পৃথিবীর প্রধান প্রধান উপসাগর || Some important Gulf of the world
তিন দিক স্থল দ্বারা বেষ্টিত একটি জলভাগ হল উপসাগর। উপসাগরের জল শান্ত প্রকৃতির হয়। ইংরেজিতে ছোটো আকারের উপসাগরকে বলা হয় Bay (উদাহরন- বঙ্গোপসাগর)। বড় বড় উপসাগরকে বলা হয় Gulf বলা হয়(পারস্য উপসাগর) এবং খাড়া পাড় বিশিষ্ট ক্ষুদ্রাকৃতির উপসাগরকে Fjord বা ফ্যোর্ড বলা হয়। যখন নরম শিলা বা মাটি ঢেউয়ের আঘাতের দ্বারা অপসারিত হয় তখন ছোট ছোট উপসাগরগুলি সৃষ্টি হয়। কিন্তু শক্ত শিলাগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হয় অনেক দেরিতে। এই কারণে অন্তরীপের সৃষ্টি হয়। উপসাগরগুলিতে খনিজ সম্পদ, মাছ ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর প্রচুর দেখা মেলে। আন্তঃবাণিজ্য সুবিধার জন্যও নিরাপদ সমুদ্রবন্দর স্থাপন উপসাগরের তীর অনেক বেশ নিরাপদ। এবার দেখে নেওয়া যাক পৃথিবীর প্রধান প্রধান উল্লেখযোগ্য উপসাগরগুলির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-
বঙ্গোপসাগর হল বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এই উপসাগরটি পশ্চিমে ভারত ও শ্রীলংকার পূর্ব উপকূল, উত্তরে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীপ্রণালী সৃষ্ট বদ্বীপ এবং পূর্বে মায়ানমার উপদ্বীপ থেকে আন্দামান-নিকোবর শৈলশিরা (ridges) পর্যন্ত বিস্তৃত ভূ-ভাগ দ্বারা বঙ্গোপসাগর তিনদিকে আবদ্ধ। বঙ্গোপসাগর (Bay of Bengal) ভারত মহাসাগরের উত্তরের সম্প্রসারিত বাহু। বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ সীমা শ্রীলংকার দক্ষিণে দন্দ্রা চূড়া (Dondra Head) থেকে সুমাত্রার উত্তর প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। ভৌগোলিকভাবে ৫° উত্তর ও ২২° দক্ষিণ অক্ষাংশ এবং ৮০° পূর্ব ও ১০০° পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত।
প্রাচীন মানচিত্রে এই উপসাগরকে গাঙ্গেয় উপসাগর বলা হতো। খ্রিষ্টীয় দশম শতাব্দীতে চোল রাজত্বে একে বলা হয়েছিল চোল হ্রদ। পরে বঙ্গদেশের সংলগ্ন উপসাগর হিসাবে, এর নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গোপসাগর (বঙ্গ +উপসাগর)। এর বাংলা শব্দটি উৎপত্তি সংস্কৃত ভাষার বঙ্গশব্দ থেকে যার দ্বারা গঙ্গা মোহনার জল বোঝায়।
আয়তন- বঙ্গোপসাগরের আয়তন ২১,৭২,০০০ বর্গকিলোমিটার
সর্বাধিক দৈর্ঘ্য – ২,০৯০ কিমি
সর্বাধিক প্রস্থ-১,৬১০ কিমি
গড় গভীরতা-২,৬০০ মি
সর্বাধিক গভীরতা-৪,৬৯৪ মি
অববাহিকার দেশসমূহ- বাংলাদেশ, ভুটান, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা
পতিত নদ-নদী- উত্তরদিক থেকে গঙ্গা, মেঘনা এবং ব্রহ্মপুত্র; দক্ষিণদিক থেকে মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা, ইরাবতী এবং কাবেরী নদী উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও মায়ানমারের ইরাবতী নদী এখানে পতিত হয়েছে।
দ্বীপপুঞ্জ- বঙ্গোপসাগরে অনেকগুলো দ্বীপমালা রয়েছে। এদের মধ্যে – আন্দামান, নিকোবর এবং মার্গুই দ্বীপপুঞ্জ অন্যতম.
