তুলসী গাছের উপকারিতা ও স্বাস্থ্যগুন || শত রোগ-ব্যধি থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করবে
তুলসী গাছের উপকারিতা
তুলসী পাতা প্রাচীনকাল হতে বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তুলসী প্রচুর অক্সিজেন উৎপন্ন করে এবং এ গাছের চারপাশে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ সৃষ্টি করে। অনেক গুণে সমৃদ্ধ তুলসী রুচিকারক, বাতনাশক এবং পুরনো জ্বরে মহৌষধির কাজ করে। তুলসী গাছের উপকারিতা বিশুদ্ধ বায়ু যোগানে সাহায্য করে ও মশার উপদ্রব হতে মুক্ত রাখে।

তুলসী গাছের পরিচয়
- বাংলা নামঃ তুলসি
- অন্যান্য নাম: Holy basil, Tulsi तुलसी (হিন্দি, তামিল, তেলেগু), Trittavu (মালয়ম), Tulshi (মারাঠী)
- বৈজ্ঞানিক নামঃ Ocimum tenuiflorum L. – holy basil
- ইংরেজি নামঃ Sacred Basil, Holy Basil.

তুলসী গাছের উপকারিতা ও স্বাস্থ্যগুন
ওষুধের গুণে ভরা তুলসীর কদর সবার কাছে। তুলসীতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবেও দারুন ভূমিকা তুলসীর। ছত্রাক ও অন্যান্য জীবাণুনাশকের কাজ করে তুলসী পাতা। তাছাড়া শীত এলে শরীরে বাড়ে নানা রোগের উৎপাত। এই উৎপাত থেকে বাঁচতে তুলসীর তুলনা হয় না। আসুন জেনে নেয়া যাক, বহুগুণে গুণান্বিত এই তুলসী গাছের উপকারিতা গুণ সম্পর্কে।
১. লিভারের কার্যক্ষমতা – নিয়মিত তুলসী পাতার রস খেলে উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহের মাত্রা ঠিক রাখে। লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

২. আমবাত বা এলার্জী : তুলসী পাতার রসের সঙ্গে সমপরিমাণের কাঁচা হলুদের রস এবং দুর্বাঘাসের রস মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৩. জ্বর- জ্বর হলে জলের মধ্যে তুলসী পাতা, গোল মরিচ এবং মিশ্রী মিশিয়ে ভাল করে সেদ্ধ করুন ৷ অথবা তিনটি দ্রব্য মিশিয়ে বড়ি তৈরি করুন ৷ দিনে তিন-চার বার ঐ বড়িটা জলের সঙ্গে খান ৷ জ্বর খুব তাড়াতাড়ি সেরে যাবে ৷ এটি শরীরকে ব্যাকটেরিয়া ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচায়।
৪. সর্দিকাশি- এক চামচ আদার রস সমপরিমাণ তুলসীর রস এবং মধু খেলে দীর্ঘস্থায়ী কাশি কমে যায়। এটি গলা বাথা, জমা সর্দি থেকেও উপকার পাবেন ৷

৫. সাদা দাগ : তুলসী পাতার রস কাঁচা হলুদের রসের সঙ্গে সামান্য দুধ মিশিয়ে দিনে ৩/৪ বার লাগালে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাদা দাগ দূর হয়ে যায়।
[আরও পড়ুন- টুথপেস্টের টিউবের নিচের রঙের অর্থ গুলি কি]
৬. ডায়াবেটিস- ডায়াবেটিসের হাত থেকেও বাঁচাতে সাহায্য করে তুলসী। রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এটি কিডনি ও লিভারকে মেটাবলিক ড্যামেজের হাত থেকে বাঁচায়। তুলসী পাতায় প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও এসেনশিয়াল অয়েল আছে যা ইউজেনল, মিথাইল ইউজেনল ও ক্যারিওফাইলিন উৎপন্ন করে। এই উপাদান গুলো অগ্নাশয়ের বিটা সেলকে কাজ করতে সাহায্য করে ( বিটা সেল ইনসুলিন জমা রাখে ও নিঃসৃত করে)। যার ফলে ইনসুলিন এর সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। এতে ব্লাড সুগার কমে এবং ডায়াবেটিস ভালো হয়।
৭. শরীরের ঘা- আপনার শরীরে যদি কোনরকম ঘা হয়ে থাকে তাহলে তাহলে তুলসী পাতা এবং ফিটকিরি একসঙ্গে পিষে ঘা এর স্থানে লাগান। আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে।
৮. শরীরের কোন অংশ পুড়ে গেলে- শরীরের কোন অংশ যদি পুড়ে যায় তাহলে তুলসীর রস এবং এর সাথে নারকেলের তেল ফুটিয়ে লাগান, এতে জ্বালাপোড়া কমে যাবে। পোড়া জায়গাটা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে এবং পোড়া দাগ উঠে যাবে।
৯. ত্বকের সমস্যা- তুলসী ত্বকের বিভিন্ন সমস্যাতেও বেশ ভালো কাজ করে। ত্বকের রোশনি বাড়ানোর জন্য, ত্বকের বলীরেখা এবং ব্রোন দূর করার জন্য তুলসী পাতা পিষে মুখে লাগান। এর জন্য তুলসী, নিম, চন্দন মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে ব্যবহার করলে উপকার হয়। স্কিনকে উজ্জ্বল করতে হলে তুলসির পেস্ট ব্যাবহার করুণ, এটি খুবি উপকারি।

