওই পাহাড় নিজের দিকে টানে। বাস্তবে গ্র্যাভিটি হিলে যা ঘটে, তা হচ্ছে অপটিক্যাল ইল্যুশন অর্থাৎ দৃষ্টিভ্রম। মরুভূমিতে মরীচিকার কথা সবাই জানে, সেখানেও কিন্তু দৃষ্টিভ্রম হয়। গ্র্যাভিটি হিলেও সেরকমই দৃষ্টিভ্রম ঘটে, তবে মরীচিকার মতো একই কারণে নয়।
গ্র্যাভিটি হিলে যেটিকে নিচু বলে মনে হয়, সেটি বাস্তবে উঁচু আর যেটিকে উঁচু বলে মনে হয়, সেটিই নিচু। ফলে যেকোনো বস্তু উঁচু থেকে নিচুতে ঢাল বেয়ে নেমে যায় প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই। কিন্তু মানুষের দৃষ্টিভ্রমের কারণে উঁচুকে নিচু আর নিচুকে উঁচু মনে হওয়াতেই তৈরি হয় বিভ্রান্তি। আর এই বিভ্রান্তি তৈরি হয় মানুষের চোখ আর মস্তিষ্ক নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করতে না পারায়। এরকম সমন্বয়হীনতার কারণে শুধু উঁচু-নিচু নয়, বরং আরো নানারকম দৃষ্টিভ্রম হয়ে থাকে মানুষের। নিচের ছবিটি খেয়াল করলেই সেটি পরিষ্কার হয়ে যাবে।

জিপিএস কিংবা সার্ভেয়িংয়ের যন্ত্রের সাহায্যে সহজেই দেখা গিয়েছে যে ঢাল নিচের দিকে গিয়েছে মনে হয়, সেটি আসলে উপরের দিকে গিয়েছে।
২০০২ সালে প্রকাশিত একটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে ইতালির কয়েকজন বৈজ্ঞানিক বেশ কিছু মডেল তৈরি করে দেখিয়েছেন, কীভাবে এই দৃষ্টিভ্রম কাজ করে। কিন্তু চোখের বিভ্রান্তির কারণে আর কুসংস্কারের প্রভাবে এসব এলাকা নিয়ে নানারকম গল্প-গুজব গড়ে ওঠে। নিচের ভিডিওটি দেখলে আশা করি পরিষ্কার হওয়া যাবে যে কীভাবে আমাদের চোখ আমাদের ধোঁকা দেয়।
উপরের ভিডিওটির মতোই গ্র্যাভিটি হিলে অবস্থানকালে আমাদের চোখ আমাদের ফাঁকি দেয়। যখন কেউ গ্র্যাভিটি হিলের মতো কোনো জায়গায় অবস্থান করে, তখন সে রাস্তা বা পাহাড়ের ঢালকে একভাবে দেখে, আবার গ্র্যাভিটি হিলের বাইরে থেকে একই ঢালকে অন্যভাবে দেখে।
গ্র্যাভিটি হিল রয়েছে যেসব জায়গায়
সংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি রয়েছে আমেরিকায়। এদের মধ্যে স্পুক হিল বেশ বিখ্যাত। সৌদি আরবের ওয়াদী আল জ্বীন, গুজরাটেও রয়েছে এমন রাস্তা, ইউরোপের জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, পোল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য; এশিয়ার অন্যান্য এলাকার মধ্যে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, চীন, ওমান প্রভৃতি অঞ্চলে দেখা মেলে গ্র্যাভিটি হিলের।
৩. ইনভার্টেড ওয়াটারফল, চিলি

এই উপরের ছবিটিকে দেখুন জল নিচের দিকে না গিয়ে গ্র্যাভেটিকে উপেক্ষা করে উপরের দিকে বইছে, প্রকৃতির এই অবাক করা দৃষ্টি দেখা যায় চিলিতে। আপনি হয়ত ভাবতে পারেন এই ঘটনার জন্য এটা কোন জাদু যা পদার্থের কোন নিয়মকেই মানে না,তবে এর জন্য পদার্থের ব্যাখ্যা আছে।আসলে সেখানকার অতি দ্রুত বয়ে যাওয়া বাতাস জলকে নিচের দিকে যেতে না দিয়ে উপরের দিকে পাঠিয়ে দেয়।এই জায়গায় সবসময় জোড়ে হাওয়া বয়ে চলেছে।এরকম জায়গা পৃথিবীতে এইটাই প্রথম নয় বরং এ ধরনের স্থান আগেও ভারত এবং অস্ট্রেলিয়াতেও দেখা গিয়েছে। ভারতের মহারাষ্ট্রের পুনেতে এরূপ জলপ্রপাত দেখা যায়। নিচের ভিডিওটি তারই একটি প্রমাণ।
৪. Mount Aragats
পৃথিবীর আরো একটি বিস্ময়কর স্থান হল আফ্রিকার মাউন্ট এরাগেটস।এই স্থানটি পশ্চিম আফ্রিকাতে অবস্থিত।এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসে এটা দেখতে কিভাবে তাদের থেমে থাকা গাড়িগুলো উপরের দিকে উঠে যায়। এখানেও জল নিচের দিকে বয়ে চলার বদলে উপরের দিকে বয়ে যায়। সবচেয়ে আশ্চর্য হলো এখানে পাহাড় দিয়ে চড়ার সময় একটুও কষ্ট হয়না যতটা কষ্ট হয় নিচের দিকে নামতে। সাইকেল আরোহীরা পাহাড়ের ওপরে উঠতে যতটা কষ্ট হয়,তার থেকে বেশি কষ্ট হয় নিচে নামতে! বিজ্ঞানীদের জন্য এই জায়গাটি এখনো ব্যাখ্যাহীন।
৫. হোভার ড্যামঃ

এই জায়গাটি আমেরিকা যুক্তষ্ট্রের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান। এর বিদ্যুৎ উৎপাটন ক্ষমতা এবং আয়তন অসাধারণ। কিন্তু অভিকর্ষ টান এখানে নেই! যদি আপনি এই জায়গাতে যান তবে অবশ্যই এই পরিক্ষাগুলো করবেন যেমন জলের বোতল থেকে নিচে জল ফেলার চেষ্টা করবেন দেখবেন তা নিচের দিকে না গিয়ে উপরের দিকে ওঠে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের মতে এই ড্যামটি অনেক কন্সট্রাকশন হওয়ায় এখানে একটি ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরী হয়েছে যার ফলাফল স্বরুপ এখানে কোন অভিকর্ষ কাজ করে না। নিচের ভিডিওটি দেখুন।
ধন্যবাদ, ভালো লাগলে সকলের সাথে শেয়ার করে নেবেন। কমেন্ট করে জানাবেন আর কিকি জানতে চান আপনারা।
ট্যাগ- পৃথিবীর ৫টি রহস্যময় স্থান, যেখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কাজ করেনা, পৃথিবীর এই স্থান গুলিতে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কাজ করেনা