আমরা আগেই জেনেছি বড় বড় উপসাগরকে ইংরেজিতে Gulf বলা হয়। পারস্য উপসাগর Gulf এর মধ্যে পড়ে। এটি দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ায় অবস্থিত এবং ওমান উপসাগরের এর একটি বর্ধিত অংশ এর বর্তমান অবস্থান হচ্ছে ইরান ও আরব উপদ্বীপের মধ্যে। এটি বিশ্বের অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ জলপথ। এ উপসাগরটির সুবিস্তৃত উত্তরাঞ্চলীয় উপকূল ইরানের অংশ। এর পশ্চিমে রয়েছে ইরাক ও কুয়েত, দক্ষিণে রয়েছে সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
আয়তন- ২৫১,০০০ বর্গ কিমি
দৈর্ঘ্য – ৯০০ কিলোমিটার
প্রস্থ- ২৪০ কিলোমিটার
গড় গভীরতা-৫০ মি
সর্বাধিক গভীরতা- প্রায় ১০০ মিটার
অববাহিকার দেশসমূহ- সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক ও কুয়েত
দ্বীপ- খার্গ, আবু মুসা, বড় তুন্ব, ছোট তুন্ব, কিশ, কেশম ও লাভান পারস্য উপসাগরে অবস্থিত ইরানের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ।
মেক্সিকো উপসাগর হলো উত্তর আমেরিকা মহাদেশ দ্বারা বেষ্টিত একটি জলভাগ। এই উপসাগরটি প্লেট টেকটনিকের কারণে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন বছর আগে গঠিত হয়েছিল।
আয়তন- ১৫,৫০,০০০ বর্গ কিমি
প্রস্থ- ১,৫০০ কিমি
পতিত নদ-নদী – রিও গ্রান্দে, মিসিসিপি নদী
অববাহিকার দেশসমূহ- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,মেক্সিকো,কিউবা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস, লুইজিয়ানা, মিসিসিপি, আলাবামা, এবং ফ্লোরিডা রাজ্যের অবস্থান এই উপসাগরের উত্তর উপকূলে অবস্থিত। এছাড়া, মেক্সিকোর পূর্বে অবস্থিত এই উপসাগরটি।
২০১০ সালে এই উপসাগরের খনি থেকে তেল নিঃসরণ হয়ে ঘটেছিল প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতির সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা।
১৩৬০ সালের ২৫ শে এই দিনে ফ্রান্সের একদল নাবিক এবং নৌ অভিযাত্রী গিনি উপসাগর আবিষ্কার করেন। এই উপসাগরটি আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিমে এবং আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত। গিনি উপসাগর আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে আফ্রিকা মহাদেশে ফরাসির প্রভাব বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর কিছু দিন পর পরবর্তীকালে গিনি নামে পরিচিত ভুখন্ড ফরাসিরা নিজ দখলে নিয়ে আসে। দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে গিনি স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হয়।
আয়তন- ২,৩৫০,০০০ বর্গকিলোমিটার
নদীরে উৎস- নাইজার
অববাহিকার দেশসমূহ- লাইবেরিয়া, আইভরি কোস্ট, ঘানা, টোগো, বেনিন, নাইজেরিয়া, ক্যামেরুন, ইকুটোরিয়াল গিনি, গ্যাবন, সাও টেম এবং প্রিন্সিপি, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ডের কঙ্গো, অ্যাঙ্গোলা।
দ্বীপ- বায়োকো, সাও টোম, প্রিন্সিপি, ইলহু বোম বোম, ইলহু কারোকো, এলোবে গ্রান্ডে, এলোবে চিকো, অ্যানোবোন, কোসিসকো, ববোওসি।
হাডসন উপসাগর হলো কানাডার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি বৃহৎ নোনাজলীয় উপসাগর। স্যার হেনরি হাডসনের নামানুসারে এই উপসাগরটির নামকরণ করা হয়েছে। যিনি ১৬১০ সালে তার জাহাজ ‘ডিসকভারিতে’ করে এই উপসাগরটি প্রথমবার আবিষ্কার করেন। এই উপসাগরের দক্ষিণ বাহুর নাম হল জেমস বে। কানাডার পুর্বাঞ্চলের ক্রী উপজাতিদের ভাষায় হাডসন অথবা জেমস উপসাগরকে উইনিপেকো (দক্ষিণাঞ্চলীয় ভাষা) ও উইনিপাকো (উত্তরাঞ্চলীয় ভাষা) নামে অভিহিত করা হয়। সূত্র-
আয়তন- ১২,৩০,০০০ বর্গকিমি
সর্বাধিক দৈর্ঘ্য – ১,৩৭০ কিমি
সর্বাধিক প্রস্থ- ১,০৫০ কিমি
গড় গভীরতা- ১০০ মিটার
সর্বাধিক গভীরতা- ২৭০ মিটার
অববাহিকার দেশসমূহ- কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র
দ্বীপপুঞ্জ- বেলচের দ্বীপমালা, অটোয়া দ্বীপমালা
বিস্কে উপসাগর উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের একটি উপসাগর। এটি প্রধানত ফ্রান্সের পশ্চিম উপকূলে্র অংশ ব্রেস্ত শহর থেকে শুরু হয়ে ফ্রান্স-স্পেন সীমান্তর মধ্য দিয়ে স্পেনের উত্তর উপকূল বরাবর বিস্তৃত। স্পেনীয় প্রদেশ বিস্কায়া (Vizcaya)-র নামে এর স্পেনীয় ও ইংরেজি নামকরণ করা হয়েছে। ফ্রান্সে এটিকে দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রাক্তন প্রদেশ গাস্কনি-র নামে গাস্কনি উপসাগর (Golfe de Gascony গল্ফ্ দ্য গাস্কনি) নামে ডাকা হয়ে থাকে। বিস্কে উপসাগর অত্যন্ত ঝুঁকি প্রবণ এলাকা এবং অনেক সম্প্রতি এখানে ঝড়ে পড়ে বহু জাহাজ ও যাত্রী নিখোঁজ হয়েছে। এর আয়তন ২২৩,০০০ বর্গ কিমি।