১০. প্রস্রাবের জ্বালা দূর করতে- প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে হলে তুলসী পাতার রস ২৫০ গ্রাম দুধ এবং ১৫০ গ্রাম জলের মধ্যে মিশিয়ে রোজ পান করুন । তুলসি গাছের বীজও এই ক্ষেত্রে যথেষ্ট উপকারী। এর বীজ শুকিয়ে মিহি করে খেলে প্রস্রাবের ইনফেকশনজনিত সমস্যা সমাধান হয়। পুরুষত্বহীনতা দূরীকরণে এই পাতার অবদান অপরিহার্য।
১১. হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট- শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্নরোগ যেমন ব্রঙ্কাইটিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাঁপানি প্রভৃতি রোগের নিরাময়ক। আদার রসের সঙ্গে সমপরিমাণে মধু এবং কালো তুলসীর রস সকাল-বিকাল ২/৩ চামক করে খেলে কিছুদিনের মধ্যে এ রোগ ভালো হয়।
১২. মুখের দুর্গন্ধ- মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে দিনে ৪-৫ বার তুলসী পাতা চেবান ।

১৩. বমি বমি ভাব- যদি কখনও বমি কিংবা মাথা ঘোরা শুরু করে, তাহলে তুলসী রসের মধ্যে গোলমরিচ মিশিয়ে খেলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
১৪. চুল পড়া : তুলসী পাতার রস এবং আমলকী বেঁটে আধা ঘণ্টা মাথায় রাখলে চুলপড়া বন্ধ হয়।

১৫. চোখের সমস্যা- চোখে অনেক সময় নানারকম ফাংগাল ইনফেকশন হয়। তার ফলে চোখে অ্যালার্জি, লাল হয়ে যাওয়া, ফুলে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা হয়। এগুলির হাত থেকে বাঁচায় তুলসী। চোখের সমস্যা দূর করতে রাতে কয়েকটি তুলসী পাতা জলে ভিজিয়ে রেখে ওই জল দিয়ে সকালে চোখ ধুয়ে ফেলুন।
১৬. দাঁতের সমস্যা- তুলসী মুখের ভেতরে ব্যাকটেরিয়াকে নির্মূল করে। দাঁতের রোগে উপশমকারী বলে টুথপেস্ট তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
১৭. ক্যান্সার চিকিৎসা- তুলসী একশেরও বেশি Phytochemicals (যেমন oleanolic acid, beta caryophyllene ইত্যাদি)বহন করে বলে ক্যান্সার চিকিত্সারয় ব্যবহৃত হয়। তুলসীর মধ্যে যে ফাইটোক্যামিকাল রয়েছে তা লাং , লিভার, এবং স্কিন ক্যান্সার রোধে সাহায্য করে। এটি তুলসীতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। এবং কান্সারকে ছড়িয়ে পড়তে দেয় না।

১৮. কিডনি স্টোন- কিডনি স্টোনের মত সমস্যা রোধে সাহায্য করে। এই সমস্যার ক্ষেত্রে তুলসীর রস করে একটু মধু মিশিয়ে খেলে, এটি কিডনি স্টোনকে কমাতে সাহায্য করে।
১৯. খাদ্যে বিষক্রিয়া : খাদ্যে বিষক্রিয়া হলে কিংবা বিষ খেয়ে ফেললে রোগীকে প্রচুর পরিমাণে তুলসীর রস খাওয়ালে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা যায়।
২০. চুল পড়া : তুলসী পাতার রস এবং আমলকী বেঁটে আধা ঘণ্টা মাথায় রাখলে চুলপড়া বন্ধ হয়।
২১. রোগ নিরাময় ক্ষমতা- তুলসীকে নার্ভের টনিক বলা হয় এবং এটা স্মরণশক্তি বাড়ানোর জন্য বেশ উপকারী। এটি শ্বাসনালী থেকে শ্লেষ্মাঘটিত সমস্যা দূর করে। তুলসী পাতা পাকস্থলীর ও কিডনীর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
ট্যাগ- তুলসী গাছের উপকারিতা , তুলসীর স্বাস্থগুণ, রোগনিরাময়ে তুলসীর গুণাবলী, তুলসীর ব্যাবহার, তুলসীর ভেষজ গুণাবলী